Click This Link
কুয়ালা লামপুর থেকে কেএল
কুয়ালা লামপুরকে স্থানীয়রা সবসময় সংক্ষেপে বলেন কেএল। আকাশ ছোঁয়া ঘনসবুজ বনে ছাওয়া পাহাড়ের পাদদেশ আর কোল জুড়ে দ্রুত বেড়ে চলেছে কুয়ালা লামপুর শহর। বিশ্বের বিস্ময় মালয়েশিয়ার রাজধানী। শুরু থেকেই কুয়ালা লামপুর খুব দ্রুত বেড়েছে। বিশ্বমানের শহরকূলে কুয়ালা লামপুরই সবচেয়ে কমবয়সী বলে মনে হয়।
এখানে লোক বসতির সূচনা ১৮৫৭ সালে। রাজা আবদুল্লাহ ক্লাঙ নদীর অববাহিকায় টিন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেন সে বছর। এ কাজে তাঁকে সহায়তা দেন লুকুতের (LUKUT) রাজা জুমাত আর ৮৭ জন চীনা শ্রমিক। দুর্গম ঘন বন পেরিয়ে তাঁরা টিনের সন্ধান পেলেন আমপাং, পাডু আর বাটু এলাকায়। পত্তন হয় কুয়ালা লামপুর টিন ''খনি গ্রামের'' ( MINING VILLAGE)।
টিন খনির বদৌলতে ১৮৬২ সালের মধ্যে কুয়ালা লামপুর একটি দ্রুতবর্ধিষ্ণু গ্রামে পরিণত হয়। এ সময় ''হাই সান'' আর ''গি হান'' নামের দু'টি চীনা গোষ্ঠী গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভয়াবহ যুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় কুয়ালা লামপুর গ্রাম। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জেতে ''হাই সান'' গোষ্ঠী। তাদের এক নেতা ইয়াপ আহ লয় কুয়ালা লামপুর গ্রাম পুনর্গঠনে অগ্রনী ভূমিকা নেন।
তিনি আরো চীনা শ্রমিক নিয়ে আসেন। সাথে নিয়ে আসেন অনেকগুলো মালয়ী কৃষক পরিবারকে; যারা শ্রমিকদের খাদ্য যোগানের জন্য চাষাবাদ করবেন।
১৮৬৪ সালে ইয়াপ আহ লয় ''ঝি ইয়া মন্দির'' প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই কুয়ালা লামপুরের প্রাচীনতম ''তাও-মন্দির''। ১৮৬৮ সালে ইয়াপ আহ লয় কুয়ালা লামপুরের তৃতীয় ''চীনা ক্যাপ্টেন'' হিসাবে দায়িত্ব নেন।
তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে কুয়ালা লামপুরের আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক উন্নতি হয়। ১৮৮৫ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এ অবস্থা বজায় থাকে।
১৮৮০ সালে কুয়ালা লামপুর আধুনিক নগরী হিসাবে প্রথম পা রাখে যখন বৃটিশ প্রতিনিধি স্যার ফ্রাঙ্ক সুইটেনহাম প্রথম নগর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেন। সে মোতাবেক কুয়ালা লামপুরের ধনী খনীকর্মীরা বৃটিশ মডেলের বাড়ী তৈরী শুরু করেন। এ সময় টিনের দাম খুব বেড়ে যাওয়ায় নাটকীয়ভাবে কুয়ালা লামপুর শহরের পরিধি বাড়তে শুরু করে।
১৮৮৭ সালে ক্লাঙ বন্দর থেকে চালু হয় রেলপথ। আধুনিক এ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর সাথে সাথে কুয়ালা লামপুরকে ঘোষণা করা হয় সেলাঙ্গর রাজ্যের রাজধানী। শুরু হয় রাজধানী কুয়ালা লামপুরের অভিযাত্রা।
১৮৯৬ সালে ৪টি মালয়ী রাজ্যের সুলতান একত্রিত হয়ে গঠন করেন ''ফেডারেটেড মালয়ী স্টেটস''। তারও রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করা হয় ''কুয়ালা লামপুর'' শহরকে।
তখন থেকেই কুয়ালা লামপুর বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের প্রধান কেন্দ্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আবাসিক প্রতিনিধি রূপে নিযুক্ত হন স্যার ফ্রাঙ্ক সুইটেনহাম।
১৯৪৬ সালে বৃটিশ রাজ মালয়ান ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব দিলে স্থানীয়রা তা মানতে অস্বীকার করে। এর প্রতিবাদে গঠিত হয় ''ইউনিয়ন মালয়ীজ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন''। ১৯৪৮ সালে সূচনা হয় ''ফেডারেশন অব মালয়েশিয়া''র।
১৯৫৭ সালে ''ইউনিয়ন জ্যাক'' নামিয়ে উত্তোলিত হয় স্বাধীন মালয়েশিয়া ফেডারেশনের পতাকা। ৩১ আগস্ট স্বাধীন মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আবদুল রহমান পুত্রা আলহাজ্জ্ব স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। অবসান হয় ১৫১ বছরের বৃটিশ উপনিবেশের। কুয়ালা লামপুর নির্বাচিত হয় স্বাধীন মালয়েশিয়ার রাজধানী।
১৯৭০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কুয়ালা লামপুর মহানগরী (City status) ঘোষিত হয়।
১৯৭৪ সালে কুয়ালা লামপুরকে মূল রাজ্য সেলাঙ্গর থেকে আলাদা করে স্ব-শাসিত নগরী ( Federal Territory ) ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৯ সালে ফেডারেল সরকারের অফিস-আদালত সরিয়ে নেয়া হয় আরেকটি ফেডারেল টেরিটোরি ''পুত্রাজায়া''তে।
মালয়ীদের প্রিয় শহর ''কেএল'' আধুনিকতা আর প্রকৃতির মেলবন্ধনে এক অনন্য মহানগর। পৃথিবীর যে কোন মানুষ এমন একটি অসাধারন শহরের বাসিন্দা হলে গৌরববোধ করবেন।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।