অনেক প্রতিকূলতা, অনেক সমস্যা। তবু স্বপ্ন দেখি, স্বপ্নকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, স্বপ্নকে সত্যি করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই।
২০১০ বিশ্বকাপের আর মাত্র দু’টো রাউন্ড বাকি। ম্যাচ বাকি মোট চারটি। কিন্তু ইতিমধ্যেই বিদায় নিয়েছে দুই সম্ভাব্য ফেভারিট ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা।
হতাশ করেছে অনেককে, কাঁদিয়েছে অনেক ভক্তকুলকে। আমি নিজেও একজন আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থক তাই আমিও কিছুটা ব্যথিত। আসুন দেখি এই দুই বড় দলের বিপর্যয়ের/ ব্যার্থতার রহস্যটা কি?
ব্রাজিল
পাঁচবারের বিশ্বজয়ী ব্রাজিল দক্ষিন আফ্রিকা এসেছিল হেক্সা শিরোপার স্বাদ পেতে। আর তাদের কোচ দুঙ্গা এজন্য এতটাই মরিয়া ছিল যে তার জন্য সে যে কোন কিছুর সাথে আপস করতে পিছপা ছিলেন না। আর তাই সাফল্য পেতে সে ব্রাজিলের চিরকালীন মনোমুগ্ধকর ‘জোগো বোনিতো’ ফুটবল বিসর্জন দিয়ে নিয়ে আসলেন হিসেবি খেলার রক্ষনাত্মক ফুটবল যা ব্রাজিলের ফুটবল ঐতিহ্যের সাথে একদমই যায় না।
তবু দুঙ্গা সুন্দর ব্রাজিলিয়ান শৈল্পিক ফুটবল খেলে হঠাৎ হেরে যাওয়া থেকে এটাকেই ভালো মনে করলেন। তিনি কঠোর হাতে তৈরি করলেন দুর্ভেদ্য রক্ষনভাগ। ঘরে-বাইরের কেউ এই খেলায় সন্তুষ্ট না হলেও দুঙ্গা সাফল্য পেতে শুরু করলেন। এই খেলা খেলে জিতলেন কোপা আমেরিকা কাপ, কনফেডারেশন কাপ। বাছাই পর্বেও তারা দক্ষিন আমেরিকা অঞ্চলের শীর্ষস্থান নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে আসলো।
দুঙ্গা তার ডিফেন্সিভ স্টাইল নিয়ে দল সাজালেন রোনালদিনহো, পাতোকে উপেক্ষা করে। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরু হবার পর তাদের খেলা কারোরই মন ভরাতে পারেনি। তারা জিতলো ঠিকই কিন্তু তাদের খেলায় সত্যিকারের ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের ছাপ ছিল না, ছিল না বিশ্বকাপ জয়ের মতো জাদু। শুধু ছিল মাঝে-মধ্যে কিছু ঝলকানি। মাঝমাঠে ছিল জাদু তৈরির কারিগরের অভাব।
তার মাশুল দিতে হলো কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে। এগিয়ে থেকেও তারা কেন যে দ্বিতীয়ার্ধে তারা খোলসের ভেতর চলে গেলেন তা আমার কাছে এখনও বিস্ময়। আর আমার মতে তাদের এই মনোভাবই তাদের ভুগিয়েছে।
তাই আমার মতে ব্রাজিলিয়ান সুন্দর ফুটবল ধ্বংস না করে ওদেরকে ওদের ‘জোগো বোনিতো’ ফুটবলটাকে খেলতে দাও। তাতে তারা মায়াবী জাদু দেখাবে, আচ্ছন্ন করে রাখবে ফুটবল পিপাসুদের চোখ।
হ্যাঁ, এতে হয়তো তারা কদাচিৎ হারতেও পারে কিন্তু সেই হারাতেও থাকবে সৌন্দর্য, থাকবে সম্মান। নিজ দেশে পরবর্তী বিশ্বকাপে শুভ কামনা রইল ব্রাজিলের জন্য।
আর্জেন্টিনা
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের শেষভাগে তাদের ফুটবল ঈশ্বর ম্যারাডোনাকে কোচ করে তারা বিশ্বকাপ জয়ের আশায় বুক বাঁধলো। এই ফুটবল গ্রেট তার মর্জিমতো বিভিন্ন দল সাজিয়ে (প্রায় ১০০’শর বেশী খেলোয়ার নিয়ে) খেললেন বাছাইপর্ব। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচগুলোয় ভালো করলেও তারা ধুঁকতে ধুঁকতে পেল বিশ্বকাপের টিকেট।
তবু আর্জেন্টাইন সমর্থকরা ম্যারাডোনা-মেসির উপর ভরসা রাখলো। ম্যারাডোনাও বললেন অপেক্ষা করতে জাদু দেখার। কাগজে-কলমে শক্তীশালী আক্রমণভাগ নিয়ে তারা নামলো মাঠে, সাথে থাকলো দুর্বল ডিফেন্স। গ্রুপপর্ব, দ্বিতীয় রাউন্ড আক্রমণভাগের সাফল্যে ফেভারিটের মতো পার করলেও রক্ষ্ণভাগের ফাঁক-ফোকর তুলনামূলক দুর্বল আক্রমণভাগের দলগুলোর বিরুদ্ধেও ঠিকই দেখা গেছে। যা চূড়ান্ত পরীক্ষা অপেক্ষা করছিল জার্মানীর বিপক্ষে।
সত্যি সত্যিই কোয়ার্টার ফাইনালে ভেঙ্গে পড়লো আর্জেন্টাইন ঠুনকো ডিফেন্স। জার্মানীর দুরন্ত গতি, অসাধারন পাসিং আর হাওয়ায় ভাসানো বলে দক্ষতার কাছে পুরো আর্জেন্টাইন দলটাই একেবারে বিদ্ধস্ত। এসবের সাথে ওদের ম্যান টু ম্যান মার্কিং আর তারুণ্যর জোর দিয়ে ম্যারাডোনার দলকে উপহার দিলো তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক পরাজয়। আর তাতেই ভেঙ্গে গেল ২৪ বছর পর আর্জেন্টাইন শিরোপা জয়ের স্বপ্ন।
এ থেকে শিক্ষা নিতে হবে আর্জেন্টিনাকে।
এমন অতি সাধারণ ডিফেন্স নিয়ে বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব না। একক দক্ষতায় বিশ্বকাপ জেতা যায়না। জিততে হলে লাগবে একটা দল হিসেবে খেলা যা জার্মানীর তরুণ দল দেখিয়েছে পুরো বিশ্বকে। ক্লাবে ভালো খেলা বা অনেক গোল দিলেই বিশ্বকাপ জেতা যায়না। আরও একবার বিশ্বকাপ জিততে হলে আর্জেন্টিনাকে হতে হবে অনেক প্রস্তুত, পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ।
তা না হলে ৮৬’র পর বারবারই মুখ থুবরে পড়বে তাদের বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন।
পরিশেষে এটুকু বলি, উপরে যা লিখেছি তার পুরোটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত। এই দু’দলের কোন সমর্থককে আঘাত দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়। আর অভিনন্দন তরুণ জার্মানীকে। তাদের অসাধারণ ভয়াল সুন্দর খেলা ভূপাতিত করে দিয়েছে ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনাকে।
ভালো থাকবেন সবাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।