সুস্থবিজ্ঞানের চর্চা করতে চাই
আমাদের মধ্যে অনেকেরই গণিতভীতি চরমে। গণিত দেখলেই আমাদের মাথা ধরে যায়। অথচ বর্তমান বিজ্ঞান, অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ের ভিত্তি হচ্ছে এই গণিত। গণিত ছাড়া বর্তমান সভ্যাতা অচল।
গণিত নিজেই একটি বিজ্ঞান বর্তমানে সে বিজ্ঞানের ধারক ও বাহক।
তাইতো গ্যালিলিও
বলেছেন “ প্রকৃতির বিরাট গ্রন্থটি গণিতের ভাষায় লেখা। ”এরই মধ্যে কিছু কিছু গণিতের তত্ত্ব এই পৃথিবীকে প্রভাবিত করেছে সবচেয়ে বেশি। তারই কিছু গণিতের তত্ত্ব নিয়ে এই লেখা। (ভয় পাবেন না এটা গণিত শিখার কোন পোস্ট নয় এটা গণিতের কিছু তত্ত্ব নিয়ে একটি তাত্তিক আলোচনা। )
সেট তত্ত্ব(Set Theory):সেট তত্ত্ব গণিতের একটি অন্যতম শাখা।
এর সঙ্গা অনেকটা এরকম: বস্তু জগতের বা চিন্তা জগতের বস্তু বা ধারনার যে কোন সুনির্ধারিত তালিকা, সংগ্রহ, শ্রেণী বা অবজেক্টকে সেট বল হয়। “ সেট তত্তের জনক বলা হয় জার্মান গণিতবিদ জন ক্যান্টরকে।
আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেএে আমরা সেট ব্যবহার করি। প্রোগ্রামিং জগতে এই সেটকে আবার এ্যরে বলা হয়।
সেট এর প্রয়োগক্ষেএ বিশাল।
১)ফ্রিজিক্স, কেমেস্ট্রি এবং বায়োলজির অনেক সূএ দাড়িয়ে আছে এই সেট থিওরীর উপর।
২) ইন্জিনিয়ারিং এর প্রতিটি ক্ষেএ আছে সেট থিওরী।
৩) এটা আবার ক্যালকুলাসের উন্নয়নের ব্যবহার করা হয়।
৪) ফাংশনের ভিত্তি হচ্ছে সেট।
লগারিদম(logarithm): কুড়ি বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হল লগারিদম।
জানেন এই পরিশ্রম কে করেছে ? জন নেপিয়ার। কুড়ি বছরের পরিশ্রমে তিনি ৯০ পৃষ্টার একটি বই বের করেছিলেন যার নাম ছিল “A description of an admirable table of logarithms”. ৯০ পৃষ্টার এই বইটি আজকের বিজ্ঞানের বিশাল বিশাল সব বই সৃস্টি করেছে।
এর সঙ্গা এরকম:
কোন নিদিষ্টি ভিত্তি সাপেক্ষে কোন সংখ্যার লগারিদম বা লগ এর মান হবে সেই ভিত্তির এমন একটি সূচক যার দ্বারা ভিত্তিটিকে ঐ নিদিষ্টি সূচকে উন্নীত করলে উক্ত সংখ্যাটি পাওয়া যায়। লগারিদম বলার সাথে সাথে তার ভিত্তিও বলে দিতে হয়। ভিত্তি ছাড়া লগারিদম হয়না।
যেমন: a^x=n হলে x=log a^n.
লগারিদম এর প্রয়োগ ক্ষেএ:
১. এলগরিদমের জগতটার ভিত্তি এই লগারিদম ।
২. বিভিন্ন পরিমাপে যেমন ভুমিকম্পের পরিমান নির্ণয়ে।
৩. আর্থিক বিভিন্ন ক্যালকুলেশনে যেমন পরিসংখ্যন বিদ্যায়।
৪. আর বিজ্ঞান ও ইন্জিনিয়ারিং সেক্টর তো আছেই।
বীজগানিতিক রাশি(Algebraic Exprssion): মুসা আল-খোয়ারিজমির অনন্য আবিস্কার আধুনিক বীজগণিত।
তাইতো আধুনিক বীজগণিতের জনক তিনি। (a+b)^2=a^2+2ab+b^2 এই সূএ জানেন না এরকম লেখাপড়া জানা মানুষ হয়ত খুব কম পাওয়া যাবে। এটিও এক প্রকার বীজগানিতিক রাশি। এর সঙ্গা এভাবে দেওয়া যায়: এক বা একাধিক সংখ্যা ও সংখ্যা নির্দেশক প্রতীকে যেমন যোগ(+), বিয়োগ(-), গুন(*), ভাগ(/) ঘাত বা মূল চিহ্নের যে কোন একটি বা একাধিকের সাহায্যে অর্থবহ ভাবে সংযুক্ত করলে যে নতুন সংখ্যা নির্দেশ প্রতিকের সৃষ্টি হয় তাতে কি বীজগণিতিক রাশি বা সংক্ষেপে রাশি বলে। যেমন:3x, 2x+3ay ইত্যাদি।
বীজগাণিতিক রাশির আবার কতগুলো ভাগ আছে।
পৃথিবীতে বিজ্ঞানের পিছনের শক্তি হিসেবে কাজ করে বীজগাণিতিক রাশি। বর্তমানে প্রায় সব গণিতেই বীজগাণিতিক রাশি ব্যবহার করা হয়।
ফাংশন(Function): F(x)= ? এ মধ্যে যে কত রহস্য আর কাহিনী লুকিয়ে আছে। ফাংশন গণিতের একটি অনণ্য আবিস্কার।
ইংরেজী ফাংশন শব্দটি আমরা বহুবার শুনেছি। প্রায় সব জায়গায় একটি নির্দিষ্ট কাজ বুঝাতে ফাংশন কথাটি ব্যবহার করা হয়। দুই বা তোতাধিক রাশির মধ্যে সম্পর্ক এবং তাদের নিয়ে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া নিয়েই ফাংশনের কাজ। ফাংশন একটি বিশেষ ধরনের অন্বয় বা সম্পর্ক। এবার আসি ফাংশনের সঙ্গায়:
ফাংশন একটি গাণিতিক ধারণা যা দুইটি রাশির মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা প্রকাশ করে।
একটি রাশিকে বলা হয় প্রদত্ত রাশি, বা স্বাধীন চলক বা ফাংশনটির আর্গুমেন্ট বা ইনপুট। অপরটিকে উৎপাদিত রাশি বা ফাংশনের মান বা আউটপুট বলা হয়। ফাংশন কোন একটি নির্দিষ্ট সেট থেকে (যেমন-বাস্তব সংখ্যার সেট থেকে) নেয়া প্রতিটি ইনপুট উপাদানের জন্য একটি অনন্য আউটপুটকে সম্পর্কিত করে।
ফাংশনের ব্যবহার কোথায় হয়? এই প্রশ্নের উওর দেওয়ার চেয়ে ফাংশনের ব্যবহার কোথায় হয়না এই প্রশ্নের উওর দেওয়া হয়ত সহজ। গণিতের বিভিন্ন শাখা পিলার হয় আর সেই পিলারের উপর বিজ্ঞান দাড়িয়ে থাকে তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন পিলার হচ্ছে ফাংশন।
তার পরও কিছু প্রয়োগ ক্ষেএ তুলে ধরলাম:
১) গ্রাফ
২)ক্যালকুলাস
৩) সকল বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক এবং ইন্জিনিয়ারিং জগতে।
গ্রাফ(Graph): ফাংশনের গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনা কে গ্রাফ বলা যায়। তবে গ্রাফ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আবার বীজগাণিতিক রাশির চিএের মধ্যমে উপস্থাপনাকেও গ্রাফ বলে। কম্পিউটার মনিটরের উপস্থাপনাই গ্রাফের সবচেয়ে ভাল উদাহরন।
এছাড়াও
১. পরিসংখ্যন বিদ্যা
২. বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গভেষণায়।
৩. চিএ ভিত্তিক যে কোন কিছুর গভীরেই থাকে গ্রাফ থিওরী।
ক্যালকুলাস(Calculus): বিজ্ঞানী নিউটন আর লিবনিজের আরেকটি অনন্য আবিষ্কারই হল ক্যালকুলাস। বর্তমান বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ক্যালকুলাসের। ক্যালকুলাস হল বীজগানিতিক রাশি আর ফাংশনকে গড়ে উঠা এক বিশাল গণিত প্রাসাদ।
ক্যালকুলাসকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল ডিফারেনসিয়াল ক্যালকুলাস এবং অন্যটি হল ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস। যেখানে বীজগণিত শেষ সেখান থেকেই শুরু হয় ক্যালকুলাস। বর্তমান বিজ্ঞান এবং ইন্জিনিয়ারিং এ প্রায় ৯০% জুড়ে আছে এই ক্যালকুলাস। সবচেয়ে মজার কথা হল ক্যালকুলাসের ভিত্তি কিন্তু ফাংশনই।
পোস্ট অনেক বড় হয়ে গেছে। তাই আজ এ পর্যন্তই।
সবশেষে একটি পরামর্শ: মেধা বিকাশে গণিত চর্চার চেয়ে উন্নত কোন কিছু আজও আবিস্কার হয়নি। তাই প্রতিদিন আপনি অথবা আপনার সন্তানকে অন্তত দুটি করে গানিতিক সমস্যার সমাধান করুন অথবা করতে দিন।
তথ্যসূএ: কিছু গণিতের বই, উইকিপিডিয়া ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।