আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামালপুরের লুটেরা কামারুজ্জামান

কবিতার প্রথম লাইনটি আসে স্বর্গ থেকে; বাকিটা তুমি গড়ে তোল।

জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরে আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন। তখন তিনি জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামানের স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতা ও যুদ্ধাপরাধের বিবরণসহ তৎকালীন সংবাদপত্র, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থ ও নির্যাতিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে। তিনি সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক ও জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সাবেক নির্বাহী সম্পাদক।

১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তানের ২৫তম আজাদি দিবস উপলক্ষে মোমেনশাহী আলবদর বাহিনীর উদ্যোগে মিছিল ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় মুসলিম ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এ সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক কামারুজ্জামান। জামালপুরের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী হিসেবে আলবদর বাহিনী গড়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে জামায়াত নেতৃত্ব হৃদয়ঙ্গম করতে পারে যে, ছাত্র সংঘকে তারা সশস্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাধারণ তৎপরতা চালানো ছাড়াও বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য বিশেষ স্কোয়াড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। পরীক্ষামূলকভাবে সারা ময়মনসিংহ জেলার ইসলামী ছাত্র সংঘের কর্মীদের আলবদর বাহিনী হিসেবে সংগঠিত করে সশস্ত্র ট্রেনিং দেয়া হয়। এ সাংগাঠনিক কার্যক্রমের পরিচালক ছিলেন কামারুজ্জামান।

কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে মাসখানেকের মধ্যেই ময়মনসিংহ জেলার সব ছাত্রসংঘ কর্মীকে আলবদর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ’ শেরপুরের একজন শহীদের পিতা ফজলুল হক যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কিত গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তার ছেলে শহীদ বদিউজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধের সময় আষাঢ় মাসের একদিন কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে ১১ জনের একটি দল ধরে নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে হত্যা করে। স্বাধীনতার পর শহীদের বড় ভাই হাসানুজ্জামানের দায়ের করা মামলায় কামারুজ্জামান অন্যতম আসামি ছিলেন। শেরপুরের শহীদ গোলাম মোস্তফার ভাই শাহজাহান তালুকদার জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ২৪ আগস্ট আলবদররা গোলাম মোস্তফাকে শেরপুর শহরের সড়ক থেকে ধরে নিয়ে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। শেরপুর শহরের সুরেন্দ্রমোহন সাহার বাড়িটি দখল করে আলবদররা তাদের ক্যাম্প বানিয়েছিল।

সে ক্যাম্পে গোলাম মোস্তফাকে ধরে নিয়ে আলবদর তার গায়ের মাংস ও রগ কেটে, হাত বেঁধে হাঁটিয়ে নিয়ে যায় শেরী ব্রিজের নিচে। সেখানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কামারুজ্জামানের প্রত্যক্ষ নির্দেশেই এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল। শেরপুরের জাতীয় পার্টির নেতা এমদাদুল হক হীরা জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকেই কামারুজ্জামানের সহায়তায় পাকিস্তানিরা তার বাড়িঘর জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছিল। সেখানে তারা পাঁচটি বাঙ্কার বানিয়েছিল।

অপর একজন প্রতক্ষদর্শী মুশফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, ৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে কামরুজ্জামানের নির্দেশ ও উপস্থিতিতে তিনআনি বাজারের বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো লুট হয়। শেরপুরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আলবদরদের দিয়ে নিরীহ লোকজনদের ধরে আনা এবং তাদের লাশ বহন করতে ব্যবহৃত ট্রাকগুলোর একজন চালক জানিয়েছেন, কামারুজ্জামান নকলার মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বাড়ি পোড়ানোর জন্য পাকিস্তানি বাহিনীকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যান। তখন হত্যার বাড়ি থেকে কামারুজ্জামান প্রায় একশ মণ চালও লুট করেন। এ ছাড়া কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদররা সাধারণ মানুষের গরু, ছাগল ধরে নিয়ে আসত ও পরিত্যক্ত সম্পত্তিসহ অন্যান্য জমি-সম্পত্তি জোর কর দখল করতেন বলে জানিয়েছেন এ ট্রাক চালক। কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে সে সময় ডাকাতির অভিযোগও পাওয়া গেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.