আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেয়ামতের ভয়াবহতা ও তারপর-পর্ব-৫

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি
কেয়ামতের দিন যাকে প্রথম ডাকা হবে, তিনি হলেন আদম আলাইহিস সালাম আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন যাকে প্রথম ডাকা হবে তিনি হলেন আদম আলাইহিস সালাম। তিনি তার সন্তানদের দেখবেন। বলা হবে এ হল তোমাদের পিতা আদম। তিনি তখন বলবেন, উপস্থিত হয়েছি হে প্রভূ! আপনার কাছেই কল্যাণ। আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, তোমার সন্তানদের মধ্যে জাহান্নাম বাসীদের নিয়ে আসো।

আদম বলবেন, হে প্রভূ, কত জনকে নিয়ে আসবো? আল্লাহ বলবেন, শত করা নিরানব্বই জনকে নিয়ে আসো। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যখন আমাদের একশ জনের মধ্য হতে নিরানব্বই জনকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে তাহলে বাকী থাকবে কে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন অন্যান্য উম্মতের সংখ্যার তুলনায় আমার উম্মত হবে এমন অল্প যেমন একটি কালো ষাড়ের গায়ে সাদা পশম থাকে। (বর্ণনায় : বুখারী) আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ বলবেন হে আদম! তখন আদম বলবেন, হে প্রভূ আমি উপস্থিত। আপনার হাতেই সৌভাগ্য ও সকল কল্যাণ। আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামীদের আমার কাছে উপস্থিত করো।

আদম বলবেন, কত জন জাহান্নামী? আল্লাহ বলবেন প্রতি হাজারে নয় শত নিরানব্বই জন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন এটা হল সেই সময় যখন ভয়াবহ অবস্থার কারণে বাচ্চারাও বুড়ো হয়ে যাবে। প্রসব কারীনিরা প্রসব করে দেবে। আর তুমি মানুষকে দেখবে নেশাগ্রস্ত অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। কিন্তু আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠিন।

সাহাবায়ের কেরামের কাছে বিষয়টা কঠিন মনে হল। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি সে, যে মুক্তি পাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের চার ভাগের একভাগ হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের তিন ভাগের একভাগ হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম।

তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, আমি আশা করি জান্নাতীদের অর্ধেক হবে তোমরা। এ কথা শুনে আমরা আলহামদুলিল্লাহ বললাম ও আল্লাহ আকবর বললাম। তিনি বললেন, অন্যান্য জাতির তুলনায় তোমাদের সংখ্যা হবে এমন যেন একটি কালো ষাড়ের গায়ে কিছু সাদা লোম থাকে। অথবা গাধার পায়ের গোছার সাদা অংশের মত। (বর্ণনায় : বুখারী ও মুসলিম) হাদীস দুটো থেকে শিক্ষা, মাসায়েল ও জ্ঞাতব্য : এক. দেখা গেল এক হাদীসে শত করা নিরানব্বই জন জাহান্নামী হবে বলা হয়েছে।

আবার অন্য হাদীসটিতে এক হাজারে নয় শত নিরা নব্বই জনের কথা বলা হয়েছে। আসলে কোনটি সঠিক। এর উত্তর হলো দুটোই সঠিক। যেখানে একশ জনে নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে উম্মতে মুহাম্মাদী উদ্দেশ্য হবে। অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনের পরে যে সকল মানুষ জন্ম গ্রহণ করেছে তাদের একশ জনের একজন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে।

আর যেখানে এক হাজারে নয় শত নিরানব্বই জনের কথা বলা হয়েছে সেখানে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছে তাদের হাজারে একজন মুক্তি পাবে। দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতীদের চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ সর্বশেষে অর্ধেক হবে তার অনুসারীদের মধ্য থেকে যে কথা বলেছেন সেটা হল তার আশা-আকাংখা। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার এ আশা পূরণ করবেন বলে হাদীসে এসেছে। তিন. উম্মতে মুহাম্মাদীর ফজিলত ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল এ হাদীস দিয়ে। মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে তারা জান্নাত বাসীদের মধ্যে সংখ্যায় অনেক বেশী হবে।

চার. যখন জাহান্নামী আর জান্নাতীদের বাছাই করা হবে তখনকার অবস্থার ভয়াবহতার একটি চিত্র এ হাদীসে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ নিজে এ সম্পর্কে বলেছেন : وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ ﴿59﴾أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آَدَمَ أَنْ لَا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ ﴿60﴾ وَأَنِ اعْبُدُونِي هَذَا صِرَاطٌ مُسْتَقِيمٌ ﴿61﴾ وَلَقَدْ أَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيرًا أَفَلَمْ تَكُونُوا تَعْقِلُونَ ﴿62﴾ هَذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ ﴿63﴾ اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ ﴿64﴾ (سورة يس) আর [বলা হবে] হে অপরাধীরা, আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও। হে বনী আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ? আর আমারই ইবাদাত কর। এটিই সরল পথ।

আর অবশ্যই শয়তান তোমাদের বহু দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা অনুধাবন করনি? এটি সেই জাহান্নাম, যার সম্পর্কে তোমরা ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছিলে। তোমরা যে কুফরী করতে সে কারণে আজ তোমরা এতে প্রবেশ কর। (সূরা ইয়াসীন, আয়াত ৫৯-৬৪) পাঁচ. ভাল কোন কিছু শুনলে আলহামদুলিল্লাহ বলা ও আল্লাহু আকবর বলা সুন্নাত। লেখকঃ আব্দুল মালেক আলী আল-কুলাইব অনুবাদঃ আবদুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.