মাঝে মাঝে মনে হয় ওই দূর আকাশে ভেসে যেতে পারতাম, তাহলে আর ফিরতাম না।

কাকের কণ্ঠে মানুষের কণ্ঠস্বর। টিয়া, ময়না ও তোতা পাখিকে খাঁচায় বন্দি রেখে তাদের কণ্ঠে মানুষের মতো কথা শেখানো হলেও কাক কখনো মানুষের সুরে কথা বলে এমন ঘটনা বিরল। অবিশ্বাস্য হলেও এবার কাক পোষা প্রাণীতে পরিণত হয়েছে রাজশাহীতে। কাকের কণ্ঠে মানুষের বোল শেখানোর বিস্ময়কর এ কাজটি করেছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটার আশরাফ আলীর স্ত্রী রোজী (২৫)।

কাকের মুখে মানুষের বোল শুনতে তাই এখন মানুষ ভিড় জমাচ্ছে রোজীর বাড়িতে। রোজী তার প্রভুভক্ত কাকটির নাম রেখেছেন কামিনী। রোজীর সুরে সুর মিলিয়ে স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে কামিনী। বাবা, মা, খালা-খালু, মামা-মামী এমন শব্দ বেরুচ্ছে কাকের কণ্ঠে। এমনকি নিজের নাম কামিনীসহ বিভিন্ন শব্দ মিষ্টি সুরে বলতে পারে কাকটি।

কাকটিই এখন রোজির সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তবে টিয়া-তোতা বা ময়না যেভাবে কথা বলতে শিখে কাকটি সেভাবে কথা বলতে শেখেনি। কাকটি বাড়ির সদস্যদের কথা শুনে নিজে নিজেই কথা বলতে শিখেছে। রোজী জানান, প্রায় ৬ বছর আগে বাড়ির পাশে ঝড়ে আক্রান্ত কাকের ছানাটি তিনি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন। কাকের ছানাটিকে বাঁচানোর জন্য প্রতিদিন গমের আটা গুলিয়ে অথবা ভাতসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়াতেন।

এরই মধ্যে কাকের ছানাটি প্রভুর মধ্যেই খুঁজে পায় তার নিজের স্বকীয়তা। রোজীর স্নেহের পরশে ছানাটি বড় হতে থাকে। এক বছরের মাথায় কথা বলতে শুরু করে কাকটি। রোজীর ছোট্ট মেয়ে ঊষা ইতিমধ্যে প্রিয়বন্ধু বনে গেছে কাকের। বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করে কামিনী।

ঊষা যখন পড়তে বসে কামিনী তখন উড়ে গিয়ে তার পাশে বসে। ঘুমানোর সময় পাশে বসে পাহারা দেয়। মশা-মাছি ঊষার আশপাশে এলেই সেগুলো ধরে খেয়ে ফেলে। ঊষা যদি সময় মত ঘুম থেকে না ওঠে কামিনী তখন ঠোঁট দিয়ে ঊষার চোখের পাপড়ি ধরে টানাটানিও করে। রোজী বলেন, একবার তার মেয়ে ঊষা অসুস্থ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে কামিনী হঠাৎ খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়।

তার পছন্দের খাবার হলো দুধের সর। বাড়ির সকলের কাপড় তার চেনা। একজনের কাপড়ে যদি অন্য জন হাত দেয়, তাহলে কামিনী তৎক্ষণাত বলে ওঠে রাখ, রাখ। কেউ যদি যাওয়ার সময় বলে আসি তাহলে কামিনী চটজলদি উত্তর দেয় আস। রোজী জানান কোন আনুষ্ঠানিকতা নয়, নিজে থেকেই তার মুখে ফুটেছে মানুষের বুলি।


।