৭১ এর চেতনা বুকে জ্বলছে অবিরত
কয়েক বছর আগের কথা। “আমি বামপন্থী, কিন্তু আমি নাস্তিক না” পাবলিক লাইব্রেরির বড় অডিটোরিয়ামে অধুনা নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরির আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে উক্ত মাদকউক্তি দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন ফরহাদ মজহার। ফল যা হবার, তাই হয়েছিলো। পরের দেড়’দুমিনিট চতুর্দিকে কেবল পোঁদকাঁপানো-হলফাটানো-গগনবিদারি-করতালি। সময়টা তখন গরম।
তালেবান বনাম মার্কিন। যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। সাম্রাজ্যবাদ বনাম ইসলাম। ইহুদিবাদ বনাম মুসলিম সভ্যতা। লাড়ায়ে টাকবীড়।
যুদ্ধ হয়। মৃত্য হয়। ধবংশ হয়। চাঙ্গা হয় যুদ্ধ-অর্থনীতির চাকা। নতুন কন্সট্রাকশনের খিদের নিচে দুমড়ে যায় লোকায়ত সভ্যতা।
তেলের বাজার সামনে আসে। আরো হয় অনেক কিছু। তবে সবকিছুর অলক্ষ্যেই ঘটতে থাকে আরো অনেক কিছু। ধর্ম দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ মুকাবিলা করাটাই একবিংশ শতকের শিক্ষা। বর্তমান সময়ের যুদ্ধ হলো মুসলমানবাদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদের যুদ্ধ।
এমন সব ঝালমুড়িতত্ত্ব প্রবল বিক্রমে আবারো সামনে আসে। মার্কেট পায়। পাইয়ে দেয়া হয়। আর এসবের মধ্যমনি হয়ে শহুরে শিকখ্যাত নাগরিক মধ্যবিত্তদের একুশ শতকীয় দার্শনিক হিসেবে লুঙ্গির নীচে জাঙ্গিয়া পরে নিয়ত ওয়াজরত থাকেন ফরহাদ মজহার। কে এই ফরহাদ মজহার? মুহুর্মুহু হস্তমৈথুনের ফলে ঠিকমতো বাল গজানোর আগেই ধোন বেঁকে যাওয়া শহুরে আবালোকদের তিনি সাক্ষাত লালন।
সাক্ষাত মার্ক্স। সাক্ষাত মুহাম্মদ। ক্রুসেড জেহাদ আর শ্রেণী সংগ্রামের এক অতিপ্রাকৃতিক সম্মিলন। চিন্তা ও ততপরতার এক অকুতোভয় সিপাহশালার। এসব শহুরে শিকখ্যাত আর নাগরিক আবালোকরা বেশিরভাগই অনেক কষ্টেসৃষ্টে বাপের নাম বা সর্বোচ্চ দাদার নাম পর্যন্ত বলতে পারলেও, পোঁদে বোমা ফাটালেও দাদার বাপ কি তার বাপের নাম মনে করতে পারে না বিধায় ফরহাদ মজহারই হ্যাগোর পয়গম্বর।
কসমপলিটন ঢাকায় সক্রিয় মুসলমান বিবেকানন্দের প্রেতাত্মা। এনজিওর কর্মসূচি। বিরাজনীতিকরণের আফিম। ইসলামের সুবাঁশ। সমাজতন্ত্রের রোমাঞ্চ।
কোটি কোটি টাকার বাজেট। শুধু বাংলাদেশে না, সারা দুনিয়াতেই এনজিওর চরিত্র এক। (যেসব ভদ্রবাঞ্চোতগণ এনজিওর মধ্যেও অনেক ইতিবাচক বালছাল খুঁজে পান, বা এনজিও ধারার মাধ্যমে গরীবের উন্নতি কিম্বা সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করা সম্ভব বলে ভাবেন; তাঁদের কথা আলাদা) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, এনজিওর কার বেতন কত কিম্বা কার কি পদ, তা থাকে রহস্যাবৃত। যে এনজিও যত বেশি দুই নম্বরি, সেটা সম্পর্কে তথ্য তত অপ্রতুল। ফরহাদ মজহার ওরফে উবিনীগ ওরফে নয়াকৃষি আন্দোলোন ওরফে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ওরফে নবপ্রাণ আন্দোলন ওরফে চিন্তা ওরফে একগাদা ধুর্তামি সম্পর্কিত তথ্যও সঙ্গত কারণে অপ্রতুল।
গিরিলের ফাঁক দিয়ে কেবল সামান্য কিছু জানা যায়। মজহারের কর্মচারিরা অবশ্য নানা জায়গায় উবিনীগকে এনজিও নয় বলে দাবি করেন। অন্যান্য নানান ধুনফুন আলাপ ০দান। আসল ঘটনা কি? বাংলাদেশের সরকার হলো বহুজাতিক কম্পানিগুলোর হুকুম পালনের দাস। তারা বিদেশী প্রভুদের / পরাশক্তির স্বার্থ সংরক্ষণ ও এজেন্ডা বাস্তবায়নে সদা ততপর।
এ জাতীয় গলা কাঁপানো কলম ফাটিয়ে রক্ত বেরুনো বুলিই আমরা মজহার ওরফে ইত্যাদি ইত্যাদির কাছ থেকে শুনে থাকি। ভিত্রের ঘটনা কি সত্যিই এরকম? এনজিও মাত্রই সরকারের সাথে অম্লমধুর সুসম্পর্ক মেইন্টেইন করে। মজহারও বেতিক্রম তো ননই বরং আরেককাঠি চড়া। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চীন সফরের সময় এই লোক ছিলেন অন্যতম বিশ্বস্ত সফরসঙ্গী। সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট পদে না থেকেও তিনি সেই সফরে সরকারের একজন পলিসিমেকার।
(খালেদা জিয়ার অত্যন্ত গুণী পুত্র তারেক রহমানের পরামর্ষক ও দার্শনিক হিসেবেও তিনি সাগ্রহে কর্মরত ছিলেন এবং তারেক রহমান একাধিকবার টাঙ্গাইলে উবিনীগের দুকানে শিখ্যাদীখ্যা নিতে গিয়েছিলেন; এমন গুজবও বাজারে আছে। কোনো ডকুমেন্ট না থাকায় এ প্রসঙ্গটিকে আলাপের বাইরে রাখছি) খালেদা জিয়া তথা বাংলাদেশ সরকারের এই উন্নয়ন সহযোগীটি নানাসময় নানাভাবে পুরস্কৃত হয়েছে। আগস্ট ২০০৪ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। “ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্রাটেজি এণ্ড একশন প্লান ফর বাংলাদেশ” শিরোনামের সেই ১১৩ পৃষ্ঠার সেই সরকারি প্রতিবেদনে সচরাচর যেসব সরকারি আগডুম বাগডুম ধুনফুন গাঁজাখুরি থাকে সেসবই আছে। কিন্তু অত্যন্ত তাতপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো এই সরকারি প্রজেক্টে উবিনীগ ওরফে নয়াকৃষি’র উদ্দেশ্যমূলক প্রশংসা।
২২ নম্বর পৃষ্ঠায় আলাদা বক্স করে বিশেষ মহব্বতের সাথে জেনেটিক ডাইভারসিটি রক্ষায় নয়াকৃষির পর্বতপ্রমাণ ভূমিকা লিপিবদ্ধ হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো ১১৩ পৃষ্ঠার এই ঢাউস প্রতিবেদনে আর তেমন কোনো এনজিওর উল্লেখ নেই। (পুরো প্রতিবেদন পাওয়া যাবে ইউএসএইডের ওয়েবসাইটে http://www.usaid.gov/bd/files/7b.NBSAP.pdf )। অধুনা পরাশক্তি ও দাতা এজেন্সিগুলোর কাছে বায়োডাইভারসিটি প্রসঙ্গটা বেজায় গরম। সরকারি দীর্ঘসূত্রিতা বাইপাস করে কোনো ‘মহান’ ডোনার যদি বাংলাদেশে এ বিষয়ে দান করতে চান তাহলে এই সরকারি রিপোর্ট পড়ে প্রথমেই তার মনে হবে ফরহাদ মজহার ওরফে নয়াকৃষির কথা।
দাতা সংস্থাটির কাছে মনে হবে নয়াকৃষি’ই তাদের ফান্ড পাবার জন্য সবচে যোগ্য এনজিও। ঐ প্রতিবেদনে সরকার বিশেষ আশা প্রকাশ করেছে যে তারা গ্লোবাল এনভায়রন্মেন্ট ফেসিলিটি (GEF), ইউএন্ডীপি (UNDP) ও এনজিওদের সহায়তায় এই প্রজেক্টের (NBSAP) মাধ্যমে পিয়ারেসপি (PRSP) বাস্তবায়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পরিহাস হলো, সরকারি প্রজেক্টে প্রশংশিত এই মুনাফেকটাই আবার রাস্তায় পিয়ারেস্পি বিরোধী কথাবার্তা বলে লঙ্কাকান্ড ঘটায়। ধোনব্যাকা স্বঘোষিত বালপন্থী’রা তা আবার হাঁ করে শোনে আর ঠপাঠপ তালিয়া বাজায়। ২০০১ সাল থেকে শুরু করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ফাও ও উবিনীগ এর সরাসরি ফান্ডিং ও প্রত্যক্ষ সক্রিয়তায় এক বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।
(দেখুন এই লিঙ্কে Click This Link ) লোকায়ত জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিষয়ক এই প্রজেক্টের অন্যতম কোলাবরেটর ছিলো উবিনীগ তথা নয়াকৃষি ধান্দালোন। জাতিসঙ্ঘ আর সহযোগী এসব প্রতিষ্ঠানগুলো দারিদ্র বিমোচোন আর ক্ষুধার বিরুদ্ধে কি কি বাল ছিঁড়ে আটি বান্ধে তা সবাই জানেন। মঝার রাও লুঙ্গির নিচে জাঙ্গিয়া পরে মানুষের সামনে কি টক শো’তে কি নয়াদিগন্তের পাতায় নিয়মিত এসবের বিরুদ্ধে বলেন। আর গোপনে তার কাজের নমুনা দেখুন ঐ ১২১ পৃষ্ঠার বিশাল ম্যানুয়ালে। পড়ুন।
ছবিগুলোও দেখুন। ঘৃণ্য এনজিওবাজির সেই বস্তাপচা প্রেজেন্টেশন। কৃত্তিমভাবে বানানো এন্ডোজিনাস পপুলেশন। সাজানো সঙস্কৃতি। ফান্ডবান্ধব সব তরিকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা আর এনজিও আর জাতিসঙ্ঘের সংস্থা আর ডোনার গ্রুপ সবকিছু মিলেমিশে খাওয়াখাওয়ির খ্যামটা নাচ। জাতিসংঘ আর বহুজাতিক ফান্ডদাতাদের ভাড়ায় খাটা এই নিকৃষ্ট পতিতাবৃত্তিকেই বাপমার ঠিক না থাকা (ভদ্রোভাষায় আইডেনটিটির ক্রাইসিসে থাকা) কোনো কোনো ধোনবেকা নাগরিক শিকখ্যাতগণ বেজায় বৈপ্লবিক কিম্বা একদম মৌলিক ও অভূতপূর্ব কর্ম বলে রায় দেন! ২০০৪ সালে এডিবি একটি বই প্রকাশ করে। এডিবির স্নেহভাজন ও গুডবুকে থাকা বাংলাদেশের কয়েকটি এনজিওর বিষয়ে। এসব এনজিওগুলো কিভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে রগরগে ভূমিকা রাখছে, তার তৈলাক্ত বিবরণসমৃদ্ধ সেই বই। (লিঙ্ক Click This Link ) বইটিতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রশংসিত হয়েছে ফরহাদ মজহার ওরফে উবিনীগের ভূমিকা।
সেমিনার সিম্পোজিয়াম টকশো নয়াদিগন্তে অহর্নিশ বহুজাতিক কম্পানি এডিবি বিশ্বব্যাঙ্কের মুণ্ডপাতের ভণ্ডামিরত ফরহাদ মজহারের প্রতি এডিবির স্নেহ ঝরে পড়েছে বইটির উবিনীগ চ্যাপ্ট্যারের ১৩৯ থেকে ১৪৮ পৃষ্ঠায়। এনজিও গঠনের শুরুর দিকে ১৯৯৯ সালে মজহার বিভিন্ন খ্রিস্টান মিশনারি সংস্থা থেকে পান অর্ধ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (দেখুন পৃষ্ঠা ১৪৬, শেষ প্যারা)। এনজিও খুলে, শুরুতেই মাত্র একটি সূত্র থেকে যে লোক এই পরিমাণ টাকা বাগায়, সেই লোক ধীরে ধীরে ডালপালা গজিয়ে আজ পর্যন্ত কত টাকা বানিয়েছে; তা তো অনুমান করাও দুরূহ। এডিবির গুডবুকে থাকা এই উবিনীগ ওরফে ফরহাদ মজহার কতটা হিংস্র ভয়ঙ্কর আর চতুর তা এডিবির ভাষ্যেই জানা যায়। নয়াকৃষি ওরফে ফরহাদ মজহার নানান সোর্স থেকে এনজিওবাজি করে অর্থের পাহাড় বানালেও মূলত এটা কাজ করে ক্রিশ্চিয়ান এইড সহ একাধিক খ্রিস্টান / বিতর্কিত এনজিওর পার্টনার হিসেবে (লিঙ্ক Click This Link , http://www.3churches.net/magazine/oct2005/ , আরো প্রচুর পুরোনো পিডিয়েফ আছে যেগুলোর লিঙ্ক এখন কাজ করছে না; আগ্রহী হলে মেইল করে দেয়া যাবে) এই ক্রিশ্চিয়ান এইড বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন আর মুক্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে নানান নিপীড়ন আর চক্রান্তের জন্য কুখ্যাত।
হাইতিতে ২০০৪ সালের রক্তাক্ত গণহত্যার জন্যও ক্রিশ্চিয়ান এইডের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তো এরকম এক হিংস্র খ্রিস্টান সংস্থার বাংলাদেশ পার্টনার হলেন তালেবানদের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তি হিসেবে মনে করা কি কবি হুমায়ুন কবীরের খুনের ঘটনায় একজন সন্দেহভাজন কি জেএমবিদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ফারাক খুঁজে না পাওয়া আপাতএলোপাথাড়িঅসংলগ্ন বামপন্থি শব্দ আওড়ানো ফরহাদ মজহার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।