পৃথিবীর যে সকল দেশে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের তিকারক দিকগুলোর কথা বিবেচনা করে ঐ সকল দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, সেখানে কখনো আইনের মাধ্যমে, কখনোবা সরকারী বিধি প্রণয়ন করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে কার্যকরী পদপে হিসেবে বেসরকারী উদ্যোগই স্বীকৃতি লাভ করেছে। আমাদের দেশে এই অধ্যায় মাত্র এক দশকেরও কিছু বেশী সময় এর। বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন যেমন: আধূনিক, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ইত্যাদির পাশাপাশি সবচেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তার করে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট। এই জোটের নেতৃত্বদানকারী সংগঠনসমূহের মধ্যে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, প্রত্যাশা সহ অন্যান্য স্থানীয় পর্যায়ের ছোট ছোট সংগঠনের সম্মিলিত আন্দোলনের ফসল হিসেবে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ স্বার করে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল এ।
এ চুক্তিতে স্বারকারী প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০৫ সালে প্রণয়ন করে জনহিতকর সেই ঐতিহাসিক বিধি-ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন ২০০৫ (২০০৫ সনের ১১ নং আইন)-যার মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের আইনগত স্বীকৃতি অর্জন হয় এবং গণতান্ত্রিক সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল। এই সেল তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাস্তবায়ন মনিটরিং এবং উন্নয়নে ভূমিকা রেখে থাকে।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স কমিটির সহযোগিতায় এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অংশে তামাক কোম্পানীসমূহের প্রচারনাসহ অন্যান্য প্রমোশনাল কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে, চিন্তার বিষয় হচ্ছে-বিশ্বায়নের এই যুগে আর্থিক লা বিবেচনায় তামাক কোম্পানীগুলো তাদের দ্রব্য বাজারজাতকরণের জন্য প্রতিনিয়ত আইনের ফাঁক-ফোঁকর খুজে বের করে বিভিন্ন ধরনের প্রমোশনাল কার্যক্রমের মাধ্যমে যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে তামাক আইন বাস্তবায়নে নিয়োজিত সংগঠনগুলোর আর্থিক সামর্থ্য বা প্রশাসনিক সাপোর্ট কিন্তু কোম্পানীর তুলনায় অত্যন্ত নগন্য।
তথাপিও এই অসম শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর হাজার হাজার কর্মী। সফলতার গল্পই বেশী এই আন্দোলনের কর্মীদের। এরপরও প্রয়োজন আরো আর্থিক সহযোগিতা, যুগোপযোগী তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রশিণ এবং সরকারের ইতিবাচক মনোভাব।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রায়োগিক দিকগুলো এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র সরকারী এবং বিচারিক কর্তৃপরে হাতেই রয়েছে। উভয় বিভাগের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত বিভিন্ন কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকার দরুন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর কর্মীরা মাঝে মাঝে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
ফলে তৈরী হয় তামাক নিয়ন্ত্রণে স্থবিরতা। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রেও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বাসের কন্ডাকটরদেরকেও ধূমপানকারীর প্রতি জরিমানা করার মতা প্রদান করা হয়েছে অথচ এখানে দেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদাপ্রাপ্ত বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রধানকেও এই মতা দেয়া হয়নি।
এই সব বিষয়ের বাইরেও কিছু দৃশ্যতঃ অসামঞ্জস্য ঠিক এমনভাবে বিরাজ করছে যেন মনে হতে পারে-‘মোমবাতির নিচেই অন্ধকার’। যেমন- বলা হয়ে থাকে আদালত হচ্ছে আইন প্রয়োগের সর্বোচ্চ স্থান, কিন্তু যখন আদালত ভবনে, কোর্টরুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে কি আইনজীবী, কি পুলিশ, কি মোয়াক্কেল প্রত্যেক শ্রেণীর লোকজনই সমভাবে ধূমপান করছে আর তাঁদের সামনে ঝুলছে-‘ধূমপান মুক্ত এলাকা’ লেখা সাইনবোর্ড !! এই দৃশ্যটি ঢাকা জজ কোর্টের। সুধীজনদের দৃষ্টিতে এ বিষয়টি প্রতিনিয়ত ধরা পড়লেও কে বলবেন আইনের কুশীলবদের আইন ভঙ্গ করার কথা?
এটি শুধু একটি স্থানের কথা।
এমন শত শত জনগুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেস রয়েছে যেখানে চলছে ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের লঙ্ঘন। আনুষ্ঠানিকভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে বাইরে, অথচ কোর্ট চত্ত্বরেই চলছে দেদারসে আইন ভঙ্গের উৎসব। কথাটি যেন মনে করিয়ে দেয়- হায় সেলুকাস..।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।