"নব্য রাজাকার গোষ্ঠির প্রবেশ নিষেধ"
১
-এ্যাই, শোন।
-হুমম, শুনছি। ম্যাগাজিন উল্টাতে উল্টাতে বলল রিফাত।
-আমাদের বেবী কি সত্যিই হবে না? রিফাতের চুলে বিলি কাটতে থাকে রিনি।
-আচ্ছা বলতো, আর কতবার এই কথা শুনতে হবে? রিনির দিকে চোখ ফিরিয়ে বলল রিফাত।
-এত বিরক্ত হচ্ছ কেন? তুমি আমার সাথে ইদানিং ঠিক মত কথাই বলো না।
-ও,তাই? সবই আমার দোষ?
-রেগে যাচ্ছ কেন তুমি?
-কি করব?
-আমার কথা শুনতে পারো না? নাকি, আমাকে ভলো লাগে না আর?
-রিনি, কি বলছ এইসব? বার বার এক কথা শুনতে ভালো লাগেনা।
-তবুও শুনতে হবে। কাল রাতে কি স্বপ্ন দেখেছি জানো? আমাদের বাবুটা রাজপুত্রের মত। ও হাত পা ছুরে কান্না করছিল, আমি ওকে কোলে নিতেই চোখ বড় বড় করে কেমন যেন হাসি দিল।
ইস! কি সুন্দর হাসি, তুমি যদি দেখতে! আসলে কি জানো, ও শুধু তোমাকে দেখলেই কান্না করে। তুমি বাবুকে একদম দেখতে পারো না।
-রিনি প্লিজ, একটু চুপ করবে।
-কেন চুপ করব? আমাদের বাবুটা নিয়ে একটু কথাও বলতে পারব না?
রিফাতের চোখ ভিজে উঠে, কিছুতেই সেটা রিনিকে দেখানো যাবে না।
২
-আরে রিফাত যে।
কি খবর, কেমন আছো?
-এইতো আঙ্কেল। কেমন আর থাকব। আপনি তো সব জানেনই।
রিফাতকে বসার জন্য হাত দিয়ে ইসারা করল ডাঃ ইমতিয়াজ।
-দেখো, আমি তোমাদের কেইসটা নিয়ে অনেক স্ট্যাডি করেছি।
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তোমাদের দুইজনেরই রিপ্রোডাকশন সিস্টেমে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
-কিন্তু অন্য কোনভাবে কি বেবী নেয়া যায় না?
-সেটা সম্ভব হতো যদি রিনির সমস্যা না থাকত। আর একটা আর্চয্যের ব্যাপার কি জানো, তোমাদের বয়সী দম্পতিদের সন্তান ধারন ক্ষমতা দিন দিন কমছে। আমি তো শত শত কেইস দেখছি। তার উপর অন্যান্য ডাক্তারদের রিপোর্টেরও খবর নিচ্ছি।
একই ব্যাপার। এটা কোন ধরনের কো-ইন্সিডেন্স হতে পারে না।
-ঠিক বুঝলামনা, কো-ইন্সিডেন্স?
-তোমাদের কেইস গুলো একটু বিশেষ টাইপের। বিশেষ করে তোমাদের বয়সের দম্পতিদের। আমার মনে হয় তোমরা কোন বিশেষ ভাইরাসে আক্রান্ত।
যেটা তোমাদের রিপ্রোডাকশন সিস্টেম অচল করে দিয়েছে।
-সেইরকম তো কোন ভাইরাসের কথা তো শুনিনি।
-বলেছিইতো, এইটা আমার পর্যবেক্ষন। এক সাথে দুইজনেরই রিপ্রোডাকশন সিস্টমে সমস্যা থাকার হার অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন সর্বোচ্চ। আমার ধারনা হল, ভাইরাসটার বাহক প্রধানত পুরুষ।
কিভাবে আক্রান্ত করছে সেটা ঠিক পরিস্কার নয়। স্ট্যাটিক্যাল ডেটা থেকে কারনটা বের করা কঠিন।
-তার মানে আমার কারনে রিনির...
-অনেকটা তাই, জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে সরকারের বিশাল প্রদেক্ষেপের কারনে এই ব্যাপারটা চাপা পরে যাচ্ছে। জনসংখ্যা এমন একটা পর্যায়ে চলে এসেছে, ধারন ক্ষমতার বাইরে প্রায়।
-হুম।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিফাত। মাথার ভিতর কেমন ঝিম ঝিম অনূভব হতে থাকে তার।
-শুধু আমাদের দেশের ক্ষেত্রেই নয়। পুরো পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে দেখ, এক সময় ওয়েস্ট্রান এরিয়া গুলোতে মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না। সেখানেও জনসংখ্যার বিস্ফোরন।
শক্তি ব্যবহারের দিক দিয়ে এশিয়ানরা সবসময় নিচের দিকেই ছিল। ওয়েস্ট্রানদের মত যদি সমান শক্তি সারা পৃথিবীর মানুষ ব্যবহার করত, তাহলে অন্তত ৪,৫টা পৃথিবীর দরকার হত। ক্যান্সার,এইডস এই ধরনের মহামারী গুলো যখন পৃথিবীর ইতিহাস থেকে বিদায় নিল, এর পর কিন্তু তেমন কোন হুমকি মানব প্রজাতির জন্য আসেনি। বেড়েই চলছে মানুষ, পুরো পৃথিবী দখল করে নিচ্ছে তারা! ব্যাপারটা ভাবতে পারো রিফাত?
-আমরা কি তাহলে সেই নতুন ভাইরাসের প্রাথমিক শিকার?
-আমার সেইরকমই ধারনা। তবে, এই ব্যাপারটা হুট করে আসছে, এখানেই কিছু প্রশ্ন।
যা বলেছি পুরোপুরি আমার পর্যবেক্ষন, এটা নিয়ে গবেষনার ফান্ডও পাওয়া যাবে না। এই ভাইরাসের জন্য জন্মহার কমবে, আর সেটা সরকারে সাফল্য হিসাবে বিবেচিত হবে।
-কিন্ত রিনিকে তো কোনভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না। ও মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে দিন দিন।
-সবচেয় ভালো হয় সমস্যাটাকে সহজভাবে নেয়া।
একজন সাইকোলজিস্ট মনে হয় তোমাদের সাহায্য করতে পারবে। মানবিক অনুভূতি গুলো পরিস্হিতির সাথে দ্রুত এডাপ্ট করে নেয়। সেও হয়ত মেনে নিবে ব্যাপারটা। তুমি তো বুঝতেই পারছ এর সমাধান আমার হাতে নাই।
৩
ছোট একটা কনফারেন্স রুমে জাতিসংঘের গোপন একটা মিটিং এ ৩২ দেশের প্রতিনিধি হাজির।
কথা হবে গোপন একটি প্রজেক্ট নিয়ে। প্রজেক্ট ফ্যাক্ট ফাইল ইতিমধ্যে সবার টেবিলে রাখা আছে। কী স্পিচ দিবেন, এপজি প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর। কিছু ক্ষনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে ওরাল সেসন। ধীরে ধীরে রুমের আলো কমতে থাকে।
সদস্যরা নীরবে শুনতে থাকে...
ফ্যক্ট ফাইল: বাংলাদেশ
রিপোর্ট ১: জেনেটিক্স ইন্জিনিয়ার্ড ভাইরাস এন্টি পপুলেশন গ্রোথ (এপিজি) কাজ করতে শুরু করেছে। সম্প্রতিক স্ট্যাটিক্সে, এপিজি ৯০% এক্টিভ। কোন ধরনের মিউটেশন এখনো পর্যন্ত ধরা পরে নি।
তবে এই ভাইরাসের কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। এটি স্থায়ী ভাবে প্রজনন ক্ষমতা বিলীন করে দেয়।
যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারনে ভাইরাসটি পরাজিত হবে ভাবা হয়েছিল, সেই রকমটি হয়নি। ভাইরাসের পরবর্তি সংস্করনে এই দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। অন্যান্য প্রজাতিতে ছড়িয়ে পড়ার কোন ধরনের ডেটা পাওয়া যায়নি। ফিমেলদের ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ পাওয়া গেছে, ধারনা করা হচ্ছে এর কারন এপিজি। ইস্ট্রোজেন হরমোন চক্রে বাধাঁ সৃষ্টির ব্যাপারে এপিজির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ...
৪
-এই তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
-কেমন দেখাচ্ছে?
-খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে...
-আর বলো না।
অফিসের ঝামেলা...
-তুমি ফ্রেশ হয়ে ছাদে আসো, আজকের বিকেলটা ছাদেই কাঠাবো।
-হঠাৎ ছাদে কেন?
-তোমার না সব কিছুতে প্রশ্ন করা চাই ই চায়। যাও যেতে হবে না।
রিফাত কিছু একটা বলতে গিয়েও, বলল না। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে এই সব আর ভালো লাগে না।
তবে রিনির কোন ইচ্ছাতেই বাঁধা দিতে খারাপ লাগে ইদানিং। ডাক্তারের কথাগুলো যে কিভাবে বলা যায় ওকে।
- আচ্ছা,আমি আসছি। বলল রিফাত।
৫
রিফাতের কাধেঁ মাথা রাখে রিনি।
-জানো রিফাত, তুমি পাশে না থাকলে একটুও ভালো লাগেনা আমার। কথা দাও সারা জীবন এইভাবে ভালোবাসবে, পাশে থাকবে।
-তোমার কি কখনো মনে হয়েছে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাব? কি হয়েছে ঠিক করে বলতো আমাকে। আমাদের বেবী নাই কষ্টটা কি আমারও নাই রিনি?
-আজকের বিকেলটা সুন্দর না? কথা পাল্টানোর সুরে বলল রিনি।
-হুম....সুন্দর।
চা টাও দারুন হয়েছে। আর তোমাকেও পরী পরী লাগছে!
-খুব ন্যঁকামো শিখছ, তাই না?
-আরে, ন্যাকাঁমো হবে কেন? যেটা সত্যি সেটাই বলছি।
-মরার আগে পৃথিবীর সবকিছুই সুন্দর লাগাটা স্বাভাবিক।
রিনি অদ্ভুত ভাবে বিষন্ন হয়ে যায়। চোখ সরিয়ে নেয় সে।
-কি যে বল? মরার আগে মানে?
-মানে কিছুক্ষন পর তুমি আমি দুজনেই মারা যাবো।
রিফাত এক দৃষ্টিতে রিনির দিকে তাকিয়ে থাকে। বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে।
-রিনি কি বলছ এই সব? আমার এই রকম লাগছে কেন?
-রিফাত আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি জানি না কেন এইটা করেছি।
তবে শুধু আমাদের ভালোর জন্যই। শুধুই আমাদের ভালোর জন্যই। রিনি কাঁদতে কাঁদতে রিফাতকে জড়িয়ে ধরে। বল আমাকের ক্ষমা করে দেবে রিফাত।
-কি করেছ সেটা বলবে তো?
-চায়ের মধ্যে বিষ ছিল।
রিনির অঝোর কন্নার মধ্যে কথাটি প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল বার বার। রিফাত আর কিছু ভাবতে পারছে না। মনে হচ্ছে চোখের উপর সাদা পর্দা ঝুলছে। রিনির কান্নার শব্দ যেন বহু দূর থেকে দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে। রিনিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রিফাত।
মনে হচ্ছে তার কোন দোষ নাই। এমনই তো হওয়ার কথা। চিন্তা করার শক্তি যেন উড়ে যাচ্ছে। সময় যেন স্তব্ধ। রিনি কি এখনো কাদঁছে? চারিদিক এমন দেখাচ্ছে কেন? এটা কি মৃত্যু!!!
পরিশিষ্ট
বিভিন্ন দেশের সরকার গুলোর নেয়া জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে প্রদক্ষেপ গুলোর মধ্যের জনসচেতনতা প্রকল্পটি দীর্ঘ দিন ধরে চালু ছিল।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে এটি কোন ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে নি। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিপরীতে শক্তির যোগান অপ্রতুল হতে থাকে ধীরে ধীরে। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশে। ভিন্ন কোনভাবে জম্ম হার কমানোর উপায় হিসাবে সরকার গুলো গোপনে গবেষনা চালিয়ে যেতে থাকে। এর ধারবাহিকতায়, জেনটিক্স ইন্জিয়ারিং এর উথানের ফলে এজিপির মত ভাইরাস ডিজানের ব্যাপারটি চলে আসে।
এক সময় ল্যাবরিটরীতে জন্ম দেয়া হয় ভাইরাস এন্টি পপুলেশন গ্রোথ। গবেষনাগারে অনেক দিন ধরে বন্ধী থাকলেও, বাংলাদেশ সরকার প্রথম রাজি হয় এপিজি ভাইরাসটির টেস্ট স্টেইট হতে। খুব গোপনে ছড়িয়ে দেয়া হয় এপিজি। ভাইরাসটির মূল লক্ষ্য রি-প্রোডাকশন সিস্টেম। এরপর এপিজি নার্ভ সিস্টেম বিকৃতি করে হতাশার জম্মদেয়, অনেক সময় যার পরিনিতি আত্মহত্যা।
©আজম
অন্যান্য সাই ফাই
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।