সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত...............।
ছেলেটা খুব ভাল গল্প লিখত। সংলাপ নির্ভরতায় নির্মিত এক একটা জীবনঘনিষ্ট গল্পে আমাদের সবারই যাপিত জীবনের গভীরতর ছাপ পাওয়া যেত। লিখত বলছি এই জন্য যে, ছেলেটাকে এখন আর লিখতে দেখি না।
আকারে-প্রকারে ছোটখাট, মাথা গরম ছেলেটা চশমা পরে না।
বোঝাই যাচ্ছে, মানবচক্ষু দিয়ে দেখতে তার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু, ও দু’টো ছাড়াও যে ছেলেটার মানসচক্ষুর দেখার ক্ষমতাও অসাধারণ- সেটা আমি টের পাই। যারা তার গল্পগুলো পড়েছে তারাও নিশ্চয়ই টের পেয়েছে।
ছেলেটা খুবই বন্ধুবৎসল। বন্ধুদের নিয়ে তার আবোল-তাবোল কথাগুলোও কী সুন্দর শ্রুতিমধুর স্মৃতিকথায় রূপ নিয়েছিল।
‘পথে পথে চিরকাল’ থাকতে চেয়ে ছেলেটা আপন নিবাসেই কী বন্দী এখন? ব্লগে আর লেখে না ছেলেটা।
ছেলেটা এখন ক্যামেরা চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখে। লক্ষ টাকার ক্যামেরা কিনেছে। ছুটির দিনগুলোতে বেরিয়ে যায় পৃথিবীর পথে। একটা দুইটা ব্লগ দেয় না- তা কিন্তু না।
কিন্তু, সেই সবই ভর্তি থাকে ক্যামেরার কারুকাজ, দৃশ্যকল্পে। বলতে নেই, দিনেদিনে হাত বেশ পেকে উঠেছে। স্থিরচিত্রগুলোও চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছে। আমার সবরকমের দেখার চোখই খারাপ, তবু আমি বুঝি আমি এই সব কিছুর মাঝে আগামীদিনের এক বিখ্যাত স্থির চিত্রগ্রাহকের ছায়া খুঁজে পাচ্ছি।
আমি অবশ্য একদিন বলেছিলাম, ঐ করতে গিয়ে আসল চোখগুলো দিয়ে দুনিয়া দেখতে ভুলে যেও না।
সাদা চোখে দুনিয়া দেখার মজাই আলাদা।
ড. জাফর ইকবালের প্রিয় ছাত্র সে, যাকে এই বৃদ্ধ বয়সেও কোলে তুলে নিয়ে তিনি ছবি তোলার দুঃসাহস দেখিয়েছেন!
যাই হোক, আগামীকাল বেচারার জন্মদিন। মেঘে মেঘে বেলা কম গড়ায় নি। আটাশে পা’ দিচ্ছে এবার। ছোকরার সাথে পরিচয়ের দুই দশক আর বন্ধুত্বের এক দশক পূর্তি হচ্ছে এ বছর।
গতবছরের এমনি দিনে সেই ইতিহাসের উপর একটি তথ্যবহুল পোষ্ট দিয়েছিলাম যার শিরোনাম ছিল, “বন্ধুর জন্মদিনে কিঞ্চিৎ স্মৃতিচারণ। ('স্মৃতি তুমি বেদানা' টাইপ পোষ্ট)”
সেই পোষ্টের একেবারে শেষদিকে বলেছিলামঃ
প্রিয় রাকিব, শুভ জন্মদিন।
ব্লগীয় রীতি অনুযায়ী কেক-কুক খাইতাম চাই।
বয়সও তো কম হলো না; চাকরির বয়স ও দুই পেরিয়ে গেল। তার উপর পরিবারের বড় ছেলে।
বুঝতেই পারছ, তোমার মায়ের এখন একটা হেল্পিং হ্যান্ড(Helping Hand) দরকার।
কপাল এমনই খারাপ যে, এ বছর ও একই কথা বলতে হচ্ছে, ছেলেটার এখনো কোন গতি হয় নি। দেশসেরা এক টেলিকম কোম্পানির কর্তা-ব্যক্তিদের মাথার উপর ছড়ি ঘোরায়। স্বাভাবিকভাবেই আয়-ইনকাম মাশাআল্লাহ্। কিন্তু, মায়ের পক্ষ হতে তাকেই মেয়ে পছন্দ করতে বলায় তার জবাব ছিল, “এ কথা ছাত্রজীবনে বলেন নি কেন? এখন এই চাকরিজীবনে আমি মেয়ে কোথায় খুঁজবো?” ‘পেটে ক্ষিধে, মুখে লাজ’- বোধকরি একেই বলে! সেইসাথে, ব্যবসা প্রশাসনে স্নাতকোত্তর(আমরা অভাজনেরা এইটারে এমবিএ কইয়া ডাকি) করার জন্য ভর্তি হয়ে ছেলেটা কি মা’কে এই বুঝাতে চাইলো যে, বিয়ে যখন করাতে পারছেন না, এখন এমবিএ করি!
যাইহোক, গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে যে, ছেলেটার মাতৃদেবী এখন তোলপাড় করে পুত্রবধু খুঁজছেন এবং অতি সম্প্রতি তার তুতো ভাইদের(Cousins) মধ্যে তার নিকটতম অগ্রগামীটির গতি হয়ে যাওয়ায় সে পথেও এই মূহুর্তে আর কোন বড় মাপের বাধা-বিঘ্ন নেই।
অতএব, এ বছরেই হয়তো আমরা ধুমধাম করে একটি ব্লগীয় বিয়ে খেতে যাচ্ছি। আগাম নিমন্ত্রন রইল।
ও আচ্ছা, সবাই তো বুঝেই ফেলেছেন, ছোকরাটা কে?
ব্লগের সনামধন্য ছোটগল্পকার কাম ক্যামেরাম্যান আহমেদ রাকিব।
আসুন ওকে অভিনন্দন জানাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।