একাত্তরের রাজাকার-আলবদরদের নয়া স্পোকসম্যান
আবদুল গাফফার চৌধুরী
সহৃদয় পাঠকদের কাছে প্রথমেই একটা ব্যাপারে ক্ষমা চেয়ে নিই। আমার এই লেখার শিরোনামে যে নামটি তাঁরা দেখছেন, তা আমার আবিষ্কৃত নাম নয়। ঢাকা থেকেই 'কালের কণ্ঠের' এক পাঠক আমাকে দু-দুবার টেলিফোন করে বলেছেন, পয়লা জুলাইর কালের কণ্ঠে প্রকাশিত লেখায় বদরুদ্দীন উমর সাহেব যেভাবে উলঙ্গ হয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের মুখপাত্রের (Spokesman) ভূমিকা গ্রহণ করেছেন, তাতে তাঁর নামের একটি নতুন বিন্যাস দরকার। এই নামটি হওয়া উচিত_'আলবদর-উদ্দীন উমর। '
নামটি আমার কাছে খুবই যুতসই মনে হয়েছে।
তবে কারো পিতৃ প্রদত্ত নামে যোগ-বিয়োগ ঘটানো আমি নিজের এখতিয়ারভুক্ত কাজ বলে মনে করি না। যাঁর নাম, তিনি যদি যোগ-বিয়োগ ঘটান কিংবা অন্য কেউ তা ঘটায়, তাহলে কারো কিছু বলার নেই। যেমন, কবি আহসান হাবীব ও কথাশিল্পী শওকত ওসমান নিজেরাই নিজেদের নাম হাবিবুর রহমান ও আজিজুর রহমান থেকে পাল্টে ফেলেছিলেন। আলাউদ্দীন আল আজাদ তাঁর আলাউদ্দীন নামের সঙ্গে আল আজাদ কথাটি নিজেই যুক্ত করেছিলেন। সুতরাং আমাদের বাম অথবা বামপন্থী বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের বর্তমান ভূমিকার সঙ্গে সংগতি রেখে তাঁর কোনো পাঠক অথবা পাঠকরা যদি তাঁর নামটি একটু সম্প্রসারিত করেন, তাহলে তিনি আপত্তি করবেন কি না জানি না।
আলবদর-উদ্দীন উমরের পয়লা জুলাইর লেখাটি আমি পড়েছি। তাঁর লেখার একসময় আমি অনুরাগী পাঠক ছিলাম, তাঁর সঙ্গে আমার রাজনৈতিক মতান্তর সত্ত্বেও। তাঁর লেখায় যুক্তি ছিল, তথ্যও ছিল; একটা বামপন্থী দৃষ্টিকোণও ছিল। বর্তমানে আওয়ামী ফোবিয়া এবং বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে প্যাথলজিক্যাল হেট্রেডে ভুগে ভুগে তাঁর অবস্থা এমন হয়েছে যে, নিজের মনগড়া মিথ্যাকেই তিনি একমাত্র সত্য মনে করেন; এবং কেউ যুক্তিতর্ক ও তথ্য দিয়ে তাঁর এই মিথ্যা খণ্ডন করলেও পরবর্তী লেখায় তিনি আবার সেই মিথ্যার পুনরাবৃত্তি করতে কোনো ধরনের লজ্জা পান না। গোয়েবলসের মতোই তিনি হয়তো বিশ্বাস করেন, 'একটি মিথ্যাকে বারবার বলা হলে তা সত্য হয়ে যায়।
'
বর্তমানে এই আলবদর সাহেবের মানসিক বিকৃতি সম্ভবত এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, তাঁর লেখায় বিদ্বেষ, মিথ্যা ও কটূক্তির ছড়াছড়ি ছাড়া পাণ্ডিত্যের লেশমাত্র পাওয়া যায় না। একসময় মনে হতো, তিনি ড. জেফিল ও মি. হাইড। এখন মনে হচ্ছে, মিথ্যার সেই বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্যটি অনবরত পান করে করে উমর স্থায়ীভাবে মি. হাইডে পরিণত হয়েছেন। তাঁর ড. জেফিলে ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। পয়লা জুলাই তারিখে 'কালের কণ্ঠে' প্রকাশিত 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে' শীর্ষক তাঁর লেখাটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, তাঁর অবস্থা এখন সম্পূর্ণভাবেই পাগলা মেহেরালির মতো।
পাগলা মেহেরালি যা কিছু দেখত, সবকিছুতেই বলে উঠত_'সব ঝুট হ্যায়। ' আওয়ামী লীগ, শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি সবকিছু সম্পর্কে উমরের এখন একমাত্র রব হচ্ছে 'সব ঝুট হ্যায়। ' তাঁর পয়লা জুলাইর লেখাটিতে এরই প্রতিফলন হয়েছে এবং তাঁর কিছু পাঠক সঠিকভাবেই ধরে নিয়েছেন, ড. জেফিল যেমন দুশ্চরিত্র মি. হাইডে পরিণত হয়েছিলেন, এককালের উমরও এখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের নতুন স্পোকসম্যান আলবদর সাহেবে রূপান্তরিত হয়েছেন। এটা স্থায়ী রূপান্তর কি না তা এখনই বলা যাবে না।
আলবদর-উদ্দীন উমরের পয়লা জুলাইর লেখাটি নিয়ে 'কালের কণ্ঠ' পত্রিকাতেই পাঠক প্রতিক্রিয়া কলামে দেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক ছাত্রনেতা (আলবদর সাহেবই সেখানে শিক্ষক থাকাকালে তাঁর ছাত্র) তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং আলবদর সাহেবের মিথ্যার বেসাতির পাত্রটির তলা ফুটা করে দিয়েছেন।
তাঁর কোনো জবাব তিনি নিজে দিতে পারবেন অথবা এভাবে তাঁর দ্বিচারিতার মুখোশ উন্মোচিত হওয়ায় তিনি লজ্জা পাবেন, আমার তা মনে হয় না। লজ্জা নারীর ভূষণ; আলবদর সাহেবদের নয়।
দেশের ডান অথবা বামের যেকোনো বুদ্ধিজীবী অথবা কলামিস্ট আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর রাজনীতির চরম সমালোচনা করতে পারেন। যুক্তিপূর্ণ কথা ও তথ্য উপস্থাপন করে অবশ্যই বলতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী তাঁদের অনেক কার্যক্রম এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসম্পর্কিত পদক্ষেপ ত্রুটিপূর্ণ অথবা ভুল ছিল। তাই বলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল, তার নেতা এবং তাদের সব কাজের সমালোচনা করার নামে যে কোনো দেশপ্রেমিক, সচেতন বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক গোটা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের, একাত্তরের ঘাতক-দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রকাশ্য এবং উলঙ্গ বিরোধিতায় নামতে পারেন, তা ছিল আমার কাছে অকল্পনীয় ব্যাপার।
পয়লা জুলাই কালের কণ্ঠে আলবদর সাহেবের যে লেখাটি ছাপা হয়েছে, তাতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য যেসব অসৎ এবং কটূক্তি তুলে ধরা হয়েছে, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতিদেরও সম্ভবত এসব মিথ্যা ও কুযুক্তি জানা নেই। আর জানা থাকলেও অপরাধীর বিবেক দংশন থেকে তা তাঁরা প্রচার করতে পারছেন না। বরং তাঁদের পরম মিত্র এবং নতুন স্পোকসম্যান আল বদর-উদ্দীন উমরকেই সেই মিথ্যা ও কুযুক্তি প্রচার দ্বারা তাঁদের বিচার ও দণ্ড থেকে বাঁচানোর মহৎ দায়িত্বটি অর্পণ করেছেন। পয়লা জুলাইর লেখাটি পড়লে একজন বালকেরও বুঝতে অসুবিধা হয় না, তাঁর এই লেখাটির একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বলা যে, 'দেশে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো নৈতিক বা আইনগত ভিত্তি আর থাকেনি' এবং তাঁর ভাষায়, '১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ শুধু অবাঙালি ও পাকিস্তানিরাই করেনি, বাঙালিরাও করেছে। ' (ধিক এই নরাধম জাতিদ্রোহী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীকে।
এর চেয়ে বড় ধিক্কার লেখক হয়ে তাঁকে আর কী দেব?)
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়, বিশেষ করে জার্মানি ও ইতালির পরাজয়ের সময় মিত্রপক্ষের বিজয়ী সৈন্যদের হাতে সেই দেশে অসংখ্য নিরীহ মানুষ-নারী-শিশু নির্যাতিত হয়েছে। তাই বলে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের সময় কেউ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকার মানুষ যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং চার্চিল, রুজভেল্ট বা স্ট্যালিনেরও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার হওয়া উচিত ছিল, এমন কথা বলেননি। ড. রাধাবিনোদ পালও বলেননি। তিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধীদের ট্রায়ালে বিচারকদের প্যানেলে ভারতীয় বিচারক ছিলেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তিদানের ব্যাপারে অন্য বিচারকদের সঙ্গে অভিন্ন মত না হয়ে ভিন্ন রায় দিয়েছিলেন।
জার্মানি এবং ইতালিতেও এখন পর্যন্ত এমন একজন লোককে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা বলেছে অথবা বলবে, ব্রিটিশ, রুশ কিংবা মার্কিনিরাও যুদ্ধাপরাধ করেছে।
তারাই যুদ্ধাপরাধের জন্য একমাত্র দায়ী নয়। আর বাংলাদেশে এ দেশের এক কুলাঙ্গার বুদ্ধিজীবী স্বজাতিদ্রোহিতার চরম ধৃষ্ঠতা দেখিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো নৈতিক অথবা আইনগত ভিত্তি নেই; এবং আওয়ামী লীগ নাকি এই ভিত্তি নষ্ট করে ফেলেছে। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, 'একাত্তরে বাঙালিরাও যুদ্ধাপরাধ করেছে। '
ব্রিটেনের মতো গণতন্ত্র এবং অবাধ বাকস্বাধীনতার দেশেও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরাও যুদ্ধাপরাধ করেছে_এ কথা কেউ বলেনি; বলার সাহস দেখায়নি। দেখালে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে তার বিচার এবং কঠোর শাস্তি হতো।
সম্প্রতি এক বিখ্যাত হিস্টোরিয়ান তাঁর এক গ্রন্থে শুধু লিখেছিলেন, 'হিটলার হলোকাস্ট ঘটিয়ে লাখ লাখ ইহুদি হত্যা করেছিলেন_এটা একটা মিথ; এর পক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। ' শুধু সরকারি ব্যবস্থায় নয়, প্রচণ্ড জনরোষে তাঁকে শুধু বইটিই বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হয়নি, তাঁকে ভুল স্বীকার করে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে। তার পরও তাঁকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আর বাংলাদেশে একাত্তরের নারীঘাতী-শিশুঘাতী বর্বরদের মুখোশ পরা সমর্থকরা বাকস্বাধীনতা-মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে জাতিদ্রোহিতা-দেশদ্রোহিতামূলক বক্তব্য অবাধে প্রচারের সুযোগ পাচ্ছে। আমি জানি না, এ ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকারের মতো ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থেকে হাসিনা সরকার আর কতকাল 'ডেমোক্রেটিক সিকনেসে' ভুগবে?
নৃশংসতা (Atrocity) এবং ওয়ারক্রাইমের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত।
বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর পিস ফাউন্ডেশনের উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেছিলেন, 'পরাজিত জার্মানি ও ইতালিতে ব্রিটিশ-রুশ-মার্কিন সৈন্যরা অনেক ক্ষেত্রে অ্যাট্রোসিটি চালিয়েছে; ওয়ারক্রাইম করেনি। ' তারপর অ্যাট্রোসিটি ও ওয়ারক্রাইমের মধ্যকার পার্থক্যটি বিশ্লেষণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশেও পাকিস্তানিদের এবং তাদের সহযোগী একশ্রেণীর অবাঙালির বর্বরতা ও যুদ্ধাপরাধের প্রতিক্রিয়া একশ্রেণীর বাঙালির মধ্যেও দেখা দিয়েছিল, যা সব দেশেই বিপ্লবের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দেয় এবং তাদের অনেকে নৃশংসতার আশ্রয় নেয়। এটা যুদ্ধাপরাধ নয়।
আলবদর-উদ্দীন উমর কি অ্যাট্রোসিটি এবং ওয়ারক্রাইমের মধ্যে পার্থক্য কোথায়, তা জানেন? নাকি না জেনেই বহুকাল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী-সমাজবিজ্ঞানী সেজে শিক্ষকতা করেছেন এবং শিক্ষার্থীদের মগজ বিনষ্ট করেছেন? ওয়ারক্রাইম কী, তা জানতে চাইলে তিনি রোমা রোঁলার নাৎসি কারাগারে বসে লেখাগুলো, বিশেষ করে 'I will not rest' (আমি ক্ষান্ত হব না)-এর পর্যায়ের লেখাগুলো আরেকবার একটু সুস্থ মানসিকতা নিয়ে পড়ে দেখুন না কেন?
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে আলবদর-উদ্দীন উমর এমনসব হাস্যকর কথাবার্তা লিখেছেন, যা নিয়ে আলোচনা করাও আমার কাছে লজ্জাকর মনে হচ্ছে।
এক ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রীয় ক্ষমা (State pardon) এবং সাধারণ ক্ষমার (General amnesty) মধ্যকার পার্থক্য না বোঝেন অথবা না বোঝার ভান করে আবোলতাবোল বকেন, তাহলে তাঁর মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করা চলে।
আলবদর সাহেবের মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চাননি। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যাদের আটক করা হয়েছিল, তাদেরও ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া ১৯৭৪ সালে লাহোরে ইসলামী সম্মেলনে গিয়ে 'সবচেয়ে বড় এবং ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী' জুলফিকার আলী ভুট্টোকে শুধু মাফ করে দেওয়া নয়, তাঁকে পরম বন্ধু হিসেবে আলিঙ্গন করে তাঁর গালে চুমু খেয়ে এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে বঙ্গবন্ধু '৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো নৈতিক অথবা আইনগত ভিত্তি আর অক্ষুণ্ন রাখেননি। তারপর তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন।
সাংবিধানিকভাবে ক্ষমা ঘোষণা ছিল রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারভুক্ত। তথাপি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই ক্ষমা ঘোষণা তিনি করেছিলেন নিজে এই কাজের কৃতিত্ব গ্রহণের জন্য।
পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর গালে চুমু খেলে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনগত ও নৈতিক কোনো ভিত্তি থাকে না_এটা জ্ঞানপাপী ছাড়া আর কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর পূর্ববর্তী শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট এবং যুদ্ধাপরাধী ডি ক্লার্ককে তাঁর সরকারে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ এবং শপথ গ্রহণ মঞ্চে তাঁকে আলিঙ্গন করার পর দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদীদের বিচার, এমনকি পরবর্তী পর্যায়ে ট্রুথ কমিশন গঠনেরও কোনো আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি থাকে কি?
শেখ মুজিব নিজে বাহাদুরি নেওয়ার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন এবং এই ক্ষমা ঘোষণা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ারভুক্ত_এ ধরনের উক্তি দ্বারাই বোঝা যায়, আলবদর সাহেবের জ্ঞান-বুদ্ধির সীমানা কতটা প্রসারিত। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কোনো অপরাধের জন্য চরম দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর যদি অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা ও দণ্ড মওকুফের আবেদন করে, তাহলে রাষ্ট্রপতি তাঁর সরকারের অনুমোদনক্রমে তা মঞ্জুর করতে পারেন বা করেন।
এটা পার্ডন (Pardon) বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমা।
জেনারেল অ্যামনেস্টি বা সাধারণ ক্ষমা তা নয়। এটা প্রধানমন্ত্রী বা কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ঘোষণা করতে পারেন। ব্রিটেনে প্রায় প্রতিবছরই এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ বহিরাগতকে সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হয়। এটার জন্য তাদের রাষ্ট্র বা সরকারের কাছে আবেদন জানাতে হয় না।
সরকার বা মন্ত্রিসভাই তাদের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। বঙ্গবন্ধু সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণাও ছিল একটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত। এ ঘোষণায় যুদ্ধাপরাধীদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করা হয়নি (যে মিথ্যাটা জামায়াতিরা এবং উমর অনবরত প্রচার করে চলেছেন)। এই ক্ষমা কোলাবরেশন আইনে ধৃত ও অভিযুক্ত এক বিরাট সংখ্যক মানুষের মধ্যে যাদের অপরাধ খুব গুরুতর ছিল না, তাদের জন্য ঘোষণা করা হয়। শুধু এ ব্যাপারে জামায়াতি এবং আলবদর সাহেবের প্রচারণার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য আলবদর-উদ্দীন উমর সাহেব যে ওকালতনামায় সই করেছেন, তা কি বিনা ফিতে, না প্রচুর ফির বিনিময়ে, তা আমি জানি না। তবে তাঁর যুক্তি ও জ্ঞানের বহর দেখে মনে হচ্ছে, তিনি খুব যোগ্য উকিল নন। নইলে এত কাঁচা মিথ্যায় তিনি সত্যের রং লাগাতে চেষ্টা করতেন না। তাঁর আরো দু-একটি মিথ্যাচার ও কুযুক্তি সম্পর্কে আরো একটু আলোচনা প্রয়োজন। (শেষাংশ আগামী মঙ্গলবার)
লন্ডন, ১৯ জুলাই, সোমবার ২০১০
কালেরকন্ঠ // ২০ জুলাই ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।