আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবেগের ভূগোল বুঝি...সম্পর্কের গভীরতা বুঝি না....

আমি অবাক চোখে বিশ্ব দেখি, দৃশ্য সাজাই চোখের তারায়......

একটা সময় এই ঝিমিঝমানো দুপুরগুলো খুব ভালো লাগতো। এখন লাগে না। যান্ত্রিকতা আর নাগরিকতার নানামুখি ভোগান্তিতে এখন আর কাঠফাটা রোদেলা দুপুরের মাঝে বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাইনা। অবাক লাগে...মুগ্ধতার কতো আয়োজন ছিল, এই দুপুর ঘিরে, আর আজ দুপুর মানে যন্ত্রণা! বড় বিচিত্র! যেম বিচিত্র আমাদের ইমরান। বেশ বোকার মতো হয়ে গেল কথাটা।

রাস্তায় বেরিয়ে দশটা ঠিল মারলে দেখা যাবে সবগুলো না হোক, অন্তত চার-পাঁচটা ইট এমন লোকদের গায়ে লাগবে, যাদের নাম ইমরান। এদের মধ্যে কোনটা দআমাদের' ইমরান, তা খুঁজে বের করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। তাই নির্দিষ্টভাবেই বলে দেওয়া উচিত...আমাদের ইমরান, মানে আবদুল্লাহ আল ইমরান। যারা তাকে চেনেন ভালো। যারা চেনেন না তারা ফেসবুকে তাকে দেখে আসতে পারেন।

যাই হোক বলছিলাম ইমরানের বিচিত্রতার কথা। সেটা বলছি, তবে তার আগে বলে নেই তার বহুমুখি প্রতিভার কথা। সে লেখালেখি করে, সে গলাবাজি (বিতার্কিক অর্থে), সে পত্রিকায় কাজ করে, সে লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে। আরো কতো কী! তো এই বহুমুখি প্রতিভাধর ইমরানের সঙ্গে আমার পরিচয় বছর দেড়েক আগে। ইমরান খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য।

সে কীভাবে যেন আমাকে চেনে, যদিও আমি জীবনে খুলনায় যাইনি। (সম্ভবত ইমরান না নিয়ে গেলে কোনোদিন যাওয়া হবেও না!) সেহেতু সেখানকার কেউ আমাকে চেনে এটা জানতে পেরে আমি বেশ অবাক হলাম। তারচেয়েও বেশি অবাক হলাম, ইমরান আমাকে ফেসবুকের বুক থেকে খুঁজে বের করে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলো। এবং ঢাকায় এসে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করল। এখন সে আমার ‘ঘণিষ্ঠ বাহিনী’র অন্যতম সদস্য।

এতটুকু পড়ার পর অনেকেই হয়তো কোনো বিচিত্রতা খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের জন্য বলি, বহুজনের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। কিন্তু আমার ঘণিষ্ঠজনের সংখ্যা হাতেগোণা কয়েকজন। এবং আমার যে ভ্যাগাবন্ড চরিত্র এবং কর্মকান্ড, তাতে খাপ খাওয়ানোর সাধ্য খুব বেশি কারো নেই। তাই আমার ঘণিষ্ঠও খুব বেশি কেউ হতে পারেনা।

যেকজন হয়েছে তাদেরও অনেক সময় লেগেছে। কিন্তু ইমরান খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কীভাবে যেন আমার ঘণিষ্ঠদের মধ্যে একজন হয়ে গেছে! বিষয়টা আমার কাছে এখনও বেশ রহস্যময়। ইমরানের অতিকৌতুহলী মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভুলভাল কথাবার্তা বলে দেওয়ার স্বভাবটা আমার বা আমার ঘণিষ্ঠদের সঙ্গে কোনোমতেই যায়না। আমরা নিজেদের একটা ‘নির্বিকার’ চরিত্রে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে যখন ব্যস্ত, তখন ইমরানের অতিকৌতুহল প্রায়ই লোকসমাজে আমাদের ‘ইমেজ সংকট’এ ফেলে দেয়! তাই মাঝেমধ্যেই ওকে ‘মৃদু থেকে শুরু করে উচ্চমাত্রা- পর্যন্ত নানা মাত্রার ধমক দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। তার কর্মকান্ডে প্রায়ই মেজাজ বিগড়ে যায়, তবু কেন যেন কিছু বলা হয়না।

এই যেমন গত ৬ জুলাইয়ের ঘটনা। গত মাসের শেষ থেকে নতুন মাসের শুরুর দিকে সঙ্গত কারণে সবার পকেট খালি থাকে। কিন্তু যেকোন কারনেই হোক, আমারটা সচরাচর থাকে না। কিন্তু যখন থাকে তখন আমি একেবারে দিশেহারা হয়ে যাই। আমার সেই দিশেহারা ভাব আমার ঘণিষ্ঠজনদের মাঝেও সংক্রমিত হয়।

তারা তখন স্বাভাবিকভাবেই নিঃস্ব হওয়ার পরও আমার প্রয়োজন মেটাতে পাগল হয়ে ওঠেন। যদিও অধিকাংশ সময়ই পারেননা। আমি তা নিয়ে নির্বিকার থাকলেও, তারা কেন যেন নিজেদের অপরাধী মনে করে। যেমন ইমরান, আমার পকেট খালি থাকার বিষয়ে আমার চেয়েও বেশি চিন্তিত থাকে সে। এবার আমার পকেটের অবস্থা একটু বিশেষ কারণে ভীষণ দূর্যোগপূর্ণ যাচ্ছিল।

ইমরান সে খবর জানতো। ৬ জুলাই বিকেলে সে আমাকে ফোন করে কোনো ভূমিকা ছাড়াই বলল, ভাই টাকা লাগবে? আমি বললাম, টাকা কার না লাগে? কিন্তু লাগলেই তো আর পাওয়া যায়না। ভাই বাড়ি থেকে কিছু টাকা পাঠিয়েছে, আপনি কিছু নিতে পারেন। ইমরানের শেষ কথাটা শুনে আমি কতটুকু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবো। বোঝাতে চাইও না।

আবেগ মানেই দূর্বলতা। আমি সেই দূর্বলতা প্রকাশ করতে চাইনা। তবুও কেন যেন প্রকাশিত হয়ে যায়। যার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ এই পোস্টটা। রাত্রির রূপ কী যে অপরূপ!- আমি তাই প্রায় প্রতিদিনই ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে নিয়ে রাতেরবেলা ঢাকার পথে ঘুরতে বের হই।

মধ্যরাতে খাওয়ার কাজ সারি চানখারপুলের দোকানগুলোতে। হল্যান্ড- উরুগুয়ে ম্যাচ চলছে তখন। বসে আছি টিএসসিতে। সঙ্গে ইমরান এবং যথারীতি আমাদের বড়োভাই আপেল মাহমুদ। টিএসসিতে টানটান উত্তেজনা।

তবে সেই উত্তেজনার চেয়ে আপেল ভাই আর ইমরানের ক্ষিধের উত্তেজনা বেশি হওয়ায় খেলা ছেড়ে খেতে চললাম। ব্যাপক খাওয়া দাওয়া হলো। ইমরান নিজ উদ্যোগে বিল দিয়ে দিল। ঘটনা বুঝলাম না তখন। বুঝলাম কিছুক্ষন পর।

ঘড়ির কাঁটা তখন বারোটার ঘর পেরিয়েছে, ৬ পেরিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতা জুলাইয়ের ৭-এ। ইমরান বেশ একটা আবেগী পরিবেশ তৈরি করে কাঁপা কাঁপা গলায় জানালো, আজ তার জন্মদিন। এই নাটকীয়তায় আমি বেশ বিরক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু তখন কিছু বলিনি। সেই মধ্যরাতে চায়ের দোকানের লেবু কাটার ছুড়ি দিয়ে একটা পিস কেক কেটেই ইমরানের জন্মদিন পালন করা হল।

এবং তাকে উপহার স্বরূপ আমি তার বয়সের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করলাম! ইমরানকে এর বেশি কিছু দেওয়ার অবস্থা তখন ছিলো না এবং আমিও অন্য(!) রকম কোনো ঘোরের মধ্যে থাকায় তাকে নিয়ে একটা লেখা লিখবো বলেও কথা দিয়ে ফেলেছিলাম। আমার ঘোর কেটে যায়, কিন্তু একবার যেকথা দেই, সেটা রাখি। তার প্রমাণ, এই পোস্ট। আরো আগে লেখার কথা ছিল। লিখতে পারিনি।

আজ মচকানো পা নিয়ে ঘরে বসে এই ঝিম দুপুরের উচ্ছলতাগুলোর কথা মনে পড়লো। সেই উচ্ছল দিনগুলো আমার কোথায় হারালো! হঠাৎ মনে পড়লো ইমরানের কথা। তার উচ্ছলতা দেখে আমি অধিকাংশ সময় বিরক্ত হলেও মাঝেমধ্যে উৎফুল্ল হই। আমি পারিনা, আমার ঘণিষ্ঠ কেউ তো পারছে। সেটা অবশ্য কখনো প্রকার করতে চাইনি।

আর পোস্ট লিখতে গিয়ে হয়ে গেল। মানুষ বড়ো বিচিত্র। মা-বাবা, ভাইবোন কিংবা আত্মীয়দের থেকে দূরে একাকী শহরে ইমরানের জন্মদিনের আনন্দময় মূহুর্তগুলো তো হওয়ার কথা বিষাদময়। সে কেন মাত্র দেড় বছরের পরিচিত কারো সঙ্গে উদযাপনে সেই বিষাদ কাটিয়ে আনন্দিত হয়ে উঠবে! কেন দিনের পর দিন আমার সঙ্গে ঘুরে এই ছেলেটা নিজের শান্তিময় রাতগুলোকে ক্লান্ত করে তুলবে! কেনই বা সে আমার চিন্তায় চিন্তিত হবে! আমার জানা নেই। কেউ জানে কীনা তাও জানিনা।

ইমরানকে জন্মদিনের বাসি শুভেচ্ছা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।