[ বিশ্বায়নের ডামাডোলে বিশ্বজুড়ে আজ চলছে ভোগবাদ দর্শনের প্রচন্ড দাপট। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর মনন আজ "ভোগেই তৃপ্তি"- এ বেদবাক্যে উজ্জীবিত। চারদিকে 'চাই, চাই আরো চাই" ধ্বনি। খোদ আমেরিকা থেকে শুরু করে পৃথিবীর গরীবতর দেশ এ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একাংশ পর্যন্ত এই ভোগবাদ দর্শনকে ক্রমান্বয়ে করে নিচ্ছে জীবনের ব্রত। এ ভোগবাদ দর্শনের স্বরূপউন্মোচনের লক্ষ্যেই এ লেখার অবতারণা।
কয়েকটি পর্বে এ লেখাটি সম্পন্ন হবে। বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য কাঙ্খিত। ]
প্রথম পর্ব
দৃশ্যপট-১
ট্যা, ট্যা কান্নার শব্দ। বাচ্চা কাঁদছে। তারস্বরে শ্বাশুড়ীর চীৎকার, "বউমা, বউমা... বাচ্চা কাঁদছে- পিসু করেছে হয়তো কাঁথাটি বলে দিয়ে এসো "।
লিপি শোবার ঘরে ঢুকে। দেখে সত্যি সত্যিই বাচ্চা পিসু করেছে। লিপি বেশ গোছালো গৃহিণী। বাচ্চার শিওরে ধোয়া, রোদে শুকানো অনকগুলো কাঁথা ভাজ করা। লিপি ভেজা কাথাঁটি নোংরা কাঁথার বালতিতে রাখে।
বাচ্চাটিকে শুকনো কাঁথায় জড়িয়ে কোলে নেয়।
দৃশ্যপট-২
পপি চাকরি করে এক বহুজাতিক সংস্থায়। অফিসে যাওয়ার প্রক্কাল। রাতে পরানো বাচ্চার ডায়পার খুলে ওয়েট টিস্যু দিয়ে বাচ্চার হাগু ক্লিন করে সযত্নে। তারপর র্যাশ ক্রিম লাগিয়ে বাচ্চাটিকে পরিয়ে দেয় নতুন আরেকটি ডায়পার।
যাওয়ার আগে শাশুড়ীকে বলে যায়, "আম্মা, এখন বাজে ৮-টা। ১২-টার সময় ডায়পার বদলে দেবেন। এ ডায়পারটি ৪ ঘন্টা পর্যন্ত যায়। র্যাশ ক্রিম ও ওয়েট ট্যিসু ওর বালিশের কাছেই আছে। "
মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্ত সংসারের এ কল্পচিত্র দুটো খুব বেশী হলে দুই দশকের ব্যবধান।
না, এ দু'টো কল্পচিত্র উপস্থাপণার উদ্দেশ্য বউ-শাশুড়ীর চিরায়ত দ্বন্দ্ব বিশ্লেষণের জন্য নয়। বরং এখানে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি কাঁথা সংস্কৃতি থেকে ডায়পার সংস্কৃতিতে উত্তরণ প্রক্রিয়ায়।
আবহমান কাল থেকেই শিশু প্রতিপালনে কাঁথা বিবেচিত হয়ে এসেছিল এক অপরিহার্য্য উপকরণ হিসেবে। বহুজাতিক কোম্পানীর ব্যবসা প্রসারে আজ আমাদের দেশে অন্তত: উচ্চমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত শিশু প্রতিপালনে কাঁথার আধিপত্য অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। কাঁথা থেকে ডায়পারে উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সুস্থ-স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থেকে ভোগবাদী সমাজে অধ:পতন বললে কি অত্যুক্তি হবে?
প্রথমেই কাঁথা প্রসংগে আসা যাক।
সাধারণত: দাদী-নানীর শাড়ী কেটেই কাঁথা তৈরী করা হতো। কার্যত: তেমন কোন খরচই লাগতো না কাঁথা সেলাইয়ে। অনেকগুলো ছোট ছোট কাঁথা। এককালীন ব্যবহারের জন্য নয়। বরং ধুয়ে, শুকিয়ে বারবার ব্যবহার করা যায়।
বাড়তি প্রয়োজন একটি ওয়েলক্লথ; মোটামোটি একটি ওয়েলক্লথেই কেটে যেত একটি শিশুর শৈশবকাল।
এলো ডায়পারের যুগ। ডায়পারের যে কিছুটা উপযোগিতা নেই সে কথা বলবো ন্। কিন্তু এর উপযোগিতা বিচার করতে হবে সার্বিক বিবেচনায়। একটি ডায়পার একবারই ব্যবহার করা যায়।
ডায়পার ব্যবহারে বাচ্চার র্যাশ হলে (যা খুবই স্বাভাবিক) প্রয়োজন ন্যাপি র্যাশ ক্রিমের। হাগু ক্লিন করার জন্য প্রয়োজন ওয়েট টিস্যুর। এখন হিসেব করুন, একটি শিশুকে প্রাকৃতিক কাজের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য নিত্যদিনকার খরচের খতিয়ান। পপির হিসেব মত চার ঘন্টা পর পর ডায়াপার বদলাতে হবে। সে হিসেবে দিনে ডায়পার লাগে অন্তত: ৬টি।
বাজারে মোটামোটি ধরণের একটি ডায়পারের দাম কমবেশী ২৫ টাকা। সুতরাং শুধুমাত্র ডায়পারের পেছনেই দিনে খরচ ১৫০ টাকা- মাসে ৪,৫০০ টাকা। ন্যাপি র্যাশ ক্রিম, ওয়েট টিস্যু সহ মাসে অন্তত: ৬০০০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে দুধ, কাপড়চোপড় সহ আনুসাঙ্গিক খরচ। বহুজাতিক কোম্পানির ফাজলামো-- সবকিছুই ওয়ানটাইম ইউজ! তা না হলে ওদের বাণিজ্য চলবে কীভাবে! পপির মতোন মেয়েদের ভোগবাদের কারণে সংসারের বাড়তি খরচ মেটাতেই চাকরী করতে হয় অনেকটা বাধ্য হয়েই।
তবুও আমরা ক্রমশ:ই হয়ে পড়ছি ভোগবাদী দর্শনের সহজ শিকার। আমরা প্রশ্ন করতে শিখিনি, শিশু প্রতিপালনে ডায়পার কি সত্যিই অপরিহার্য?
.... চলবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।