"নব্য রাজাকার গোষ্ঠির প্রবেশ নিষেধ"
১
হঠাৎ করেই প্রচন্ড বৃষ্টি। রাইনার মনেই ছিলনা রিনা আর রিও বাইরে খেলছিল। জানালা দিয়ে তাকাতেই বুক ধক করে উঠল তার। পরিমরি করে ছুটল সে। "রিও! রিনা!" রাইনা তার সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে ডাকতে থাকে তাদের।
রিনা রিও ঝোপের আড়ালে বৃষ্টি থেকে বাচাঁর চেষ্টা করছিল। দূর থেকে মায়ের ডাক শুনতেই এক সাথে চিৎকার করে উঠল তারা, "মা! মা! এই দিকে"। বৃষ্টির বিকট আওয়াজে, শব্দ গুলো মিলিয়ে যাচ্ছিল। রাইনা শেষ পর্যন্ত দেখতে পেল তাদের। অনেক কষ্টে ভয়ংকর বৃষ্টির বাধাঁ পেরিয়ে রাইনা তার শিশু সন্তান দের রক্ষা করে।
-কতবার না বলেছি বাইরে যাবি না? বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে লাগলে কি করবি? জানিস না পাশের বাসার রিতুর কি হয়েছে? কত বাচ্চা মারা যায় বৃষ্টির পানির জন্য?
-স্যরি মা... এক সাথে বলে উঠল রিনা রিও।
-স্যরি ট্যরি রাখ। সব গুলা বাপের মত হয়েছিস। সেইদিন শুনিস নি এক দল শিশু পথের ধারে জমা হওয়া পানিতে ডুবে মারা গেছে? তোদের কিছু হলে কি নিয়ে বাঁচব আমি? তোদের পাগল বাপকে নিয়ে?
রিনা রিও বুঝে গেছে আর কিছু বলতে গেলে, আরো বকাঝকা অপেক্ষা করছে। যা করতে হবে, একটু কাদোঁ কাদোঁ ভাব নিয়ে আসতে হবে।
-এই কঁদছিস কেন? এই পাজির দল। যা, হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়।
রাইনা অনেকটা সামলে নেয় নিজেকে।
-মা,আব্বু এল না যে? বলল রিনা।
-তোর বাপের কি সময় আছে তোদের সাথে খাবে? রাইনা রাগের সাথে বলল।
অত কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে যা।
-চুপচাপ খেয়ে যাও আপু। রিনা কে ক্ষেপানোর জন্য বলল রিও।
-দেখছ আম্মু তোমার ছেলেটা।
রাইনা ব্যাপারটা বুঝতে পারে, বরাবরের মত ছেলের পক্ষ নিয়ে।
-ঠিকই বলেছে। আর একটা কথা বলবি না।
-আর একটাও কথা বলবে না আপু।
-এই ! চুপ। খুব পেকে গেছিস না? ধমক দিয়ে বলল রাইনা।
খাওয়া শেষে রিনা রিওকে শুয়ে দিয়ে এল রাইনা। বাইরে এখনো ঝুম বৃষ্টি। রাইনার দুশ্চিন্তা হতে থাকে রিওনের জন্য। পাগল মানুষটার সাথে দেখা হওয়াটা জীবনের একটা ভুল ছিল। পুরোনো স্মৃতির কথা ভাবতে ভাবতে রাইনা কখন ঘুমিয়ে পড়ল বুঝতেও পারল না।
রিওন ফিরে এল অনেক রাতে। রাইনা ঘুম চোখে দরজা খুলল।
-তোমার আসার সময় হল এখন?
-স্যরি রাইনা। একটা গুরুত্বপূর্ন কাজ ছিল। আকাশের মেঘের জন্য করা যাচ্ছিল না।
-কি করছিলে?
-টেরন ট্রেকিং। তুমি তো জানো আকাশ দেখার জন্য নতুন একটা অবজারভেটরী ডিজান করেছি। একদম আমার ডিজাইনে।
-হয়েছে হয়েছে। যে কাজ গুলো দৈত্য মানবরা রেখে গেছে সেইগুলো আবার তৈরি করার পেছনে মানে টা কি?
-অবশ্যই মানে আছে।
আমি দৈত মানবদের মনের কথা গুলো জানতে চাই।
-শেষ হয়ছে তোমার লেকচার?
-হুম...কেন?
-টেবিলে খাবার রাখা আছে, খেয়ে শুয়ে পড়। তোমার বকবক শুনতে ভালো লাগছে না।
-ও, আচ্ছা। রিওন চুপ হয়ে গেল।
২
বেড রুমের বাতি নিভানো। রাইনা ঘুমিয়ে পড়েছে হয়ত। রিওন মাথা থেকে কিছুতেই ফেলতে পারছে না টেরন ট্রেকিং কেইস। "সময়ের সাথে নক্ষত্র গুলো অবস্থান পরিবর্তন করে। বিশাল সময়ের প্রয়োজন সেই পরিবর্তন দৃষ্টিতে আসার জন্য।
কয়েক হাজার বছরও খুব অল্প সময়। যান্ত্রিক ভুলটা কেন ধরা যাবে না?" ভাবতে ভাবতে রাইনার পাশে নিঃশব্দে শুয়ে পড়ে রিওন। বেড ল্যাম্পটা অন করে টেরন হিস্টরী বইটা উল্টাতে থাকে সে।
অধ্যায় ১: মানব ইতিহাস
দূর নক্ষত্রবীতির দিকে তাকিয়ে আদি যুগ থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছে দৈত্য মানব জাতি। একদিন ছড়িয়ে পড়বে অজানার পথে...রিওন পাতা উল্টাতে থাকে...সবার চোখের সামনে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হতে শুরু করে।
একসময় দৈত্য রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারে, টিকে থাকার জন্য রাজনীতি করার চেয়ে বিজ্ঞানীদের তত্ত্বের নীচে আশ্রয় নেয়া নিরাপদ। ২৫০০ সাল। অতিরিক্ত পরিমান সম্পদ শোষন পৃথিবীকে নিঃশেষের দিকে ঠেলে দিয়েছিল প্রায়। আধুনিক দৈত্য সমাজ বিজ্ঞানীরা এমন মতবাদ রাখতে শুরু করেন, "রাষ্ট্র ব্যবস্থা আদিম যুগের অনুরূপ। এটি কখনো আধুনিক মানব সমাজকে রক্ষা করতে পারেনা।
" মানুষের সাথে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা, মানব সভ্যতা টিকে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলেও ঘুনাক্ষরে ব্যাপারটি সামনে আনা হয়নি এইসব রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্রে। অবৈজ্ঞানিক পন্থায় পৃথিবীকে শোষন করা হয়েছে বছরের পর বছর। শিল্প বিপ্লবের শুরু হওয়ার পর, শোষনের হার পুনপৌনিক ভাবে বাড়তে থাকে। পৃথিবীর ইকো সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত সব সময় থাকলেও রাষ্ট্র স্বার্থ রক্ষার জন্য রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্র সীমানার বাইরের পৃথিবীকে সব সময় নিজের আওয়াতার বাইরে হিসাবে দাবী করে আসে।
রাষ্ট্র ব্যবস্থার এই সব ত্রুটি নিয়ে দৈত দার্শনিকরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছিল।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সবুজ প্রতিনিধি হিসাবে গ্রিন এক্টিভিস্ট নামের সমন্বিত একটি সংগঠন গড়ে তুলা হয় এই সময়। বিশৃঙ্খল সম্পদ শোষন ও জনসংখ্যার বৃদ্ধির চাপ সমস্যা গুলোর মধ্যে সমন্বয় ঘটানোই ছিল গ্রিন এক্টিভিস্টদের প্রাথমিক লক্ষ্য। গ্রিন এক্টিভিস্ট পুরোপুরি স্বাধীন একটি ধারনা হিসাবে রূপ নেয় ধীর ধীরে। তাদের ক্ষমতা পরিস্থিতিই সর্বময় করে তুলে। পৃথিবীতে শক্তির বন্টন সমন্বয়ে, বিশাল জনসংখ্যার ভাগ্য নির্ধারনে গ্রিন এক্টিভিস্টদের হাতে তুলে দেয়া হয় পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের কিছু নিয়ন্ত্রন।
পৃথিবীকে রক্ষার তাগিদে দৈত সমাজ গ্রীন এক্টিভিস্ট নেয়া সব সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে ভাবা শুরু করে একসময়। গ্রীন এক্টিভিস্টরা দৈত্য মানব জাতিকে পৃথিবীর বুকে কিংবা নতুন কোন ঠিকানায় কয়েক লাখ বছর ধরে টিকিয়ে রাখা জন্য মাস্টার প্ল্যান করতে গিয়ে বাস্তবতার মুখমুখি হওয়ার আগ পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারে নি, ঠিক কি পরিমান ক্ষতি তারা ইতিমধ্যে করে ফেলেছিল। বিপ্লবটার শুরু তখনকার এশিয়া নামক মহাদেশ থেকে...
রিওন দ্রুত পাতা উল্টাতে থাকে।
অধ্যায় ৩: পৃথিবী সদৃশ টেরন গ্রহ আবিস্কার
২৫৬৯ সাল। সূর্য থেকে কয়েক শত আলোক বর্ষ দূরে টেরন স্টারকে প্রদক্ষিন করতে থাকা টেরন গ্রহ আবিস্কৃত হয় এই বছর।
টেরন এমন এক গ্রহ যার সাথে তুলনা করা যায় একমাত্র পৃথিবীকে। অক্সিজেন নাইট্রোজেনের রেসিও হুবহু পৃথিবীর সাথে মিলে যায়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার টেরনের তরল অবস্হায় পানির অস্তিত্ব। পৃথিবীর মতই সাগর মহাসাগরে ঘেরা টেরনের স্থলভাগ। এটি ঠিক পৃথিবীর মত লিবিং জোনে টেরন স্টারকে ঘিরে ৩৭০ দিনে প্রদক্ষিন করে।
টেরনে নিজস্ব প্রান থাকার প্রমান মেলে যেটা ক্যাম্ব্রিয়ান বিস্ফোরনের সময়কার ব্যাকটেরিয় অনুজীব সদৃশ বলে ধারনা করা হয়।
গ্রীন এক্টিভিস্টরা কৌতুহলী হয়ে উঠে টেরন গ্রহ নিয়ে। বছরের পর বছর প্ল্যান করা হয়, কোন ভাবে যাতে টেরন গ্রহে মানব বীজ পৌছে দেয়া যায়। অন্য কোন পৃথিবীতে মানব সভ্যতা ছড়িয়ে দেয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে গ্রীন এক্টিভিস্টরা। কে জানত টেরন আবিস্কার আমাদের মত ক্ষুদ্র মানব গোষ্ঠির যাত্রা শুরু করবে।
সে এক পবিত্র সময়...
রিওন প্রথম প্যারার লাইন গুলো আন্ডারলাইন করে...পাতা উল্টতে থাকে।
অধ্যায় ৪: প্রজেক্ট টেরন ও ক্ষুদ্র মানব
গ্রিন এক্টিভিস্টদের অতি উৎসাহের ফলে টেরন ফার্মিং প্রজেক্টে নতুন কিছু ভাবতে উদ্ভুদ্ধ করে। স্পেসশীপের আকারের অনুপাতে নরমালাইজড ক্ষুদ্র মানব সৃষ্টির ব্যাপারটি প্রথমে সামনে আনেন প্রফেসর ওরিয়ন (ছদ্ম নাম)। কৃত্রিম গ্রেভিটিশনে মহাশুন্যে বিশাল দুরত্ব অতিক্রম করার জন্য মানব আকার অনুপাতে মহাশুন্য যান তৈরি করা চেয়ে, ছোট আকারের মানুষের জন্য মহাশুন্যযান তৈরি করা অনেক সহজ। হিসাবটা এই রকম, দৈত মানবের আকার ক্ষুদ্র মানব আকারের ৭০ গুন হলে, দৈত মানব আকারের কোন মহাকাশযান ১০ বছর চলতে যে রিসোর্স ব্যয় করবে ঠিক সেই পরিমান রিসোর্স দিয়ে ক্ষুদ্র মানব ১০x৭০=৭০০ বছর ভ্রমন করে আসতে পারবে।
ওরিয়ন চমৎকার একটা সমাধান নিয়ে এলেন, মিনিআর্থ। মহাকাশ যানের ঠিক মাঝখানে সৃষ্টি করা হবে ক্ষুদ্র মানুষের পৃথিবী। ক্ষুদ্র মানুষের সমাজ। যেন পৃথিবীরই একটি রেপ্লিকা। যেখানে ক্ষুদ্রমানব জম্মাবে মৃত্যু বরন করবে।
কত ক্ষুদ্র হবে সেই মানুষ? ওরিয়ন এই ফ্যাক্টরটির জন্য চমৎকার একটি ইকুয়েশন দিয়ে গেছেন । ওরিয়নের মতে মহাকাশযানের আকার, অভিযানের সময়, অভিযানের রিসোর্স ইত্যাদি ভেরিয়েবলের সমন্বয়ে নির্ধারিত হবে ক্ষুদ্র মানুষের আকার।
টেরন প্রজেক্টের ক্ষুদ্র মানব (আমরা) ছাড়াও অন্য কোন আকারের ক্ষুদ্রমানব সৃষ্টি করা হয়েছিল কিনা এই নিয়ে ইতিহাসবিদের মাঝে মতবিরোধ দেখা যায়। টেরন প্রজেক্টের মানব সত্যিকার মানবের (দৈত মানব) তুলনায় গড়পত্তা ৭০ গুন ক্ষুদ্র। ৭০ গুন ক্ষুদ্র হওয়া শর্তেও, ক্ষুদ্র মানব দৈত্য মানবদের সকল প্রকার বৈশিষ্ট্য বহন করে।
বলা হয়ে থাকে, ক্ষুদ্র মানবদের দেহের আকার ছোট হওয়ার কারনে দেহের মধ্যে তথ্য চলাচল দৈত মানবদের চেয়ে ৭০ গুন দ্রুত। যার ফলস্রুতিতে ক্ষুদ্র মানব পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হতে পারে আরো দ্রুত গতিতে।
অধ্যায় ৫: বিটুবিয়াস গ্রহানুর আঘাত ও মানব বিলুপ্তি
বিটুবিয়াস ট্রেডেজি দৈত মানবদের বিলুপ্ত করে দিবে, অতটা হয়ত তারা আগে থেকে ভাবতে পারেনি....
বিটুবিয়াস গ্রহানু পৃথিবীতে আঘাত করে দৈত মানব ও অন্যান্য প্রজাতি সমূহের গন বিলুপ্তি ঘটালেও প্রাণ ধারনের পৃথিবীর মূল ও অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য গুলো ধ্বংস করতে পারেনি। তাই পুনরায় পৃথিবীর জেগে উঠা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। যেমনটি ঘটেছিল ডাইনোসরের বিলুপ্তির পর।
তবে মানুষের মত বুদ্ধিমান প্রাণী পৃথিবীতে আবার জম্ম হতো কিনা যথেষ্ট সন্দেহাতীত ব্যাপার ছিল।
কিন্তু টেরন ফার্মিং প্রজেক্টের ক্ষুদ্র মানব গোষ্ঠি ছিল তখন দৈত্য মানবের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী বুদ্বিমান সত্ত্বা। পৃথিবী সদৃশ টেরন গ্রহকে বাসবাস উপযোগী করে তোলার জন্য যারা ১০০০ বছরের মহাশুন্য পথ পারি দিচ্ছিল। টেরন ফর্মিং শীপের মাতৃগ্রহ যাত্রা তথা ক্ষুদ্র মানবদের পৃথিবীতে ফিরে আসার ঘটনা নিয়ে ইতিহাসবিদরা নানা ধরনের মত প্রকাশ করতে দেখা যায়।
এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা অধ্যায় ৭ অনুচ্ছেদ ৩ দ্রব্যষ্ট।
অধ্যায় ৭ : ক্ষুদ্র মানবের পৃথিবী প্রত্যাবর্তন
ঠিক কিভাবে অটোপাইলটে চলা মহাকাশযান টেরনশীপ, টেরন ফার্মিং মিশন বাদ দিয়ে পৃথিবী মুখী যাত্রা করে তার সঠিক ব্যাখ্যা এখনো পরিস্কার নয়। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীতে বিটুবিয়াস গ্রহানু আঘাত করার কিছু আগে গ্রীন এক্টিভিস্টদের দ্বারা মহাকাশ যানের পথ পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়া হয়। টেরন মহাকাশযান যাত্রাপথের ৪৭৮ বছর পর টেরন ফার্মিং মিশন পরিত্যাগ করে পৃথিবীর দিকে প্রত্যাবর্তন যাত্রা শুরু করে। কেউ হয়ত এটা কল্পনাই করেনি টেরন ফার্মিং মিশন শেষ পর্যন্ত আর্থ ফার্মিং মিশনে রূপ নিবে।
টেরনশীপে একটি গ্রহকে ঠিক পৃথিবীর মত করে সাজানোর সব ধরনের বীজ মওজুদকৃত ছিল।
যেহেতু সব কিছুই পৃথিবীর ইকোসিস্টেম থেকে সংগ্রিহিত ছিল, বিটুবিয়াস গ্রহানু আঘাতের পরও পৃথিবীর ইকোসিস্টেমকে পুনরায় চালু করতে তেমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি ক্ষুদ্রমানবদের।
মহাকাশযান টেরনশীপ প্রাচীন কালে বর্ণিত নূহের জাহাজের অনুরূপ বলা যায়। পার্থক্য হল সে সময় মানুষ রক্ষা পেয়েছিল আর এখন দৈত্য মানব চিরতরে হারিয়ে যায় পৃথিবীর বুক থেকে। কিন্তু কেন দৈত্য মানবরা বিটুবিয়াস কে ধ্বংস করতে পারল না তার গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা আজো পাওয়া সম্ভব হয়নি। ধারনা করা হয়, বিটুবিয়াস গ্রহানু কেনো পোর্টালের ভিতর দিয়ে অন্য ডাইমেনশান থেকে পৃথিবীতে এসে পৌছায়।
আর দৈত্য মানবরা যথেষ্ট সময় পায়নি বিটুভিয়াসকে মহাশুন্যে ধ্বংস করার জন্য। এই ব্যাখ্যার পেছনে ভালো তথ্য প্রমান পাওয়া যায়নি যদিও। তবে এখন পর্যন্ত তত্ত্ব হিসাবে এই সম্ভবনাকে বাতিল করা হয়নি। যার মূল কারন, বিটুভিয়াস নামক কোন গ্রহানুর আঘাতের হুমকি সম্পর্কে পূর্ব কোন সতর্কবানী দৈত মানব ইতিহাস রেকর্ডে পাওয়া যায়নি। বিটুবিয়াসের আঘাত হানার পরও হয়ত কিছু মহাশুন্যচারী বেচেঁ ছিল।
তাদের মৃত্যু সম্ভবত রসদ অভাবে হয়েছিল। এখনো যে কিছু কিছু বিচিত্র ধরনের সিগন্যাল ধরা পরে তা হয়ত সেই সব হতভাগ্য মহাশুন্যচারীদের স্পেইস শীপ থেকে আসে। ক্ষুদ্রমানবদের জন্য এইসব অনাবিস্কৃত স্পেইসশীপ দারুন তথ্য সম্পদ হতে পারে।
ইতিহাস বিশ্লেষনে পাওয়া নানা ধরনের অসমন্জ্যতা থেকে এটি প্রতীয়মান যে, দৈত্য মানবরা তথ্য গোপন করেছে। অনেক ধরনের অমীমাংসিত রহস্য ঘিরে আছে দৈত্য মানব সভ্যতা নিয়ে।
কিছু কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন গ্রিন এক্টিভিস্টরা ইচ্ছে করেই বিটুবিয়াসকে পৃথিবীতে নামিয়ে আনে। যদিও এই ধারনার বিশ্বাসীরা শক্ত যুক্তি প্রমান দেখাতে পারেনি, তবুও ক্ষুদ্র মানবদের মাঝে এটি বহুল পরিচিত একটি মিথ। ইতিহাস বিশ্লেষকরা আরো মনে করেন....
রিওন বইটি বন্ধ করে ভাবতে থাকে.... অবশ্যই দৈত্য মানবরা সবটা আমাদের জানায় নি। রিওনের বির বির কথা শুনে রাইনা জেগে উঠে।
-এ্যাঁই, তুমি ঘুমাও নি?
-নাহ...ঘুম আসছে না।
-কেন? কি হয়েছে? বলা যায় আমাকে?
-টেরন নক্ষত্রকে পাওয়া যাচ্ছে না। এই নিয়ে কয়েক বার ট্রেক করার চেষ্টা করা হয়েছে। কালকেও করলাম, ফলাফল নেগেটিভ।
-সমস্যা কি তাতে?
-সমস্যা বুঝ না? ইউনিভার্সিটি থেকে এত গুলো ইউনিট নিয়ে অবজারভেটরী তৈরি করেছি। আর সেটা টেরন শীপের অবজারভেটরীর ওয়েল ডিফান একটা স্টারকে ট্রেক করতে পারছে না।
ইচ্ছা ছিল, সামনের ভার্সিটির কনফারেন্সে আমাদের প্রযুক্তি দিয়ে বানানো মানমন্দিরটি নিয়ে কিছু একটা উপস্হাপন করতে পারব। সেটাও হচ্ছে না।
-কেন যে এইসব করতে যাও। আচ্ছা শুধু টেরন নক্ষত্রকে তো পাওনা শুধু, অন্য নক্ষত্র গুলোকে তো পাও। তাই না? বলল রাইনা।
-হুম। টেরন বলয়ে রেফারেন্স নক্ষত্র গুলোকে ট্রেক করা যাচ্ছে দৈত্য মানবদের স্টার পজিশন হিস্টোরী লগ অনুসারে।
-তাহলে সমস্যা কি? বলবে টেরন নক্ষত্র নাই।
রিওনের হাসি পেয়ে গেল রাইনার কথা শুনে।
-টেরন নাই তাই না? হাহাহা
পর মুহুর্তে নিশ্চুপ হয়ে যায় রিওন।
কয়েক বার মনে মনে বলতে থাকে সে "টেরন নাই টেরন নাই টেরন নাই...." হিস্টিরী বইয়ের আন্ডারলাইন করা লাইন গুলো ওলটপালট খেতে থাকে রিওনের মাথায়। ডপলার শিপটের ডাটায় বর্নিত টেরন বলয়ে গ্রহ না থাকার সম্ভবনার রিপোর্টির কথা মনে পরে যায় রিওনের।
-রাইনা ! জানো তুমি কি বলেছ ??? ক্ষুদ্র মানব ইতিহাসে কি আবিস্কারের স্বাক্ষী তুমি। তো তো তু তো....
রিওন আর ঠিক মত কথা বলতে পারছে না।
-আরে কি হয়েছে বলবে তো? এত লাফালাফি করছ কেন? কি আবিস্কার হয়েছে? কি পাগলামী শুরু করলে এখন?
-বলছি বলছি...আমাকে এখন যেতে হবে।
-এই শেষ রাতে কই যাবে?
-অবজারভেটরীতে....তুমি বুঝতে পারছ না কি বিশাল একটা আবিস্কার হয়েছে।
রিওন কোন রকমে কাপড় গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে পরে।
রাইনার কান্না পেতে থাকে, বুঝতে পারে না এত কষ্ট সত্ত্বেও কেন রিওনের জন্য এত ভালোবাসা তার।
৩
সকাল সকাল প্রফেসর রিওনকে দেখে ল্যাবের সহ কর্মীরা খানিকটা অবাকই হয়। যে প্রজেক্টার ব্যর্থতার দায় কার উপর ফেলানো যায় এটা নিয়ে ভাবাভাবি চলছিল বেশী, সেই প্রজেক্ট নিয়ে রিওনের নতুন করে আগ্রহ দেখে স্বস্ত্বির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই।
-স্যার আপনি এত সকলে? বলল রিওনের রিচার্চ এসিসটেন্ট এলিনা।
-হুম... কোন সমস্যা তাতে?
-না। সমস্যা থাকবে কেন।
প্রফেসর রিওনের পোশাকের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝাতে চাইল এলিনা। রিওন সেই দিকে খেয়াল করলনা।
-শুন এলিনা, টেরন ট্রেকিং প্রজেক্টের সব ক্রু দের ডেকে পাঠাও। প্রজেক্ট এখানেই শেষ।
-কিন্তু সমস্যাটার সমাধান তো হল না। এলিনা ইস্তত করতে থাকে।
-এই নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
তুমি সেন্ট্রাল গর্ভমেন্টের থেকে টেরন শীপ এক্সেস এর একটি অনুমতি পত্র যোগাড় কর।
-টেরন শীপ এক্সেসের জন্য আপনার না রেড কোড আছে।
-সেটা দিয়ে শুধু টেরন টেলিস্কোপ ব্যবহার করা যায়। আমি টেরন অর্কাইভে ঢুকতে চাই, আচ্ছা যাও তুমি ক্রুদের ডাকো। টেরনশীপের অর্কাইভ এক্সেসের ব্যাপারটা আমি দেখছি।
-স্যার একটা কথা বলব? আপনাকে খুব উত্তেজিত দেখাচ্ছে । কি হয়েছে জানতে পারি? ভয়ে ভয়ে বলল এলিনা।
-সব কিছু মিটিং এ পরিষ্কার হবে।
ক্রুদের সাথে বিশাল রুদ্ধদার মিটিং শেষে ক্লান্ত রিওন। তবুও একটুও বিশ্রাম নেয়ার সময় নেই।
টেরন শীপের ইমেজ গুলো বিশ্লেষন করে টেরনশীপের গতি পথ বের করতে হবে।
কনফারেন্সের দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে। রিওন ও তার গবেষক দল প্রস্তুত ক্ষুদ্রমানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটি দেয়ার জন্য।
৪
ইতিমধ্যে প্রচার হয়ে গেছে প্রফেসর রিওন অভাবনীয় কিছু আবিস্কার করে ফেলেছেন। রিওন যখন তার ওরাল সেশন শুরু করে, হল জুড়ে পিন পতন নিরবতা।
হলের এক কোনে পায়চারী করতে করতে রিওন বলতে শুরু করল...
মানুষের কাছে পৃথিবী কিংবা টেরন ভিন্ন কোন অর্থ বহন করে না। নিরাপদ শক্ত কোন ভূমির উপর আমাদের অনুভতি টুকুই লক্ষকোটি বছরের পুরোনো মহাবিশ্বের মধ্যে সব চেয়ে মূল্যবান। তবুও প্রান গুলো বিচ্ছিন্ন নয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের জন্য আমরা এখানে। সেই ঋনের বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা প্রথম নিঃশ্বাসটা ফেলি।
আমাদের জীবন যাত্রার মধ্যে নিজের অজান্তে ঋনটুকু একটু একটু করে শোধ করার চেষ্টা করে যাই। নতুন সত্ত্বার মধ্যে প্রান সন্ঞারনের মধ্য দিয়ে হয়ত ঋন শোধ করাটা পূর্নতা পায় সামান্য। কিন্তু বিশদ ভাবে পুরো সম্প্রদায়কে যুগযুগান্তরে টিকিয়ে রাখার দাবিটুকু অন্তরনিহীত থেকে যায়। বুদ্ধীমান সত্তা মানেই বুঝতে পারে মহাবিশ্বে তারা কখনো নিরাপদ নয়।
সন্দেহ নেই টেরনশীপের যন্ত্রপাতি গুলো আমাদের ক্ষু্দ্র মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়াকে আরো তরান্বিত করেছে।
কিন্তু টেরন ট্রেকিং এর প্রজেক্টের আগে এটা বুঝা যায়নি দৈত মানবদের টেলিস্কোপ আমাদের কাছে কি বিশাল এক সত্য গোপন করে রেখেছিল। হয়তবা এই সত্য গোপন তাদের প্ল্যানেরই একটি অংশ। আমাদের বানানো অবজারভেটিরী মূল লক্ষ্য ছিল আমাদের প্রযুক্তিতে স্টার গুলোর একটা ক্যাটালগ তৈরী করা। টেরন সহ অন্যান্য নক্ষত্র গুলোকে খুজেঁ পাওয়ার ব্যাপারে আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম। সমস্যার শুরু যখন টেরন স্টারকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
টেরনের ব্যাপারে আমরা এতই অন্ধ ছিলাম, প্রথমে ভেবে নেয়া হয়েছিল যান্ত্রিক কোন ত্রুটি হয়ত। হাজার বার চেষ্ট করে যখন টেরন নক্ষত্রকে পাওয়া গেল না তখন অনেকটাই হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম, তবুও টেরন স্টার সিস্টেমে টেরন নামের গ্রহের অনস্তিত্ব নিয়ে কেউ বিন্দু মাত্র সন্দেহ প্রকাশ করেনি। দৈত্য মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের তত্ত্ব মহাবিশ্বের সম্প্রসারনশীলতার প্রমান বহন করলেও উনি সেটা টের পাননি যতদিন না হালবব তা জানালেন। আমি এই গবেষনার পুরো কৃতিত্বই রাইনাকে দিব। টেরন নামে সত্যিকার কিছুই নেই বিশ্বাসটা তার কাছ থেকে পাওয়া।
এরপরের ব্যাপার গুলো মিলানো অনেক সহজ হয়ে গেল।
টেরন আসলে দৈত্য মানব সৃষ্ট কাল্পনিক একটা গ্রহ। যার অস্তিত্ব শুধু মাত্র টেরন মহাকাশযানের ডাটা বেইজে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। আর টেরনশীপ কোন দিনই সৌরজগতের বাইরে যায় নি। সারাজীবন গোপন কক্ষপথে সূর্যকে ঘিরে ঘুরপাক খেয়েছে।
টেরন মহাকাশযানের ধারন করা বিভিন্ন সময়ের ছবি থেকে এর গতিপথের প্রজেক্টাইল সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দৈত্য মানবরা কেন আমাদের লুকিয়ে রাখল? কিংবা কেন টেরন নামের কাল্পনিক পরিকল্পনা সাজালো তার ঠিক ব্যাখ্যা পাওয়াটা একটু কঠিনই। তবে টেরন শীপ নিয়ে আমাদের জানার অনেক খানিই বাকি। দৈত্য মানবরা অনেকটা পাজলের মত তথ্য গুলো সাজিয়ে রেখেছে। সম্ভবত মানব সভ্যতার যাতে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে না যায় তার একটি ব্যাকআপ প্ল্যান হল টেরনশীপ।
যখনই নিশ্চিত হওয়া গেল টেরন নামে আসলে কিছুই নেই তখন টেরনশীপ অর্কাইভ বিশ্লেষনে উদ্বার করা সম্ভব হয়েছে দৈত্য মানবদের পরিকল্পনার আরেকটি অংশ। আদম ইভ ভল্ট। দৈত্য মানবরা সত্যিকার অর্থে কখনোই হারিয়ে যায় নি। টেরনশীপের গোপন এক ভল্টে সংরক্ষিত আছে মানব ভ্রুন। কিন্তু তাদের প্রয়োজন আমাদের ডিএনএ তে পুন্জবীত বৈশিষ্ট্য গুলো।
যে বৈশিষ্ট্য গুলো আমরা অর্জন করেছি বিটুভিয়াস পরবর্তী পৃথিবীতে। দৈত্য মানবরা বুঝতে পেরেছিল, যদি কোন ধরনের ম্যাস এক্সটিনশন হয়ে পরিচিত পৃথিবী হারিয়ে যায়, তার সাথে পূর্ব পৃথিবীতে মানুষের অভিযোজিত গুনাগুনও কোন কাজে আসবে না। যে পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হয়েছে মানুষ সেই পরিবেশ ধ্বংস হয়ে গেলে তারা নিজ গ্রহে এলিয়েন হতে বাধ্য। প্রতিকূল কোন পরিবেশে দৈত মানবের খাপ খাওয়ানটা সময় সাপেক্ষ্য হলেও আমাদের ক্ষেত্রে সেটা কয়েক শত গুন দ্রুত। বিটুবিয়াসের আগের পৃথিবীর সাথে এখন কার পৃথিবীর আকাশ পাতাল পার্থক্য।
ফার্মিং যত এগুতে থাকবে তত আগের অবস্হানে পৌছাতে থাকবে পৃথিবী। এই পরিবেশে আমরা টিকে থাকলেও দৈত্য মানবরা হয়ত টিকে থাকতে পারত না। উপসংহারে এটাই বলতে পারি, টেরন ফার্মিং এর নিয়ে সাম্প্রতিক আবিস্কার গুলোর একটাই তৎপর্য বহন করে “আমাদের পুর্বপুরুষদের আবার পৃথিবীর পথে নিয়ে আসা”
"দৈত্য মানবদের ফিরিয়ে আনা কি আমাদের জন্য হুমকি নয় প্রফেসর রিওন?" পেছনের সারির একজনের প্রশ্ন।
দৈত্য মানবদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটি সময়ই বলে দিবে, তবে প্রকৃতি কখনো ভুল করে না। বুদ্বিমান সত্ত্বা প্রকৃতিরই অংশ।
৫
টেনকেসুয়া দ্বীপ। বিটুবিয়াস আঘাত পরবর্তি পৃথিবীতে যে সব জায়গা আশাতীতভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তার মধ্যে অন্যতম। ক্ষুদ্রমানবদের আবাসস্হল থেকে খুব বশি দূরে হওয়াতে এই দ্বীপ নিয়ে কারো তেমন আগ্রহ নেই। রিওন সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট থেকে টেনকেসুয়া দ্বীপের ইকোসিস্টেম নিয়ে গবেষনা করার জন্য একটি প্রজেক্ট নিয়ে চলে আসে। প্রথম দিকে প্রজেক্টের সাথে অন্যান্য সহকর্মী থাকলেও, প্রজেক্ট শেষে সবাই একে একে চলে যায় শুধু রিওন ছাড়া।
টেনকেসুয়া দ্বীপে একা থেকে যাওয়া নিয়ে এমনকি রাইনার সাথে রিওনের সম্পর্ক ছিন্ন হয়। রিওন তাতেও থেমে যায় নি। টেরনশীপ এক্সপার্ট হিসাবে সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট রিওনের সব ধরনের প্রজেক্ট প্রস্তাব মেনে নেয়। কিন্তু বেকেঁ যায় দৈত্য মানব পূনর্জম্মের প্রজেক্টার ক্ষেত্রে। রিওন হতাশ হয়ে পরে।
রিওন বুঝতে পারে, আর কোন দিনই বোধ হয় দৈত্য মানবরা এই পৃথিবীর মুখ দেখবে না। নতুন করে ভাবতে থাকে রিওন। একা একাই টেনকেসুয়া দ্বীপে গবেষনা করে জীবন কাটিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয় সে। সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট তাতে খুশী। অন্তত দৈত্য মানব ফিরিয়ে আনার দুঃসাহস আর কেউ দেখাবেনা।
এর পর কেটে যায় অনেক দিন। টেনকেসুয়া দ্বীপে একা একা থাকাটা মানিয়ে নেয় রিওন। রাইনার সাথে রিওনের যোগাযোগ থেমে যায় পুরোপুরি। রাইনাও নিজে থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করেনি কখনো। রিওন নিজ থেকে যোগাযোগ করবে এমনটিও আশা করে না রাইনা।
তবুও হঠাৎ একদিন সে একটি চিরকুট পায় রিওনের কাছ থেকে। অন্য কিছু চিন্তা না করে রাইনা ঠিক করে ফেলে টেনকেসুয়া দ্বীপে যাবে। টেনকেসুয়ার মত নির্জন দ্বীপে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। যাতায়াতের সহজ কোন পথ নেই। রিওনের রসদ সাপলাই টিমই এক মাত্র ভরসা।
সাপ্লাই টিমের সাথে রাইনাকে দেখে অবাকই হয় রিওন। সত্যি সত্যি রাইনা টেনকেসুয়াতে চলে আসবে বিশ্বাস হচ্ছিল না রিওনের। কতদিন পর দেখা তার সাথে, রিওন মনে মনে ভাবতে থাকে। সাপ্লাই শীপ থেকে দ্রুত নেমে আসে রাইনা।
-তুমি অনেক বুড়ো হয়ে গেছো রিওন।
-তাই? আর তোমার বয়স মনে হচ্ছে অর্ধেক হয়ে গেল রাইনা। তরুনীর মত দেখাচ্ছে তোমাকে। কেমন আছো তুমি?
-কেমন থাকব?
-রিনা রিওর কি খবর? কেমন আছে তারা?
-এখনো মনে আছে তাহলে, রিনা রিও নামে দুই সন্তানের জনক তুমি?
-রাইনা প্লিজ। যখন সব বুঝতে পারবে আমাকে হয়ত এতটা দোষ দিবে না।
-ও তাই? কেন আসতে বললে আমাকে?
-বলব,সব বলব।
নিশ্চই সাপলাই টিমের সাথে ফিরে যাচ্ছ না।
-না। তোমার মত এতটা স্বার্থপর ভাবো আমাকে?
-তোমার উদারতা দেখে ভালো লাগল। তবে সাপলাই টিম কিন্তু ১০ সপ্তাহ এর আগে আসে না, এইটা জানো তো?
-হুম জানি। রাইনার মুখে স্মিত হাসি।
-ভালো। কিছু সারপ্রাইজের জন্য তৈরি থেকো। বলল রিওন।
রিওন রাইনা সাপ্লাই টিমকে বিদায় দেয় একসাথে। আইটেম গুলোকে গোডাওনে রেখে হাঁটা শুরু করে তারা।
-আমরা ছাড়া এই দ্বীপে সত্যি আর কেউ নেই? বলল রাইনা।
-আরো কাউকে দরকার তোমার? কত গাছ প্রানী আমাদের চারপাশে।
-ও তাই? দর্শন চর্চাও চলছে তাহলে। কতদূরে থাকো তুমি?
-বেশ কিছু দুরে। তোমার কি মনে আছে এই দ্বীপের ইকোসিস্টেম নিয়ে গবেষনা করার জন্য বিশাল এক টিম নিয়ে আসি?
-হ্যাঁ।
থাকবে না কেন?
-সেই সময় টেরন শীপ থেকে অনেক ধরনের যন্ত্রপাতির সাথে দুইটি টিউবও নিয়ে আসি। কেউ হয়ত বুঝতে পারেনি কিসের টিউব। আমি কিন্তু সেই টিউব গুলো নিয়ে গবেষনা করছি। প্রকৃতি যেন আমাকেই অদৃশ্য এক দায়িত্ব দিয়েছে টিউব গুলো দেখাশুনা করার। জানো রাইনা, আমি এখন চার সন্তানের জনক...
-মানে তুমি বিয়ে করেছ? নতুন সভ্যতা শুরু করেছ এই দ্বীপে, হুম? এইসব বলতে আমাকে ডেকে এনেছ?
-বিয়ে ছাড়া কি বাবা হওয়া সম্ভব না?
-কি সব উল্টা পাল্টা বলতে শুরু করেছ তুমি?
-আস আমার সাথে।
তার আগে চোখ বন্ধ কর, সারপ্রাইজটা তো এখনো দেয়া হয়নি। রাইনাকে অনেক দূর পথ চোখ বেধেঁ নিয়ে যায় রিওন। এই বার চোখ খোল।
রিনার কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ...একি দেখছে সে?
বিশাল দুই মানব শিশু বালু বেলায় খেলা করছে আনমনে...
-পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি রাইনা
এরা হল আদম ইভ!
---------------------------------------------
*ফার্মিং= কোন গ্রহকে মানুষের বাস উপযোগী করে তোলার প্রক্রিয়া
অন্যান্য সাই ফাই
©আজম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।