আর কেন সম্মেহন-এ পাপ, থাক- ‘বেদনা আমারি থাক’
বিশ্বে কমপক্ষে ১৫ কোটি নারী খতনা প্রথার মতো বর্বরতার শিকার। সুপার মডেল ওয়ারিস দিরির মতে, আফ্রিকায় এখনো কুমারী মেয়েদের খতনা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে কুমারীদের প্রজননতন্ত্রের বিশেষ একটি অঙ্গকে কেটে ফেলা হয়। নারীর জৈবিক চাহিদা কমাতে এ প্রথা চালু হয়েছিল। এ ধারাটি শুধু আফ্রিকাতে নয়, ইউরোপ ও আমেরিকার মতো সভ্য সমাজেও প্রচলিত।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সভ্য সমাজে এমন অমানবিক প্রথা চালু থাকায় সেখানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা অযৌক্তিক। সভ্য সমাজের এই অমানবিক প্রথার শিকার আমি নিজেও। মাত্র তিন বছর বয়সে দুই বোনের সঙ্গে আমাকেও খতনা দেয়া হয়। খতনার কারণে দুই বোন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বেঁচে আছি শুধু আমি।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে আমার চেয়ে অনেক বেশি বয়সী এক পুরুষের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে আমার পরিবার। কিন্তু আম ওই বিয়ে থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পালিয়ে চলে যাই লন্ডনে। সেখানে এক ধনী আত্মীয়ের সঙ্গে বসবাস করতে শুরু করি। পরে ম্যাকডোনাল্ডে কাজ করি। হঠাৎ করে আমাকে একদিন আবিষ্কার করেন ফটোগ্রাফার টেরেন্স ডোনোভান।
তিনিই আমাকে ১৯৮৭ সালের ‘পিরেলি’ ক্যালেন্ডারের পাতায় তুলে আনেন। শুরু হয় আমার নতুন জীবনের পথচলা। মডেল হিসেবে আবির্ভূত হলাম। এরপর আমাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। চ্যানেল, লেভিস, এলওরেল এবং র্যাভলনের মতো টপ ডিজাইনারদের মডেলে পরিণত হলাম আমি।
১৯৯৮ সালে লিখলাম আমার জীবনীভিত্তিক বই ‘ডেজার্ট ফ্লাওয়ার’। এটা তখন বেস্টসেলার হয়।
বর্তমানে ওয়ারিস দিরি জাতিসংঘের অধীনে কুমারীদের খতনা বিলোপবিষয়ক কর্মসূচির স্পেশাল অ্যাম্বাসেডর। তার লেখা ডেজার্ট ফ্লাওয়ারের ওপর ভিত্তি করে ওই নামেই তৈরি হয়েছে একটি চলচ্চিত্র।
ওই ছবির প্রিমিয়ার শো’র আগে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, প্রতিদিনই নারীরা পাহাড় সমান বাধা অতিক্রম করছেন।
এ অবস্থায় প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা তাদের প্রতি অসম্মান দেখানো। তিনি আরো বলেন, কুমারীদের খতনা দেয়ার বিষয়ে আফ্রিকা মোটেও পাত্তা দেয় না। সেখানকার সরকার এ বিষয়ে কাউকে সহায়তাও করে না। এজন্যই বেসরকারি সংগঠনগুলোকে (এনজিও) এগিয়ে আসতে হবে। এরইমধ্যে এ বিষয়ে কাজ করতে গঠন করা হয়েছে ওয়ারিস দিরি ফাউন্ডেশন।
এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- কমপক্ষে ১৫ কোটি কুমারীকে ওই বর্বর খতনা প্রথার শিকার হতে হয়েছে। এ প্রথা এখন আফ্রিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই চালু আছে। ইউরোপ বা আমেরিকায় বসবাসকারী হাজার হাজার মা তাদের ছোট্ট কুমারী মেয়েদের খতনা করাচ্ছেন প্রথাগত বিশ্বাস থেকে। এর মাধ্যমে তাদের অনেকেই হারিয়ে যাচ্ছেন।
ওয়ারিস দিরির জীবনীভিত্তিক ওই ছবিতে দেখানো হয়েছে- প্রতিদিন বিশ্বে ৬ হাজার কুমারীকে খতনার শিকার হতে হয়।
কিছু মানুষের মধ্যে এমন বিশ্বাসও চালু আছে, যেসব নারীকে খতনা দেয়া হয় না তারা খাঁটি নন। তবে যাদের খতনা দেয়া হয়, তারা দীর্ঘস্থায়ী দৈহিক ও মানসিক বিশৃঙ্খলতা নিয়ে বেঁচে থাকেন। এ ছবিটি প্রদর্শনে সহায়তা করছে ফ্রান্সের দ্য ফাউন্ডেশন ইন সাপোর্ট অফ দ্য ডিগনিটি অ্যান্ড রাইটস অফ ওমেন নামের সংস্থা। এ সংস্থাটিও নারীদের খতনা প্রথা বন্ধের জন্য কাজ করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।