৩৬ বছরেও আওয়ামীলীগের বাকশালী মনোভাব পরির্বতন হয়নি ফলে নিবির্চারে বিরোধীদলের প্রতি অত্যাচারে স্ট্রীম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। আজ আইন প্রতিমন্ত্রীর এক বক্তব্যে বিরোধীদল নির্মূলের কথা বলেছেন। এই মনোভাব নিয়ে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিব বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৭৪ সালের শেষভাগে এসে শেখ মুজিব মনে করেছিলেন, এখন বাকশাল তথা একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায়। কারণ, প্রচন্ড দমন-নির্যাতনের ফলে ততোদিনে বিরোধী দলের কোমর ভেঙে গিয়েছিল।
কোনো দলই ফলপ্রসূ বিরোধিতা করার মতো অবস্থায় ছিল না। প্রধান বিরোধী নেতা মওলানা ভাসানীকে সরকার ১৯৭৪ সালের জুন মাসে সন্তোষে গৃহবন্দি করেছিল। গোপন বিপ্লবী দল সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যা করেছিল ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি। দমন-নির্যাতনের চাপে অন্য নেতারা ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে' চলে গিয়েছিলেন। ফলে শেখ মুজিবের সামনে দৃশ্যত কোনো প্রতিপক্ষই তখন ছিল না।
তেমন এক পরিস্থিতিতেই, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিব বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সব দল নিষিদ্ধ করে সর্বময় ক্ষমতা নিয়েছিলেন নিজের হাতে। তিনি বাকশালের এমন এক চেয়ারম্যান হয়েছিলেন যিনি ছাড়া আর কেউ দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। বাকশালের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যান নির্বাচনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অর্থাৎ শেখ মুজিব একই সঙ্গে বাকশালের চেয়ারম্যান এবং দেশের প্রেসিডেন্ট থাকবেন।
থাকবেনও আজীবন। চাটুকাররা তাকে একথা পর্যন্ত বোঝায়নি যে, তারও একদিন মৃত্যু ঘটবে। সুতরাং বাকশালের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যান এবং দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিধান রাখা দরকার।
এসবের আলোকে তুলনামূলক আলোচনায় দেখা যাবে, শেখ হাসিনা এখনো বহু পেছনে পড়ে আছেন। যেমন, তখন দেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, এখন প্রায় ১৫ কোটি- তখনকার দ্বিগুণ।
সে হিসাবে কোমর ভেঙে দিতে হলে বিরোধী দলের অন্তত ৭৪ হাজার নেতা-কর্মিকে হত্যা করা দরকার (যেহেতু মুজিব সরকার ৩৭ হাজারের বেশি নেতা-কর্মিকে হত্যা করেছিল)! কিন্তু ক্রসফায়ার থেকে এনকাউন্টার ও গুপ্তহত্যা পর্যন্ত সব মিলিয়েও সংখ্যা এখনো হাজারের খুব বেশি ওপরে যায়নি। জনপ্রিয়তা ও প্রভাবের কোনো দিক থেকেও পিতার ধারে-কাছে যেতে পারেননি শেখ হাসিনা। ফলে যা ইচ্ছা তা-ই করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, সহজে হবেও না। তার ওপর রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মতো ব্যাপকভাবে জনসমর্থিত কয়েকটি রাজনৈতিক দল, যে ধরনের দল শেখ মুজিবের সময় ছিল না। সুতরাং চাইলেও শেখ হাসিনার জন্য বাকশাল এখনো ‘বহুত দূর ওয়াস্ত'।
শেখ হাসিনা অবশ্য একেবারে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকার মতো নেত্রী নন। ভয়ের কারণও আসলে সেটাই। কারণ, ক্ষমতাদর্পী শেখ মুজিব অনেক ব্যাপারেই ‘বলে-কয়ে' কাজ করতেন। যেমন, পল্টন ময়দানের জনসভায় তিনি বিরোধী দলের ওপর ‘লাল ঘোড়া দাবড়ায়া' দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। সিরাজ সিকদারকে হত্যার পর জাতীয় সংসদের ভাষণে জানতে চেয়েছিলেন, ‘কোথায় গেলো সিরাজ সিকদার?' অন্যদিকে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার বেলায় শেখ হাসিনাকে নিতে হচ্ছে গোপন পন্থা।
বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থার কথাই ধরা যাক। কোনো দলকে নয়, শেখ হাসিনার সরকার প্রথমে সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। দৈনিক আমার দেশ-এর প্রকাশনা বন্ধ করেছে এবং এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে ঢুকিয়েছে। তারও আগে সরকার যমুনা টিভির সম্প্রচার বন্ধ এবং চ্যানেল ওয়ানকে নিষিদ্ধ করেছে। ‘পরামর্শের' আড়ালে টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোর ওপর জারি করেছে নিষেধাজ্ঞা।
বলেছে, সরকার বিরোধী কাউকে টকশোতে আনা যাবে না। সরকারের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে- এমন কোনো বক্তব্য প্রচার করা থেকে টিভিগুলোকে বিরত থাকতে হবে। অথচ সংবিধান ও গণতন্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে সরকার এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।