আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের 'এই সেই' কাহন...

আই এম নো বডি...

বাংলাদেশের জুডিশিয়াল ব্যবস্থার উপর আমার পুরোপুরি আস্থা ছিলোনা বিশেষত নিম্ন আদালতের বিচারকদের ভূমিকার জন্যে তারপরও বাংলাদেশের অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সুপ্রিম কোর্টের উপর একটা ভরসা ছিলো। সত্যি বলতে কি আমার নিজের একজন আত্মীয় যিনি একজন অতিরিক্ত জেলা জজ তার জীবন যাপন পদ্ধতি দেখে আসলেই বিচারকদের অন্য জগতের বাসিন্দাই মনে হতো। তিনি নিজে কখনো বাজারে যান না, বিচারাধীন মামলার কোন আত্মীয় স্বজনদের সাথে বাসার কাউকে কথা বলতে দেন না, ছোটবেলায় একবার বেড়াতে গিয়েছিলাম তার বাসায় তখন তার এক পিয়ন আমাকে হোটেলে নিয়ে মিষ্টি খাইয়েছিলেন সেটা শুনে তিনি খুব রাগ করেছিলেন কিন্তু ছোট হবার কারনে তখন বুঝিনি কেন তিনি এইরকম রাগ করেছিলেন; পরে বুঝেছি। যাইহোক, এইরকম অনেক কিছু থেকেই হাইকোর্টের বিচারকদের প্রতি একধরনের আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন হয়েছিল। কিন্তু গত পরশুদিন মাহমুদুর রহমান কে আদালত অবমাননার মামলায় ৬ মাসের কারাদন্ড দেবার প্রাক্কালে তারা যেসব মন্তব্য করেছেন তারপর এই আস্থা এবং শ্রদ্ধার মোটামুটি পুরোটাই আমার বিলীন হয়ে গেছে।

৬ মাসের কারাদন্ড খুব বড় কোন ব্যাপার না; কারন কোন সাজা না দিলে তা বিচারকদের প্রেস্টিজ ইস্যুর ব্যাপার হয়ে যেত এবং মাহমুদুর রহমান হয়ে যেতেন রাতারাতি বাংলাদেশের একজন অবিসংবাদিত পুরুষ সেটা হতে দেবার কোন সুযোগ দেবার কোন কারন নেই। কিন্তু dUদূঃখজনক ব্যাপার হলো বাংলাদেশে একজনের সর্বোচ্চ শিক্ষিত হবার মাপকাঠির ব্যাপারে তাদের মূল্যায়ন। সেদিন মাহমুদুর রহমান আদালতে যা বলেছেন তা থেকে ঊঠে এসেছে যে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকগন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষের ব্যাপারে কি ধারনা পোষন করেন। ১। তাদের কাছে বুয়েটের ডিগ্রী 'এই সেই' অথচ এটা বলার অপেক্ষা রাখে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কুলে ভালো ছেলেদের দেওয়া হয় সাইন্স (অল্প কিছু ছাত্র ইচ্ছে করেই আর্টস বা কমার্সে যায়)।

এরপর সাইন্স থেকে এইচ এস সি ছাত্র যারা পাশ করে তাদের মধ্যে প্রথম সারির যারা তারাই একটি কঠিন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বুয়েটে চান্স পায়। আমাদের বিচারকগন কি জানেন এইসব? বুয়েটের একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে বুয়েটের ডিগ্রীর ব্যাপারে বিচারকদের এই মূল্যায়ন আমাকে অপমানিত করেছে এবং আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার অবমাননা করেছেন তারা। ২। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ক', 'খ' বা 'গ' বিভাগ নয়, বাংলাদেশের ব্যবসায় প্রশাসনের উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে প্রতিযোগিতামুলক প্রতিষ্ঠান আই বি এ এর এম বি এ ডিগ্রীও তাদের কাছে 'এই সেই'। আই বি এ এর এম বি এ ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তাদের কি কোন ধারনা আছে বলে আমার মনে হচ্ছেনা।

যদি থাকত এই ধরনের মন্তব্য তারা করতেন না। তারা এই মন্তব্যের মাধ্যমে IBAIBAIBAIBAIBAআই বি এ এর সকম এম বি এ গ্রাজুয়েটদের তারা অবমাননা করেছেন। ৩। বাংলাদেশের একটি উদীয়মান শিল্প হলো 'সিরামিক শিল্প' যার কদর ইতিমধ্যে ইউরোপীয় দেশগুলোতে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাহমুদুর রহমান প্রথমে শাইনপুকুর সিরামিকসে চাকুরি করার সময় এই পন্যকে বিদেশের বাজারে জনপ্রিয় করার জন্যে কাজ করেছেন তেমনি পরবর্তীতে নিজের প্রতিষ্টান 'আর্টিসান সিরামিকস' এর মাধ্যমেও দেশীয় এই শিল্পের প্রসারের জন্যে কাজ করেছেন নিরলসভাবে।

এরই অংশ হিসেবে জাপান থেকে নিয়েছেন এই ব্যাপারে ডিপ্লোমা। সেই ডিগ্রীও আমাদের সবচেয়ে উচ্চ আদালতের বিচারকদের কাছে 'এই সেই'। তাহলে তাদের কাছে 'এই সেই' না হওয়ার যোগ্যতা কি হতে হবে?? প্রথম আলোর এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট থেকে জানতে পেরেছিলাম (যদিও সঠিক দিন ও তারিখ দিতে পারছিনা) আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিচারকগন দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিভাগ নিয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েছেন। তবে উনারা কি চান সবাই তাদের মত শিক্ষাগত যোগ্যতাই অর্জন করুক তাইলেই আর 'এই সেই' উপাধী পাওয়া যাবেনা। পরশুদিন আদালতে মাহমুদুর রহমান বিচারকদের প্রতিটি সমালোচনামূলক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিচক্ষনতা এবং বলিষ্ঠভাবে যুক্তি সহকারে।

আদালত অবমাননার অনেক কেস এর আগে হয়েছে কিন্তু মাহমুদুর রহমানের এইরকম বলিষ্ঠ, আপোষহীন এবং যৌক্তিক অবস্থানের পর প্রথমবারের মত এইরকম কেসে তাকে সাজা দেবার পর কি বিচারকরা খুব মানসিক শান্তিতে আছেন?? তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন শিল্প উদ্যোক্তাকে যারা 'এই সেই' বলে সম্বোধন করেন তারা বিচারক হিসেবে যতই স্বনামধন্য হোক, ব্যক্তিহিসেবে যে তারা মাহমুদুর রহমানের পায়ের জুতার সমকক্ষও নন এটা আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.