আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজধানীর জুরাইনে মা ও তার দুই সন্তানের আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে

সমাজকে বদলানোর জন্য নিজেকে আগে বদলানো প্রয়োজন। আসুন আমরা সবাই বদলে যাই সত্যের আলোয়।

টানা ৬০ দিনের মাথায় রাজধানীর জুরাইনে মা ও তার দুই সন্তানের আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত করা হয়েছে স্বামী রাশেদুল কবির ও দ্বিতীয় স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা স্মৃতিসহ ৯ জনকে। গতকাল আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

অভিযোগপত্রে ৪৪ জনকে সাী করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দুইজন ১৪৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। চার্জশিটভুক্ত অপর অভিযুক্তরা হলেন-শফিকুল কবির, তার স্ত্রী নূরবানু, জামাতা দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী, মেয়ে কবিতা কবির, সুখন কবির, ড্রাইভার আলামিন ও জুরাইনের ওষুধ বিক্রেতা আবদুল গাফফার। দুপুরে ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান ও ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তাদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

চার্জশিটে বলা হয়েছে-মানসিক নিপীড়নের কারণে রিতা ও তার দুই সন্তান পায়েল ও পাবন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয় বলে প্রমাণ মিলেছে। ঘটনাস্থলে পাওয়া ডায়েরি, দেয়াল লিখন ও আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। গাড়ির ড্রাইভার আল আমিন মাইক্রোবাসের লোভে পড়ে দয়াগঞ্জে গাফফারের ওষুধ ফার্মেসি থেকে ঘুমের ট্যাবলেট এনে দেয়। তার উপস্থিতিতে প্রথমে পাবন পরে পায়েল ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করে। তাদের মৃত্যুর পর রিতা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মারা যান।

গত ১১ই জুন জুরাইনের আলমবাগের ২২৯ নম্বর তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সাংবাদিক শফিকুল কবিরের ছেলে রাশেদুল কবিরের স্ত্রী ফারজানা কবির রীতা (৩৫) তার ছেলে কবির ইশরাক পাবন (১২) ও মেয়ে রাইসা রাশমিন পায়েলে (১০) একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনার পরদিন ১২ই জুন নিহত রীতার মা মাজেদা বেগম বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ইন্সপেক্টর শেখ মাহবুবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, মামলার আসামিদের স্বীকারোক্তি, ৪৪ জন সাীর জবানবন্দি, ময়না তদন্তের রিপোর্ট, ঘটনাস্থলের দেয়াল লিখন ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তদন্তে পারিবারিক কলহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। আর সে কারণেই তারা আত্মহত্যা করেন। আসামিদের সবাই এ ঘটনায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে অনুশোচনা করেন।

রিতার স্বামী রাশেদুল কবির রিতার চাচাতো বোন স্মৃতিকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন কারণে রিতার ওপর নির্যাতন চালাতো রাশেদুল। স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে ও নির্যাতন সইতে না পেরে রিতা তার সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যা করেন। তিনি বলেন, বিয়ের আগে দীর্ঘদিন ধরে স্মৃতি ওই বাসায় থেকে পড়াশোনা ও রিতার সন্তাদের দেখাশোনা করত। প্রথমদিকে স্মৃতি ও রাশেদের প্রেম ও বিয়ের কথা দুই পরিবারের কেউ জানত না।

পরে রাশেদ বাসায় অনিয়মিত হয়ে পড়লে বেরিয়ে আসে দ্বিতীয় বিয়ের কথা। এর পরই রিতার সঙ্গে রাশেদুলের দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সময় রিতা তার শ্বশুর শফিকুল কবির ও শাশুড়ি নুরবানুর কাছে সহযোগিতা চেয়েও পায়নি। রিতার স্বামী ও তার শ্বশুর-শাশুড়িও রিতার ওপর নির্যাতন চালাত। এ বিষয়ে ঘটনার কয়েক মাস আগে রিতা থানায় একটি জিডিও করেন।

এক পর্যায়ে সাংবাদিক শফিকুল কবির গত ৬ই মে রিতাকে তার দুই সন্তান নিয়ে ৩০শে জুনের মধ্যে ঘটনাস্থলের বাড়িটি ছেড়ে চলে যেতে বলেন। রাশেদুল ও স্মৃতি নিজেদের অনুশোচনা করে পুলিশকে জানায়, গত জানুয়ারি মাসে রিতা তার দুই সন্তানকে নিয়ে সিদ্ধেশ্বরীতে গিয়ে ছোট বোন স্মৃতির পা ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় রিতা তার স্বামীকে ভিা চান স্মৃতির কাছে। দুই সন্তান পাবন ও পায়েল তাদের বাবা রাশেদের হাত ধরে টানাটানি করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা কেউই শোনেননি অবুজ দুই শিশু ও হতভাগা রিতার কোন অনুরোধ।

সব ধরনের আকুতি-মিনতি করেও তারা মন গলাতে পারেননি রাশেদ এবং স্মৃতির। প্রায় আধা ঘণ্টা পর হতাশ হয়েই সেখান থেকে ফিরে যেতে হয়েছে রিতাকে। সুত্রঃ মানবজমিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।