আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরাতন গাড়ীর চালকরা সাবধান



প্রবাস জীবনের সময়গুলো একটু ব্যতিক্রম; ব্যস্ততা, আর ব্যস্ততা, ব্যস্ততার যেন কোন শেষ নেই। সেই সাথে আমরা যারা পরিবার নিয়ে আছি, তাদের পরিবারকে সময় দেয়ার, সময় কোথায়? তাই মাসে একটা Family Gathering যেন আমদের কাছে সোনার হরিন, কোনভাবে মিস্ করার সুযোগ নেই। যে যেভাবে পারে, পঙ্গপালের মত এসে জড় হয় Family Gathering। প্রোগ্রাম উত্তর গল্পই যেন মূল আকর্ষন। ভরসা কোম্পানীর এক ভাই ভরসা করতে না পেরে আরেক ভাইকে হত্যা করলেও, ভরসা আমাদের থেকে বিদায় নেয়নি।

আমরা পুরান গাড়ীর উপর ভরসা করে, গল্প চালিয়ে যাই। আর আমরা যারা পুরান গাড়ী চালাই এবং Family নিয়ে বিদেশে থাকি তাদের জ্বালাটা একটু বেশি। যাই-হোক এবারের প্রোগ্রামও জমলো ভালই। প্রোগ্রাম শেষে দলবেঁধে আমরা রওনা হলাম রাত ১১টায়। কারন মালেয়শীয় যারা প্রাইভেট গাড়ী চালায়, তারা ভাল করেই জানে, রাস্তা কি জিনিস এবং কত প্রকার।

একবার ভুল হলেই ঘবর আছে, তাই দলবেধেঁ যাত্রা। যাই-হোক, আমরা চলছি এবং প্রত্যেকই তার কাছা-কাছি পরিচিত পথ থেকে বিদায় নিয়েছে। এখন আমরা দুই গাড়ী আর আমাদের উদ্দেশ্য KL- Kajang, সামনে আমি চালাছি আমার বন্ধু বাশারের গাড়ী আর পেছনে সাকিব চালাচ্ছে আমার গাড়ী। আমাদের গতি প্র্রায় ৮০ কি.মি.। হটাৎ পিছনের গাড়ী থেকে আমাকে ফোন, ‘ভাই আপনার গাড়ীতে সমস্য, মনে হচ্ছে তেল শেষ।

তেল শেষ হবার কথা নয় তাই সাহস করে রাস্তার পাশে গাড়ী থামালাম। বুঝতে পারলাম গাড়ীর ব্যাটারী সমস্যা, রাত এখন ১২.৩০টা। রাস্তার একপাশ পাহাড় আর নিরিবিলি আর অন্য পাশে দূর্তগামী যানবাহন। আমাদের সাথে আমাদের পরিবার, গা শীম শীম করাটাই স্বাভবিক। কিন্তু আমরা বিচলীত হলাম না, বরং আমরা একটা টীম হয়ে গেলাম।

আমাদের কেউ গাড়ী start এর ব্যর্থ চেষ্টা করে চলল, কেউ দূর্তগামী যানবাহনগুলোকে সংকেত দিয়ে চলল, ভাবীরা বাচ্ছাগুলোকে সামলাচ্ছে। শুরু হল ফোটা ফোটা বৃষ্টি, এবার বাচ্ছাগুলো ভিজবে। এবার আমরা দুইগ্রুপ হয়ে গেলাম, আমার দায়িত্ব হল বাশারের গাড়ীতে করে ভাবীদের বাসায় পৌঁচ্ছে দিয়ে দ্রুত ফিরে আসা আর বাকীগ্রুপ চেষ্টা চালাবে মেকানিক জোগাড়ের জন্য। Kajang যখন পৌঁছালাম, তখন রাত প্রায় ২টা সেই সাথে এই গাড়ীটাতেও কেমন যেন টায়ার পুড়া গন্ধ তাই সাহস হলোনা এই গাড়ী নিয়ে ফিরে যেতে। আমার এক বন্ধুকে ফোন করে তার গাড়ী নিয়ে বাকী গ্রুপর কাছে পৌছলাম রাত ৩টার দিকে।

এতক্ষনে তারা আমার গাড়ীটা চালু করে ফেলেছে এক ট্যাক্সী ড্রাইভারের সাহায্যে। মুরব্বীর (লিংকন ভাই) পরামর্শে আমি আর দাঁড়ালাম না, আমার বন্ধুর গাড়ীটা সাকিবের কাছে রেখে আমি আর আমিন আমার গাড়ী নিয়ে রওনা হলাম। কোনরকম ইনটান হাইওয়ে থেকে এসে পরলাম Plus হাইওয়েতে। কারন আমার বিশ্বাস Plus হাইওয়েতে উঠতে পারলেই সমাধান, হলও তাই। টিকেটে দেওয়া হটলাইন নাম্বারে কল করে মেকার পেলাম।

মেকার গাড়ী ঠিক করছে আর আমি মনে মনে ভাবছি, এই ঘটনার নাটেরগুরু কে??? ভেবে যা পেলাম তা কষ্ট হচ্ছে লিখতে, তবুও সত্য আমার গোপন করার আধিকার নেই। আর এহতেছাব করার এটাই সঠিক সময়, যেহেতু পরকালই তো আমাদের মূল্য লক্ষ্য। আসলে পুরান গাড়ী, একটু বেশী যত্ন করতে হয়। পানি, ইন্জিন ওয়েল, টাইম বেল্ট এবং আরও কিছু বিষয সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। আমি যে এবিষয়গুলো উপেক্ষা করে চলি তাও না।

তাহলে বিষয়টা কি? বিষয়টা হচ্ছে আমার গাড়ীটা বেশ কিছুদিন ইন্জিনে শব্দ হচ্ছে, আমি গাড়ীটা নিয়ে কয়েকবার দেখিয়েছি গ্যারেজে। তারা আমার গাড়ীটা চেক করেছে, কিন্তু সমাধান হয়নি। আমার টাইমিং বেল্টে সমস্যা ছিল, যা আমার জানা ছিলনা। সহজেই বুঝতে পারছেন, এই ঘটনার নাটেরগুরু হচ্ছি আমি নিজে। সমস্যাযুক্ত গাড়ী নিয়ে, এত দূরের পথ যাওয়া ঠিক হয়নি।

এদিকে আমাদের সঙ্গীরা আমাদের জন্য কাজং-এ এসে আপেক্ষা করতে লাগলো দোকানে বসে, বাশারের শরীরে জ্বর তবুও সে বসে থাকবে। কিন্ত আমি বুঝতে পারছিলাম আমাদের দেরী হবে, তাই ফোনে অনেক অনুরোধ করে রাত প্রায় ৫টায় তাদের বাসায় পাঠাতে সক্ষম হলাম। অনেক কষ্ট হল, কিন্তু একটা চমৎকার বিষয়ও প্রকাশ হল এই প্রবাস জীবনে যা এতদিন এত প্রকটভাবে আর কখনও উপভোগ করিনি। তা হচ্ছে উখয়া (Brotherhood)। একটু পরেপরে ফোন আর এক একজনের অনুভুতি আমাকে শুধু অবাক করেনি বরং দিয়েছে মিষ্টি অনুভুতি।

হয়তো একদিন মালেয়শীয়াতে থাকবো না। হয়তো একদিন, এক এক জন এক এক জায়গাতে থাকবো, কিন্তু এ অনুভুতি ভুলে যাবার মত নয়। আমার ভাবনায় বিরতী ঘটল যখন গাড়ীর মেকার আমার সাথী আমিনুলকে বলে ওঠলে ‘Now your car OK lah’ । ঘড়ির কাটাতে তখন প্রায় ৫.৩০টা, আমরা আমার গাড়ী নিয়ে যাত্র শুরু করলাম। নীয়ন আলোর ফাঁকে প্রভাতের উদয় উপভোগ করতে করতে আমরা প্রায় ৬টার দিকে বাসায় এসে পৌচ্ছলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।