আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেনা অভ্যুত্থান ২০০৭ অনেক না জানা ঘটনা প্রবাহের চাক্ষুস বর্ণনা-২

রাজনীতির আবর্জনাগুলো বাদ দিলে আপনার সাথে আমার দ্বিমত খুবই সামান্য।

২০০৭ সালের ১১ ই জানুয়ারি!সবার চোখ ছিল বঙ্গভবনের দিকে। কী ঘটেছিল সেদিন?কিভাবে জারি হলো জরুরি অবস্থা?নিজের চোখে দেখা সেই ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতির তৎকালীন উপদেষ্টা মোখলেসুর রহমান চৌধুরী সেনা অভ্যুত্থান ২০০৭ অনেক না জানা ঘটনা প্রবাহের চাক্ষুস বর্ণনা-১ ১/১১র ঘটনা যেদিন ঘটেছে সে দিন এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। অনেক আগে থেকেই এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো। দুই নেত্রীকে আমি একাধিকবার আমার আশংকার কথাও ব্যক্ত করেছিলাম।

তাদের দুই জনকে এক সাথে বসাতে চেয়েছিলাম। বেগম খালেদা জিয়া বসতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা বসতে চাননি। কারণ বিএনপির ওপর শেখ হাসিনার ক্ষোভ ছিলো। তাছাড়া ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী এবং কর্নেল অলি আহমেদ দীর্ঘদিন থেকে থার্ড ফোর্সকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নানান প্রচারনা ও ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছিলেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একটি অংশ এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলো। পাঁচ বছরে বিএনপি সরকারের পুরো সুবিধা ভোগ করে সেই সরকারের বিদায়ের আগে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বি. চৌধুরী ও কর্নেল অলির দলে ঘটা করে যোগদানের ঘটনাতো সবাই দেখেছেন। ড. কামাল হোসেন ২০০৫ থেকে এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন উল্লেখ করে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন। ড. কামাল সম্পর্কে আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও শেখ হাসিনা যা বলেছেন তাতে সব পরিষ্কার হয়ে গেছে। তার কালো টাকা সাদা করা, ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানে থাকা, নির্বাচনে জয়লাভ না করতে পারা ও অগণতান্ত্রিক শক্তির দালালী করার ঘটনার সাক্ষী সবাই।

১/১১ এর ঘটনা কোনো বিদেশী প্রেসক্রিপশনে ঘটেনি। দূরে থেকে না জেনে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে সেদিনের ঘটনাকে বিদেশী শক্তির ওপর চাপিয়ে দেয়া ঘটনার মূল নায়কদের আড়াল করার চেষ্টা মাত্র। সোজা কথা - এটা যেন ভাসুরের নাম নিতে লজ্জা করার মতো। ১৯৭৫ সালে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং ১৯৯৬ সালে লেঃ জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃতে বাংলাদেশে কী ঘটেছিলো? এসব ঘটনা বাংলাদেশের মাটিতেই ঘটেছিলো। দেশী শক্তিমানরাই সেসব ঘটনা ঘটিয়েছিলো।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর এবং ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরের ঘটনাও বাংলাদেশের মাটিতেই ঘটেছে। কেউ যখন কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে তখন এর এ্যাকশন-রিএ্যাকশন হয়। পাকিস্তানে ১৯৯৯ সালের ১২ আক্টোবর জেনারেল পারভেজ মোশাররফের নেতৃতে যে ঘটনা ঘটেছিলো সেটিও আমেরিকা আগে জানতো না। ১১ই জানুয়ারীর তিন দিন আগে একটি মাধ্যম থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছিলো যে, বাংলাদেশে সামরিক শাসন আসছে। সেই দিন জরুরী অবস্থা নয়, সামরিক শাসন জারির কথা জানানো হয়েছিলো।

শেখ হাসিনা জানতেন ১২ জানুয়ারির মধ্যে মার্শাল ল হবে। তাকে বলা হয়েছিলো- বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে গ্রেফতার করা হবে, মইনুল রোডের বাসভবন তছনছ করে ফেলা হবে। আমি তখন তাকে বলেছিলাম সবই ঠিক আছে, আপনাকেও একইভাবে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু শেখ হাসিনা তা বিশ্বাস করতে চাননি। বলা হয়েছিলো আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় আনা হবে।

নির্বাচন ছাড়াই শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে। বেগম খালেদা জিয়াকেও সামরিক শাসনের আশংকার কথা জানিয়ে ছিলাম। তিনি বিশ্বাস করতে চাননি। দুই নেত্রীর কাছে তাদেরকে আটক বিষয়টি ছিলো বিস্ময়। আমি দুই নেত্রীর সাথে সমঝোতা করি- এটা সেনাবাহিনীর যারা পরবর্তীতে ঘটনা ঘটিয়েছিলেন তারা পছন্দ করেন নি।

বাংলাদেশে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে যে অরাজকতা বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করা হয়েছিলো- এর নেপথ্যে ছিলেন সেনা প্রধান মইন ও গোয়েন্দা সংস্থা। এটা এখন সকলের কাছে পরিষ্কার। সেইদিন লগি-বৈঠা তান্ডবের পেছনে তারাই ইন্ধন দিয়েছিলেন। ঐ সময়কার সরকারের দায়িত্ব ছিলো আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা। রাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর এবং পুলিশের আইজি ছিলেন আনোয়ারুল ইকবাল।

তারা কেন সেদিন সেখান থেকে পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন? কেন সেদিন জামায়াতের মিটিং-এ আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করেছিলো? মানুষ হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য করা হয়েছিলো? যে ভিডিও বা সিডি দেখিয়ে জরুরী অবস্থার সরকার ক্ষমতা দখল করেছিলো ওয়ান ইলেভেনের নেপথ্য শক্তি এখান থেকে ফায়দা লুটেছেন। কার ইঙ্গিতে রাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশের আইজি সেখান থেকে পুলিশ সরিয়ে নিয়েছেন তার তদন্ত হলেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে পড়বে। জরুরী অবস্থা জারির দুটি এ্যাটেম্পট আমরা ব্যর্থ করে দেয়ার পর সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা নিয়ে তৃতীয় দফায় জেনারেল মইন জরুরী অবস্থার মোড়কে ক্ষমতা দখল করেন। ২৯ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ড: ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর যে এ্যাটেম্পটটি নেয়া হয়েছিলো সেটি বাস্তবায়নের জন্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও পর্যন্ত কনভিন্সড করে ফেলা হয়েছিলো। তখন সেনাবাহিনীকে ওয়ান আওয়ার নোটিশে ষ্টান্ড বাই রাখা হয়েছিল।

পরবর্তীতে আমরা যখন ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার-এর অধীনে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করেছিলাম তখন দ্বিতীয় এ্যাটেম্টটি নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু জরুরী অবস্থা ছাড়াই সকল সংকটের সমাধান এবং সকল দলকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আনা সম্ভব হয়েছিলো। এতে তখন জেনারেল মইন তার সহকর্মীদের কাছে অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। দেশব্যাপী সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পর কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ডাকা অবরোধও তুলে নেয়া হয়েছিলো। এরপর সশস্ত্র বাহিনীকে কারা সেদিন অকার্যকর করে রেখেছিলো? কারা আবার অবরোধ বসানোর ইন্ধন দিয়েছিলো? সেনা বাহিনীর সদস্যরা রেস্টে আছে বলে দেয়া বক্তব্য একই সূত্রে গাঁথা ছিলো।

এই প্রশ্নগুলোর মধ্যেই সংকট জিইয়ে রাখার অনেক উত্তর নিহিত আছে। শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসাবে বিদায়ী সংসদে দেয়া সমাপনী বক্তব্যে গুরুত্বপূর্ণ উক্তি করেছিলেন। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে মুখোমুখি করে রাখা এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন আমাদেরকে সংবিধানের মধ্যে থেকে কাজ করতে না দিয়ে সংকট জিইয়ে রাখার জন্য যারা নেপথ্য থেকে কাজ করছিল, পরবর্তীকালে আমরা দেখলাম তারাই কীভাবে সংবিধানকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের দোহাই দিয়ে সেদিন বিশ্ব সংস্থাকে যেভাবে ব্ল্যাক মেইলিং করা হয়েছিলো তার রহস্য ইতোমধ্যে দেশবাসী জানতে পেরেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের সমন্বয়কারী রেনাটা লক ডেসালিয়েন জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রধান প্রধান দলগুলোর অংশগ্রহনে নির্বাচন ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার আহবান সম্বলিত বিবৃতিকে নিজের মত পরিবর্তন করে তাতে শান্তিরক্ষী বাহিনীর ভবিষ্যত সংক্রান্ত হুমকি সংযোজন করে জেনারেল মইনের হাতে তুলে দেন, যা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের মূল চাবিকাঠি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

এ প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড: ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পুরস্কার স্বরূপ ড: ইফতেখার ও মইনের বেয়াই আনোয়ারুল ইকবালকে উপদেষ্টা করা হয়েছিলো। অবশ্য ড: ইফতেখার চেয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা হতে। এছাড়া ঢাকার আরো কয়েকজন বিদেশী কূটনীতিকের দৌড়ঝাপকে মইন তার পক্ষে কাজে লাগিয়েছেন। একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়।

২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর রেওয়াজ অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। প্রেসিডেন্ট ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। সেখানে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার মাঝখানে দশটি চেয়ার বসিয়ে কৃত্রিম দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়। সেনা প্রধান এভাবে বসার ব্যবস্থা করেছিলেন। আমরা প্রেসিডেন্টের সাথে ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।

সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা এ আয়োজন সম্পর্কে আমাদের জিজ্ঞেস না করেই একটি বিশেষ পরিকল্পনা মাফিক এভাবে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বসার ব্যবস্থা করেছিলেন। এমন কি প্রেসিডেন্ট ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু লোককে ওখানে ঢুকতে দেয়া হয়েছিলো। আশ্চর্যজনক হচ্ছে সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রীকে প্রবেশ ও প্রস্থানে তারা এমনভাবে দিক দেখিয়েছিলেন যাতে কারো সাথে কারো দেখা না হয়। তাদের দুজনের সহযোগী ও ষ্টাফদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হয়নি। এমন কি প্রেসিডেন্টের সার্বক্ষণিক প্রয়োজন জানা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসাবে আমাকে সেখানে যেতে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।

যেখানে আইনানুগভাবে আমার নির্দেশ মানতে তারা বাধ্য, সেখানে আমাকে ঢুকতে না দেয়ার একটি কারণ ছিলো যাতে দুই নেত্রীর সাক্ষাত ঘটাতে আমি কোনো কাজ করতে না পারি। দুজনের সাথে আমার ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কারণে তাদের মধ্যে দেখা সাক্ষাত ঘটিয়ে ফেলতে পারি এ ছিলো সেনাপ্রধানের আশংকা। তিনি চেয়েছিলেন সেনাকুঞ্জে আগত মেহমান ও জাতির সামনে দুই নেত্রীকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে যে, তাদের মধ্যে চরম শত্রুতা বিরাজ করছে এটা দৃশ্যমান হয়। জাতি যাতে তাদের সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠে এটা ছিল এক্ষেত্রে তার লক্ষ্য। জেনারেল মইন সেনা কর্মকর্তাদের সাথে আলাপকালে আমার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, একজন সিভিলিয়ান দেশ চালায়।

অবশ্য অনেকে তাকে বলেছিলেন সংবিধান অনুযায়ী সিভিলিয়ানেরই দেশ চালানোর কথা। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পর আমাকে সেনা কর্মকর্তারাই এ কথা জানিয়েছেন। অনেকেই প্রশ্ন করেন ১৯৯৬ সালের মত ২০০৭ সালের ক্যু ব্যর্থ করা গেল না কেন। আসলে ওয়ান ইলেভেনের দিন প্রেসিডেন্ট ড: ইয়াজউদ্দিনের সেরকম কিছু করার সুযোগ ছিলো না। ১৯৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট ছিলেন আবদুর রহমান বিশ্বাস।

১৯৯৬ সালের ২০ মে তৎকালীন সেনাপ্রধান লে: জেনারেল এএসএম নাসিমের নেতৃত্বে ক্যু হয়েছিলো। সেদিন নাসিমের পক্ষে মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদের নেতৃত্বে বগুড়া থেকে, মেজর জেনারেল আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ থেকে এবং আরো কয়েকটি ডিভিশন নির্দেশমত ঢাকার দিকে মার্চ করেছিলো। ঐদিন সাভারের নবম পদাতিক ডিভিশন থেকে পাঠানো সৈন্যরা আরিচা, নগরবাড়ি ও দৌলতদিয়া থেকে ফেরিগুলো সরিয়ে ফেলেছিলো, যানবাহন সরিয়ে নিয়ে ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে ঢাকামুখী বাহিনীর গতিরোধ করেছিলো। সেই দিন প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব মেজর জেনারেল রুহুল আলম চৌধুরী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মেজর জেনারেল সুবিদ আলী ভূইয়া, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামান বীর প্রতীক এবং ডিজিএফআইর ডিজি মেজর জেনারেল এম এ মতিন বীর প্রতীক, ৪৬ পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডান্ট ব্রিগেডিয়ার রোকনউদ্দৌলাহ প্রেসিডেন্টের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে জেনারেল নাসিমের ক্যু ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই কারণেই তখন প্রেসিডেন্ট উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পেরেছিলেন।

১৯৯৬ সালের ঘটনা আর ২০০৭ সালের ঘটনা এক নয়। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কমান্ডগুলো জেনারেল মইনের নির্দেশে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে এক হয়ে গিয়েছিল। প্রেসিডেন্টের আদেশ শোনার মত কেউ ছিলো না। এ সময় প্রেসিডেন্টের অবস্থা ছিলো ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দারের মত। সেদিন তিনি সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছিলেন।

আমি ২০০৮ এর জানুযারী থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলে আসছি- সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছেন প্রেসিডেন্ট পদ দখল করার জন্য। মইনের সহকর্মীরা বলেন, মইন ইউ আহমেদ নাকি দুর্নীতির মাধ্যমে সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তার শারীরিক উচ্চতা দেখলেই সেটা বোঝা যায়- সেনা বাহিনীর কর্মকর্তা হবার উচ্চতা তার নেই। কিন্তু কীভাবে তিনি সেনাবাহিনীতে ঢুকলেন? অনেকেই বলেন, তিনি সেনাবাহিনীতে ঢুকেছিলেন দুর্নীতির মাধ্যমে। তার বড় ভাই ইকবাল ইউ আহমেদ ট্রাষ্ট ব্যাংকের এমডি।

সেনাপ্রধানের ভাই এই রকম পোস্টে থাকতে পারেন না বিধি অনুযায়ী। এ ব্যাংক থেকে মইন বা তার আত্মীয়-স্বজন কত টাকা লোন নিয়েছেন, দেশে-বিদেশে কী করেছেন, কোন ব্যবসায়ী এজেন্টের সাথে রয়েছেন- এইগুলো এখন সবাই জানেন। ১/১১র পরে মইন ট্রাষ্ট ব্যাংকের ৯৯ লাখ টাকার লোন থেকে ৬৬ লাখ টাকা এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করেছেন। এত টাকা তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন- তা নিয়ে তিনি গণমাধ্যমে মিথ্যাচার করেছেন অবলীলায়। এ সবই পত্র-পত্রিকায় এসেছে।

নিজে দুর্নীতিবাজ হয়ে জাতিকে দুর্নীতি মুক্ত করবেন এমন কথা যদি কেউ মনে করেন- তাহলে এটুকু বলতে চাই আগে নিজে সৎ হয়ে তারপর অন্যকে সৎ হতে বলা উচিৎ। আসলে মইন এবং তার অনুসারীরা ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেছেন সীমা লংঘন করো না, আমি সীমা লংঘনকারীদের বরদাশ্ত করি না। কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত সীমা লংঘন করেছেন। ওয়ান ইলেভেন সম্পর্কে এ পর্যন্ত অনেক ধরনের বিশ্লেষণ হয়েছে।

আমার মতে ১/১১ ইজ নাথিং বাট ওয়ানস্ উইশ টু বি দ্য প্রেসিডেন্ট এন্ড আদার ইলেভেন অয়ার বিং ইউজড ফর দিজ পারপাস। (চলবে...........) বিচ্ছিন্নভাবে অনেক কিছু জানি আমরা ১/১১ সম্পর্কে কিন্তু এভাবে গুছিয়ে সবকিছু এক জায়গায় আমি কোথাও পাইনি, আশাকরি আপনাদেরও ভাল লাগবে.....আর ভাল লাগলে পরবর্তি সংখ্যা পর্যন্ত সঙ্গে থাকুন। কৃতজ্ঞতা: বাংলা টাইমস, লন্ডন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.