ইউনিলিভার বহু বছর ধরে মেয়েদের ত্বক ফর্সা করার নানা রকমের কসমেটিকস বিক্রি করে প্রতারণা করে চলেছে। সম্প্রতি শুরু করেছে ছেলেদের ত্বক ফর্সা করার চালিয়াতি। স্পষ্টত:ই এসব বর্ণবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ধারণা। কারণ কোন বিশেষ গাত্রবর্ণ অন্য গাত্রবর্ণ থেকে উন্নত বা শ্রেয় হতে পারে না। সাদা চামড়ার পশ্চিমারা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে বিভিন্ন দেশ দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করে।
মানবতার বিরুদ্ধে এর চেয়ে বড়ো কোন অপরাধ আর সংঘটিত হয় নি।
ইউনিলিভার সরাসরি বিতাড়িত সাম্রাজ্যবাদের পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা করে চলেছে। তাদের প্রতারণার সব চেয়ে বড়ো মাধ্যম বিজ্ঞাপন।
প্রতারণার কয়েকটি নজির দেয়া যাক-
ক) কোন কেমিক্যাল দিয়ে ত্বক ফর্সা করা যায় না।
খ)ত্বক ফর্সা হলেই সব দক্ষতা আপনা আপনি চলে আসে না। দক্ষতা অর্জন করতে হয়। যেমন একটা বিজ্ঞাপনে বলা হয়, সুন্দর মুখ আর একটু এক্সপ্রেশন বাস বাজিমাত। সে-ই কালো নায়িকা বলে নাটকে দর্শক হচ্ছিলো না। এখন তারকা , সবাই আঙুলের ইশায়ায় তার পিছু পিছু ছুটছে থিয়েটারের ভেতর।
(বিশেষ কোন চতুষ্পদী প্রাণীর মতো ?) অভিনয়কলা শুধু প্রাচ্যে নয় ইউনিলিভারের পাশ্চাত্যেও বহু সাধনার বিষয়। রঙের নাম করে সে সাধনাকে অপমান করা হয়েছে।
গ) বিশেষ ধরনের পোষাক ( পাশ্চাত্যের) পরাকে সফলতার পূর্বশর্ত বলে তুলে ধরা হচ্ছে।
ঘ) ফর্সা হলেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় না। ভাবখানা এমন, চেহারার ফর্সা ভাব দেখেই ইন্টারভিউ বোর্ডের কর্তারা আত্মবিশ্বাস আবিষ্কার করে ফেলে।
ঙ) এতোদিন ফেয়ারনেস বিক্রি করে এখন বলছে শুধু ফেয়ারনেসই যথেষ্ট নয়। তার মানে নতুন পন্য গছানোর নতুন ফাঁদ।
এইসব প্রতারণার সাথে আঘাত করতে শুরু করেছে সংস্কৃতি আর মূল্যবোধের ওপরও। আশির দশক পর্যন্ত ইউনিলিভারের বিজ্ঞাপনে মডেল থাকতো আমাদের তারকারা। ধীরে ধীরে আমাদের তারকাদের বাদ দিয়ে বাইরের সাদা চামড়ার তারকাদের দিয়ে তৈরি বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু করে।
এর ভেতর দিয়ে আমাদের তারকা হবার যোগ্যতাকেও খাটো করা হলো। তাদের মাপে আমাদের তারকারা বড়ো তারকা বা আন্তর্জাতিক মানের তারকা হবার যোগ্য নয়।
আগে বিদেশী তারকার বিজ্ঞাপনে বাংলা ডাবিং থাকতো। এখন বাংলাকেও বিসর্জন দিয়ে সোজা ইংরেজীতে বিজ্ঞাপন দেখানো শুরু হয়েছে। আমার ভাষাকেও ব্রাত্য করে ফেলা হচ্ছে।
অথচ এই ভাষার জন্য রক্ত দিয়ে সেই পথ ধরেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। বাংলা ভাষা আর সংস্কৃতির টিকে থাকা এবং আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার মধ্যেই নিহিত আমাদের অনেক রক্তে পাওয়া স্বাধীনতার সার্থকতা।
ইউনিলিভার বিজ্ঞাপন আর বানিজ্যের ভেতর দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে পরিহাসে পরিণত করার চেষ্টা করে চলেছে। ইউনিলিভার ব্যবসা করুক আপত্তি নেই। কিন্তু ব্যবসার ভেতর দিয়ে অগোচরে তিলে তিলে একটি জাতির মর্যাদাবোধকে নষ্ট করে আবার নব্য সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি তৈরির চেষ্টা প্রতিহত করতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে ব্যবসার ছল ধরেই।
পুনশ্চ: আগে নাম ছিলো লিভার ব্রাদার্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এখন ইউনিলিভার নাম দিয়ে একত্রিত করা হয়েছে। এটাও একটা বড়ো সঙ্কেত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।