জেলখানাতে যাওয়া প্রত্যেক বালেগ নর-নারীর জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়।
যদি আপনাদের কাউকে খবর দেয়া হয় যে, অমুক বাজারের অমুক স্থানে এমন একটি দোকান আছে যার মালিক, রক্ষক, ক্রয়-বিক্রয়কারী এবং টাকা-পয়সা উসুলকারী কেউ নেই, অথচ উক্ত দোকানের রক্ষণাবেক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও টাকা-পয়সা আদান-প্রদান ইত্যাদি যাবতীয় কাজ আপনা আপনিই যথারীতি সম্পন্ন হচ্ছে তখন আপনাদের কেউ এ অদ্ভূত ধরনের কথাটি বিশ্বাস করতে পারেন কি? অথবা কেউ যদি বলে যে, এ শহরে এমন একটি কারখানা আছে, যার মালিক বলতে কেউ নাই, ইঞ্জিনিয়ার বা মিস্ত্রিও তথায় দরকার হয় না, বরং কারখানাটি উক্ত স্থানে নিজে নিজেই বিদ্যমান ; প্রত্যেকটি মেশিনও নিজ হতেই গঠিত, মেশিনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশগুলো আবশ্যক অনুযায়ী স্ব-স্ব স্থানে নিজে নিজেই লেগে যায় ; তারপর মেশিনও আপনা হতেই চলতে থাকে এবং তা হতে বহু আশ্চর্য ধরনের নুতন নুতন জিনিসও বের হতে থাকে তখন আপনারা এ খবরটিকে সত্যরূপে গ্রহণ করতে পারবেন কি? আমি জানি, নিশ্চয়ই আপনারা এ ধরনের সংবাদকে এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিবেন এবং সংবাদবাহককে পাগল বলে বিদ্রূপ করবেন। অনূরূপভাবে আমাদের চোখের সামনে প্রজ্জ্বলিত বিজলী বাতিগুলো সম্বন্ধে যদি কেউ বলে যে, এই বৈদ্যুতিক লাইটগুলো যথাসময়ে আপন হতে জ্বলে উঠে ও নিভে যায়, তখন আপনারা একথাটি সত্য বলে মনে করতে পারেন কি? তদ্রুপ যে বস্ত্র আমরা পরিধান করি, যে চেয়ারে আমরা বসি এবং যে ঘরে আমরা বসবাস করি ; উক্ত বস্ত্র, চেয়ার ও থাকার ঘর আপনা হতে তৈরি হওয়ার সংবাদ কোনো নামজাদা বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকের মুখে শ্রবণ করলেও আপনারা তা কিছুতেই বিশ্বাস করবেন না।
উল্লেখিত ঘটনাবলী দ্বারা এমন কতগুলো জিনিসের উদাহরণ আপনাদের সামনে পেশ করা হলো, যা আপনারা দৈনন্দিন কাজের ভিতর দিয়েই দেখে আসছেন। যদি একটি মামুলি দোকান-কারখানার অস্তিত্ব মালিক ও নির্মাণকারীর প্রচেষ্টা ছাড়া গড়ে উঠা সম্পূর্ণ অসম্ভব হয়, তবে আকাশ ও পৃথিবীর এই বিরাট কারখানা যেখানে চন্দ্র-সূর্য ও অগণিত তারকারাজি বিদ্যমান এবং যেখানে সমুদ্রের বাষ্প উপরে উঠে ঠাণ্ডা হাওয়ার সাহায্যে মেঘমালায় পরিণত হয় এবং পরে তা বৃষ্টিরূপে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়ে শুষ্ক ও মৃত জমিকে সরস সজীব করে তোলে, তারপর নানা রঙের নানা বর্ণের নুতন নুতন ফুলে ফলে এই দুনিয়াকে সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী করে মানব জাতির জীবন ধারণের মান বৃদ্ধি করে, তার প্রকাণ্ড ও বিষ্ময়কর অস্তিত্ব আপনা হতে গড়ে উঠা কিরূপে সম্ভব হতে পারে? তাই আপনাদের একথা স্বীকার করতে হবে যে, এ বিরাট কারখানাটির অস্তিত্বের পিছনে কোনো এক কুদরতী হাতের কার্যকরী ইঙ্গিত অবশ্যই লুকিয়ে রয়েছে।
মানব দেহ গঠনের উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে বৈজ্ঞানিকগণ দেখতে পেয়েছেন যে, শরীরে কিছু পরিমাণ লৌহ, গন্ধক, কয়লা, ক্যালসিয়াম লবণ ইত্যাদি বিদ্যমান আছে। উল্লেখিত জিনিসগুলোর প্রত্যেকটি যথাপরিমাণে গ্রহণ করে যদি কোনো ব্যক্তি মানুষ সৃষ্টির চেষ্টায় যত্নবান হয়, তবে সে উক্ত কাজে কখনো কৃতকার্য হতে পারবে কি? আপনারা নিশ্চয়ই স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিবেন কিছুতেই নয়। যদি তা আপনাদের শেষ সিদ্ধান্ত হয়, তবে শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, চলনশক্তি এবং রকমারি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার শক্তিসম্পন্ন, সুন্দর, সুগঠিত মানুষ সৃষ্টির পিছনে কোনো এক শক্তিশালী মহাজ্ঞানী সুনিপুণ ও সুবিজ্ঞ হাকিমের হেকমতি ইঙ্গিত বিদ্যমান থাকার স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া আমাদের জন্য যুক্তি ও বিজ্ঞানের দিক দিয়েও খুব সহজ হয়ে দাঁড়ায়।
মাতৃগর্ভস্থ ক্ষুদ্র ফ্যাক্টরীতে সন্তান জন্ম হওয়ার নিগূঢ় তত্ত্ব সম্পর্কে আপনারা কখনও চিন্তা করে দেখেছেন কি? সন্তান জন্মানোর পিছনে মাতা-পিতার তদবিরের কোনো প্রভাব বাস্তবিক পক্ষেই নেই। রেহেম বা মাতৃগর্ভস্থ ছোট থলিটিতে কিভাবে, কার কুদরতী হাতের ইশারায় স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের পর দুটি অতীব ক্ষুদ্র কীট যা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারাও দেখা কষ্টসাধ্য মাতৃগর্ভে পরস্পরে মিলিত হয় এবং অলৌকিকভাবে মাতার রক্ত তার খাদ্যরূপে নির্ধারিত করা হয়, তারপর ,উল্লেখিত লোহা, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি নির্জীব পদার্থ নির্দিষ্ট পরিমাণে তথায় একত্রিত হয়ে ধীরে ধীরে একটি গোশতের টুকরার সৃষ্টি হয় এবং অভিনবরূপে তা বাড়তে থাকে।
অতপর উক্ত টুকরার যথাস্থানে হাত, কান, নাক, জিহ্বা, মস্তক ও মস্তিস্ক এবং শরীরের অন্যান্য অংগ-প্রত্যংগ স্থাপন করা হয়। পরে ঔ নবগঠিত দেহে প্রাণের সঞ্চার করা হয় এবং মাতৃগর্ভস্থ শিশু আশ্চর্যরূপে মাতৃরক্তে লালিত হতে থাকে। তারপর উক্ত শিশুর কানে শ্রবণশক্তি, চোখে দৃষ্টিশক্তি, নাক দিয়ে নিঃশ্বাস গ্রহণের শক্তি ও অন্তরে অনুভব করার শক্তি এবং অন্যান্য যাবতীয় শক্তি প্রদান করে কোমল দেহটিকে সর্বাংগীন সুন্দরভাবে গঠন করে তোলা হয়। উপরোক্ত কার্যাবলী সমাধানের যে পরিমাণ সময় আবশ্যক, তা অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ একদিন মাতৃগর্ভস্থ সেই ছোট ফ্যাক্টরী উক্ত সন্তানকে প্রসব বেদনার সাহায্যে বাইরে নিক্ষেপ করে। এমনিভাবে অগণিত সন্তান উক্ত ফ্যাক্টরীর ক্ষুদ্র স্থান হতে এ বিরাট ও প্রশস্ত দুনিয়ায় আগমন করছে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এই সকল মানব সন্তানের দৈহিক গঠনে, মনের চিন্তাধারায়, অভ্যাসে ও যোগ্যতা প্রদর্শনে এবং অন্যান্য যাবতীয় ব্যাপারে একের সাথে অন্যের বিরাট ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়, এমনকি মাতৃগর্ভস্থ দুই সহোদরের মধ্যেও কার্যক্ষেত্র, স্বভাব-প্রকৃতি এবং অন্যান্য দিক দিয়ে বহু পরিমাণে পার্থক্য দৃষ্ট হয়। মানব সন্তান সৃষ্টির উল্লেখিত তথ্যপূর্ণ লিলাসমূহ অবলোকন করার পরেও যদি কোনো ব্যক্তি বলতে সাহস পায় যে, এর পশ্চাতে কোনো শক্তিশালী, মহাজ্ঞানী, সুনিপুণ কারিগরের কারিগরি বিদ্যমান নেই, তবে আমরা উক্ত ব্যক্তিকে নির্বোধ এবং তত্ত্বপূর্ণ আলোচনার সারমর্ম গ্রহণে অক্ষম বলতে বাধ্য হবো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।