সুখী, সমৃদ্ধ ও দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের অপেক্ষায়।
অনেক দিন থেকেই ইচ্ছা ছিল একটা ভৌতিক গল্প লিখার। সেই কারনে মোটামুটি মানের একটি গল্প লিখে ফেললাম। কিছুটা ভয় নিয়েই লিখা টা পোস্ট করছি। আপনাদের কেমন লাগবে বলতে পারছি না।
যদি ভাল না লাগে তাহলে সরাসরি মাইনাস দিয়ে কারনটি লিখে রেখে যাবেন। আমার ব্লগে কাউকেই ব্লক করা হবে না।
আগে একটি ছোট গল্প লিখেছিলাম, যেটি প্রথম পাতায় আসে নাই। আপনাদের যদি সময় থাকে তাহলে একবার ঢুঁ মেরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। যাই হোক তাহলে শুরু করছি,
রহস্যময় লোকটি
-স্লামালাইকুম ভাই, একটু সরবেন ওই সিটটা আমার।
তাকিয়ে দেখি কালো, রোগা মত অদ্ভূত দর্শনের একজন লোক আমার পাশের সিট টাকে ইঙ্গিত করে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি সালামের জবাব দিয়ে সরে তাকে ভেতরে ঢোকার জন্য জায়গা করে দিলাম। ঢোকার সময় লোকটার গায়ে হাত লাগার পর তার শরীরটা কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগল। একটু ভয় পেয়ে গেলাম। লোকটা মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পারল এবং রহস্যময় মুচকি একটা হাসি দিল।
আমি কিছুক্ষণ লোকটার দিকে তাকিয়ে অন্য পাশে ফিরে বসলাম। বাসটা ছেড়ে দিল।
অনেকদিন পর নানার বাড়িতে যাচ্ছি। বিভিন্ন সমস্যার কারনে মাঝখানে কয়েক বছর যাওয়া হয় নি। এবার একটা বড় ধরনের ছুটি পাওয়ার ফলে রওনা দিলাম।
বাড়িতে নানা-নানী আর দূর সম্পর্কের দুইজন মামাতো ভাই ছাড়া কেউ থাকে না। আগে অনেক লোকজন থাকত। আমরাও বিভিন্ন সময় সেখানে চলে যেতাম। সেইসব স্মৃতি মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যায়। কত মজাই না করতাম।
-ভাই কি নানার বাড়ি যাচ্ছেন?
হঠাৎ লোকটা প্রশ্ন করে বসল। কিছুটা অবাক হয়ে জবাব দিলাম,
-জি, আপনি কি করে বুঝলেন?
-না আপনাকে ওই বাড়িতে দুই একবার দেখছি বলে মনে হচ্ছে। আপনার নানার নাম করিম উদ্দিন ভূঁইয়া না?
-জি, আপনি আমার নানাকে চেনেন?
-আগে প্রায় সময় ওই বাড়িতে যেতাম, এখন আর যাওয়া হয় না।
মনে মনে ভাবলাম বাড়িতে তখন অনেক লোকই আসত, সবাইকে তো আর চেনা সম্ভব না। ওদের মধ্যে কেউ একজন হবে আর কি।
এমন সময় বিভিন্ন দিক থেকে হর্ণের শব্দ কানে আসতে শুরু করল। তাকিয়ে দেখি সামনে বিশাল জ্যাম লেগে গিয়েছে। আজকে মনে হয় বাড়ি যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে।
-আপনার নাম কি?
-আমার নাম সগির। আপনার নানাদের পাশের গ্রামে থাকতাম।
-থাকতাম মানে, এখন আর থাকেন না?
-নাহ।
বলে লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর হুট করে একটা কথা জিজ্ঞেস করে বসল,
-আপনি কি জিন-ভূতে বিশ্বাস করেন?
হঠাৎ এই ধরনের প্রশ্ন করায় একটু অবাক হলাম।
-না, কিন্তু হঠাৎ এইগুলা জিজ্ঞেস করতেছেন কেন?
-ও আপনি মনে হয় আপনার নানার বাড়ির সামনের বাঁশঝাড় টার কথা শোনেন নাই।
-না, ওই বাঁশঝাড়ের আবার কি হইল?
কিছুটা অবাক হলাম।
-আছে, ওইটা সম্পর্কে বিরাট এক কাহিনী আছে। ওই কাহিনী শুনলে জিন-ভূতে বিশ্বাস করা শুরু করবেন।
মনে মনে ভাবলাম, প্রত্যেক গ্রামেই এ ধরনের কিছু কাহিনী প্রচলিত থাকে। এগুলো বিশ্বাস করার কোন মানে হয় না।
-আপনার যদি সমস্যা না থাকে তাহলে বলতে পারেন।
-আচ্ছা বলি তাহলে, এই কাহিনীটা ঘটছিল আমার নিজের জীবনে।
এরপর লোকটা তার কাহিনী বলা শুরু করল,
আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে ১৬ বছর বয়সী একজন যুবতী মেয়ে থাকত। বাড়িতে তার সাথে তার বাবা মা আর ছোট একটা ভাই থাকত। মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দরী ছিল। যার ফলে প্রায় সময় গ্রামের বখাটে ছেলেরা তাকে বিরক্ত করত।
একবার অন্য গ্রাম থেকে আসা এক ছেলে তাকে প্রেমের প্রস্তাব করে। কিন্তু মেয়েটা তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়, যার ফলে ছেলেটা তাকে স্কুলে যাওয়ার পথে এবং বিভিন্ন সময় দেখা হলেই বিরক্ত করত।
একবার ওই ছেলেটা দলবল নিয়ে গ্রামে এসে মেয়েটাকে রাস্তা থেকে ধরে ওই বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তারা মেয়েটাকে ধর্ষণ করে। এরপর তারা মেয়েটাকে মেরে ফেলে এবং সেখানেই ফেলে রেখে চলে যায়।
পরদিন ওই জায়গা থেকে মেয়েটার লাশ উদ্ধার করা হয়, এবং ঈমাম সাহেবের ফতোয়া অনুযায়ী জানাজা ছাড়াই কবর দেওয়া হয়। এর আগে পুলিশের লোকজন এসে দেখে যায়, কিন্তু তারা কিছুই করতে পারে না। এই ঘটনার পর মেয়েটার পরিবার ওদের ঘরবাড়ি ফেলে অন্য কোথাও চলে যায়।
লোকটা একবারও না থেমে বলে যেতে থাকে,
তখন থেকেই গ্রামের লোকজন বলাবলি করতে থাকে ওই বাঁশঝাড়ে নাকি প্রায় সময় একটা মেয়েকে একা বসে কাঁদতে দেখা যায় এবং যুবক ছেলে দেখলেই ধরে নিয়ে যায়। তাই লোকজন রাতের বেলা ওই রাস্তাটা খুব একটা বেশি দরকার না হলে ব্যবহার করত না।
আমার বয়স তখন খুব একটা বেশি ছিল না, তাই সবাই আমাকে ওই জায়গা দিয়ে চলতে নিষেধ করত। কিন্তু আমি এসব বিষয়কে খুব একটা পাত্তা দিতাম না। এগুলোকে গুজব বলেই মনে করতাম। তারপরও ওই জায়গা দিয়ে খুব একটা যেতাম না।
এক রাতের ঘটনা, এখনো পুরোপুরি মনে আছে।
সেরাতে আমি বাজার করে বাড়ি ফিরছিলাম। ফেরার সময় ভাবলাম আপনার নানার বাড়ি থেকে ঘুরে যাই। তখন ওই রাস্তাটা দিয়ে রওনা দিলাম। যদিও ভূত-পেত্নিতে খুব একটা বিশ্বাস করতাম না, তারপরও ওইদিন একটু ভয় ভয় করছিল। আকাশে চাঁদের আলো ছিল বলে টর্চ টা জ্বালানোর প্রয়োজন বোধ করলাম না।
চলার পথেই একটা কুকুর দেখতে পেলাম। কুকুরটাকে দেখেই মনে মনে একটু শান্তি পেলাম, যাক আমি ছাড়াও একটা জীবিত প্রাণী আছে। কুকুর টাও কি ভেবে আমার পিছু পিছু আসতে শুরু করল। তখন কিছুই বুঝি নাই, ভাবছিলাম কুকুরটা আমার বাজার করা জিনিসগুলোর লোভেই পিছু পিছু আসছে। আর কুকুরটা সাথে আছে বলে সাহসটাও একটু বেড়ে গিয়েছিল, তাই আর পাত্তা দেই নাই।
কিছুদূর যাওয়ার পর যখন বাঁশঝাড় টার কাছে আসলাম তখন হঠাৎ করে কার যেন হাসির শব্দ কানে বাজল।
এইবার একটু আগ্রহ বোধ করলাম। একটু ভয় ভয়ও লাগতে শুরু করল। ওই রাস্তা দিয়েই তো আমাকে বাড়ি যেতে হবে। লোকটা না থেমে বলে যেতে লাগল,
এই জায়গায় এত রাতে কে হাসাহাসি করতে যাবে? ভাবতেই বুকটা একটু কেঁপে উঠল।
পরক্ষণেই দেখি বাঁশঝাড় টার তলায় একটা মেয়ে বসে কান্না করছে। সাথে সাথে ভয়ে পুরোপুরি জমে গেলাম। তখন খেয়াল হল তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু কিছুতেই পা নাড়াতে পারছিলাম না, মনে হল কেউ যেন আটকে রেখেছে। কুকুরটা তখনো আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল।
একটু পর লক্ষ্য করলাম মেয়েটা উঠে দাঁড়াল, এবং হাতের ইশারা দিয়ে আমাকে ডাকতে শুরু করল। অদ্ভূত একটা আকর্ষণ অনুভব করলাম নিজের ভেতর। এবং সম্মোহিতের মত তার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। আমার আগমন দেখে মেয়েটা হাঁটা শুরু করল, আমিও একইভাবে তার পিছু হাঁটতে লাগলাম। হাঁটতে হাঁটতে কতদূর পর্যন্ত গিয়েছি খেয়াল ছিল না।
আসলে কোন দিকেই খেয়াল ছিল না। মনে হচ্ছিল আমাকে সম্মোহন করে রাখা হয়েছে। একসময় একটা পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে এসে মেয়েটা থামল। এরপর আমাকে বাড়ির ভেতরে ঢোকার নির্দেশ দিল। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
একটু একটু করে আগানোর চেষ্টা করলাম। এমন সময় দেখলাম একটা কুকুর কোথা থেকে যেন দৌড়ে এসে মেয়েটার উপর ঝাপিয়ে পড়ল, সেই কুকুরটা যেটা আমার পিছু নিয়েছিল। শুরু হয়ে গেল মেয়েটা আর কুকুরটার মাঝে লড়াই। কুকুরটা মেয়েটাকে আঁচড়ে-কামড়ে ছিড়ে ফেলতে চাইছে, মেয়েটাও সমান তালে কুকুরটাকে আঘাত করছে। ততক্ষণে কিছুটা চেতনা ফিরে আসতে শুরু করল।
লড়াইটা এক সময় খুব ভয়ংকর হয়ে গেলে আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। তখন জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই শুয়ে পড়লাম।
একবার ভাবলাম লোকটা হয়ত বানানো গল্প বলছে, কিন্তু লোকটার চেহারা দেখে ভাবনাটা বাতিল করে দিতে হল। তখনও বলে চলছে।
এরপর আর কিছুই মনে নেই।
পরে সকাল হলে যখন ঘুম ভাঙল, তখন দেখলাম অনেকগুলো মুখ আমার দিকে ঝুঁকে রয়েছে। তাড়াতাড়ি উঠে বসার চেষ্টা করলাম, কিন্তু প্রচন্ড দুর্বলতার কারনে উঠতে পারলাম না। কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। পরক্ষণেই গত রাতের কথা মনে পড়ল। তারপর আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারলাম।
আমাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না দিয়ে লোকটা একমনে বলে যেতে লাগল,
এরপর একটু সুস্থ হওয়ার পর বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে শুনলাম, তিনদিন নাকি আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে লোকজন লাগিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওই মেয়েটার পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে অজ্ঞান অবস্থায় আমাকে পাওয়া যায়। এর একদিন পর সকালে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আর আমি ভাবছিলাম মাত্র একরাত ঘুমিয়েছি। এরপর থেকেই আমার মধ্যে কিছু রহস্যময় আচরণ শুরু হয়।
-কি ধরনের রহস্যময় আচরণ?
এবার সুযোগ পেয়ে লোকটাকে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম। লোকটা কোন জবাব না দিয়ে রহস্যময় একটা হাসি উপহার দিল। বুঝতে পারলাম লোকটা এ বিষয় নিয়ে আর কিছু বলতে চায় না। এরপর লোকটার সাথে পুরো রাস্তায় আর কথা হয় নি। আমি বিষয়টার ব্যাখ্যা কি হতে পারে তা নিয়ে অনেক্ষণ চিন্তা করতে লাগলাম।
কিন্তু চিন্তা করেও কোন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারলাম না। শেষে ভাবলাম পৃথিবীতে কত রহস্যময় ব্যাপার ঘটে থাকে সব কিছুর ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া সম্ভব না।
বাসটা যখন পৌঁছাল তখন রাত ১০ টা বেজে গিয়েছে। রাস্তায় জ্যামের কারনে বেশি দেরি হয়ে গেছে। এত রাতে একা যেতে হবে ভেবে একটু ভয় ভয় লাগল।
তখন লোকটাকে বললাম একসাথে চলেন। তিনি এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। একটু খটকা লাগলেও দুজন মিলে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটতে হাঁটতে খুব একটা কথা হয় নি। একসময় ওনার গল্পের সেই রাস্তার ধারে চলে আসলাম, পাশে লোকটা থাকা সত্ত্বেও ভয়টা একটু বাড়তে শুরু করল।
কিছুক্ষণ পর যখন বাঁশঝাড় টার কাছে আসলাম তখন হঠাৎ দেখলাম খুব সুন্দর চেহারার একজন মেয়ে একটা কুপি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। কুপির কম্পমান শিখা টার কারনে মেয়েটার চেহারাও কেঁপে কেঁপে উঠছে। প্রচন্ড ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলাম। পরক্ষণেই পাশে তাকিয়ে দেখি আমার সাথের লোকটা নেই। আবার বাঁশঝাড় টার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটাও হাওয়া হয়ে গেছে।
ভয়ে আতঙ্কে আমার অবস্থা তখন দিশেহারা। তাড়াতাড়ি করে কোনমতে পা চালিয়ে বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বারবার মেয়েটির সুন্দর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল।
পরে নানাকে জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারলাম সগির নামের সেই লোকটিই নাকি মেয়েটাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করেছিল। একদিন ওই পথে যাওয়ার সময় সে রহস্যজনক ভাবে হারিয়ে গিয়েছিল।
এরপর থেকে তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। এবং সে যে কাহিনী শোনাল তার অধিকাংশই নাকি মিথ্যা ছিল। এই কথা শোনার পর বড়সড় একটা ঢোঁক গিললাম। সেইদিন কি তাহলে একটা ভূতের সাথে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি? ভাবতেই কেমন একটা শিরশিরে অনুভূতি হল।
অনেক চিন্তা করেও এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না।
পৃথিবীতে কতই না রহস্যময় ব্যাপার ঘটে থাকে।
(কাল্পনিক)
ছবিঃ ইন্টারনেট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।