আমরা ঊনিশ জন। সাথে আয়োজকরা।
Click This Link
নিরীহদর্শন বান্দরের কীর্তি
ট্রেনিংয়ে গেছি আমরা ১০টি দেশের ১৯ জন। উগান্ডা থেকে আর পাকিস্তান থেকে সর্বাধিক ৩ জন করে। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, লাও, শ্রীলঙ্কা আর ভিয়েতনাম থেকে ২ জন করে আর আলজিরিয়া, কেনিয়া এবং তানজানিয়া থেকে ১ জন করে।
উগান্ডার মিসেস রোজেট্টি নাবুম্বা নায়েঙ্গে রাশভারী মাঝবয়েসী। সাথে আছেন মিস ইউডায়া নানতেগে। রোজেট্টির বিপরীত। সারাক্ষণ ব্যস্ত। তবে দু'জনের মিল হলো চুলের ফ্যাশনে।
চিকন বেনি করে সবগুলোকে জড়ো করে পোনিটেল আকারে বেঁধে রাখা। এ নিয়ে পাকিস্তানের দীর্ঘদেহী সুদর্শন ইমরান আহমেদের ( আমি ডাকতাম ইমরান খান ) খুব চিন্তা। এটা কিভাবে করে। গোসলের সময় বেনি খোলা হয় কি না ? না খুললে শুকায় কিভাবে ? আমি আলগোছে বললাম তুমি নানতেগের সাথে কথা বলতে পারো। কিন্তু নানতেগের চপলতা দেখে ইমরান আর সাহস পেলো না।
দুপুরে খাবার পর সেশন শুরুর অপেক্ষায় আছি। কেউ কেউ ঝিমাচ্ছিলো। এর মধ্যে উগান্ডার অতি নিরীহদর্শন তৃতীয় সদস্য কামবুগু মোহামেদ মুসা মাইক চালু করে কথা শুরু করলো- ''ভদ্র মহিলা ও মহোদয়গন, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবার জন্য দু:খিত। আমি আপনাদের বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে জরিপ চালাতে চাই। আমাকে দিয়েই শুরু করি।
আমার এক স্ত্রী ও এক কন্যা। আমার স্ত্রীর আরো ৩টি পদ শূন্য আছে। ''
সারা ঘর হাসিতে ফেটে পড়লো। তবে সবাই সুবোধ বালক বালিকার মতো নিজ নিজ তথ্য পেশ করলো। সেখানেও মজা জমে উঠলো।
চঞ্চলা হরিণী নানতেগে বিয়ের তথ্য দেবার সময় লজ্জায় মরে যেতে জানালো সে এখনো অবিবাহিতা। আলজিরিয়ান তরুণী ইলহান খালফানিও অবিবাহিতা। ভিয়েতনামের মিস নগুয়েন দিয়েপ খুব সহজভাবে জানালো সে অবিবাহিতা। আরেক ভিয়েতনামী মিস লি তাই ফুয়ং খুব লাজুক মুখে জানালো, সে বিবাহিতা। এই খবরে নাইজিরিয়ার মাদিনী হামাদ মাদিনী খুব হতাশ হলো।
যদিও মাদিনীও বিবাহিত।
রসোট্টির পালা আসার পর তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, বিয়ে হয়েছিলো তার। কিন্তু এখন ''অবিবাহিত''। আবার হাসির হল্লা উঠলো।
কম্বোডিয়ার নও সুবান্দারা তার স্ত্রী সন্তানদের বর্ণনা দিলেন। যখন আরেক কম্বোডিয়ান তান সকুনের পালা এলো, তখন দেখি সে তার বসের ( সুবান্দারা) মুখের দিকে চেয়ে আছে। বসের মাথা নাড়া দেখে (অনুমতিসূচক) জানালো সে অবিবাহিত। তবে বিয়ে ঠিকঠাক। এক মাসপর বিয়ে।
শুনে সবাই সমস্বরে তার শুভ কামনা করলাম।
লাও পিডিআর-এর ডোনেকো জাওমনভং আর পিজ্জা ফোথিলাথ আধো আধো বোলে জানালো তারা বিবাহ নামক কর্মটি এখনো সেরে উঠতে পারেনি। তবে এ নিয়ে তাদের খুব উদ্বিগ্ন মনে হলো না।
কিন্তু কেনিয়ার কাবিরু পামিনাস মুরাঙ্গিরী খুব উদ্বিগ্নকণ্ঠে জানালো, তারও স্ত্রীর ৩টি পদ খালি আছে। তবে বর্তমানে যে একটি আছে তার জন্য বাকী পদ পূর্ন করতে পারছে না।
আবার হাসির রোল উঠলো।
শ্রীলঙ্কার ওয়ানিগারান্তে হেমাবানসা আর বীরাসূরিয়া পাথিরাঙ্গি শশাঙ্কা সানজীবা একটা করে স্ত্রী আছেন বলে জানালেন।
পাকিস্তানের মহেশ কুমার ঝটপট একমাত্র স্ত্রীর খবর জানালেন সহজভাবেই। নুসরাত উল্লাহ বালুচ (আমি ডাকতাম নুসরাত ফতেহ আলী খান) মুখ কাঁচুমাচু করে চুপ করে রইলেন। বোঝা গেলো খবরটা দিতে চান না।
আমি বুঝলাম ওকে না খেপালে কাজ হবে না। বললাম, স্ত্রী'র ৪টি পদই পূরণ করে ফেলেছেন ? কাজ হলো। রেগে মেগে বললো, তোমরা আমাকে কি পেয়েছো ? আমার একটাই স্ত্রী। বললাম, ছেলে মেয়ে ? আস্তে করে জানালো, ৭ জন। ইমরান আহমেদ খুব স্মার্টলি জানালো এক স্ত্রী সামলাতেই গলদঘর্ম দশা।
কামবুগু বাকী ৩টি পদ পূরণের সাহস কোত্থেকে পাচ্ছে ?
বাংলাদেশ থেকে আমার সাথে যিনি গেছেন তিনি এক স্ত্রী, এক পুত্র আর এক কন্যার ফিরিস্তি দিলেন। এবার আমার পালা । জানালাম স্ত্রী একটাই। তবে আমার কোন কন্যা নেই। ফলে কামবুবুর জন্য কোন নতুন স্ত্রী সাপ্লাই দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
জানালাম আমার দুই ছেলে। চঞ্চলা নানতেগে জানতে চাইলো ছেলেদের বয়স কতো। জানালাম আমার ছেলের বৌ আনার এখনো সময় হয়নি। তবে কাহিনী আছে। সে খুব আগ্রহ দেখালো।
আমি রূপবান-রহীম বাদশাহ'র লোক কাহিনী শোনাবো বলে স্থির করেছি। এমন সময় বক্তা চলে এলেন। ফলে আমাদের অধিবেশন ওখানেই শেষ করতে হলো।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।