যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
মাননীয় ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হিরা
একজন মন্ত্রীর জীবন যাপন জৌলুস মিডিয়ার গ্লামারের মতই। কিন্তু ৬৭ বছর বয়সী ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হিরাকে দেখলে আপনার ভিমরী খেতে হবে। মধ্যবিত্তের নিটল প্রতিচ্ছবি এই মন্ত্রী এখনও বাস করছেন মেয়ের বাসায়, সাদামাটা একটা কলোনীর আরো বিবর্ণ ফ্লাটে। বাসার রেলিং এ জাতীয় পতাকা আর নিচে দুজন পুলিশ প্রহরী ছাড়া এটাকে মন্ত্রীর বাসা বলে প্রভেদ চলে না। সাত সকালে পায়ে হেঁটে বাজার করতে যান, রিকশায় চড়ে ঘরে ফেরেন।
সাদা পাঞ্জাবী-পায়াজামা আর মুজিব কোটে সাধারণ এই নেতার অসাধারণ জীবনালেখ্য দেখলাম চ্যানেল ওয়ানে। মাত্র এইচএসসি পাস, তিন তিনবার এমপি নির্বাচিত এই নেতা বললেন, তার তিন সন্তান, সবাই উচ্চশিক্ষিত, নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে তার কোন চাহিনা নেই। তিনি মন্ত্রী হয়েছেন বলে কাউকে সুবিধা দিতে পারেন না।
জামালপুর-৫ আসন থেকে নির্বাচিত রেজাউল করিম হিরা টিভি-ক্রুদের একটি করে মিষ্টি খাইয়ে আপ্যায়ন করেছেন। ক্যামেরার সামনে রান্নাঘরে তার মেকাপহীন স্ত্রীর সহজ সরল অভিব্যক্তি দেখে বিষ্ময়ের সীমা ছিল না।
একজন মন্ত্রীর ঘর দেখছি, একজন মন্ত্রীর কথা শুনছি - বহুকাল এমন দৃশ্য এই হতদরিদ্র দেশে বিরল দেখা। এখানে মন্ত্রী মানেই কোট-টাই, পাজেরো আর জমকালো সব ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, ড্রইং রুমে বিদেশী লাখ টাকা দামের ফ্লাওয়ার ভাস, ইরানী গালিচার রাজকীয় সৌকর্য্য আর বিরল ঝাড়বাতির আলোকধাধা। এই পরিচিত সেটিং এর বাইরে রেজাউল করিম হিরাকে মনে হলো খাঁটি নক্ষত্র।
মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরের সংগ্রাম পরিষদের জয়েন্ট কনভেনর ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার সুবাদে। জামালপুর সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন।
১৯৯৬, ২০০১ এ নির্বাচিত হয়েছিলেন জামালপুর শহরের সিটটি থেকে। তার জনপ্রিয়তার প্রমান মেলে এবারের ইলেকশনে। যেখানে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৯৯ হাজার ভোট আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ৮৮ হাজার ভোট।
প্রদত্ত ভোটের ৬৮% রেজাউল করিম হিরার।
জামালপুর নিয়ে আমার আগ্রহের কারণ ভিন্ন জায়গায়।
কোন এক কালে জামালপুরের তারাকান্দি ট্রেনে চড়ে বেড়াতে যাবার ইচ্ছে হয়েছিল। আমার আপনজন কখনও রেলে চড়ে নাই। তাকে ট্রেনে চড়াবার উৎসবে বেছে নিয়েছিলাম তারাকান্দি। তারপর এর কাছে জিজ্ঞাসা, তার কাছে জানতে চাওয়া জামালপুর আর সেখানের মানুষ সম্পর্কে। কেউ একজন বলেছিল সেখানের মানুষজন নাকি ভিন্নগ্রহের।
এত সহজ সরল ও ভালো মানুষ নাকি হতেই পারে না। আমার যাওয়া হয় নাই তারাকান্দি, কিন্তু অদেখা সে জায়গাটি আমার কাছে এখনও স্বপ্নের মত জুরে আছে। কোন অদ্ভুত কারণে এরপরে জামালপুরের সব কিছু আমার প্রিয় হয়ে ওঠে। ভূমি মন্ত্রী রেজাউল করিম হিরার বৃত্তান্ত জেনে মনে হলো, হি ইজ ফ্রম মাই ল্যান্ড - এমনই তো হওয়ার কথা।
নদীভাংগন, সড়ক উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, তারাকান্দি-ভুয়াপুর রেল পথ সম্প্রসারণ, নান্দিনা নদীতে ব্রীজ নির্মাণ, দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণসহ, কৃষি উন্নয়নের বহুল আলোচিত প্রতিশ্রুতিগুলো জামালপুরাবসীর মত আমিও প্রত্যাশা করি মাননীয় ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হিরা পূরণ করবেন।
সূত্রঃ ১ , ২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।