তুষার কান্তি সিকদার, কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখি। গান শুনি এবং গান গাইতে ভালোবাসি।
কোন কিছুতেই মন বসছে না অর্পিতার। আজ অর্পিতার অফিস ছুটি। দেথতে দেখতে কতগুলো বছরই না কেটে গেল।
এরই মধ্যে চোখে চশমা উঠে গেছে তার। চমৎকার একটা বেগুনী রঙের শাড়ী পরেছে সে। বারান্দায় বসে কেবলই পেছনের স্মৃতিগুলি মনে পড়ছে তার। পাশে রাখা গরম চায়ের কাপে ধোঁয়ায় অর্পিতাকে আজ বড্ড বেশি এলোমেলো করে দিচ্ছে। কতই বা বয়স ছিল তখন! মাত্র বিশ বছর বয়সে ওর বিয়ে হয়ে যায়।
বাবা-মার একমাত্র মেয়ে ছিল সে। বাবা যখন মারা যায় তখন অর্পিতার মা আত্মীয়-স্বজনদের কথা শুনে একরকম দিশেহারা হয়েই অর্পিতাকে বিয়ে দিয়ে দেয় এক ধনীর ছেলের সাথে। তখন অর্পিতা স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ওর ইচ্ছের কোন দামই ছিল না। বিযের রাতেই অর্পিতা বুঝতে পেরেছিল, তার পায়ে কেউ অদৃশ্য শিকল পরিয়ে দিয়েছে।
মামুন ওকে বলেছিল , তোমার আর পড়াশুনা করার দরকার কি? পড়াশুনা করে তো আর চাকুরী করবে না। মেয়েদের আমি চাকুরী করা পছন্দও করি না। তাছাড়া সংসারে শ্বশুর –শ্বাশুড়ী ননদ-দেবর রয়েছে। বাড়ীর বড় বউ হিসেবে তোমার দায়িদ্ব তাদের দেখাশুনা করা। সেদিন সে কিছুই বলতে পারেনি।
নীরবে শুধু চোখের জলই ফেলেছিল। তার কান্না কেউ দেখতে পায় নি। শ্বশুর বাড়ীতে অর্পিতা একে একে অত্যাচারে জর্জরিত হতে থাকে দিনের পর দিন। শ্বাশড়ী প্রতিদিনই তার কাজে-কর্মের দোষ খুঁজে বেড়ায়। আর মামুন অফিস থেকে ফেরার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত অর্পিতার নামে নানা অভিযোগ।
মামুন ভীষণ রেগে যেত। মাঝে মাঝে গায়ে হাত তুলত। মামুন কখনই ভাল করে অর্পিতার সাথে কথা বলত না। অর্পিতা যেন এ সংসারের একজন নীরব দাসী ছাড়া আর কিছুই না। কিছুদিনের মধ্যেই সে জানতে পারে তার স্বামীর গোপন প্রণয়ের কথা।
তারপরও অর্পিতা সবকিছু মেনে নিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু, মামুনের ব্যবহার দিন দিন অসহ্য হয়ে উঠেছিল।
অর্পিতা সেদিন জানতে পারল, মামুন কোর্টে গিয়ে আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। সেদিন আর এ অপমান সে সইতে পারেনি। প্রশ্ন তুলেছিল মামুনের কাছে।
তাতে মামুন ভীষণ রেগে যায়। শুরু হয় তর্ক-যৃদ্ধ, একপর্যায়ে সে অর্পিতাকে কিল-ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। অর্পিতা তখন সন্তান সম্ভবা। ভাগ্যক্রমে তার মেয়েটি বেঁচে গিয়েছিল সেদিন। অর্পিতা ফিরে এসেছিল তার মায়ের কাছে।
জন্ম নিল তার মেয়ে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে। শুরু করেছে আবার নতুন করে নতুন জীবন। মেয়েটিকে নিয়ে সে বাকি লেখাপড়া শেষ করেছে। আজ সে প্রতিষ্ঠিত একজন সফল নারী। সে শুনেছে মামুন তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে ভালই আছে।
না কখনও মামুন নামের লোকটির কথা সে ভাববে না। তার মেয়েটিকে সে শুরু থেকেই জীবনে লড়াই করে বাঁচতে শিখাবে। চোখের জলকে এখন আর অর্পিতা প্রশ্রয় দেয়না। অনেক কাজ বাকি রয়েছে, মেয়েটিকে আজ একটি ভাল স্কুলে ভর্তি করাবে।
-------০------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।