খবর - " বৃহস্পতিবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ২০ বছরের পুরনো বাস, মিনিবাস এবং ২৫ বছরের পুরনো ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাজধানী থেকে তুলে নেয়া হবে৷ আগামী ১৫ই জুলাই থেকে ওই ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে শুরু হবে অভিযান৷ যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন, এবারের অভিযান লোক দেখানো হবে না৷ অভিযান হবে প্রকৃত অর্থেই ফলপ্রসূ৷"
যোগাযোগমন্ত্রী, আপনি কাদেরকে আশ্বস্ত করছেন?
আমার মত সাধারণ মানুষকে?
নাকি যারা পুরানো লোকাল বাসগুলোর ভয়ে তাদের ঝাঁ চকচকে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় ঝড়ের বেগে সদম্ভে চলতে পারেন না, তাদেরকে?
যারা রাস্তায় নিজের নতুন দামি গাড়িটি নিয়ে সর্বদা দুশ্চিন্তায় থাকেন এই বুঝি সেটা কোন তোবড়ানো বাসের সাথে ঘষা খেল, তাদেরকে?
কাদেরকে, যোগাযোগমন্ত্রী?
আপনার আশ্বাস বাণীতে আমি কিন্তু আশ্বস্ত হইনি। বরং আপনার এই অবিবেচক সিদ্ধান্ত আমাকে আতংকিত করছে।
আমি আতংকিত, কারণ এই জীর্ণ লক্কর ঝক্কর বাসগুলোই কিন্তু আপনার রাজধানীকে সচল রাখছে,
আমি আতংকিত, কারণ এই জীর্ণ লক্কর ঝক্কর বাসগুলোই কর্মচঞ্চল ঢাকার অন্যতম চালিকা শক্তি।
আমি আতংকিত, কারণ এই জীর্ণ লক্কর ঝক্কর বাসগুলোই ঢাকার লাখো মধ্যবিত্তের যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন।
আমি আতংকিত, কারণ এই জীর্ণ লক্কর ঝক্কর বাসগুলোর কোন বিকল্প এই মুহুর্তে আপনার হাতে নেই, অদূর ভবিষ্যতেও থাকার কোন সম্ভাবনা নেই।
আমি প্রতিদিন দুই টাকা ভাড়া দিয়ে ৮নং রুটের এই পুরানো বাসেই কাজে যাই, যেখানে কাউন্টারভিত্তিক বাসগুলোতে যেতে লাগে ১০ টাকা।
প্রতিদিন আমার সাশ্রয় হচ্ছে ১৬ টাকা। মাসে ৪১৬ টাকা। লাগামহীন দুর্মুল্যের বাজারে সেটাই বা কম কী?
আগামী ১৫ই জুলাই থেকে হয়তো এই ৪১৬ টাকা আমাকে অতিরিক্ত গুনতে হবে। দেশের চিন্তায় নির্ঘুম যোগাযোগমন্ত্রীর কথা ভেবে সেটাও নাহয় করলাম।
কিন্তু তারপরেও সাধারণ মানুষ অফিস যেতে পারবে তো?
এই মেয়াদোত্তীর্ণ বাসগুলো বন্ধ করে দেয়া হলে ঢাকার পাবলিক বাসের সংখ্যা প্রায় ৫ভাগের ৪ভাগ কমে যাবে। এই শুন্যতা পূরণ হবে কী ভাবে? এদের উপস্থিতিতেই যখন বাসে উঠতে প্রাণান্তকর অবস্থা হয়, বাদূড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়, তখন এরা না থাকলে কী হবে যোগাযোগ মন্ত্রী?
সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, আপনি অত্যন্ত হাস্যকর কারণের জন্য এই বাসগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আপনারা বলছেন "সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ এই ফিটনেসবিহীন যানবাহন"। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি চালকের অসতর্কতা এবং বেপরোয়া চালানোই ৯৯ ভাগ দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ।
আপনারা আরও বলছেন- "রাজধানীর পরিবেশ দূষণ এবং যানজটের জন্যও এই মেয়াদউত্তীর্ণ যানবাহন দায়ী"৷ চোখ-কান-মুখ বুজে যত দোষ সব নন্দ ঘোষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন? ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী প্রতি ১০টা গাড়ির মধ্যে মাত্র ১টা গাড়ি পাবলিক।
বাকী ৯টাই ব্যক্তিগত। আমার কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই। আপনি নিজে একদিন মিনিট পাঁচেক ফার্মগেটের ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে তাকান তাহলেই দেখবেন আমার প্যাঁচাল ভুল না। তাহলে যে জিনিস সংখ্যায় গৌণ, সেই আপনার মুখ্য সমস্যা বাধিয়ে দিল?
আমি বলি কি, নতুন বা পুরাতন কিংবা ফিটনেসযুক্ত বা ফিটনেসবিহীন কোনা গাড়ীই আসলে কারণ নয়, রাস্তায় যানযটের প্রধান এবং একমাত্র কারণ আপনার অদক্ষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। আপনি উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে চাইলেও আমরা কিন্তু দেখেছি এইসব ফিটনেসবিহীন পুরানো গাড়িই প্রতিদিন নতুন উদ্যমে আমাদের চলাচলকে ফিট রাখছে।
আমরা দেখেছি আপনার সার্জেন্টদেরকে রাস্তার শৃংখলা রক্ষার চাইতে নিজের পকেট ভরতেই বেশি ব্যস্ত। আমরা দেখেছি মতিঝিল, কাওরানবাজার, নিউমার্কেট কিংবা বনানীর ব্যস্ত রাস্তায় নতুন নতুন চকচকে গাড়ীর এলোমেলো পার্কিং। এরা পরিবেশ দুষণ করছে না ঠিকই কিন্তু রাস্তা দূষণে কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। এদেরকে নিষিদ্ধ করবেন না ?
পুরানো গাড়ির পরিবেশ দূষণের কথাও যদি তোলেন, তাহলে বলি গ্যাসচালিত এইসব গাড়ীগুলো কতটুকুই আর দূষণ ছড়াতে পারে!!
তারচেয়ে বর্তমান নির্বোধ সরকারের বেকুব মন্ত্রীরাই আরো বেশী দুষিত করছে পরিবেশকে, দেশকে আর ভবিষ্যত প্রজন্মকে।
এইসব পুরানো গাড়ী তুলে নিয়ে নতুন কিছু যদি আমাদেরকে দিতে না পারেন তাহলে কিন্তু অনাগত নতুন দিনে আমাদের পুরানো সমর্থন নাও দিতে পারি- যেমনটা বিএনপি'র ক্ষেত্রে করেছিলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।