আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোগবাদ, র্দূনীতি ও কর্পোরেট বাণিজ্য (পঞ্চম পর্ব)


[ বিশ্বায়নের ডামাডোলে বিশ্বজুড়ে আজ চলছে ভোগবাদ দর্শনের প্রচন্ড দাপট। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর মনন আজ "ভোগেই তৃপ্তি"- এ বেদবাক্যে উজ্জীবিত। চারদিকে 'চাই, চাই আরো চাই" ধ্বনি। খোদ আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর গরীবতর দেশ এ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একাংশ পর্যন্ত এই ভোগবাদ দর্শনকে ক্রমান্বয়ে করে নিচ্ছে জীবনের ব্রত। এ ভোগবাদ দর্শনের স্বরূপউন্মোচনের লক্ষ্যেই এ লেখার অবতারণা।

কয়েকটি পর্বে এ লেখাটি সম্পন্ন হবে। বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য কাঙ্খিত। ] প্রথম পর্ব : Click This Link দ্বিতীয় পর্ব: Click This Link তৃতীয় পর্ব: Click This Link চতুর্থ পর্ব: Click This Link পঞ্চম পর্ব ঙ) মানসিক প্রশান্তির অবলুপ্তি: ইতোমধ্যেই আলোচিত হয়েছে যে ভোগবাদ দর্শন হচ্ছে মানুষের মনে সৃষ্ট কৃত্রিম চাহিদার একধরণের ঘূর্ণিপাক। একটি চহিদা মেটানোর পরপরই মনোজগতে সৃষ্ট হয় নতুন নতুন পণ্যের চাহিদা। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার ফাঁদে পড়ে ভোগবাদী সমাজে মানুষ জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা অর্জন করা সত্ত্বেও ‌‍‍‌ 'সমাজ নির্ধারিত‍' মানসম্মত জীবন যাপনে আর্থিক কারণে প্রায়শ:ই হয় ব্যর্থ।

এর ফলে বেশীরভাগ মানুষেরই জীবিকায় নেই সন্তুষ্টি। সবাই আছে দৌঁড়ের উপর, কিভাবে উপার্জন বাড়ানো যায় সেই প্রচেষ্টায়। যাদের পক্ষে সম্ভব হয় তারা বাড়তি উপার্জনের লক্ষে একাধিক চাকরীতে হয় নিয়োজিত। বস্তুত: জীবিকা চুষে খাচ্ছে জীবনকে। আত্মার প্রশান্তির জন্য নিজস্ব সময় বের করা এখন অনেকের পক্ষেই প্রায় অসম্ভব।

জীবিকার কারণে মানুষের সামাজিক বন্ধনও হয়ে পড়ছে শিথিল। মানবিক মানুষ ক্রমশ: রূপান্তরিত হচ্ছে রোবটিক মানুষে। চ) মানুষের সামাজিক মর্যাদা নির্ধারণে বিকৃত মাপকাঠি: ভোগবাদী সমাজে ব্যক্তি মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয় তার অধিকারে ভোগ্যপণ্যের বাজারমূল্যের উপর। উদাহরণ স্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বে সামাজিকভাবে তারাই বেশী সম্মানিত যারা ব্যবহার করে থাকে আধুনিকতম মডেলের লিমুজিন, বিএমডব্লিউ, লেক্সাস, মার্সিডিস কিংবা অন্য কোন দামী ব্যান্ডেড গাড়ী এবং যাদের রয়েছে হাল ফ্যাশনের ভোগ্যপণ্য ব্যবহার করার ক্ষমতা। বস্তুত: ভোগবাদ মানুষের চিরায়ত মূল্যবোধে ফাটল ধরিয়েছে।

ব্যক্তি মানুষের মর্যাদা নির্ধারণে শিক্ষা-দীক্ষা, পরিশীলিত রুচিবোধ, মানবতা ইত্যাদি বিষয়ের মূল্য অনেকাংশে কমে এসেছে। শুধু পশ্চিমা বিশ্বেই নয় বরং বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও একই বাস্তবতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছ) সংস্কৃতির উপর আগ্রাসন: কর্পোরেট বাণিজ্য প্রসারের কারণে বিশ্বব্যপি বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সংস্কৃতি ক্রমশ: অবক্ষয়িত হতে চলছে। ভাষা থেকে শুরু করে পোষাক-আসাক এমনকি খাদ্যাভ্যাসের উপরও চলছে কর্পোরেট বাণিজ্যের নগ্ন আগ্রাসন। উদাহরণস্বরূপ ম্যাকডোনাল্ড সংস্কৃতি বিভিন্ন দেশের জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করেছে।

এমনকি বাংলাদেশের শহরকেন্দ্রিক নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশীয় নাস্তা যেমন পিঠা, চিড়া-মুড়ি, দই, শরবত/ডাবের পানির চেয়ে তথাকথিত ফাস্ট ফুড যেমন বার্গার/পিৎসা/চিকেন ফ্রাই এবং কোক পেপসির আবেদন বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। জ)ঋণ করেও ভোগ করার সংস্কৃতি: " ঋণ করেও ঘি খাও" - দার্শনিক চার্বাকের বহুল প্রচারিত বচন। বর্তমান ভোগবাদি সমাজ আক্ষরিক অর্থেই এই বচনকে সুকৌশলে ঋণকে পণ্যে রূপান্তরিত করে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। হাতে টাকা সেই, তা বলে কি পণ্য কিনবে না! (ভাবটা যেন, মেরেছো কলসির কাণি তা বলে কি প্রেম দেব না!) আছে ক্রেডিট কার্ড, হায়ার পারসেজের ব্যবস্থা। আর যদি হও হত দরিদ্র তাহলে আছে নোবেল বিজয়ী ড: ইউনুসের ব্যবস্থাপত্র ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প।

কিন্তু কোন ঋণই বিনা সুদে নয়। বরং সুদে-আসলে আসলের কয়েকগুণ হাতিয়ে নেওয়া হয় যেভাবে তা প্রায়ই ঋণগ্রহিতার পক্ষে বুঝা সম্ভব হয় না। ঝ) গণ মাধ্যমের চরিত্র হনন: একথা অনস্বীকার্য্য, জনমত সৃষ্টিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। অতীতে গণমাধ্যমগুলো সবসময়ই ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ভোগবাদী দর্শনের আওয়তায় গণমাধ্যমগুলো তাদের চরিত্র হারাচ্ছে।

উদাহরণ স্বরূপ, বুশ কতৃক ইরাক আক্রমণের নেপথ্যে গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকার কথা অস্বীকার করা যায় না। আগ্রাসী ঐ যুদ্ধের সপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলোর ন্যাক্কারজনক প্রচারণার কারণেই সেসময় মার্কিন জনগোষ্ঠির বড় একটি অংশ যুদ্ধের সপক্ষে ছিল। উল্লেখ্য, ইরাকের তেল সম্পদগুলোর উপর দখলদারিত্ব অর্জনের লক্ষে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর স্বার্থে বুশ প্রশাসন এ অন্যায্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল সে কথা বলাই বাহুল্য। মার্কিন গণমাধ্যম, বিশেষ করে মূলধারার ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত। আর গণমাধ্যমগুলোর অর্থের উৎস হচ্ছে কর্পোরেট পণ্যের বিজ্ঞাপণ।

সঙ্গত কারণেই গণমাধ্যমগুলো কর্পোরেট স্বার্থবিরোধী গণমুখী কোন প্রচারণায় নামতে পারে না। তাই বুশ কতৃক ইরাক আত্রমণের সময় গণমাধ্যমগুলো যুদ্ধের সপক্ষেই প্রচারণায় নামে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয় বরং পৃথিবীর প্রতিটি দেশেরই মূলধারার গণমাধ্যম ক্রমান্বয়ে হয়ে পড়ছে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত। চলবে .....
 


আরো পড়ুন


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।