আমাদের এই দেশটা একদিন বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড়াবে এটা দেখে মরতে চাই।
বাস্তব জীবনে কিছু ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে যদিও সেটা একেবারেই কাম্য ছিলনা। কেও নিশ্চই আশা করেনা নিশুতি রাতে শাড়ি পরা কোন কংকাল এসে তাকে নাকি সুরে বলুক "আঁসোঁনাঁ এঁকঁটুঁ গঁল্পঁ কঁরিঁ"।
১৯৯৬ সাল। আমার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে মাস খানেক হলো।
মায়ের অনুরোধে বোনকে দেখতে গেলাম। পদ্মার চর ঘেঁষে চমৎকার পরিবেশে বাড়িটা। প্রথম দেখাতে বাড়িটাকে ভিষন ভালো লেগে গেল, কি চমৎকার নদীর উপর দিয়ে বয়ে চলা ঠান্ডা হাওয়া। শরৎ কালের কাঁশবন, চিকচিক করা বালু আর মাঝে মাঝে বয়ে চলা জেলে নৌকা।
আমাদের বাড়ির আসে পাসে কোন নদী নেই তাই হয়তো বেশি ভালো লাগছিল।
বয়স কম সেটাও হয়ত কারন ছিল। ভালোলাগার একটা ঘোর নিয়ে রাতে ঘুমাতে গেলাম ।
রাত কত হবে জানিনা হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, এখনকার মত সে সময় হাতে হাতে মোবাইল ছিলনা তাই সময় জানতে পারিনি তবে আনুমানিক ২/৩ টা হবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি উথাল পাথাল জোছনায় নদীর সৌন্দর্য যেন হাজারগুন বেড়ে গেছে, জানালা ধরে দাড়িয়ে মন ভরছিল না মনে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম নদীর তীর থেকে একটু ঘুরে আসার।
খুব বেশি সাহসী মানুষ আমি নই তবে সে সময়ে ভয়ের কোন ব্যাপার আমার মনে মোটেও উদয় হয়নি, যেমন ভাবা দরজা খুলে বের হয়ে আসলাম হাটতে হাটতে চলে গেলাম একদম পানির কাছাকাছি পায়ের পাতা ভেজা পানির ধার দিয়ে এগিয়ে গেলাম বেশ কিছু দুর।
ঘন্টা খানেক পর মনে হল অনেক হয়েছে এবার ফেরা যাক, আপার শ্বশুর বাড়ি বরারব নদীর তির থেকে পায়ে হাটা একটা ট্রেইল ধরে ১০/১২ পা এগিয়েছি হঠাৎ মনে হল পিছন থেকে মৃদু কোলাহলের শব্দ আসছে।
পিছনে ঘুরে বেশ আবাক হয়ে গেলাম- সাদা রংয়ের স্যান্ডো গেন্জি আর হাফ প্যান্ট পরা ৪/৫ বছরের দুটো বাচ্চা প্রায় হাটু পানিতে নেমে একজন অন্যজনের গায়ে পানি ছিটাচ্ছে হাসছে।
শতভাগ নিশ্চিত নয় তবে মনে হচ্ছিল এদের মধ্যে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে।
আমি নিশ্চিত ছিলাম পাশের বাড়ির কারো বাচ্চা এত রাতে নদীতে এসেছে, যে কোন সময় ডুবে যেতে পারে তাই ভাবলাম এগিয়ে গিয়ে ধমক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই।
কিছুটা এগিয়েছি এসময় লক্ষ করলাম দু`জন একসাথে আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো, একটু ধাক্কা মত খেলাম কারন তাকানোর ভংগি বলছিল আমার উপস্থিতি তাদের বিরক্ত করছে।
পাত্তা না দিয়ে আরো ৪/৫ পা এগিয়ে গেছি এমন সময় দেখলাম দু-জনে একসাথে ভয়ংকর ভাবে রাগে গজরাতে আরম্ভ করেছে, চাঁদের আলোয় পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে চকচকে দাতের ফাক দিয়ে লালা ঝরছে, পাগলা কুকুর যেমন করে কামড় দেবার পূর্বে ঠিক তেমনি ভাবে, যেন বলতে চাইছে আর এক পা এগোলে পরিনাম হবে ভয়াবহ।
এক পা কি এক ইঞ্চি নড়ার ক্ষমতা তখন হারিয়ে ফেলেছি স্টাক হয়ে দাড়িয়ে গেলাম ভয়ে আতংকে কখন যে দোয়া দুরুদ পড়া আরম্ভ করেছি নিজেই টের পাইনি।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল, কোন রকমে ঘুরে লম্বা পায়ে রুমে ঢুকে পড়লাম, বাকি সময়টা আর ঘুম আসলোনা, জানালা দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কিন্ত কিছুই চোখে পড়লনা।
পরদিন চলে আসার আগে বোন কে প্রশ্ন করলাম- "চরে কি ভুত বা এরকম কিছু আছে কিনা"?
আপা বলল দিন পনের আগে পাশের বাড়ির দুই ভাই বোন একাকী গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল এর পর থেকে চরে কেও কেও রাতের বেলা ভয় পেয়েছে, সবচেয়ে মারাত্বক বিষয় সপ্তাহ খানেক আগে ভয় পেয়ে একজন মারাও গেছে।
"তুই হঠাৎ এই প্রশ্ন করলি কেন, কোন সমস্যা হয়েছে রাতে" ?
"আরে না কি যে বলিস, কিছু হয়নি, এমনি জানতে চাইলাম"?
এর পরে অনেকবার গেছি সেই বাড়িতে কিন্ত রাতের নদীর সৌন্দর্য জানালা দিয়ে উপভোগ করছি, কাছে যাবার সাহস হয়নি।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।