আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পারফিউম

shamseerbd@yahoo.com
মার্কেটে এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করে একটা পারফিউমের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায় শিমু । অন্যমনস্ক ভাবে দোকানেই ঢুকে পড়ে সে। সারিবদ্ধ করে রাখা নানা রঙ এর পারফিউমের বোতল, নানান রকম তার ডিজাইন। শিমুর ইচ্ছা করছে সবগুলোই কিনে ফেলতে । এটাত আর সম্ভব না, তাই সে খুব সুন্দর দেখতে একটা বোতল দেখিয়ে ওটা দিতে বলে দোকানিকে।

বোতলটা হাতে নিয়ে খুলতেই চমকে উঠে শিমু। ছোট বেলায় ফিরে যায় সে। বিদেশ ফেরৎ এক আত্মীয় একবার একটি পারফিউমের স্যাম্পল বোতল দিয়েছিল তাকে । ক্লাশ টু কি থ্রীতে পড়ে তখন। কি মনকাড়া সুগন্ধ সে পারফিউমের।

কাউকে ধরতে দিতনা সেটা, এমন কি নিজেও ভালভাবে ব্যবহার করতনা। মাঝে মাঝে মুখটা খুলে একটু গন্ধ শুকে নিত। বিয়ে বা জন্ম দিনের কোন অনুস্ঠানে যাবার সময় সামান্য একটু হাতে নিয়ে কানে আর গলায় লাগিয়ে নিত। জামায় লাগালে বেশী লাগবে আর তাতে তাড়াতাড়ি শেস হয়ে যাবে তাই ঐ ব্যবস্হা । এভাবে চলতে চলতে যখন প্রায়ই শেষ পর্যায়ে তখন সেটা আর ব্যবহার করা বন্ধ করে দিল সে।

মাঝে মাঝে শুধু বের করে একটু সুগন্ধ নেয়া, এই ছিল তার কাজ। এরপর বাসা বদল আর বড় হয়ে যাওয়া, ছোট্ট বেলার পরম যত্নে রাখা সে সুগন্ধী বোতল যে কোথায় হারিয়ে গেছে তা আর মনে পড়েনা শিমুর। আজ বোতলের সুগন্ধীটা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সে ছোট বেলায়। এটা যেন অবিকল সেই গন্ধ। কোন কিছু না ভেবেই অনেকক্ষন পারফিউমের বোতলের মুখটা নিজের নাকের কাছে ধরে রাখে সে।

হঠাৎ করে শৈশব থেকে বাস্তবে ফিরে কিছুটা লজ্জাও পায় সে, দোকানি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বোতলটা হাতে নিয়ে দোকানির কাছে দাম জানতে চাইল। দামটা শুনেই শিমুর মন খারাপ হয়ে গেল। তার পার্সে আছে মাত্র আটশত টাকা আর দোকানদার চাইল দুই হাজার টাকা। দামাদামি করেও তার সাধ্যে এটা এনা যাবেনা সে শিউর, এমন অভিজাত দোকানে অতবেশী দামাদামি করাটাও শোভন না ।

কি আর করা দোকানির হাতে বোতলটা ফেরৎ দিয়ে সে মন খারাপ করে বেরিয়ে এল। দোকানদার ও কিছু বলেনি , আবার শোকেসে রেখে দিল সেটা। পরেরদিন সে আবার ঐ দোকানে গেল টাকা নিয়ে। দোকানদারকে বলল গতকাল যে পারফিউমটা দেখেছিলাম সেটা দিন। দোকানদার অবাক হয়ে বলে কোনটা ।

শিমু ইতস্তত এদিক ওদিক তাকায়, না কোথাও চোখে পড়েনা, দোকানদার নাম জানতে চায় । সে বোকারমত তাকিয়ে থাকে, গতকাল যে নামটাও সে দেখেনি , তার মন খারাপ হয়ে যায় । নিজের উপর বিরক্ত হয়, নামটা না দেখার জন্য । ঠিক এমন সময় শিমুর ঘুমটা ভেঙ্গে যায় । ঘুম ভাঙ্গার পর সে কিছুটা অবাক হয়, সাথে ভীত ও।

পুরো ঘরময় ছড়িয়ে আছে সেই সুগন্ধ। শিমু কিছুটা ভয় পেয়ে উঠে । হাত বাড়িয়ে বালিশের নিচে থেকে সে মোবাইলটা বের করে সময় দেখে। রাত চারটা তখন। জানালা দিয়ে জোছনা এসে পরছে শিমুর পায়ের উপর ।

সে উঠে বসে। ভয়টা বাড়তে থাকে। বিছানার উপর থরে থরে জোছনা সাজানো । গোল গোল হয়ে পড়ছে জানালার গ্রীলের ফাঁক গলে। নিজের মাঝে সে কুঁকড়ে যেতে থাকে ।

জোছনালোকে কেমন জানি বেলী ফুলের মত মনে হয়, যেন অনেকগুলো বেলী ফুল বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঘরময় সুগন্ধটা আরো বাড়তে থাকে। শিমু একটা চিৎকার দিতে চায়, মাকে ডাকতে চায়, পারেনা। তার আগেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।