আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

READ AND FIND IF THE REPORT TRUE OR FALSE....

আমি মন্দ.... আমি ভাল....

রাজউক চেয়ারম্যান কাজ করছেন জামায়াতের হয়ে! কালের কণ্ঠ, Sun 11 Jul 2010 রাজউক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের পক্ষে কাজ করে আসছেন। সরাসরি তিনি জামায়াতের কোনো পদ-পদবি বহন না করলেও জামায়াতের মালিকানাধীন হাউজিং কম্পানি ও জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নেতা-কর্মীদের ভবনের নকশা অনুমোদনে বিশেষ সহায়তা করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নূরুল হুদা সম্প্রতি ড্যাপের তৃতীয় নকশায় জলাধারের তালিকা থেকে জামায়াত মালিকানাধীন উত্তরণ হাউজিংয়ের দখলকৃত ভাওয়াল এস্টেটের ১৫১ বিঘা জলাশয় বাদ দিয়ে আরবান এলাকা ঘোষণা করেছেন। উত্তরণ হাউজিং ও মিশন প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান হলেন উত্তরা থানা জামায়াতের সভাপতি আলাউদ্দিন আহমেদ। এর আগে গত ১৩ জুন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক ও ২১ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপিত এবং গেজেট আকারে প্রকাশিত ড্যাপের প্রথম নকশায় ওই জলাধারটি বন্যাপ্রবাহ এলাকা (ফ্লাড ফ্লো জোন) হিসেবে চিহ্নিত ছিল।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওয়েবসাইটে দেওয়া নকশায় সেটিকে আরবান জোন হিসেবে দেখানো হয়েছে। রাজউকের একজন উপপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, নরসিংদীর গাবতলী জামিয়া কাশিমিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন জাফরী জামায়াতের পক্ষে এসব কাজের তদবির করে থাকেন। তিনি জানান, ড্যাপের উত্তরণ হাউজিং কম্পানির ওই ১৫১ বিঘা জমি জলাধার হিসেবে চিহ্নিত থাকার পরও সেটি বাতিল হওয়ার আগে রাজউক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কামালউদ্দিন জাফরীর বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়। সম্প্রতি রাজউকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর অন্তত চারটি বৈঠক হয়েছে। এর সবকটি বৈঠকই হয়েছে রাজউক কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে।

অফিস ছুটির পর বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭-৮টা পর্যন্ত ওইসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রাজউক চেয়ারম্যান ও কামাল উদ্দিন জাফরী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করারও একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন নূরুল হুদা। এরই মধ্যে পূর্বাচল প্রকল্পের প্রাতিষ্ঠানিক প্লট নিয়ে সেখানে একটি ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠান করার বিষয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাজউক চেয়ারম্যানের ছেলে ও জাফরীর নামে একটি প্লট নিয়ে সেখানে প্রতিষ্ঠান করা হবে।

প্রতিষ্ঠানটির অর্থায়ন করবে জামায়াত। উল্লেখ্য, সাইয়্যেদ কামালউদ্দিন জাফরী হলেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বেয়াই। জাফরীর ছেলের সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামীর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ওই উপপরিচালক আরো জানান, 'কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে নূরুল হুদার বৈঠকের আলোচ্য সূচি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি এভাবে যে, হঠাৎ করেই চেয়ারম্যান সাহেব সাভার-আশুলিয়ায় অবস্থিত উত্তরণ হাউজিংয়ের জমির ব্যাপারে নতুন করে খোঁজ-খবর নিচ্ছিলেন। এর আগেও তিনি জামায়াতের এই দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্লট, ফ্ল্যাট বা ভবনের নকশা ও লে-আউট এলেই তা অনুমোদন করে দিতেন।

' এদিকে জাফরী পরিচালিত নরসিংদীর সবচেয়ে বড় মাদ্রাসা গাবতলী জামিয়া কাশিমিয়া কামিল মাদ্রাসা শিবিবের ঘাঁটি হিসেবে এলাকায় বিশেষভাবে পরিচিত। এ ব্যাপারে আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি সুমন চন্দ্র বর্মণ গতকাল মাদ্রাসা এলাকা ঘুরে এবং আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছেন, শিক্ষার আড়ালে এ মাদ্রাসায় শিবিরের কার্যক্রম চালানো হয়। নরসিংদী পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দা এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, গাবতলী ব্রাহ্মন্দীর পুরো এলাকা জামায়াত এবং শিবিরবেষ্টিত। জামায়াতের নেতাদের বাড়িঘর সেখানে। এর আগে জাফরী জামায়াতের রোকন ছিলেন।

তখন তিনি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে পাওয়া অনেক দায়িত্ব পালন করতেন। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যমতে, জাফরী বেশির ভাগ সময় এলাকার বাইরে থাকেন এবং ওয়াজ মাহফিল করে বেড়ান। দেশের বাইরেও তাঁর বেশ যাতায়াত রয়েছে। গতকাল মাদ্রাসার মহিলা হোস্টেল সুপার ও উপাধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, 'জাফরী সাহেব ঢাকায় আছেন। কবে আসবেন তা-ও জানি না।

কারন তিনি কাউকে বলে যাওয়া-আসা করেন না। তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। ' নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন কালের কণ্ঠের নরসিংদী প্রতিনিধিকে বলেন, নরসিংদীর এই মাদ্রাসাটি শিবিরের আঁতুড়ঘর। মাদ্রাসাটি এখন শিবির উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে শিবিরের নিয়মিত দলীয় ক্লাস নেওয়া হয়।

ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যদি কেউ শিবির না করে বা সে ক্লাসে না যায় তাহলে তাকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়া হয় বলেও মেয়র অভিযোগ করেন। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য কামাল উদ্দিন জাফরীকে বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি অপরিচিত নম্বরের ফোন ধরেন না। এদিকে নরসিংদী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল নিজামী-মুজাহিদসহ তিন নেতার মুক্তির দাবিতে ওই এলাকায় পোস্টার লাগানোর সময় সাত শিবিরকর্মীকে পুলিশ আটক করে। আটককৃত ব্যক্তিরা সবাই জাফরীর ওই মাদ্রাসার ছাত্র।

রাজউকের একজন প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সর্বশেষ গত ২৯ জুন কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নিজের রুমে বৈঠক করেন। সেদিন অবশ্য জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদসহ তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হন। পূর্বাচল প্রকল্পের প্রকৌশলী আরো জানান, এর আগে ড্যাপের নকশায় জলাধার তালিকা থেকে উত্তরণ হাউজিংয়ের জমিটি বাদ দেওয়ার জন্য তদবির নিয়ে আসেন জাফরী সাহেব। বিভিন্ন সময় রাজউক কর্মকর্তারা জাফরী সম্পর্কে নূরুল হুদাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিশেষ পরিচিত বলে জানান। রাজউকের নকশা অনুমোদন বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের জামায়াত প্রীতির কথা সবাই জানেন।

তিনি বলেন, একমাত্র জামায়াতের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান মিশন প্রপার্টিজের কোনো ফাইল রাজউকে আটকা পড়ে নেই। কোনো রকমের যাচাই-বাছাই ছাড়াই মিশন প্রপার্টিজের ফ্ল্যাটের নকশা অনুমোদন হয়ে যায়। অথচ অনেক বড় বড় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার ফ্ল্যাটের ফাইল রাজউকে জমা হয়ে আছে। রাজউক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা বিদেশে থাকায় এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। রাজউক সূত্র জানায়, সাবেক উত্তরা বর্তমান তুরাগ থানার তুরাগসংলগ্ন ধৌড়, আশুতিয়া ও নলভোগ মৌজায় ভাওয়াল স্টেটের ১৫১ একর জমি উত্তরণ হাউজিং দখল করে সেখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়।

ভাওয়াল স্টেটের প্রধান প্রকৌশলী রাজউককে বিষয়টি জানিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, 'উত্তরণসহ বেশ কিছু হাউজিং কম্পানি কর্তৃক ভাওয়াল স্টেটের ভূমি দখলের ঘটনা ঘটছে। ভাওয়াল এস্টেট থেকে মৌজা নম্বরসহ রাজউককে অনুরোধ করা হয়, রাজউক যেন কোনোভাবেই তাদের ভূমির ওপর উত্তরণ হাউজিং কম্পানিকে কোনো কাজ করার অনুমোদন না দেয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা সে বিষয়টিও পাশ কাটিয়ে যান। এরপর ড্যাপের নকশায় ওই জমিকে ফ্লাড জোন হিসেবে দেখানো হলেও সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

নূরুল হুদা গেজেট প্রকাশের কয়েক দিন পর সেই নকশায় ওই জমিকে জলাধার থেকে আরবান এলাকা হিসেবে দেখান। এখনো ওইসব মৌজার জমি পানির নিচে রয়েছে। ১৫ দিন ধরে সেখানে দ্রুতগতিতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।