বেশ কিছু দিন পূর্বে আমি মফস্বলের শিক্ষা ব্যবস্থার চালচিত্র ও পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের পেছনের কারণসমূহ উল্লেখ করে একটি উপসস্পাদকীয় লিখে কয়েকটি দৈনিকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কোন দৈনিকই লেখাটি ছাপে নি; কী কারণ জানি না। লেখাটি প্রকাশ হলে হয়তো পুরো দেশ বুঝতে পারতো- সদ্য প্রকাশিত এস.এস.সি’র ফলাফল কেন ১৯৭২ সালকে হার মানালো। বস্তুত এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণশীল হলেও শিক্ষার গুণগত মান ক্রমাগত এতটাই অবনতির দিকে যাচ্ছে যে, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কেউ এটা অনুধাবন করতে পারবেন না। গত ৪৭ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে এ বছর রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সকল বোর্ডের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানটি করে নিয়েছে।
পাশের হার ও জিপিএ’র সংখ্যা বাড়লেও মেধা কিন্তু সাবেক অবস্থাতেই রয়েছে। এই ফলাফলের পেছনের মূল কারণ- এ বছর এস.এস.সি পরীক্ষার খাতা বিতরণের সময় রাজশাহী বোর্ড চেয়ারম্যান পরীক্ষকদের নিয়ে একটি সেমিনার করেন এবং সকল শিক্ষকের উদ্দেশে বলেন, ‘রাজশাহী বোর্ড অবহেলিত। এর একমাত্র কারণ ফল বিপর্যয়। যদি আপনারা শিক্ষক হিসেবে প্রশংসিত হতে চান, তবে আপনাদের শিক্ষা বোর্ডকে দেশের শীর্ষে নিয়ে যেতে হবে। ’ অতপর তিনি শিক্ষকদের অনুরোধ করে বলেন, ‘কোন শিক্ষার্থীই যেন পরীক্ষায় ফেল না করে।
সকল ছাত্রছাত্রী পাশ করলেই শিক্ষকদের মান বাড়বে। শিক্ষার্থীরা যদি খাতায় শুধুমাত্র প্রশ্নও তুলে দেয় তবুও তাকে পাশ করাতে হবে। ’ ছাত্রছাত্রীরা খাতায় কোন রকম লিখতে পারলেই চেয়ারম্যান সাহেব তাদেরকে পাশ করিয়ে দিতে বলেন। এমন কি এও বলেন, পরীক্ষায় যদি ‘নদী’ নিয়ে কোন রচনা আসে আর কোন ছাত্রের হয়তো পড়া আছে ‘গরু’র রচনা এবং ঐ শিক্ষার্থী যদি ‘গরু’ নিয়ে রচনা লিখে উপসংহারে গরুকে নদীতে নামিয়ে স্নান করাতে পারে তবুও ঐ ছাত্রকে পুরো নম্বরই দিতে হবে। এছাড়া চেয়ারম্যান সাহেব আরো ঘোষণা দেন, কোন শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে ২০ নম্বর পেলে তাকে ৩৩ দিয়ে পাশ করাতে হবে।
চেয়ারম্যান সাহেবের এই নির্দেশ অমান্য করার সাধ্যি কোন শিক্ষকের আছে কি? নেই। তাইতো অনেক পরীক্ষকই ইংরেজি, এমনকি বাংলাতেও ১০০ তে ১০০ নম্বরই দিয়ে দিয়েছেন। অবশ্য বোর্ড চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন যে তিনি অন্তত একশ স্কুল মনিটরিং করে শিক্ষার মান উন্নয়ণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল করিয়েছেন। তার এমন বানোয়াট কথায় আর কেউ না হোক আমাদের মত রাজশাহী বোর্ডের শিক্ষক সমাজ কিন্তু মুখ টিপে হাসি; আমরা অট্টহাসি হাসি না, কারণ আমাদের যে চাকরী যাওয়ার ভয় আছে!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।