করণিক: আখতার২৩৯
*****
আমার দৃশ্যপটটাই যেন একটা দুর্ভেদ্য দেয়াল, যার আড়ালটা অন্যদের দৃষ্টিসীমায়।
জীবন্ত চোখ দিয়ে কেবল তাকানোর কাজটুকু চলে। সুস্থ চোখ দিয়ে সম্পূর্ণ কিছু কিম্বা নির্ভুল কিছু দেখা সম্ভব নয়, --এমনকী অন্ধের দেখাতেও কখনো কখনো ভুল থাকে।
আমার দৃশ্যপটটাই যেন একটা অবতল দেয়াল, যার ওপারের বিশালাংশই অন্যদের দৃষ্টিসীমায়। যথারীতি, কোনোকিছুকে সবদিক থেকে দেখে নির্ভুলতার কাছাকাছি যেতে চাইলে সমকালে অন্যদের দেখাগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হয়।
আর ঐ গুরুত্বের পরিমাণ এতই বেশি যে, সকলকে গুরুত্ব দিলে পরে আমার ভাগে অহংকার দেখানোর মতো কিছু থাকে না।
এক হিসেবে কুয়োর ব্যাঙগুলো বরং ভালোই আছে। যে কোনো কূপোব্যাঙ সহজেই নিজেকে মহাজ্ঞানী ভাবতে পারে। অজ্ঞতার কোনো গ্লানি লেগে কখনো লেপটে থাকতে পারে না কুয়োর ব্যাঙের পিচ্ছিল আবরণে।
এমনকী, কোনো কুয়োতে একটা সাপও যদি থাকে, সর্বক্ষণ পলায়ন প্রস্তুতির মধ্যে বেঁচে থাকা ব্যাঙগুলো তবু সেখানে এ-জন্যেই ভালো আছে যে, অন্তত নিজেদেরকে সবজান্তা ভাবতে না-পারার হীনমন্যতায় ভুগতে হয় না কূপমণ্ডূকবৃন্দকে।
যৌক্তিক বিবেচনায় যেকোনো কূপোভেক বা কুয়োর ব্যাঙ অন্যদেরকে গুরুত্ব দেওয়ার আত্মঘাতী দায় থেকে মুক্ত।
কুয়োর ব্যাঙগুলোকে সৌভাগ্যবান এবং আত্মতৃপ্ত ভেবে মুক্ত চরাচরের ব্যাঙগুলো কখনো কূপমণ্ডূক হতে চাইলে, চাইতেই পারে, -তবে, এতে সাময়িক ধকল সহ্য করার যে ধাপটি প্রস্তুতিপর্বেই পার হতে হয়, সেটা কোনো অথর্ব অধম অলস চরিত্রের জন্যে সহজসাধ্য বিষয় নয়।
মুক্ত চরাচরের যে-কেউ চাইলেই কূপমণ্ডূক হতে পারে না। কূপোভেক হওয়া যে একটা কঠিন শৈল্পিক সাধনা, তা যেকোনো আঁতেল নিত্য প্রমাণসহ তার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখিয়ে দিতে পারে।
নিজেকে নিজে মহাজ্ঞানী মনে করার জন্যে অজ্ঞদের আসরে সবজান্তা ভাবখানা দেখিয়ে দেখিয়ে নিরলসভাবে অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়।
অভ্যাসে অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে কখনো নিজেকে মহাপণ্ডিত ভাবতে পারলে, তবেই কূপোব্যাঙামো সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে কূপমণ্ডূক তথা আঁতেল তথা কুয়োর ব্যাঙ তথা কূপোভেক পদবী অর্জন করা সম্ভব।
দু’টো ছোট্ট আঠালো জিনিস, --আত্মসম্মানবোধ এবং লজ্জাবোধ, --এখানে যেকোনো জন যেকোনো বয়সেই ধুয়ে ফেলে কুয়োর ব্যাঙের মতো পিচ্ছিল হতে পারি। যথেষ্ট পিচ্ছিল হতে না-পারলে, --তর্কাবরণ জড়িয়ে অথবা যুক্তিময় হয়ে পিচ্ছিলতার অভাবটুকু মিটিয়ে নেওয়া জরুরি।
কারো আত্মসম্মানবোধ অথবা লজ্জাবোধ খুব বেশি লেপটানো হলে অথবা কেউ ওদুটোকে বিসর্জন দিতে কিম্বা ঢেকে রাখতে কার্পণ্য করলে, সে যথেষ্ট পিচ্ছিল হতে পারে না এবং তার পক্ষে কুয়োর ব্যাঙ হওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। অসম্ভব এ জন্যেই যে, জ্ঞানীরা জানেন, কূপোব্যাঙামো চর্চাকালে শুরুর দিকে যন্ত্রণাময় অপদস্থের একটা অজ্ঞাত মেয়াদি পর্ব পার হয়ে আসতে হয়।
জ্ঞানী জ্ঞানী ভাবখানা প্রদর্শনের সময় অনেকের মাঝে অভিজ্ঞদেরকে চিনতে না-পারাই স্বাভাবিক। অভিজ্ঞরা কেউ সত্যটা দেখিয়ে দিলেই যেন সর্বনাশ, -আঁতেলের যত অনুমানকে জ্ঞান হিসেবে চালানোর যুক্তিসর্বস্ব সব নোংরা কৌশল অজ্ঞদের সামনেই ফাঁস হয়ে যায়। কূপোব্যাঙামো চর্চার প্রথম দিকে তীব্রভাবে অপদস্থ হওয়ার যন্ত্রণা, --অদমিত চাঙ্গা লজ্জাবোধ নিয়ে সহ্য করা প্রায় অসম্ভব। তাই, লজ্জাবোধাক্রান্তরা দু’চার বার অপদস্থ হওয়ার পর কুয়োর ব্যাঙ হবার আশা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
বলা বাহুল্য, আঠালো লজ্জাবোধ অনেককেই কূপোভেক হতে দিচ্ছে না বা দেবে না।
আঁতেল হতে না-পারলে তো সেই আগের দশা! --নিজেকে মহাপণ্ডিত ভাবতে না-পারার যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা আর নিজস্ব গণ্ডির বাইরে এসে অজ্ঞ অশিক্ষিত নগণ্যগুলোকেই গুরুত্ব দিয়ে দিয়ে নিজের অবস্থানকে মূল্যহীন করে ফেলা, -এ যে চরম বিচ্ছিরি যন্ত্রণা!...
মামুলি লজ্জাবোধকে প্রশ্রয় দিয়ে দিয়ে কে বা কারা কী এমন মহার্ঘ সম্পদ লাভ করেছে, দেখাতে পারলে দেখাক দেখি, --তবুও গণ্ডমূর্খগুলো যেন লজ্জাবোধকেই আঁকড়ে ধরে থাকবে! কূপোব্যাঙ হতে চাইবে না! --যত্তসব অর্থহীন গোঁয়ার্তুমি, --অসহ্য আদিখ্যেতা।
কূপোব্যাঙের সংখ্যা বাড়ানো না-গেলে তো অরাজকতা আরও বেড়ে যাবে হে, --ভেবে দ্যাখো, --নিজে বুঝতে না-পারলে তোমাকে কেউ বোঝাতে পারবে না করণিক, একটু বোঝার চেষ্টা করো, --কেবল সংখ্যায় সীমিত হওয়ার কারণেই, মুষ্টিমেয় কয়েকটা কূপোভেকের দখলে চলে যাচ্ছে একে একে সবগুলো প্রচারমাধ্যম। প্রায় সবগুলো সমাবেশে জলসায়, এমনকী সাধারণ আড্ডাখানায়, ঘুরেফিরে হাতেগোণা কয়েকটা কূপোমণ্ডূক তাদের পাণ্ডিত্য প্রদর্শন করার অশ্লীল সুযোগ নিচ্ছে হে করণিক।
এখানে কূপোভেকের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া আপাতত আমরা বিকল্প খুঁজে পাচ্ছি না। আর কিছু না-ই বা বুঝলে, যোগান বাড়িয়ে দিলে চাহিদা যে কমে, -এটা তো বোঝো।
আঁতেলেরা সংখ্যায় বেড়ে গেলে আঁতেলের কদরও কমবে হে করণিক, --বুঝেছো? তুমি না-বুঝলেও মেনে নাও, সমতালে কমে আসবে সামাজিক অরাজকতা।
মামুলি লজ্জাবোধকে প্রশ্রয় দিয়ে এখনো যারা আঁতেলত্ব সাধনায় ঢুকতে চাচ্ছে না, --এমনও হতে পারে তারা সাধনার ধকল এড়িয়ে সংক্ষেপিত পদ্ধতিতে বীভৎস কূপোসাপ হওয়ার ধান্দায় আছে হে করণিক, তুমি তা জানো না। কূপোসাপের গড়ন বৃত্তান্ত জানলে হয়তোবা তাদের অনেকেই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ঐ ধান্দা থেকে সরে আসবে।
করণিক, তোমাকে যেভাবে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, প্রতিবেশী হিসেবে যেভাবে সযত্নে তোমাকে শেখাচ্ছি, আমাদের দর্শনকে অবিকৃত রেখে তোমার ভাষায় উপস্থাপন করতে থাকো। কল্পকাহিনীর ভঙ্গিতে এমনভাবে প্রকাশ করবে যেন তুমি নিজেও সহজে বুঝতে না-পারো।
যারা বোঝে, নিজে নিজে তারা ঠিকই বুঝে নেবে। কেউ তোমার কাছে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ খুঁজতে এলে শুধু ‘আমি কিছু জানি না’ বলে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়ো, তাহলেই তুমি আত্মসুরক্ষিত থাকবে।
যা কিছু লিখবে তুমি, আমাদেরকে দেখিয়ে নিয়ো। সম্মতি না-নিয়ে কোনো কিছু সরাসরি বাইরে প্রকাশ কোরো না। তবে, শিরোনামগুলো তোমার ইচ্ছেমতো বেছে নিতে পারো।
গণকরণিক হিসেবে এ স্বাধীনতাকে তুমি তুচ্ছ মনে কোরো না, --ক্যামোন?
কূপোসাপ হওয়ার আত্মঘাতী গোপন লোভ পরিত্যাগ করে সকলেই যেন বরং কুয়োর ব্যাঙের সংখ্যা বাড়ানোতে আগ্রহী হয়, -গণস্বার্থেই আমাদের এই গণপ্রত্যাশা।
লিখে যাও...........
...ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে তো নয়ই, এমনকী কোনো সংকর প্রজাতিও নয় কূপোসাপগুলো। গবেষণাগারে ক্লোন পদ্ধতিতে কূপোসাপ বানানো কখনোই সম্ভব নয়। কূপোসাপ এখানে সাধারণ সাপের মতো নয়, --কূপোসাপ কখনোই সাপের প্রজন্ম কোনো সাপ নয়। কূপোসাপগুলো আসলে রূপান্তরিত ব্যাঙ, --ব্যাঙ থেকে রূপান্তরিত বয়স্ক ব্যাঙাচি, --দেখতে অনেকটা সাপের মতোই।
কল্পকাহিনীরূপে সাজালে দেখা যাবে কোনো ব্যাঙ খাদ্য হিসেবে নিয়ে সামনের জ্যান্ত ব্যাঙটাকে গিলে ফেলতে পারে। তবে মাঝে কোথাও আটকে গেলে, খাদ্যটি মরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে, --তখন না-পারে গিলতে না-পারে ওগলাতে আর হাঁসফাঁস নাভিশ্বাস দশায় থাকতে থাকতে ভক্ষকটিও মরে যায় বিকট একটা দৃশ্য প্রকাশমান রেখে। যেন একটা মরা ব্যাঙ যার কি-না ছয়টা ঠ্যাং, --সাধারণ এ দৃশ্যটা অনেকেই দেখে থাকবেন। আজও যারা দেখেননি, কেবল তাদের জন্যেই কল্পকাহিনী লিখে লিখে রাখা।
কোনো সাধারণ ব্যাঙ যদি সেয়ানা কোনো ব্যাঙকে পুরোপুরি গিলে ফেলে নিজেই কূপোকাত হলো, অথচ মরলো না, --মরতে মরতেও বেঁচে রইলো, তবে দ্বিগুণ মৃত্যুর মতো শ্বাসরূদ্ধকর অবস্থা পার হয়ে সে কিন্তু আর লাফাতে পারে না।
স্বজাতির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হলে যেমনটি ঘটে, ভক্ষক ব্যাঙটার বরাদ্দেও জোটে তার অবশিষ্ট আয়ুষ্কালের সমান একাকিত্ব। স্বজাতিখেকো হিসেবে তার পরিচিতি এত দ্রুতবেগে ছড়ায় যে, আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু শোনানোর মতো স্বজাতির কাউকেই সে তার নাগালের মধ্যে পায় না।
‘উপায়ান্তর না-দেখে আমি তাকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছি’ কিম্বা ‘বিশ্বাস করুন, আমি গ্রাস করতে পারি না, --কিভাবে যে কী ঘটে গ্যালো আমি বুঝতেই পারিনি’ --ইত্যাদি ধরনের অজুহাত বা যুক্তি দেখিয়ে নেকড়েখেকো কোনো ছাগলও মুক্ত থাকতে পারে, --কিন্তু স্বজাতির ক্ষেত্রে অজুহাত দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। এমনকী, কোনো সামাজিক ব্যাঙ প্রকাশ্যে ব্যাঙখেকো ব্যাঙটির সাথে যোগাযোগ রাখলে স্বজনদের কাছে সেও সন্দেহের পাত্র হয়। সে স্বজনত্ব হারায় এবং আগ্রাসীটার মতো তাকেও হারাতে হয় মুক্ত চরাচরে নির্ভয়ে বিচরণের অধিকার।
ভক্ষক ব্যাঙটা তার ভারাক্রান্ত দেহটিকে স্বজাতির আড়ালে কোনো গোপন অন্ধকারে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সেখানে তার রূপান্তর ঘটে। ব্যাঙাচি থেকে যেমন রূপান্তরিত হয়ে হয়েছিল ব্যাঙ, মাছের মতো লেজটি বিলুপ্ত হয়ে দেহে গজিয়েছিল ঠ্যাং, --অনেকটা সেরকমই রূপান্তর, ভেকভক্ষক ব্যাঙটা ঠ্যাংগুলো হারিয়ে সাপের মতো লম্বা লেজ ফিরে পায়। তবে, ব্যাঙখেকো মুখের হা-টা তার দেহের প্রস্থচ্ছেদের চেয়ে বড় হওয়ার ফলে তাকে দেখতে আর ব্যাঙাচির মতো মনে হয় না। যদিও অনেকটা সাপের মতো, আসলে সে তো একটা সাধারণ ব্যাঙ, কাহিনীতে এরই নাম কূপোসাপ।
নবরূপে পূর্ণতা প্রাপ্ত হলেই কূপোসাপে পরিণত ব্যাঙটি তার পাপের বোঝা নিয়ে অন্ধকার ঘুপসি থেকে বেরিয়ে আসে। আশেপাশে স্বজনহারা ব্যাঙগুলো আছে কি-না ভীত-সন্ত্রস্ত চোখে শেষবারের মতো দেখে নেয়। কেউ যদি না-থাকে তো সর্পিল গতিতে দ্রুতবেগে কূপোসাপটি কোনো নিরাপদ আশ্রয়ের লক্ষ্যে ছোটে। ছমাস আগেও যে কূয়োটাতে সে নামতে চায়নি স্বেচ্ছায়, সেটাই যেন আজ তার জন্যে নিরাপদ আশ্রয়।
কোনো পলাতক ব্যাঙাচিকে দেখে মুক্তাঙ্গনের কেউ কখনো ভীত হয় না।
তবে, কূয়োতে নামার আগে রূপান্তরিত ব্যাঙাচিটা তার সাপের মতো মাথাটি হেলিয়ে যখন কূয়োর ভিতরটা দেখে নিচ্ছিল, কূপোব্যাঙগুলোকে দেখে সে ভীত হবার আগে ওরাই ভয়ে কূপোজলে ডুব মেরে উধাও হলো। ভীতিকে পেছনে ফেলে একলাফে কূপোজলে, মাঝারি মাত্রার একটা আওয়াজ হলো, --ঝুপ, নবাগত বাসিন্দা সদ্যসাহসী ব্যাঙখেকো ব্যাঙাচিটা তার মরণ পর্যন্ত থেকে যাবে ঐ কূয়োটাতে কূপোবাসী হয়ে, কূপোসাপ পরিচয়ে।
কূপোসাপের মধ্যে নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবার অভ্যাস বাড়ে ক্রমবর্ধমান হারে এবং সমতালে বেড়ে ওঠে তার আত্মবিশ্বাস।
আধিপত্যপ্রাপ্তরা একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারে না। এমনকী, সম-আকৃতির হলেও এক কুয়োতে অন্য কোনো কূপোসাপের উপস্থিতি কোনো কূপোসাপ সহ্য করে না।
নিজেকে সর্বাধিকারী ভাবার অভ্যাসের কারণে এবং অন্যের ধ্বংসের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাবার কারণে অথবা নিজে ভক্ষক হতে না-পারলে নিজেকেই খাদ্যে পরিণত হতে হবে জেনে কূপোসাপেরা নিত্য একে অপরকে গিলে ফেলার মোক্ষম সুযোগটিকে নিরলসভাবে খুঁজতে থাকে।
আমরা আজ পর্যন্ত কোনো কূপোব্যাঙকে কূপোসাপ হতে দেখিনি হে করণিক। আমরা দেখেছি, প্রকৃত কূপোব্যাঙেরা আঁতলামোতেই ভীষণ ব্যস্ত, --কূপোসাপ হওয়া তো দূরের কথা, এমনকী, কূপোসাপের ক্যাডারও হতে পারে না তারা।
আমরা সকল কূপোসাপের ইতিহাস ঘেঁটে দেখেছি যে, সাধারণ ব্যাঙগুলোই বরং সন্দেহজনক। মুখচোরা লাজুক ব্যাঙগুলোর মধ্যেই আমরা দেখেছি কূপোসাপ হওয়ার আত্মঘাতী প্রবণতা।
আমরা দেখেছি, সাধারণ ব্যাঙগুলো থেকেই বরং কেউ কেউ স্বজনকে গোপনে এড়িয়ে গিয়ে কূপোসাপে রূপান্তরিত হওয়ার ঘৃণ্য বাসনায় কোনো না কোনো কূপোসাপের ক্রীতদাসত্বে লিপ্ত হয়েছে। ক্যানো আমরা কূপোব্যাঙের সংখ্যা বাড়াতে চাই, এখনো কি বুঝতে পারোনি!?...
--ও, হ্যাঁ--কী যেন বলতে চাচ্ছিলে? --কূপোনাগ? -হুঁ, শব্দটা শক্তিশালী, --তবে, --না, করণিক, --না, এ কাহিনীতে ভক্ষণ বা গ্রাস যেভাবে আছে তাতে সাপের মুখের হা-টাই বেশি মানানসই। ‘কূপোনাগ’ শব্দটাতে ফণা বা ছোবলের দৃশ্য যেমন ভাসে, কূপোসাপের মতো গ্রাস বা ভক্ষণের বিচিত্র চিত্রগুলো তেমন প্রকাশিত হয় না।
এ কাহিনীতে বিষ ছড়ানো বা সমাজকে বিষময় করে তোলার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে চাইলে, আমাদের কূপোব্যাঙগুলোই যথেষ্টের চেয়ে বেশি ছিল। একজন আঁতেল চাইলে তার সমাজে যত বিষ ছড়াতে পারে, সমগ্র বিশ্বের সকল নাগ একত্রিত হলেও তত বিষ ছড়াতে সক্ষম নয়।
অবশ্য, আঁতেলেরা সংখ্যায় বেড়ে গেলে আঁতেলের বিষ আঁতেলের বিষথলিতেই জমে থাকবে, অন্তত সমাজে ছড়াবে না। তাছাড়া তুমি তো জেনেছো যে, আমরা নির্লজ্জ কূপোব্যাঙগুলোর আঁতলামো ধৈর্য ধরে যাহোক সহ্য করতে পারি, কিন্তু সন্দেহজনক লাজুক নীরব ব্যাঙগুলোর জঘণ্য সব প্রবণতা, --সুনির্দিষ্টভাবে তাদের কূপোসাপে রূপান্তরিত হওয়ার ঘৃণ্য প্রবণতা কখনোই আমরা মেনে নিতে পারি না।
--আর তোমার ঐ ‘কূপোসর্প’ শব্দটাকেও চালানো যাচ্ছে না, --ওটাতে মৃতমূর্তির মতো শান্ত ভাবটাই বেশি ফোটে। আজকের কাহিনীটাতে তোমার ‘কূপোসর্প’ ঢুকতে চাচ্ছে না হে, --নিরীহ ঐ শব্দটাকে নিলে তুমি শুরুর সাথে শেষটা মেলাতে পারবে না, --সমর্পিত করণিক হিসেবে এখানে এতটুকুই জেনে রেখো।
তোমার দৃশ্যপটটাই যে একটা দুর্ভেদ্য দেয়াল, যার আড়ালটা আমাদের দৃষ্টিসীমায় হে করণিক,--তুমি স্বাধীন কোনো লেখক বা কল্পকাহিনীকার হলে, নিশ্চয়ই সহজে তা বুঝতে।
রঙ্গপুর : ০৮/০৯/১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।