আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোগবাদ, র্দূনীতি ও কর্পোরেট বাণিজ্য (ষষ্ঠ পর্ব)


[ বিশ্বায়নের ডামাডোলে বিশ্বজুড়ে আজ চলছে ভোগবাদ দর্শনের প্রচন্ড দাপট। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর মনন আজ "ভোগেই তৃপ্তি"- এ বেদবাক্যে উজ্জীবিত। চারদিকে 'চাই, চাই আরো চাই" ধ্বনি। খোদ আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর গরীবতর দেশ এ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একাংশ পর্যন্ত এই ভোগবাদ দর্শনকে ক্রমান্বয়ে করে নিচ্ছে জীবনের ব্রত। এ ভোগবাদ দর্শনের স্বরূপ উন্মোচনের লক্ষ্যেই এ লেখার অবতারণা।

কয়েকটি পর্বে এ লেখাটি সম্পন্ন হবে। বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য কাঙ্খিত। ] প্রথম পর্ব: Click This Link দ্বিতীয় পর্ব: Click This Link তৃতীয় পর্ব: Click This Link চতুর্থ পর্ব: Click This Link পঞ্চম পর্ব: Click This Link ষষ্ঠ অধ্যায় বিশ্বব্যাপি সর্বগ্রাসী দূর্নীতি এবং ভোগবাদ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। দূর্নীতি মূলত: নৈতিকতা এবং মানবতা বিরোধী কার্যক্রম। বুশ কতৃক পরিচালিত ইরাকে আগ্রাসী যুদ্ধ ছিল পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মানবতা বিরোধী কার্যক্রম।

এই যুদ্ধের মূল কারণ বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর ইরাকের খনিজ সম্পদ লুন্ঠনের প্রয়াস। এ যুদ্ধ শুধুমাত্র নৈতিকতা বিরোধী ছিল না বরঞ্চ যুদ্ধটি সংগঠিত হয়েছিল আর্ন্তজাতিক আইনের সব বিধি নিষেধ অমান্য করেই। বাংলাদেশের লুম্পেন বুর্জোয়া শ্রেণী যে দূর্নীতি তরে থাকে মাত্রা বিবেচনায় বুশ কতৃক ইরাক আক্রমণ কি কম দূর্নীতি? আবার কর্পোরেট সংস্কৃতি যখন রাষ্ট্রের সব আইন মেনেও ধনী-দরিদ্রের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টির কার্যকারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন কি তাকে সুনীতি আখ্যা দেওয়া যায়? উন্নত বিশ্বে কর্পোরেটগুলো অনেক নৈতিকতা বিরোধী কার্যক্রমকে আইনসিদ্ধ করে নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানীগুলো যে নীতিহীন দূর্নীতিকে রাষ্ট্রীয় কিংবা আর্ন্তজাতিক আইনি কাঠামোয় সিদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে এর উৎসমুখ কোথায়? এর উৎসমুখ অনুধাবন করতে হলে আমাদেরকে বুঝতে হবে পুজিঁবাদী দেশগুলোতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মূলভাগীদার কারা এবং কারাই বা রাষ্ট্রের নেপথ্য চালিকা শক্তি। বর্তমান বিশ্বরাজনীতির ভরকেন্দ্র, পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কথাই বিবেচনা করা যাক।

যুক্তরাষ্ট্র তার রাষ্ট্রকাঠামোতে বহুবছর পুঁজিবাদী দর্শন চর্চা করে আজ নব্য পুজিঁবাদ তথা ভোগবাদী সমাজে পরিণত। ইংরেজী একটি প্রবাদ -- He who has the gold makes rules -- স্বর্ণের মালিক যিনি তিনিই হয়ে থাকেন আইন প্রণয়নকারী। পুজিঁবাদী বিশ্বের জন্য এ প্রবাদটি যে চরম সত্য তা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বিশ্লেষণেই প্রতীয়মান হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার ভাগীদার দুটি দল রিপাবলিক এবং ডেমোক্রেট কহুজাতিক কোম্পানীগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। অন্যান্য যে সব ছোট দল যারা পুঁজিবাদী দর্শনের বিপক্ষে এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবি মানুষ সহ সেখানকার ১৩% জনগোষ্ঠী যারা দারিদ্র সীমার নীচে রয়েছে তাদের সপক্ষে কথা বলে , সে সব ছোট দল মূলত: আর্থিক কারণেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারে না।

আমাদের দেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্র সহ উন্নত দেশগুলোতেও নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য টাকা একটি বড় উপকরণ। এই প্রস্তাবনা প্রতিফলিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের আর্থসামাজিক অবস্থান বিশ্লেষণে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের এ পর্যন্ত নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিদের অর্ধেকেরও বেশী উপরের দিকের ৩% ধনীক শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত। আর এদের কমপক্ষে ১২ জন হচ্ছে উচ্চমার্গের এলিট শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত। ২০০৫ সালের এক সমীক্ষায় জানা যায় যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩৫ জন রিপ্রেজেনটেটিভদের মধ্যে ১৪৩ জনই বিলিয়নার।

অন্যদিকে প্রতি ৩ জন সিনেটরদের মাঝে একজন বিলিয়নার। এই সব ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ কোন না কোনভাবে কর্পোরেট বা বহুজাতিক সংস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই তথাকথিত গণপ্রতিনিধিদের স্বার্থ মূলত: কর্পোরেট স্বার্থ। এখানে প্রসঙ্গত: উল্লেখ করা যেতে পারে ক্লিন্টন এবং বুশ প্রশাসন কতৃক প্রণীত GATT (General Agreement on Tariff and Trade) -এর একটি নীতিমালা সংশোধনের কথা। GATT এর পুরানো নীতিমালায় মানবেতর অবস্থায় শ্রমিকদের দিয়ে কিংবা পরিবেশ দূষণকারী ব্যবস্থায় পণ্য উৎপাদন করলে উৎপাদনকারীকে শাস্তি ভোগ করতে হত।

কর্পোরেট বাণিজ্যের স্বার্থে নতুন নীতিমালায় এ শাস্তি ব্যবস্থা রদ করা হয়। মোদ্দা কথা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা হয় কর্পোরেট বাণিজ্যের স্বার্থে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রাধীন আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ প্রভৃতির নীতিমালাগুলোও কর্পোরেট স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। যা-হোক, যুক্তরাষ্ট্র সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলো, যারা বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর মালিক সে সব দেশে দূর্নীতি দৃশ্যমান নয় কারন তারা বহুলাংশেই নৈতিক দূর্নীতিকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইন সিদ্ধ করে নিয়েছে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের প্রেক্ষাপট ভিন্ন।

চলবে .... [
 


আরো পড়ুন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।