আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতের বঙ্গবন্ধু-দর্শন



পৃথিবীতে হাতেগোনা প্রথিতযশা দু-একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) শ্রদ্ধা করি এবং করব। ’ ‘শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব বলেছিলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে তিনি কিছু করবেন না। কিন্তু পরে করেছেন। এ জন্যই তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।

’ প্রথম বক্তব্যটি জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর। গত ১৬ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ বক্তব্য দেন তিনি। দ্বিতীয় বক্তব্যটি নিজামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদের। ৫ আগস্ট এক আলোচনা সভায় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের এ সমালোচনা করেন। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশংসা করা শুরু করেন জামায়াতের নেতারা।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতের বঙ্গবন্ধু বন্দনা আরও বেড়ে যায়। মতিউর রহমান নিজামী গ্রেপ্তারের আগে গত জুন মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু সম্বোধন করেন তাঁর বক্তৃতায়। কিন্তু দলের পাঁচ নেতা গ্রেপ্তারের পর আবারও বঙ্গবন্ধুর নিন্দা শুরু করেন জামায়াতের নেতারা। জামায়াতের গত দুই বছরের বিভিন্ন আলোচনা সভার বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণের আগে প্রায় ‘স্বাধীনতার স্থপতি’ কথাটিও বলতেন। তবে জামায়াতের নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর এখন বঙ্গবন্ধুকে ইসলামবিরোধী, অত্যাচারী শাসক প্রভৃতি বলা হচ্ছে।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান অবশ্য প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব সম্পর্কে আমাদের বক্তব্যের কোনো বদল হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমিরে জামায়াত (নিজামী) ওনাকে স্বাধীনতার স্থপতি বলেছেন, জামায়াত এখনো সেটাই বলে। ’ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জামায়াতের নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোথায় কে কী বলেছে, আমি শুনিনি। এমনটি বলার কথা নয়। যদি কেউ বলে থাকে, তাহলে তার সঙ্গেই কথা বলা উচিত।

’ দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ বলেন, ‘জামায়াত সবচেয়ে সুবিধাবাদী দল। তারা আগে পিঠ বাঁচানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করেছিল। তারা মনে করেছিল, বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করলে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করব না। এখন যেহেতু বিচার শুরু হয়ে গেছে, এ জন্য আবার বঙ্গবন্ধুর নিন্দা করা শুরু করেছে। ’ বঙ্গবন্ধু বন্দনা এবং...: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকেই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে ‘স্বাধীনতার স্থপতি’, ‘মহান নেতা’ সম্বোধন করে আসছেন জামায়াতের নেতারা।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জামায়াত আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রের স্থপতি বলেন। পরদিন তিনি বলেন, ‘মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যতটা না শ্রদ্ধা করে, আমি নিজে শ্রদ্ধা করি তারচেয়ে বেশি। ’ ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলী বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন না দেখলে আমরা ১৪ কোটি মানুষ বঙ্গীয় এই ব-দ্বীপে স্বাধীনতা লাভ করতে পারতাম না। ’ জামায়াতের আমির নিজামী অবশ্য নিজে বঙ্গবন্ধু শব্দটি উচ্চারণ করতেন না। তবে গত ১৬ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি প্রথম বঙ্গবন্ধু শব্দটি উচ্চারণ করেন।

নিজামী বলেন, ‘পৃথিবীতে হাতেগোনা প্রথিতযশা দু-একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন। ’ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা প্রথম আলোকে একবার বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি। তিনি কয়েকটা ভালো কাজ করেছেন। বাংলাদেশে এসে প্রথমেই বলেছেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। অর্থাৎ রাষ্ট্রের পরিচয় তিনি চিহ্নিত করেছেন।

এরপর তিনি ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছেন, ওআইসির সদস্যপদ নিয়েছেন। এ দুটি কাজ করার জন্য তিনি আমার দোয়া পাওয়ার অধিকারী। ’ অথচ ৫ আগস্ট আল-ফালাহ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব বলেছিলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে তিনি কিছু করবেন না। কিন্তু পরে করেছেন। এ জন্যই তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।

’ বঙ্গবন্ধু কি সত্যিই ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন? জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এমনটি বলার সুযোগ নেই। আগে থেকে আমরা যে কথা বলে এসেছি, সেটাই ঠিক। ’ b (প্রথম আলো)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.