আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেভাবে হয়েছিল ‘বাকশাল’ ঃ ‘বাকশাল’ এর বাকশালিয় কাহিনী

২৫শে জানুয়ারি, ১৯৭৫। প্রতি দিনকার মতো সেদিনও সংসদ অধিবেশন বসে সকাল দশটায়। নাখালপাড়া সংসদ ভবনে অধিবেশন কক্ষের ভেতরেই স্পীকারের বাঁ ধারের ভিআইপি অতিথি গ্যালারীর পাশে ছোটমতো একটা প্রেস বক্স ছিলো। এ বক্সের পাশেই বিরোধী দলীয় সদস্যদের আসন। বিরোধী দলীয় নেতা বসতেন প্রথম সাড়ির কোনার আসনটায়।

প্রেস বক্স আর বিরোধী আসনের মাঝখানে ছিলো একটা সড়– প্যাসেজ। সাংবাদিক এবং বিরোধী দলীয় সদস্যরা প্রায় পাশাপাশিই বসতো তবে কথাবার্তা বলা ছিলো নিষেধ। দশটায়ই শুরু হলো অধিবেশন। স্পীকার আব্দুল মালেক উকিল। অধিবেশন কক্ষ পূর্ণ কানায় কানায়।

এমপিরা সবাই হাজির। অতিথি গ্যলারিগুলোও ঠাসা। একটু পর এলেন শেখ মুজিবুর রহমান । পরনে সাদা পাজামা পাঞ্জাবী। গায়ে মুজিব কোট।

গলার দুই পাশ দিয়ে ঝোলানো দামী শালটা। অভ্যাসমতো শাহ মোয়াজ্জেম দৌড়ে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে কদমবুছি করলেন। এমপিরা সবাই উঠে দাঁড়ালো। প্রেস বক্স অধিবেশন কক্ষের ভেতরে হলেও সাংবাদিকেরা সংসদের অংশ নয়। সে কারনে সাংবাদিকদের জন্য সংসদের রেওয়াজ মানার বাধ্যবাধকতা ছিলো না।

তারপরও শেখ মুজিব অধিবেশন কক্ষে এলে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে ব্যাক্তিগতভাবে তাকে সম্মান জানাতেন। সেদিনও কয়েকজন দাঁড়ালেন। দিনের কার্যসূচী শুরু হলো। সে সংসদে বিরোধী দল নাই। ২৯৯ সদস্যের সংসদে ২৯২জনই আওয়ামী লীগের।

স্বতন্ত্র এবং বিরোধী মিলে মাত্র সাতজন আওয়ামী লীগের বাইরের। বিধি অনুযায়ী সাতজনে কোন বিরোধী দল হয় না, হয় বিরোধী গ্র“প। সাতজনের ওই বিরোধী গ্র“পের নেতা ছিলেন আতাউর রহমান খান। বাকি ছয়জনের মধ্যে একজন ব্যারিষ্টার কামরুল ইসলাম সালাউদ্দিন। সম্ভবত: তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়ে পরে ভাসানী ন্যাপে যোগ দেন।

তিনজন জাসদের। রাজশাহীর মাইনুদ্দিন আহমেদ মানিক, টাঙ্গাইলের আব্দুস সাত্তার এবং চাঁদপুরের আব্দুল্লাহ সরকার। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচিত পার্বত্য চট্টগ্রামের মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা (পরে জাসদে যোগ দিয়েছিলেন)। একজন স্বতন্ত্র সদস্য, নাম ছাই রোয়াজা। অধিবেশন শুরুর সাথে সাথেই স্পীকার আব্দুল মালেক উকিল আইনমন্ত্রী বাবু মনোরঞ্জন ধরকে আহ্বান জানালেন তার বিল উপস্থাপনের জন্য।

চমকে উঠলেন উপস্থিত সব সাংবাদিক । এ কোন বিল! এই কি সেই সংবিধান সংশোধনী বিল! সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি প্রবর্তনের বিল! সব দল নিষিদ্ধ করে এক দল ব্যবস্থার বিল! তখনো সাংবাদিকদের বিশ্বাস হচ্ছিল না বঙ্গবন্ধু কি করবেন এ কাজটা! নিষিদ্ধ করে দেবেন সব দল! স্পীকারের আহ্বানের পর মনোরঞ্জন বাবু দাঁড়িয়ে তার বিল উত্থাপন করলেন। হ্যাঁ, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল। এরপর স্পীকার বললেন এ বিলের ওপর কোন আলোচনা চলবে না। এখনই ভোট গ্রহন করা হবে।

কে একজন দাঁড়িয়ে বললেন, মাননীয় স্পীকার আমরা বিলটাই তো দেখলাম না, ভোট দেব কিসে! স্পীকার শুধালেন আপনারা বিলের কপি পান নাই? সদস্যরা সমস্বরে বললেন, না। স্পীকার নির্দেশ দিলেন বিলের কপি সকল সদস্যের কাছে পৌছে দিতে। এর পরপরই এটেন্ডডেন্টরা দৌড়াদৌড়ি করে বিলের কপি প্রত্যেক সদস্যের সামনের টেবিলে গিয়ে রেখে আসতে লাগলেন। এরপর বিরোধী গ্র“প নেতা আতাউর রহমান খান কোন কিছু না বলে উঠে চলে গেলেন। জাসদের তিন সদস্য আব্দুল্লাহ সরকার, মাইনুদ্দিন মানিক, আব্দুস ছাত্তার বিলের ওপর আলোচনার দাবী জানালেন।

স্পীকার বললেন এ বিলের ওপর কোন আলোচনা হবেনা। প্রতিবাদে এ তিন সদস্য এবং স্বতন্ত্র ও পরে জাসদে যোগদানকারি মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ওয়াক আউট করলেন। গত কয়েক দিন ধরে চলছিলো রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা। এসব আলোচনার নামে আসলে সদস্যরা শেখ মুজিবের প্রশংসা বা তোষামুদির প্রতিযোগীতায় মেতে উঠতেন। এ কাজে চ্যাম্পিয়ন হতেন কখনো কে এম ওবায়েদ কখনো শাহ মোয়াজ্জেম।

নুরে আলম সিদ্দিকি সব সময় স্বভাবসূলভ যাত্রার সংলাপের স্টাইলে আবেগঘন বক্তৃতা পরিবেশন করে সবাইকে আমোদিত করতেন। তবে ওই তৈল মর্দনের প্রতিযোগীতার মধ্যেও একজন সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করেছিল। কসবার এমপি এ্যডভোকেট সিরাজুল হক। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা যখন চলছে তখনই আঁচ করা গেছিলো একটা কিছু পরিবর্তন আসছে। ভদ্রলোক সেদিন শুদ্ধ ইংরেজীতে দীর্ঘ সময় ধরে পিন পতন নিস্তব্ধতার মধ্যে গনতন্ত্রবিরোধী যে কোন উদ্যোগের সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছিলেন।

অবাক হয়ে শুনেছিল সবাই তার বক্তৃতা সেদিন। সরকার দলীয় এমপি। নিজ দলের সমালোচনা করে বলছেন। হুইপেরা গিয়ে তাকে ঘাড় ধরে বসিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু কেন যেন বঙ্গবন্ধু তাকে বলতে দিয়েছিলেন সেদিন।

শুনেছিলেন কথাগুলো। এই এ্যডভোকেট সিরাজুল হকই দীর্ঘদিন পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় চীফ প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চতুর্থ সংশোধনী বিলের বিরোধীতা করেছিলেন আরো দু’জন। জেনারেল ওসমানি এবং ব্যারিষ্টার মঈনুল হোসেন। সংসদে তারা কোন বক্তব্য দেননি এবং বিলের পক্ষেও ভোট দেন নি।

প্রতিবাদে সংসদ সদস্যপদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। সদস্যদের টেবিলে বিলের কপি পৌছে দেয়ার পর দাঁড়ালেন সংসদ নেতা শেখ মুজিব। স্বভাবসূলভ ভঙ্গিতে ভারী গলায় শুরু করলেন বক্তৃতা। সংশোধনীর যৌক্তিকতা ব্যখ্যা করলেন। অধিবেশন কক্ষজুড়ে মূহুর্মূহু করতালি বা টেবিল চাপড়ে তার প্রতি সমর্থন জানানো হতে লাগলো।

খুব সংক্ষেপে শেষ করলেন। এরপর স্পীকার প্রস্তাবটি ভোটে দিলেন। ‘হাঁ’ রবে অধিবেশন কক্ষ কেঁপে উঠলো। ‘না’ কন্ঠ শোনা গেলোনা একটাও। কারন তারা তখন কেউ অধিবেশন কক্ষের ভেতরে নাই।

স্পীকার ঘোষণা করলেন হাঁ জয়যুক্ত হইলো, হাঁ জয়যুক্ত হইলো, হাঁ জয়যুক্ত হইলো। অতএব সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী প্রস্তাবটি পাশ হইলো। এরপর আরো কিছু ফর্মালিটিজ বাকি ছিলো। সংবিধান সংশোধনী বিল কন্ঠভোটে পাশ হওয়ার পর ডিভিশনে যায়। অর্থাৎ সদস্যদের স্বাক্ষরযুক্ত ভোট প্রদান।

ডিভিশনের ঘন্টা বেজে উঠলো। আওয়ামী লীগের এমপিরা ডান দিকের দরজা দিয়ে বের হয়ে হাঁ লবিতে গেলেন। ওয়াক আউটের পর থেকে বিরোধীরা বাঁ ধারের না লবিতে এসে বসেছিলেন। তারা সেখানেই থাকলেন। ডিভিশনের সময় লবির কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হতো।

সে সময়ও দেয়া হয়। এ সময় হাঁফাতে হাঁফাতে এসে হাজির হন নুরে আলম সিদ্দিকী। কিন্তু গেট বন্ধ থাকায় ভেতরে আর ঢুকতে পারেন না। ফলে আফশোস করতে থাকেন বার বার, ভোট না দিতে পারার জন্য। এরপর ভোট গননা, ফলাফল প্রকাশ।

পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ঘন্টা দু’য়েকের মতো লাগলো। বেলা বারোটার দিকে শেষ হলো সব আনুষ্ঠানিকতা। পাশ হয়ে গেলো সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী। চোখের সামনে অনেক সাংবাদিকরা দেখলো গনতন্ত্র হত্যার এই যজ্ঞটি। বিল পাশ হওয়ার সাথে সাথেই অধিবেশন কক্ষে সরকার দলীয় এমপিদের মধ্যে খুশী আর আনন্দের বান ডাকলো।

সিনিয়ররা মুজিবের সাথে কোলাকুলি শুরু করলেন। জুনিয়ররা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে তাকে কদমবুছি করতে থাকলেন। সাংবাদিকরা মন খারাপ করে প্রেস বক্স থেকে বের হয়ে চলে গেলো ডান ধারের ট্রেজারি বেঞ্চ লবিতে কারন শেখ মুজিব বের হয়ে ওই লবিতেই আসবেন। যদি তার সাথে কথা বলা যায়। তার কোন প্রতিক্রিয়া নেয়া যায় সেই আ।

শায় কিন্তু লবিতে এসে একটু হোঁচট খেলো সবাই । সেখানে এক ধরনের সাজ সাজভাব। পিয়ন আর্দালিরা দৌড়াদৌড়ি করছে, কর্মকর্তাদের ছোটাছুটি। একটা মাঝারি সাইজের টেবিল আনা হলো। তাতে সাদা চাদর বিছানো।

আনা হলো ফুলদানি। মাইক। কেউই বুঝতে পারছিল না এসব আয়োজন কেন করা হচ্ছে। একজন সাংবাদিক জিজ্ঞেস করে জানলেন শেখ মুজিব এখনই রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন। বেশ অবাক হলো উপস্থিত সব সাংবাদিক মনে মনে।

আয়োজন শেষ হলো। শেখ মুজিবুর রহমান এসে দাঁড়ালেন টেবিলের পাশে। অবাক হয়ে সব সাংবাদিক দেখলো তাকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর জন্য এলেন স্পীকার আব্দুল মালেক উকিল। অথচ এ শপথ দেওয়ানোর কথা দেশের প্রধান বিচারপতির! তাকে ডাকা হলোনা! পরে জানা গিয়েছিলো প্রধান বিচারপতির ওপর নাকি মুজিব ভরষা করতে পারেননি, যদি তিনি শপথ দেওয়াতে অস্বীকার করে বসেন! যাই হোক কয়েক মিনিটেই শেষ হয়ে গেলো সব আনুষ্ঠানিকতা। শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে নতুন একদল ব্যবস্থায় দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন।

’৭১-এর ৭ই মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর রেসকোর্স মাঠের মতো নাখালপাড়ার সেই সংসদ ভবনে সেদিন আরেকবার বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেকটা বাঁক নিলো । সেদিন রাতেই পুলিশ গিয়ে সর্বপ্রথম কবি আল মাহমুদ এর পুরো গণকন্ঠ পত্রিকা অফিস আর প্রেস সীজ করে দেয়। শেখ মুজিবের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ‘গণকন্ঠ’। এদিকে দিনে দিনে নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হতে শুরু করলো। গঠিত হলো বাকশাল।

সার্কিট হাউস রোডে একটা বিশাল বাড়ীতে এর অফিস নেয়া হলো। বাকশালের সেক্রেটারি হলেন প্রায় অখ্যাত জিল্লুর রহমান ( সর্বশেষ প্রয়াত রাষ্ট্রপতি)। যার মূল পরিচয় ছিলো তিনি আইভি রহমানের স্বামী। তাকে সে হিসেবেই সবাই চিনতো। মহকুমাগুলোকে রাজনৈতিক জেলার মর্যাদা দিয়ে গভর্নর নিয়োগ দেয়া হতে থাকলো।

সরকারি কর্মচারি সৈনিক নাবিক পুলিশ বিডিআর সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে বাকশালে যোগ দিতে হলো। সরকারি আদেশ অমান্য করা যাবেনা। করলে চাকরি নাই। প্রেস ক্লাবে এক শ্রেণীর সাংবাদিকের মধ্যেও বাকশালে যোগ দেওয়ার ব্যপারে বিপুল উৎসাহ দেখা গেলো। সারা দেশ রুদ্ধ সে দিনগুলোয়।

মানুষ বাকহারা। শুধু সরকারি মহলে আর বাকশাল দলে আনন্দ উল্লাস। যেন উৎসব লেগে আছে সব সময়। শুরু হলো বাকশালের ওরিয়েন্টেশন মোটিভেশন ক্লাশ। সার্কিট হাইস রোডের অফিস ভবনে মহা যজ্ঞের ব্যপার চলছে তখন।

রাস্তায় সরকার দলীয়দের মিছিল শোভাযাত্রা, বাকশালে যোগ দেয়ার প্রতিযোগীতা, মিষ্টি খাওয়ার আনন্দ উৎসব শুরু হলো । বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী এবং জনাব মঈনুল হোসেন যখন বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেন তখন সুযোগ সন্ধানীদের অনেকেই বাকশাল এ যোগদান করার জন্য লাইন দিয়েছিল। বাংলাদেশের কম্যুনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ ও মোজাফফর ন্যাপ শেখ মুজিবের এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রণয়নকে অভিনন্দন জানান। তথাকথিত জাতীয় দল গঠিত হওয়ার ফলে দেশের সব রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি ঘটে। আওয়ামী লীগ, মোজাফফর ন্যাপ এবং মনি সিং এর কম্যুনিষ্ট পার্টি সামগ্রিকভাবে বাকশালে যোগদান করেন।

সংসদের বিরোধী দলের ৮জন সদস্যের মধ্যে ৪জন বাকশালে যোগদান করেন। প্রবীণ নেতা জনাব আতাউর রহমান খানও বাকশালে যোগদান করে সুবিধাবাদী চরিত্র ও রাজনীতির এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ২রা জুন ’৭৫ বাকশালে যোগদানের জন্য শেখ মুজিবর রহমানের কাছে ৯জন সম্পাদক আবেদন পেশ করেন। তারা হলেন বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ওবায়েদুল হক, জনাব নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বজলুর রহমান, মর্নিং নিউজের সম্পাদক জনাব শামছুল হুদা, বাসস এর প্রধান সম্পাদক জাওয়াদুল করিম, বাংলাদেশ টাইমস ও বাংলার বাণীর নির্বাহী সম্পাদক শহীদুল হক, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং বিপিআই সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান। ৬ই জুন ’৭৫ বাকশালের সাংগঠনিক কাঠামো ও গঠনতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।

তাতে দলের মহাসচিব মনোনীত হন মনসুর আলী। সচিব হন জিল্লুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মনি, এবং আব্দুর রাজ্জাক। ঐ দিন বাকশালের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য হিসাবে ১১৫জনের নাম ঘোষণা করা হয়। তাতে উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনী প্রধানরা, বিডিআর এর মহাপরিচালক, রক্ষীবাহিনীর পরিচালক, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রমুখকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। দলের কার্যনির্বাহী পরিষদে থাকেন: (১) শেখ মুজিবর রহমান (২) সৈয়দ নজরুল ইসলাম (৩) মনসুর আলী (৪) খন্দোকার মোশতাক আহমেদ (৫) আবু হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (৬) আব্দুল মালেক উকিল (৭) অধ্যাপক ইফসুফ আলী (৮) মনরঞ্জন ধর (৯) মহিউদ্দিন আহমেদ (১০) গাজী গোলাম মোস্তফা (১১) জিল্লুর রহমান (১২) শেখ ফজলুল হক মনি (১৩) আব্দুর রাজ্জাক।

কেন্দ্রিয় কমিটিতে থাকেন: (১) শেখ মুজিবর রহমান (২) সৈয়দ নজরুল ইসলাম (৩) মনসুর আলী (৪) আব্দুল মালেক উকিল (৫) খন্দোকার মোশতাক আহমেদ (৬) কামরুজ্জামান (৭) মাহমুদ উল্লাহ (৮) আব্দুস সামাদ আজাদ (৯) ইউসুফ আলী (১০) ফনিভূষণ মজুমদার (১১) ডঃ কামাল হোসেন (১২) সোহরাব হোসেন (১৩) আব্দুল মান্নান (১৪) আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (১৫) মনোরঞ্জন ধর (১৬) আব্দুল মতিন (১৭) আসাদুজ্জামান (১৮) কোরবান আলী (১৯) ডঃ আজিজুর রহমান মল্লিক (২০) ডঃ মোজাফফর আহমদ চৌধুরী (২১) তোফায়েল আহমেদ (২২) শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন (২৩) আব্দুল মোমেন তালুকদার (২৪) দেওয়ান ফরিদ গাজী (২৫) অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরী (২৬) তাহের উদ্দিন ঠাকুর (২৭) মোসলেম উদ্দিন খান (২৮) মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মঞ্জুর (২৯) একেএম ওবায়দুর রহমান (৩০) ডঃ ক্ষিতিশচন্দ্র মন্ডল (৩১) রিয়াজুদ্দিন আহমদ (৩২) এম বায়তুল্লাহ (৩৩) রুহুল কুদ্দুস সচিব (৩৪) জিল্লুর রহমান (৩৫) মহিউদ্দিন আহমদ এমপি (৩৬) শেখ ফজলুল হক মনি (৩৭) আব্দুর রাজ্জাক (৩৮) শেখ শহীদুল ইসলাম (৩৯) আনোয়ার চৌধুরী (৪০) সাজেদা চৌধুরী (৪১) তসলিমা আবেদ (৪২) আব্দুর রহিম (৪৩) ওবায়দুল আউয়াল (৪৪) লুৎফর রহমান (৪৫) একে মুজিবর রহমান (৪৬) ডঃ মফিজ চৌধুরী (৪৭) ডঃ আলাউদ্দিন (৪৮) ডঃ আহসানুল হক (৪৯) রওশন আলী (৫০) আজিজুর রহমান আক্কাস (৫১) শেখ আবদুল আজিজ (৫২) সালাহউদ্দিন ইউসূফ (৫৩) মাইকেল সুশীল অধিকারি (৫৪) কাজী আব্দুল হাশেম (৫৫) মোল্লা জালাল উদ্দিন (৫৬) শামসুদ্দিন মোল্লা (৫৭) গৌর চন্দ্র বালা (৫৮) কাজী গোলাম মোস-ফা (৫৯) শামসুল হক (৬০) শামসুজ্জোহা (৬১) রফিকুদ্দিন ভূইয়া (৬২) সৈয়দ আহমদ (৬৩) শামসুর রহমান খান (৬৪) নূরুল হক (৬৫) এম এ ওহাব (৬৬) ক্যাপ্টেন সুজ্জাত আলী (৬৭) এম আর সিদ্দিক (৬৮) এমএ ওহাব (৬৯) চিত্তরঞ্জন সুতার (৭০) সৈয়দা রাজিয়া বানু (৭১) আতাউর রহমান খান (৭২) খন্দোকার মোহাম্মদ ইলিয়াস (৭৩) সংপ্রু সাইন (৭৪) অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (৭৫) আতাউর রহমান (৭৬) পীর হাবিবুর রহমান (৭৭) সৈয়দ আলতাফ হোসেন (৭৮) মোহাম্মদ ফরহাদ (৭৯) মতিয়া চৌধুরী (৮০) হাজী দানেশ (৮১) তৌফিক ইমাম সচিব (৮২) নূরুল ইসলাম (৮৩) ফয়েজ উদ্দিন সচিব (৮৪) মাহবুবুর রহমান সচিব (৮৫) আব্দুল খালেক (৮৬) মুজিবুল হক সচিব (৮৭) আব্দুর রহিম সচিব (৮৮) মঈনুল ইসলাম সচিব (৮৯) সহিদুজ্জামান সচিব (৯০) আনিসুজ্জামান সচিব (৯১) ডঃ এ সাত্তার সচিব (৯২) এম এ সামাদ সচিব (৯৩) আবু তাহের সচিব (৯৪) আল হোসাইনী সচিব (৯৫) ডঃ তাজুল হোসেন সচিব (৯৬) মতিউর রহমান টিসিবি চেয়ারম্যান (৯৭) মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহ (৯৮) এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দোকার (৯৯) কমোডর এমএইচ খান (১০০) মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান (১০১) একে নজিরউদ্দিন (১০২) ডঃ আব্দুল মতিন চৌধুরী (১০৩) ডঃ মাযহারুল ইসলাম (১০৪) ডঃ এনামুল হক (১০৫) এটিএম সৈয়দ হোসেন (১০৬) নূরুল ইসলাম আইজি পুলিশ (১০৭) ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম (১০৮) ডঃ নূরুল ইসলাম (পিজি হাসপাতাল) (১০৯) ওবায়দুল হক (সম্পাদক অবজারভার) (১১০) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (ইত্তেফাক) (১১১) মিজানুর রহমান (বিপিআই) (১১২) মনোয়ারুল ইসলাম (১১৩) ব্রিগেডিয়ার এএমএম নূরুজ্জামান (রক্ষীবাহিনী প্রধান) (১১৪) কামরুজ্জামান শিক্ষক সমিতি (১১৫) ডঃ মাজহার আলী কাদরী। একই ঘোষণায় বাকশালের পাচঁটি অঙ্গ সংগঠনও গঠন করা হয়। সেগুলো হচ্ছে: জাতীয় কৃষকলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় মহিলা লীগ, জাতীয় যুবলীগ ও জাতীয় ছাত্রলীগ। এগুলোর সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন যথাক্রমে ফনিভূষণ মজুমদার, অধ্যাপক ইউসূফ আলী, সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমদ ও শেখ শহীদুল ইসলাম। এসমস্ত সংগঠনের কেন্দ্রিয় কমিটিগুলোতে মোজাফফর ন্যাপ ও মনি সিংএর কম্যুনিষ্ট পার্টির নেতাদের গ্রহণ করা হয়।

বাকশালের এ সূত্র ধরেই ১৬ই জুন ‘সংবাদপত্র বাতিল অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। তার বলে পার্টি নিয়ন্ত্রণাধীন শুধুমাত্র চারটি দৈনিক ও কয়েকটি সাপ্তাহিক বাদে সকল পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। গণতন্ত্রের হত্যাযজ্ঞ শেষে দেশ জুড়ে চলে তান্ডব উৎসব। রুদ্ধশ্বাস মানুষ জীবনের নিরাপত্তা হারিয়ে জন্মভূমিতেই বন্দী হয়ে পড়েন স্বৈরশাসনের নিষ্পেষনে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.