আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের পরে কর্মস্থলে ফেরার সময় মেয়েরাও ইভটিজিংসহ নানা ভোগান্তির শিকার

আমার ব্লগে সবাইকে স্বাগতম। সকলের জীবন সুন্দর ও সুখী হোক। সকলকে ধন্যবাদ।

ঈদের ছুটি শেষ হয়েছে। তাই অবসরও শেষ।

আর বসে থাকার উপায় নেই। তাই এখন ফিরতে হবে আপন আপন কর্মস্থলে। কেউ নিজের চাকরি বা ব্যবসায় ব্যস্ত হয়ে পড়বে, আবার কেউবা সংসার নিয়ে, আবার কেউ সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। তাই মোটামুটি বাধ্য হয়েই ফিরতে হচ্ছে ঢাকা শহরে। কিন্তু আপন ঠিকানায় পৌঁছতে যেমন ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে ঠিক তেমনি কর্মস্থলে ফিরতেও কম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না মেয়েদের।

এরূপই কিছু চিত্র দেখা গেছে ঈদের পরে ঢাকামুখী ট্রেনগুলোতে। দিনাজপুর টু ঢাকা রুটে রয়েছে মাত্র তিনটি ট্রেন। একতা, দ্রুতযান এবং নীলসাগর। এদের মধ্যে নীলসাগর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত এবং একতা ও দ্রুতযান কমলাপুর পর্যন্ত। এই মাত্র তিনটি ট্রেন দিয়ে উত্তরবঙ্গের সকল ট্রেনযাত্রীদের বহন করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

ল্য করা গেছে যে, কামরার ভেতরে যে পরিমাণ যাত্রী থাকে ঠিক সেই পরিমাণ যাত্রীই ট্রেনের বাইরে ও ছাদে অবস্থান করে। এ েেত্র যাত্রাটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয় তা সহজে অনুমেয়। আবার সেটি যদি মহিলা যাত্রী হয় তবে তো কথাই নেই। ইতোপূর্বে ল্য করা গেছে যে, অধিকাংশ মহিলাদেরও ছাদে অবস্থান করতে হয় না হলে সঠিক সময়ে কর্মস্থলে ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ সকল চিন্তা করে যাত্রীদের সুবিধার্থে এবার ঈদ স্পেশাল নামে ৩টি ট্রেন দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপ।

কিন্তু এর পরেও অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। ট্রেনের ভেতরে যাত্রী দিয়ে ঠাসা। তিল ধারনের ঠাঁই নেই। এই রকম যাত্রী বোঝাই ট্রেনের মধ্যে মেয়েদের কি অবস্থা হতে পারে তা সকলের অনুমেয়। প্রতিটি ট্রেনে যতগুলো সিট রয়েছে তার প্রায় দুই থেকে তিন গুণ স্ট্যান্ডিং টিকেট দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপ।

এর ফলে দেখা যায় যারা স্ট্যান্ডিং টিকেট পেয়েছে তারা হয়তো কোন সিট ফাকা পেলেই বসে পড়ে। কিন্তু যারা চরম ভোগান্তি পোহায়ে যাত্রার এক সপ্তাহ আগে সময় ব্যয় করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট সংগ্রহ করেছে তারা ট্রেনে উঠার পর দেখে তাদের সিট অন্য একদল যাত্রী দখল করে বসে আছে। তখন তারা যদি সিট দখলকারী যাত্রীদের মন জয় করে উঠায়ে দিতে পারে তবে সিটে বসতে পারে নতুবা দাঁড়িয়ে থেকেই যাত্রা সম্পন্ন করতে হয়। এরকমই কিছু চিত্র ল্য করা যায় দিনাজপুর থেকে ঢাকাগামী ঈদ স্পেশাল-২ নামে একটি ট্রেনের মধ্যে। ট্রেনের ভেতরে মানুষ নড়াচড়া করার কোন উপায় নেই।

মেয়েদেরকে ট্রেনের ভেতরে চলতে গেলে যাত্রীদের চাপের মধ্য দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হয়। এরকম কয়েকজন মেয়ে অনেক কষ্ট করে ট্রেনে উঠার পর যাত্রীদের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের সিটে এসে দেখে কয়েকজন যুবক সিট দখল করে বসে আছে। তারা যখন বলে এটি আমাদের সিট আমাদের বসতে দেন। তখন যুবকগুলো বলে আমাদেরও টিকেট আছে, এই সিট আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। তখন মেয়েগুলো তাদের টিকেট প্রদর্শন করে বলে, এই যে আমাদের টিকেট এবং আমাদেরকে এই টিকেটে সিট দেয়া হয়েছে।

আপনাদের টিকেট দেখান। তখন যুবকগুলো টিকেট দেখাতে অস্বীকার করে বলে আমাদের টিকেট আছে আমরা উঠব না, পারলে টিটিকে ডাকেন। এখন এই ভিড়ের মধ্যে মেয়েকেগুলো কিভাবে টিটিকে ডাকবে? তাই তারা অসহায়ের মত চারপাশে তাকাতে লাগল। তখন পাশের কয়েকজন ভদ্রলোক ছেলেগুলোকে বলে আপনারা ছেলেমানুষ দাঁড়ায়ে যেতে পারবেন ওদেরকে বসতে দেন। এরপর ছেলেগুলো অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গিয়ে মেয়েগুলোকে জায়গা করে দেয়।

এ েেত্র মেয়েদের টিকেটের প্রকৃত কোন মূল্য থাকল না। যাত্রার কিছু পরে দেখা গেল কয়েকজন যুবক মেয়েগুলোকে নানাভাবে উত্যক্ত করছে। তারা না পারছে সেই স্থান থেকে উঠে যেতে আবার না পারছে সেখানে বসে থেকে। মাথা হেলে কোনরকম ছেলেগুলোর অপমান সহ্য করে তারা বসে থাকল। আবার ল্য করা গেল এক যুবক এক দম্পতিকে নানাভাবে ডিস্টার্ব করছে।

যুবকটি দম্পতি স্বামীটিকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে আপনার বাড়ি কই, থাকেন কই, চাকরি করেন কই ইত্যাদি। এক পর্যায়ে স্বামীটি বিরক্ত হয়ে বলল, আপনার এত জানার দরকার কি? তখন যুবকটি বলল, আপনার কথায় মধ্যে তো মিল নেই। একবার বলেন ঢাকায় থাকেন, আবার বলেন দিনাজপুর থাকেন। একবার বলেন আপনার শান্তিনগর অফিস, আবার বলেন মতিঝিল অফিস। কারণটা কি? এই মেয়েকে আমার চেনা চেনা মনে হচ্ছে।

এই মেয়েকে আপনি কোথায় পেয়েছেন? আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? এ কথা বলাতে স্বামীটি ভিষণ রেগে গেল। তার বিয়ে করা স্ত্রীকে বলছে কোথায় পেয়েছেন? স্বামীটি চিৎকার করতে লাগল। তখন যুবকটি বলল, আস্তে কথা বলুন। জানেন আমার ভাই এসপি। ইচ্ছে করলেই আপনাকে এখনই এরেস্ট করতে পারে।

এ পর্যায়ে মেয়েটি কথা বলতে চাইলে যুবকটি বলে আপনি চুপ করুন। আপনাকে এই বখাটের হাত থেকে রা করার ব্যবস্থা করছি। আপনি কোন চিন্তা করবেন না কমলাপুর গিয়ে এই ছেলেকে শায়েস্তা করার ব্যবস্থা করছি। এ কথায় মেয়েটি একটু রেগেও গেল এবং ভয়ও পেল। তাই কাকে যেন ফোন করে কমলাপুর স্টেশন থেকে তাদেরকে রিসিভ করতে বলল।

এই হল বর্তমান মেয়েদের নিরাপত্তা। একজন মেয়ে নিরাপদে যাত্রা করতে পারছে না। আবার স্বামীর সঙ্গেও নিরাপদ নয়। তাদের নিজের বিয়ে করা স্বামীকে বলছে বখাটে আবার স্বামীর হাত থেকে তাকে রা করতে চাইছে অপর একজন পরপুরুষ যাকে কিনা সে জীবনে দেখেনি। যার নাম কখনো শোনেনি।

পরবর্তীতে কথা প্রসঙ্গে সেই উত্যক্তকারী যুবকটিকে প্রশ্ন করা হল সে কি করে। তখন সে উত্তর দিল সে নাকি ঢাকার কোন এক ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদক। এটা কারও প্রকৃত পরিচয় হতে পারে না। কারণ সে যদি প্রকৃতই ছাত্রলীগ করত তবে তাকে ছাত্র হতে হবে। আর ছাত্র হলে যে কোন যুবকের প্রথম পরিচয় সে একজন ছাত্র।

পরে বলতে পারে সে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু তার ছাত্রত্বের কোন পরিচয় নেই। সে কোন কলেজ বা ভার্সিটিতে পড়ে তার কোন ইয়াত্তা নেই। কিন্তু তার পরিচয় সে ছাত্রলীগ করে। ছাত্রলীগের যদি এই অবস্থা হয় তবে তারা দেশের জন্য কতটা নিরাপদ তা জনগণের প্রশ্ন।

যদি সে ছাত্রলীগ করেও থাকে তবে জনগণের প্রশ্ন ছাত্রলীগের কাজ কি যে কোন মেয়ে দেখলে তাদের উত্যক্ত করা? আর সে যদি প্রকৃতই ছাত্রলীগ না করে ছাত্রলীগের নাম ভেঙ্গে খাওয়ার চেষ্টা করে তবে কেন তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না এটিও জনগণের প্রশ্ন। এরপর ট্রেনে মেয়েদের প্রধান সমস্যা টয়লেট নিয়ে। এমনিতে যাত্রীদের চাপাচাপি। কামরার এক পাশ হতে অন্য পাশে যাওয়া যুদ্ধের নামান্তর। তার উপর মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে যুক্ত হয়েছে টয়লেটে যাওয়া।

কোন মেয়ে হয়তো অনেক কষ্ট করে ভিড় ঠেলে প্রায় যুদ্ধ করে বখাটেদের কবল থেকে রা পেয়ে হয়ত বা না পেয়েই পথিমধ্যে অনেক বখাটেদের উৎপাত সহ্য করে টয়লেটে গেল কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে বিশাল লম্বা লাইন। একজন পুরুষের পর একজন পুরুষ প্রবেশ করছে। কিন্তু সে অথবা কোন মহিলার পে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে অন্য পুরুষের কাছে লজ্জা শরমে বলতেও পারছে না যে সে একটু টয়লেটে যাবে। কোন কোন মেয়ে হয়তো মুখ ফুটে বলছে কিন্তু ‘চাচা আপন প্রাণ বাঁচা’র মত অবস্থা।

আগে আমি যাই পরে দেখা যাবে এমন ভাব। এরপর যদি কোন দয়াবান পুরুষ একটু চেষ্টা চরিত করে কোন মেয়েকে একটু সুযোগ দেয় তবে সেই মেয়ে টয়লেটে প্রবেশ করতে পারে অন্যথায় প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবার অনেক মেয়েরা যুদ্ধ করে টয়লেট পর্যন্ত গিয়েও সুযোগ না নিরুপায় হয়ে নিজের সিটে ফিরে আসে। এ সকল সমস্যা ল্য করে প্রস্তাব উঠেছে ট্রেনে মেয়েদেরকে আলাদা কম্পার্টমেন্ট বরাদ্দ দেয়া হোক। যে সকল মেয়েরা ট্রেনে ভ্রমণ করবে তারা সেই কম্পার্টমেন্টে উঠবে।

আবার যে সকল মেয়েদের পুরুষ সঙ্গী রয়েছে তারাও সেই সকল কামরায় উঠতে পারবে। এর ফলে মেয়েরা অনেকটা নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দে যাত্রা করতে পারবে। পৃথক কম্পার্টমেন্ট থাকার ফলে মেয়েদের পৃথক টয়লেট থাকবে। ফলে টয়লেটে গিয়ে লজ্জায় পড়তে হবে না। তারা সহজেই নিজেদের কাজ সারতে পারবে।

ঢাকা শহরেও একই অবস্থা ল্য করা যায়। বাসে মেয়ের সংখ্যা প্রায় ছেলেদের সমান হলেও মেয়েরা লোকাল বাসে উঠতে পারে না। মেয়েদের জন্য নামেমাত্র সিট বরাদ্দ থাকলেও তাতে সব সময় পুরুষ বসে থাকে। এ সকল বিষয় চিন্তা করে মেয়েদের আলাদা বাসের জন্য প্রস্তাব উঠেছিল। প্রস্তাব বাস্তবায়নও হবার কথা ছিল।

গত বছর মেয়েদের আলাদা বাস সার্ভিস চালু হবার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ল্য করা যাচ্ছে না। এখনও মেয়েদেরকে পুরুষদের সঙ্গে চাপাচাপি করে লোকাল বাসে উঠতে হয়। যদি উঠতে পারে এবং মুখ বুঝে ছেলেদের সকল অত্যাচার সহ্য করতে পারে তবে বাসে যাত্রা সম্ভবপর হয় নতুবা হেঁটেই যাত্রা করতে হয়। আবার অনেক সময় বাসের মধ্যে হয়তো কোন পুরুষ যাত্রীকে ছিট ছেড়ে দিয়ে মেয়ে যাত্রীকে জায়গা করে দেবার কথা বলা হয়।

তখন সেই পুরুষ যাত্রী উঁচু গলায় বলে কেন মেয়েরা দাঁড়ায়ে থাকতে পারে না? পুরুষরা যদি পারে মেয়েরা কেন পারবে না? পুরুষ ও মেয়েদের তো সমান অধিকার! হায়রে সমান অধিকার! যখন মেয়েদের কোন ন্যায্য পাওনা থাকে তখন তাদের ঠকিয়ে কিভাবে বেশি আদায় করা যায় সেই চিন্তায় ব্যস্ত আবার দাঁড়িয়ে থাকার সময় সমান অধিকার বাস্তবায়ন করতে চায়! এই রকম অবস্থা ল্য করা যায় ট্রেনেও। দেখা যায় অনেক মেয়ে যাত্রী দাঁড়িয়ে ঝুলতে ঝুলতে অনেক কষ্ট করে হয়তো বাচ্চা কোলে নিয়ে যাত্রা করছে আর অপরদিকে পুরুষ যাত্রীরা দিব্যি বসে থেকে আরামে যাত্রা করছে। তাদের একবারও চিন্তা হয় না যে, যে মেয়েটি বাচ্চা কোলে নিয়ে চরম কষ্ট করে যাত্রা করছে সেই মেয়েটি হয়তো তার মা অথবা বোন হতে পারতো। সেই মেয়েটি যদি তার মা হতো তবে তার কোলের বাচ্চাটি সে নিজেই। কোন মা যদি দাঁড়িয়ে কোলে বাচ্চা নিয়ে চরম কষ্ট সহ্য করে যাত্রা করে আর যদি তার নিজের সন্তান বসে থেকে আরামে যাত্রা করে তবে তার মত হতভাগা আর কে হতে পারে? এ েেত্র নারীর সমান অধিকারের কথা ভুলে যেতে হবে।

নারীকে সমান অধিকার নয় অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ একজন পুরুষের জন্মের পেছনে একজন নারী যত কষ্ট করে এই পৃথিবীতে কাউকেই তত কষ্ট সহ্য করতে হয় না। আবার অবশ্য কিছু কিছু যাত্রী রয়েছে যারা ভদ্র ও মার্জিত স্বভাবের। তারা নিজেরাই নারীদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। তাদেরকে বলতে হয় না।

এরূপ মন মানসিকতা নিয়ে সকল পুরুষ যদি চলাফেরা করতে পারে তবে নারীদেরকে কখনও ইভটিজিং বা হয়রানির শিকার হতে হবে না। আবার অনেক নারীরা বলে আমাদেরকে সহানুভূতি দেখাতে হবে না। আমরা একাই পারি আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে নিতে। কিন্তু বর্তমান সমাজে নারীদের উপর যে অত্যাচার হয় তা চলতে থাকলে কোন নারীই কখনও ন্যায্য অধিকার পাওয়ার কথা তো দূরে থাক সমাজের টিকে থাকতে পারবে না। তাই সমাজের সকলের উচিত নারীকে সমান অধিকার নয় অগ্রাধিকার দেয়া।

কোন কাজটি করলে নারীর উপর অত্যাচার হবে না সেই দিকে ল্য রাখা এবং কোন কাজটি করলে নারীর মঙ্গল হবে সেটি বিবেচনায় রাখা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.