ধুমপানে বিষপান
ব্লগে কোরান হাদিস নিয়া দুই চারটা প্রশ্ন করা অনেক সহজ, কিন্তু মসজিদে কোরানের মজলিশে বইসা কোরান নিয়া প্রশ্ন করা ভয়াভহ কঠিন কাজ। ঈমানী জুসে বলীয়ান যেকোন জিহাদি যেকোন সময় কল্লা ফালাইয়া দিতে পারে। যাই হোক, আমি প্রায় ছুটির দিনেই কোরান হাদিস শুনতে নিকটস্থ মসজিদে যাই, একজন শিক্ষিত এলেমদার লোক মারেফুল কোরান পইড়া শুনান, ব্যখ্যা দেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধইড়া সূরা ক্বাহফ পড়া হইতেছে। এই সূরা যতই আমি শুনি ততই তাজ্জব হই।
এই সূরার কাহিনী যেইকোন রুপকথারেও ফেইল মারবে, তবু সবাই ধ্যন ধইরা সেই কাহিনী শুনি। রুপকথা শেষ হইলে আবার দুইচারটা ঈমানী আলাপ হয়, দুই একজন গৃহপালিত প্রশ্ন করে। আমি শুধু সবার আলাপ শুনি, সারাংশ বুঝার চেস্টা করি,ঈমান শক্ত করার চেস্টাও করি, কিন্ত আমার কাছে রুপকথা ছাড়া কিছুই মনে হয় না। অনেক সময় অনেক প্রশ্ন মনে আসে, তবু প্রশ্ন করি না, জানি আমার প্রশ্ন শুনলে অনেকের ওযু ছুটে যায়। কিন্তু গত সপ্তাহে এই সূরা ক্বাহফের বিষয়ে দুই চারটা কথা বইলাই ফেললাম।
ঘটনাটা ডিটেইলস বলি, কোরানের গল্পটা আমি নিজের ভাষায় আগে বলি। ঘটনা হইসে হযরত মূসা একবার নিজেরে একটু বেশি জ্ঞানী ভাবলে আল্লাহ তাকে তার চেয়ে জ্ঞানী লোকের সন্ধান দেন। সেই লোক নাকি হইসে হযরত খিজির আ্ঃ(যদিও কোরানে নাম লেখা নাই)। একটা ভাজা কই মাছ (কই মাছ বলা নাই, ধইরা নিলাম) মূসা তার সন্ধানে বের হইল, বলা আছে এই কই মাছ যখন জিবীত হইয়া সাগরে চলে যাবে সেইখানেই খিজির আঃ এর দেখা মিলবে আর সেখানে দুই সমুদ্র একত্র হবে (মুসা মনে লয় সমুদ্রের উপর দিয়াই হাটত!).....যাই হোক এইভাবে খিজির কে খুজে পাওয়া গেল। জ্ঞানী খিজির মুসাকে সংগে নিতে রাজি হইল তবে কোন প্রশ্ন করা যাবে না।
মুসা রাজি হইল। তো এক নৌকায় উঠে সমুদ্র পাড়ি দেয়ার সময় খিজির হঠাৎ নৌকার পাটাতন খুলে ফেললেন, মূসাতো প্রশ্ন কইরা বসল। খিজির ফাস্ট ওয়ার্নিং দিল। তারপর আবার চলতে চলতে রাস্তায় এক নাবালক বাচ্চারে পাইয়া খিজির গলা কাইটা সাথে সাথে নাবালক বাচ্চাটাকে হত্যা করল.......। এইবার মুসা দ্বিতিয় ওয়ার্নিং খাইল........ যাই হোক তারপর আরেক ঘটনা নিয়া তৃতীয় ওয়ার্নিং খাইয়া মুসা আউট হইল।
তারপর যথারীতি আবালীয় মুজেজার বর্ননা। রাজা নাকি নতুন নৌকা দিবে, তাই পুরান নৌকা খিজির ধংশ করছে। আর নাবালক বাচ্চা নিয়া কি ব্যখ্য থাকবে এইটা সব ছাগশিশুও আন্দাজ করছেন। জ্বি কাহিনী সেইটাই, এই ছেলে বড় হয়ে বড় ক্রিমিনাল হবে, তাই নাকি তারে এক কুপে মাইরা ফেলা হইছে.....এইসব ব্যখ্যাও কোরানেই কিন্ত দেয়া আছে....।
যাই হোক এইবার আসল কথায় আসি।
সব জ্ঞানী গুনী লোকজন মুগ্ধ হইয়া কোরান শুনল, কোরান পড়া শেষ! আমি শুধু একটু বললাম, আচ্ছা এইযে একটা নাবালক বাচ্চারে এককুপে মাইরা ফালাইল, এইটার থেকে আমরা কি শিক্ষা পাব? আমি জানি তারা কি ব্যখ্যা দিবে, তবু প্রশ্নটা কইরাই ফেললাম!
এইবার ফুসফাস শুরু হইয়া গেল, যথারিতী শরিয়ত মারেফত সবই আমারে বুঝানো হইল। আমি বললাম, সবইতো বুঝলাম কিন্তু এক উদাহরন সৃস্টি করার জন্য মহান আল্লাহপাককে কেন একটা নাবালক বাচ্চাকেই হত্যা করাইতে হবে, একজন বয়স্ক লোক হইলেও না হয় মানা যাইত! আর ঐ বাচ্চা বড় হইলে খারাপ হবে, ঐ বাচ্চা কি আল্লার কন্ট্রলের বাইরে, যে তাকে হত্য করতে হবে! একটা ঈশপ টাইপের গল্পওতো এরচেয়ে অনেক মুরালিটি পৌছায় কিন্তু এইরকম কথা নাই বার্তা নাই হত্যাকান্ড ঘটাইতে হইব কেন? আর মহান আল্লাহাপাক কেন একটা মুরালিটি শিখাইতে এমন একটা কাজ করল, এর চেয়ে ভাল কিছু দিয়াওতো উদাহরন দেয়া যাইত, নাকি?
বুঝেন এইবার ঠেলা, মসজিদে ততক্ষনে সবাই উত্তেজিত, একজন বলল বেশি বুঝা কিন্তু ভাল না!! আমিতো বুঝিনা বইলাই প্রশ্ন করলাম রে ভাই....। যাই হোক, আবালীয় যুক্তি তর্ক কিছুক্ষন চলল। আমার আর কিছু বলা ঠিক হবে না, বুঝলাম। যেকোন সময় জিহাদী জুস চইলা আসতে পারে! কথা অন্যদিকে নিয়ে গেলাম।
এখন আমার একটা প্রশ্ন, এই যে এই ব্লগে অতীব জ্ঞানী এলেমদার ঈমানদার কিছু লোক আল্লহর নামে গালিগালাজ করেন, ঈমানী জুসে যারা বলীয়ান, তাদের মনে কি একবারও মনে হয় না যে এই রুপকথা আল্লাহর বানী হইতে পারে না! আল্লাহ এরচেয়ে বড়, এরচেয়ে মহান, হাজার হাজার বছর আগের কথায় কথায় কল্লা কাটার উদাহরন আর যাই হোক, একজন মহান আল্লাহপাকের নয়। তিনি তারও উর্ধে, তারচেয়ে অনেক অনেক অনেক মহান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।