আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‌'কাজের ফাঁকে ক্ষোভের কথা'

ছায়া ছায়ায় পথ হেটে চলি--ছায়া আমার সামনে ও পিছে।

তিনি কাচঘেরা ঘরে শুয়ে আছেন। তাকে দেখার জন্য ভিড় করে আছেন অনেক মানুষ। চেনামুখ। জানাশোনা।

শুধু শুনতে পাচ্ছেন না- যিনি শুয়ে আছেন তিনি। আজ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। মৃত্যু আমার কাছে অসহ্য লাগে। কাঁদায়। আমার মন কাঁদছে মান্নান ভূঁইয়ার জন্য।

স্কয়ার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন তিনি। হয়তো তার আর কথাও বলা হবে না! রাজনীতির ময়দান কাঁপানো হবে না। অথচ অপেক্ষা করছি একটি মৃত্যুর! সাংবাদিক বলে কথা। আমাদের রিপোর্টার কিছুক্ষণ আগে একটি নিউজ দিয়েছেন- মান্নান ভূঁইয়ার বহিষ্কারাদেশ নাকি প্রত্যাহার হচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলে কী অসুস্থ মান্নান ভূঁইয়া সুস্থ্য হয়ে উঠবেন! কিংবা যদি চলেও যান আর আখেরাত বলতে যদি কিছু থাকে সেখানে কী তিনি পুরস্কৃত হবেন।

সব হাস্যকর মনে হয়। আমি হাসি, কষ্টের হাসি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর ‘সংস্কারপন্থী’ হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালদো জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগ মুর্হূতে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। শুনেছি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরই নাকি তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হবে। সত্য-মিথ্যা জানি না।

একটি কথা না বললেই নয়। মান্নান ভূঁইয়া মাথা নত করার মানুষ নন। তার পরিবারের সদস্যরাও। ভিন্ন মতাদর্শী হতে পারি, তবে তার কথাবার্তা শুনে আমার এমনটিই মনে হয়েছে। বিএনপির এই সাবেক মহাসচিব একজন সাংবাদিককে ছোট ভাইয়ের মতো দেখতেন।

নির্লোভ সেই মানুষটির নাম সুমন মাহমুদ। আজ সকালে তার সঙ্গে কথা হলো। সুমন ভাই যা বললেন তা খুবই মর্মান্তিক। টাকার অভাবে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে এসেছেন মান্নান ভূঁইয়া। প্রতিদিন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে হাসপাতালের ব্যয় নির্বাহ করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।

শেষে দেশে ফিরিয়ে আনার তোরজোর শুরু হয়। তাও সম্ভব হচ্ছিল না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে প্রয়োজন ছিল ২০ লাখ। সেই টাকাও নেই। আমি বললাম- ভাই বিশ্বাস হচ্ছে না।

সুমন ভাইও বললো তারও নাকি বিশ্বাস হয়নি। তবে পরে বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছেন। এক সময় একই রাজনীতি করতেন এমন একজন ওই টাকার যোগান দিয়েছেন। আজ মান্নান ভূঁইয়ার অবস্থা খুবই খারাপ। ১০০ শতাংশ অক্সিজেন দিতে হচ্ছে।

এভাবে কোনো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ২৭/২৮ দিন পর লাইফ সাপোর্ট খুলে নিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। হয়তো তার আগেই খুলে নেওয়া হবে। তবে কথা হলো আমরা সাংবাদিকরা এমন করেই মানুষের মৃত্যুর অপেক্ষা করি। কার আগে কে এই সংবাদ দিতে পারবো সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।

‌'বাংলানিউজ নিউজটা দিয়ে দিয়েছে... এখনই দিতে হবে'। কিংবা অন্য বিডিনিউজ। আমার এই কথায় পেশাদারিত্বের ন্যূনতম ছাপ নেই। আমি তা রাখতেও চাই না। কষ্ট চেপে রাখতে পারছিলাম না তাই কাজের ফাঁকে ক্ষোভের কথা বললাম, লিখলাম।

ক্ষমা করবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.