আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমজানের অভিজ্ঞতাঃ মুসলমান মুরগীর ডিম

প্রশ্ন করেই যাব অবিরত

কয়েক বৎসর আগের কথা। রোজা মাস। দুপুর বেলা ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে হিন্দু হোটেল খুঁজে বের করে তাতে ঢুকলাম। কিছুটা অন্য রকম লাগছে। আমি একটা সিটে বসে হাপাচ্ছি।

একটা ছোট বালককে দেখতে পেয়ে পানি চাইলে সে তাড়াতাড়ি “জল” নিয়ে এল। আমাকে জিজ্ঞেস করল কিছু খাব কি না। আমি বললাম, যা গরু নিয়ে আয়। সবাই দেখি আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর এই বালকটি হো হো করে হেসে উঠল। আমি একটু রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, সমস্যাটি কি? সে পুনরায় মুখ প্রশস্ত করে বলল, এইটা হিন্দু হোটেল, মনে রাইখেন, নাহলে কিন্তু ধরা খাবেন।

আমি এবার খাসী অর্ডার দিলাম। এরপর প্রতি বছর রমজান এলে এ হিন্দু হোটেলই আমার ভরসা। এই কয়েক বছরে হোটেলের সবাই আমার ভাল পরিচিত হয়ে উঠেছে তাই আমি গেলে সবাই একটু এক্সট্রা কেয়ার নেয়। ঐ যে বালকটার নাম বললাম ওর নাম নিপু, প্রথম প্রথম ওকে বিরক্ত লাগলেও ওর রস বোধের জন্য ওকে ভাল লাগতে দেরী হয় নি। বরাবরের মত এবারের রোজাতেও ঐ হিন্দু হোটেলে দুপুরে খাওয়া হয়।

সপ্তম রোজা। হঠাৎ আমার বন্ধু তুহিনের ফোন – দোস্ত, আজ রাগ করে রোজা ভেঙে ফেলেছি। > কেন? - গত কাল ইফতার করে তারাবী পড়ার পর দুর্বল বোধ হওয়ায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম উঠে সেহরি খাব কিন্তু আর খাওয়া হয় নি। ঠিকই গড়িতে এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু উল্লুকেরা ঘুমের ঘোরে কিভাবে এলার্ম বন্ধ করেছে নিজেরাও বলতে পারছে না।

সকালে উঠেই রাগ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে রোজা ভাঙ্গলাম। > তাহলে কিভাবে তুই এর কাফফারা করবে? - তুই কি আমার সাথে মশকরা করছিস? এবার কি করব বল। রাগ করে কিছু খেলে কি রোজা ভেঙে যায়? তুই তো বে-দ্বীন হলেও মাছলা- মাছায়েল ভালই জানিস। > ভুলে খেলে সমস্যা ছিল না কিন্তু তুই তো ইচ্ছে করেই খেয়েছিস। রাগ করে বউ তালাক দিলে তালাক হয়ে যায় আর রোজা।

গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে কিছুই খাস নি। আমার সাথে হোটেলে চল। আমরা হিন্দু হোটেলে গেলাম। তুহিনকে জিজ্ঞেস করলাম কি খাবে। সে বলল তার একটা কিছুই হলেই চলবে, এমনিতেই রোজা ভেঙে কিছু খেতে ভাল লাগছে না।

আমি খাসী অর্ডার দিলাম। এমন সময় তুহিনের খেয়াল হল এটা হিন্দু হোটেল। সে আপত্তি তোলল, খাসী তো হালাল হবে না, তুই বরং খেয়ে আয়, আমি বাইরে গিয়ে দাড়াচ্ছি। আমি তাকে চেপে ধরে বললাম, এখানে মাছ আছে, তুই বরং মাছ দিয়েই খা। না সে নাছোড়বান্ধা।

শেষ পর্যন্ত সে ডিম খেতে রাজি হল। পাশে নিপুকে পেয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা কিসের ডিম? নিপু বারবার অর্ডার ফিরিয়ে নিচ্ছিল, আর বিরক্ত হচ্ছিল। সে বলল, মামা, এইটা একেবারে খাঁটি মুসলমান মুরগীর ডিম, খাইলেই টের পাবেন। (সবাই কোনো এক বিচিত্র কারণে রেস্টুরেন্টকে হোটেল বলে, আমিও তাই করলাম)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।