আসুন দেশকে ভালবাসি
তলিয়ে যান সুখনিদ্রায়
ঘুম! চোখের পাতা আর মেলে রাখা যায়না। ক্রমশ মাথা থেকে দূর হয়ে যেতে থাকে পৃথিবীর ভাবনা। নিভতে নিভতে এক হয়ে যায় পাতা। তখন পৃথিবীর আলো আর ভাবনা থেকে অনেক দূরে অন্য এক জগতে। সেখানে শুধূই প্রশান্তি আর তৃপ্তি।
আমরা অনেকেই বুঝতেও পারিনা এ তৃপ্তির উপরই কতটা নির্ভর করে আমাদের শরীর, স্বাস্থ ও মনন। সুখনিদ্রায় তলিয়ে যেতে না পারলে সারাটা দিন-ই কেটে যায় অস্বস্তি অতৃপ্তির সাথে। অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাসের কারণেই পুরো দিন কাটে অবসাদ এবং ঘোরের মধ্য দিয়ে। হারিয়ে যায় সময়ের ছন্দ। ঘুম প্রভাব ফেলে দৈনন্দিন রুটিনে এবং রুটিন প্রভাব ফেলে ঘুমে।
যাদের রয়েছে অনিদ্রা রোগ, যাদের দু’চোখের পাতা এক করার জন্য নিয়মিত খেতে হয় ঘুমের বড়ি তাদের যন্ত্রণা কেবল তারাই অনুধাবন করতে পারেন। সে কারণেই সুস্থতার জন্য প্রয়োজন একটি রুটিন করে নেয়া। ঘুম ও কাজের জন্য বেঁধে দিন নির্দিস্ট সময় এবং এর ছন্দ রেখে চলার চেস্টা করুন ঘড়ির কাটার সাথে ।
প্রতিদিন একই সময় বিছানা ছাড়ুন
প্রতিদিন একই সময়ে বিছানা ছাড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এ অভ্যাসের কারণেই নিরবচ্ছিন্ন প্রশান্তিময় রাতের ঘুমের শেষে শুরু হতে পারে সুন্দর একটি সকাল।
আপনার মনের মতো করে সাজানো শয়নকক্ষটিতে মনোরম পরিবেশের পাশাপাশি এমন ব্যবস্থা রাখবেন যেন আলোর আনাগোনা সহজ হয়। সকালের কোমল আলো ঘরে প্রবেশ করে যখন চোখের পাতায় আলতু স্পর্শ করে যাবে আর গাইবে ঘুমভাঙ্গানির গাণ তখনি মিটমিট করে চোখ মেলুন। সাথে সাথেই সে আলো আপনার চেতনাকে ছুঁয়ে যাবে। স্বক্রীয় করবে চিন্তা এবং অনুভূতিকে।
‘ইউসিএল এ স্লিপ ডিজর্ডারস সেন্টার’ এর পরিচালক ড. ফ্রীসকা এল ইয়ান-গু বলেছেন ‘সূর্যলোক মস্তিষ্ককে কার্যক্ষম করে তোলে’।
সে বিবেচনায় প্রয়োজন প্রথম সূর্যালোকের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিদিন একই সময়ে বিছানা ছাড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। তাহলেই প্রতিটি কাজ এবং রাতের ঘুম হবে স্বাস্থসম্মতভাবে।
মনের ভারসাম্য
আনন্দ, সুখ, বেদনার অনুভূতিগুলো মনের ভেতর প্রবাহিত হয় তরঙ্গের মতো। আর সে কারণেই কখনো উত্ফুল্ল, কখনো মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে মানুষের মন। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে মনের পরস্পর বিপরীত এ দুটি অবস্থার মাঝে দূরত্ব কমিয়ে আনা যায় ভারসাম্য।
সকালে ঘুম ভাঙ্গার পর বিছানায় বসে থাকবেন দশ মিনিট। এ দশ মিনিট আপনি বরাদ্দ করে রাখুন প্রতিটি দিনের জন্য। সে সময়টাতে সোজা হয়ে বসবেন বিছানার উপর। তারপর চোখ দুটি বন্ধ করুন এবং আপনার সুন্দর জীবণের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন। সেই সাথে নিজের মাঝে একটি সুখানুভূতি জাগ্রত করুন।
আপনার এ সময়ের কৃতজ্ঞতা এবং নির্মল সূখানুভূতিটুকুই প্রশান্তিময় সারাদিনের উত্স।
এরপর বিছানা ছাড়–ন এবং প্রাত কাজগুলো একে একে সারতে থাকুন। এ সময়টুকুকে আপনি মনে করবেন ‘বুটিং পিরিয়ড’। অর্থাত্ গুছিয়ে নেয়ার সময়। এ সময় গুছিয়ে নেবেন নিজেকে।
স্মরণ করার চেস্টা করবেন আজকের দিনে যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলোর কথা। বিশৃঙ্খল মস্তিষ্ককে থরে থরে সাজিয়ে একটি শৃঙ্খলার মাঝে নিয়ে আসুন। আপনার গুছিয়ে নেয়ার জন্য ঘড়ির কাটা যতটুকু সময় বরাদ্দ করেছিল তা শেষ হওয়া মাত্রই নেমে যান কাজে। যদি পারা যায় ঘর থেকে বেরুনোর সময় সুগন্ধি ব্যবহার করুন। এতে আপনার মাঝে চলে আসবে ফুরফুরে ভাব।
প্রশান্তির ঘুম এবং সুন্দর সকালের পর পেশাগত কাজে সূর্য যখন গড়িয়ে যাবে দুপুরে ততক্ষন বেশ ভাল মেজাজেই থাকবেন আপনি। এতটুকু অবসাদ ঘিরে ধরবেনা।
মনের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য চাই মনকে সবসময় প্রফুল্ল রাখা। সকল ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব না হলেও চেস্টাতো করতে হবে। সে চেস্টাগুলোর মাঝে একটি হলো কোন দুশ্চিন্তা তৈরি করতে পারে এমন সবকিছু এড়িয়ে চলা।
বিশেষ করে খুন এবং জখমের অপরাধ সংক্রান্ত খবরের প্রতি অতিরিক্ত কৌতুহল রাখবেন না। যাদের সাথে আপনার বনিবনা হয় তাদের সাথেই সময় বেশি কাটান। এমনকি খেলাধূলা করার জন্যও বন্ধুদের সঙ্গ আগে বাছাই করুন।
খাবার এবং বিশ্রাম
মানসিক প্রশাস্তি আর সুখনিদ্রা অনেকটাই নির্ভরশীল আপনার খাবারের তালিকা এবং সময়ের উপর। অবশ্যই আপনাকে সচেতন হতে হবে তিনবেলা খাবারের সময়ের ব্যাপারে।
লক্ষ্য রাখতে হবে যা খাচ্ছেন তা স্বাস্থসম্মত এবং আপনার উপযোগি কিনা। আপনি কর্মজীবী হলে সকালের খাবার তালিকায় এমন কিছু উপাদান রাখবেন যেন এ থেকে সারা দিনের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে নিতে পারেন। আপনার কাজ এবং কাজের অবস্থানের উপর নির্ভর করবে দুপুরের খাবার। কর্মক্ষেত্রে দুপুরের খাবার খেতে হলে খেয়াল রাখবেন তা যেন অতিভোজন হয়ে না যায়। তুলনামুলক হালকা খাওয়ার চেস্টা করবেন।
যদি সুযোগ থাকে দুপুরে খাবার পর অল্প সময়ের জন্য বিশ্রামে যেতে পারেন। সকাল থেকে দূপুর পর্যন্ত যতটুকু কান্তি ভর করেছিল ত্রিশ মিনিটের সে বিশ্রামটুকু ঝেরে ফেলে দিতে পারে সব। হ্যা ঘুমের জন্য আপনার সময়ের বরাদ্দ কম হলেও এর সবটুকুই কাটাবেন কেবল ঘুমিয়ে। প্রথম দিকে এটি অসম্ভব মনে হলেও পরবর্তীতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। আপনি ইশারা দেবেন আর অমনি ঘুম পাড়ানি মাসিপিসি এসে আপনাকে তুলে নিয়ে যাবে।
তবে দুপুরের ঘুমের পূর্বমুহুর্তে অবশ্যই চেস্টা করবেন অন্যসব চিন্তুা মাথা থেকে সরিয়ে রাখতে। পরিবেশ নিযে আসুন আপনার অনুকুলে। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রগুলোর জ্বালাতন এড়াতে গুছিয়ে নিন এগুলোকে। মোবাইল ফোনটি বন্ধ বা নিঃশব্দ করে রাখুন। ই-মেইলের ইনস্টেন্ট নোটিফিকেশন অফ করুন, রেডিও এবং টিভি বন্ধ রাখুন।
তারপর ঘরের আলো নিভিয়ে দিন। আবছা অন্ধকার আর শান্ত পরিবেশই বলে দেবে এখন আপনার ঘুমের সময়।
আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে আপনার মস্তিষ্কের সময় সচেতনতার ক্ষমতা। মস্তিষ্ক ঘড়িকে এমনভাবে অভ্যস্ত করে তুলুন যেন যখন আপনার জেগে উঠতে হবে তখনি যেন ঘুম ভাঙ্গানোর সঙ্কেত দিতে থাকে। দেখবেন ঘড়ির কাটায় কাটায় ঘুম থেকে জেগে উঠেছেন আর এ অভ্যাসের কারণেই সময়ের কাজ সময়ে করে ফেলতে পারছেন।
আর অলসতা করে হাতের কাজ ফেলে রাখা উচিত নয়। এমনটি করলে তা প্রভাব ফেলবে রাতের ঘুমের উপর। এলোমেলো কাজের জন্য ঘরে ফিরতে দেরি হবে আপনার। সেই সাথে বিছানায় যেতেও পারবেন না সঠিক সময়ে। আর কাজ বাকি রেখে বিছানায় গেলেও মানসিক অস্থিরতা ব্যাঘাত ঘটাবে ঘুমের।
মনে রাখবেন সমগ্র চক্রের কোথাও ছন্দ পতন হলে তা কেবল হতেই থাকবে। কাজের মাঝেই খুঁজে নেন জীবণ।
নিজের দিকে দৃস্টি দিন
কাজ এবং উত্ফুল্লতা এ দুটোর সমন্বয়ের জন্য যথাযথ ঘুম জরুরি আর ঘুমের জন্য প্রয়োজন মানসিক স্বাচ্ছন্দবোধ। সুস্থতা এবং স্বাচ্ছন্দের জন্য অবশ্যই এগিয়েই থাকতে হবে আপনাকে। মনে রাখতে হবে, ঘুম হল স্বাস্থ এবং সুখের জন্য জরুরি।
অবাঞ্চিত কোন শব্দ যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় বলে আপনার মনে হয় তবে দ্রুত এর সমাধান করে ফেলুন। আপনার সঙ্গীর আচরণ কিংবা বিরক্তিকর শব্দে ঘুমের সমস্যা হলে তাকে চিকিত্সার ব্যবস্থা করুন। এতেও ফল না হলে আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করুন।
একান্ত নিজের প্রশান্তির জন্যই আপনার প্রয়োজন নিদ্রাবান্ধব একটি শয়নকক্ষ। আর এ কক্ষটিকে সাজানোর ব্যাপারে পরিচয় দিতে হবে নিজস্ব রুচির।
সচেতন থাকতে হবে এর আসবাবসহ পরিবেশের উপর। আসবাবপত্র কেনার জন্য আপনি কখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগবেননা। নিজের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিন বেশি। যখন কক্ষটিকে সাজানোর মনস্থির করবেন এরপর অন্তত ত্রিশ দিন ভাবুন এর অঙ্গসজ্জার ব্যাপারে। পরামর্শ করুন সঙ্গির সাথে।
তারপর যেসব আসবাবে আপনাদের স্বাচ্ছন্দ হবে বলে মনে হয় সেগুলোই কিনে আনবেন। তবেই নিজের পছন্দে রুচিসম্মতভাবে সাজিয়ে তোলা কক্ষটিতে প্রতিদিন নিশ্চিন্তে হারিয়ে যেতে পারবেন সুখনিদ্রার অতলে।
হাতে রাখুন একান্ত সময়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ঘুমের আগের সময়টুকুতে একেকজন ব্যস্ত থাকেন একেক কাজে। বিশেষ করে মহিলাদের মাঝে এ প্রবণতাটা একটু বেশি। পৃথিবীব্যাপী মহিলাদের অনিদ্রা রোগের কারণ নিয়ে ২০০৭ সালে একটি সংস্থার গবেষণায় দেখা যায় ঘুমানোর পূর্বের ১ ঘন্টা তারা কাটান বিভিন্ন ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে।
কেউ গ্রহস্থালী কাজে, কেউ বাচ্চাকাচ্চাদের সামলানোতে, কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেউ ইন্টারনেট ব্রাউজিংএ সময় কাটিয়ে বিছানায় যান। আর এসবের প্রভাব মাথায় থেকে যায় এবং নানা চিন্তা ভীর করে দূরে সরিয়ে রাখে ঘুমকে। ঘন্টার পর ঘন্টা দু’চোখের পাতা বন্ধ রেখেও চেতনাকে বিলিন করতে পারেন না ঘুমের দেশে।
নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন ঘুমাতে যাবার আগে। সম্ভব হলে সে সময়ের ব্যাপ্তিটা হবে এক ঘন্টা বা এর কাছাকাছি।
এ সময়টকু একান্তই আপনি কাটাবেন নিজেকে দম দেয়ার জন্য। ঘড়িতে যেমন করে দম দেয়া হয় পরবর্তীতে সঠিক সময় নির্দেশ করতে, তেমনি আপনি এই সময়টুকুর মধ্যে পরিকল্পনা তৈরি করবেন আগামীকালের। ভাববেন আজকের স্বাপেক্ষে আগামীকাল কি কি করা উচিত্। সমালোচনা করবেন আজকের কাজগুলোর এবং একটি পরিসংখ্যান দাঁড় করাবেন সঠিক-বেঠিকের । তারপর নিদ্রায় তলিয়ে যাবার পূর্বমুহুর্তে মস্তিষ্ক ঘড়িতে সঙ্কেত দিয়ে রাখবেন যথাসময়ে জেগে উঠার জন্য।
চক্রাকারে এরকম অনুশীলনে অভ্যস্ত হতে পারলে ঘুম আসতে সময় নেবেনা একদম । পাশাপাশি তলিয়ে যেতে পারবেন গভীর সুখনিদ্রায়। আর এ নিদ্রাতো শুষে নিচ্ছেই সকল কান্তি এবং অবসাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।