সংশপ্তক
সুবিধাবাদের মিলন সংঘ বিএনপি গুছিয়ে উঠতে পারেনি এখনো পরবর্তী মাহফিলের জন্য। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট দখলে নিতে পারছেনা জামাতীরা আওয়ামী লগি-বৈঠার তান্ডবতাড়িত ভয়ে। যুদ্ধাপরাধের উপুর্যপুরি রাজনৈতিক অভিযোগে ক্ষয়িষ্ণু জামাতীদের নেতৃত্ব সেই সংগে নৈতিক মনোবল। জংগী তালিকায় নাম উঠে যাওয়ার ভয়ে পালিয়ে বাঁচার ম্যারাথন শেষ করতে পারছেনা অপরাপর ইসলামী জেহাদীরা। কিংদের পতনে কিংস পার্টির রাজনীতি এতিমখানায় অসহায়ভাবে যাপিত।
দেশের তাবৎ বিপ্লবী কমিউনিষ্টরা মৌ-লোভী মৌলভী সেজে প্রলেতারিয়েত বাণিজ্য ছেড়ে বুর্জোয়া আওয়ামীলীগে লীন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাবসার আড়ালে অনুপ্রবেশ করে মুকুল বোসদের পাকা ধানে ভাগ বসিয়েছে এসব বিপ্লবী বর্গীরা। ফেরেশতারূপী ইবলিশদের প্ররোচনায় সংস্কারের ‘গন্ধম’ গিলে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভংগ’ আওয়ামী ঈঁদুর চতুষ্টয়ের। একজন মরে গিয়ে বেঁচে গিয়েছে সেইসংগে খুলে দিয়ে গেছে আত্মজের ভাগ্যের তালা। অপর ঈঁদুর শেষ সময়ের মন্ত্রী সেজে খুঁজে বেড়াচ্ছে কালো বিড়াল।
জীবন বাঁচানোর তাগিদে নেত্রীর বাতলানো তরিকা মোতাবেক নেত্রীর বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে ‘কৃষ্ণ গহবরের’ অন্ধকার থেকে এখনো মুক্ত হচ্ছে না জলিল-সেলিমদের রাজনৈতিক ভাগ্য। ১/১১ এর কুশীলবদের ডেকে মিঠে-কড়া শাসানির কর্তৃত্বপরায়ণতা দিয়ে জলপাই বুটের আঘাতে সৃষ্ট ঘা সারানো প্রকল্পের চাকরি ম. খা. আলমগীরদের জন্য দারূন উপভোগ্য। মহাজোটের অংশীদার পতিত স্বৈরাচার এরশাদ হাসিনার পায়ের কাছে ‘কুকুর হয়ে বসে আছে তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখবে বলে। ’ এ যেন কোন জীবন নয়। ‘শেষ পুরোহিত কংকালের পাশা খেলা।
’ বিবাদে আরেকবার দল ভাংগার আশংকা আর মৃত্যুপূর্ব জেল খাটার যুগপৎ ভয়। অথচ ক্ষমতার পঞ্চামৃতে উদর পূর্তি করছে সহোদর গোলাম। রাজনীতি ছেড়ে বৈষ্ণব সেজে পদাবলী রচনায় রত ১/১১ সরকারের উপদেষ্টা ক্রুসেডার, দেশের শ্রেষ্ঠ উকিল। নানক আজমদের কুশলতায় সুয়ারেজের নর্দমায় সেনাকর্তাদের গলিত লাশ আর মরচ্যুয়ারীর হিমশীতল গোপন কুঠুরিতে পচনরোধক ফরমালিনে সংরক্ষিত তদন্ত রিপোর্ট। যতসব অপদার্থ বরকন্দাজের দল! তোদের হত্যার বিচারের দাবীর স্পর্ধা আসে কোত্থেকে? এ দেশে শুধু জনকের গোষ্ঠী হত্যার বিচার হবে, অন্য কারো নয়।
ক্ষমতারোহনের ভাঁড়ের কলসী (সেনাবাহিনী ও বিডিআর) এর তলা ফুটো করে দেয়া হয়েছে যুতসই স্থানে যাতে প্রতিদান আদায়ের সুযোগ রহিত হয়। ‘কচি-কাঁচার’ মন্ত্রীসভায় বাংলা শাসনের পাঠদান চলছে শৈল্পিক নিপুনতায়, যেখানে most obedient pupil রা শাসন বিদ্যা শিখছে প্রশ্নবানের উপদ্রপ ছাড়াই। ঘরে বাইরের এমন অবারিত, প্রতিরোধহীন নেতৃত্বের স্বাদ আওয়ামী শীর্ষ নেতৃত্ব ভোগ করছে এই প্রথম। বাকশালের জনক এমনই এক প্রতিরোধহীন নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন ৩৭ বছর আগে। সে পরিকল্পনা পূর্ণতা পাওয়ার আগেই পরি উড়ে গিয়েছিল জনকের জীবন-মূল্যের পাখায় ভর করে, থেকে গেছে শুধু কল্পনারা।
আজ কল্পনাদের সেই স্বপ্ন পূরণের সাড়ে ষোল আনা।
২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮। নির্বাচিত বাকশালের জন্মদিন। সে জন্মের মহিমা ঘোষিত হচ্ছিল দেশের তাবৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যাত্রী পারাপারের টার্মিনালে, সরকারি কলকারখানা থেকে শুরু করে অফিস আদালত ও নিভৃত গ্রামীন জনপদে। সে দিগ্বিজয়ী ঘোষনায় খুন, নির্যাতিত কিংবা নির্বাসিত হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিপক্ষের যতসব নচ্ছার।
বাদ যায়নি নিজদলীয় প্রতিপক্ষও। তাই তিনতলা থেকে ফেলে জঞ্জাল সাফ করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের ছাত্রাবাসে। হোষ্টেল থেকে ধরে নিয়ে র্যা বকে এনকাউন্টার করতে বাধ্য করা হয়েছে ঢাকা পলিটেকনিকে। জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃশংসভাবে খুন হয় জোবায়ের তারই দলের কমরেডদের হাতে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তিচ্ছু ছাত্র ছিনতাই হয়ে গেছে ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে নেতার ছোট ভাই ভর্তি হবে বলে।
এমপি শাওনের হাতে খুন হয়ে যায় তারই সহোচর ইব্রাহীম নিজগাড়ীতে। জনপ্রিয় মেয়র লোকমান খুন হয়ে যায় স্বদলীয় মন্ত্রীর সহোদরের হাতে। অবাধ্য সাংসদ নিজদলীয় লতিফকে চট্টগ্রামে ঠ্যাংগানো জায়েজ করার শতপশু নিধনযজ্ঞে মেজবানী চলেছে জাতির জামাই ড. মিয়ার পিত্রালয়ে। পশু আর পেশীশক্তির এ যেন এক দিগ্বিজয়ী মচ্ছব। শয়নকক্ষে নৃশংসভাবে খুন হয়ে যায় সাংবাদিক দম্পতি।
ধলেশ্বরীতে প্রতিনিয়ত ভেসে উঠছে গুম হয়ে যাওয়া মানুষের গলিত লাশ। দরবেশদের শুষে নেয়া শেয়ারবাজারে সর্বশ্ব হারিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লোডশেডিং আক্রান্ত ফ্যানে ঝুলিয়ে দেয় নিজেদের দেহ। তারপরেও মানবাধিকার সমুন্নত। ভ্রমনপ্রেমী পায়রা মনি মাথায় টায়রা পরে অবিশ্রান্ত চেষ্টায় দেশে ফিরিয়ে আনছেন অর্থকরী শ্রমিকদের। ভারত থেকে টিপাইমুখের তথ্য যোগাড় করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন সর্বত্র এই মনি মন্ত্রী।
চলেছে টিপাইমুখী নৌবিহারের রাষ্ট্রীয় আয়োজন। আমাদের নদীগুলো মেরে ফেলে আবার পদ্মার ইলিশে উদর পূর্তি করছে ভারতীয় জেনারেল জ্যাকবরা এই স্বাধীনতার মাসে। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সেনানী জেনালেল ওসমানীর লাশ পড়ে থাকে বিস্মৃতির ধূলায় ঢাকা পড়া গোরে চুড়ান্ত রাষ্ট্রীয় অবজ্ঞায়।
পূর্বমেয়াদে নিজেদের পক্ষে আদায় করা যায়নি জনকের হত্যা মামলার রায় । সুপ্রিম কোর্ট প্রাংগনে বস্তি স্থাপন আর সুন্দরী লাঠির জংগী মিছিলও সেযাত্রা টলাতে পারেনি অবাধ্য বিচারকদের।
এখন দিন বদলেছে। সুপ্রিম কোর্টে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে খুনের মামলার আসামি। জিয়াকে মুছে জনককেই ঘোষনা করতে হবে স্বাধীনতার ঘোষক। নইলে.........। শাসকের অবাধ্যতার স্থান নেই বর্তমান বাংলাদেশে।
বিশ্বাস না হলে দেখে নাও সেনাবাহিনীর সেইসব অবাধ্যদের পরিণতি, যারা সেনাকুঞ্জে বেয়াদবি করেছিল তাদের সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর কৈফিয়ত চেয়ে। শতশত চাকুরিচ্যুত, আরো হাজার জন প্রক্রিয়াধীন।
শুধুমাত্র বিদ্যুত খাত থেকেই জোট সরকারের চোট্টারা চুরি করেছে ২০ হাজার কোটি টাকা যেখানে পাঁচ বছরে সাকুল্যে বাজেট ছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি। ‘বার হাত কাঁকড়ের তের হাত বীচি’ এমন কোরাসের অসারতা দৃশ্যমান হলে মুখপাত্র বলে দিলেন এ গানের গীতিকার ও সুরকার ছিল মইন। তারা গলা মিলিয়েছিলেন মাত্র।
মিথ্যাচারের দায় এড়ানোর কি অশ্লীল চাতুরী! জোট আর ১/১১ সরকারের ব্যর্থতার গীত গাইতে গাইতে সময় কেটে গেছে সাড়ে ৩ বছর। সাফল্যের বয়ানে বলা হয় জাতীয় গ্রিডে নাকি যোগ হয়েছে ৩০০০ মেগাওয়াট। অথচ গ্রামীন জনপদ দিনের ২৪ ঘন্টার প্রায় ২৪ ঘন্টাই থাকে বিদ্যুতবিহীন। খরায় পুড়ছে কৃষকের ধানের ক্ষেত সেচের অভাবে। অথচ কুইক রেন্টালের ভর্তূকির নামে রাজকোষ থেকে ইতোমধ্যে চোট্টাদের পকেটস্থ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নে বিভোর নবীন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার পূর্বরাত্রি কাটে মোম কিংবা কুপি বাতির ঝাপসা আলোয়। বইয়ের অক্ষরমালা অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্টতর হয় রাতের আঁধারের সাথে পাল্লা দিয়ে। এ যেন ভবিষ্যত বাংলাদেশেরই মূর্তমান প্রতীকি প্রকাশ। তবুও দ্রোহে জ্বলে উঠেনা কানসাট কিংবা শনির আখড়া। শাসিতের এমন প্রতিবাদহীন নীরবতা শাসকদের জন্য আদর্শ পরিস্থিত বৈকি।
কিন্তু বিশ্বাস নেই জনতার এই আপাত নির্লিপ্ততায়। শাসকের এমন নিরূপদ্রপ আদর্শ শাসন-পরিস্থিতি সংহত করতে চাতুরীর সীমা থাকতে নেই। তাই ফন্দি আঁটো, ফন্দি। দিবালোক সঞ্চয়ের মূলা ঝুলিয়ে লাভ হয়নি। এবার ঝুলিয়ে দাও এদের নাকের ডগায় পরমানু বিদ্যুতের দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্নাচার।
এর লাভ-ক্ষতি নিরূপনের ধুম্রজালে কেটে যাবে এ জাতির কিছুকাল। তারপর ভাবা যাবে আরেক নতুন ফন্দির ভাবনা। দীর্ঘমেয়াদী ক্ষমতা সংহত করতে রপ্ত কর ভোটচুরির কলাকৌশল। তুলে দাও তত্বাবধায়ক সরকারের বিধান। শাসিত জনগন যে এসব ফন্দি বোঝে না, তা কিন্তু নয়।
তারপরও সীমাহীন নির্লিপ্ত। দেখে মনে হয়, “শিরদাঁড়া নেই আজ বহু শরীরেই নিজেদের মানাতে মানাতে। ” এমন বাংলাদেশ আমাদের যেন চির অচেনা।
“ সাবাশ বাংলাদেশ! অবাক পৃথিবী তাকিয়ে রয়,
অপশাসনের পদাঘাতে পদানত, তবু মাথা তুলবার নয়। ”
ক্ষমা ক’রো কবি সুকান্ত।
তোমার কবিতার কিছু শব্দ চয়ন বদলে দিতে বাধ্য হলাম বলে। আমার বিশ্বাস, আজকের বাংলাদেশে বেঁচে থাকলে তুমিও তাই করতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।