একটা আটপৌরে ঘরোয়া সাদামাঠা প্রেমের কবিতা লিখতে চাই
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সৌজন্যে-----
ডেভিড বার্গম্যান
সম্পাদক, বিশেষ প্রতিবেদন
লন্ডন, জুন ২৩ -
যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার বিষয়ক একটি পার্লামেন্টারি কমিটি স্বীকার করেছে যে, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে এমন একটি গ্র"পের সহায়তায় তারা বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে হাউজ অব লর্ডসে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে।
৭১'র মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত ও তার তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ওই সেমিনারে আন্তর্জাতিক আইনি মানদন্ডের সঙ্গে ১৯৭৩ এর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এর আয়োজক লর্ড অ্যাভেবারি। সেমিনারে বক্তব্য রাখবেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের বক্তারা।
গত মার্চে ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশনের ওয়ার ক্রাইমস কমিটি ১৯৭৩ এর আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি আইনি মতামত পাঠায়। তাদের মতে, এটি করা হলে যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক আইনের মানদন্ড অনুযায়ী হবে।
তাদের এই সুপারিশে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইতিপূর্বেকার উদ্বেগেরই প্রতিফলন ঘটেছে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে মানবাধিকার সংস্থাটি এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাদের এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল।
বাংলাদেশ সরকার বরাবরই প্রকাশ্যে বলে আসছে যে, যুদ্ধাপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী হবে।
কিন্তু কীভাবে তা নিশ্চিত করা হবে সে ব্যাপারে সরকার এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্র"পের ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড অ্যাভেবারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, " একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ক সেমিনারের আমন্ত্রণপত্র আমার নামে সবার কাছে পাঠানো হলেও, এব্যাপারে করণিক সহায়তা দিয়েছে 'জাস্টিস কনসার্ন' নামের একটি সংগঠন। তারা চিঠির উত্তরও রেকর্ড করেছে, যাতে কারা সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন, বক্তব্য রাখবেন তাদের তালিকা আমাদের কাছে থাকে। "
আমন্ত্রণপত্রের নিচের অংশে জাস্টিস কনসার্নের ই-মেইল ঠিকানার সঙ্গে যোগাযোগের টেলিফোন নম্বরও দেওয়া ছিলো।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাত্র দু'মাস আগে 'জাস্টিস কনসার্ন' আত্মপ্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইংল্যান্ডে এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে ওই সংগঠনটির সম্পৃক্ততা রয়েছে।
জাস্টিস কনসার্নের ওয়েবসাইটটি নিবন্ধিত হয়েছে জনৈক এম কে এ শিকদারের নামে, যিনি কামাল শিকদার নামেও পরিচিত। কামাল শিকদার যুক্তরাজ্যভিত্তিক জামায়াতপন্থী সাময়িকী 'ইউরো বাংলা' এর নির্বাহী পরিচালক।
এছাড়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামাল শিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে স্বীকার করেছেন যে, ১০ বছর আগে ছাত্রাবস্থায় তিনি জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন।
তবে কামাল শিকদার নিজের নামে 'জাস্টিস কনসার্ন' এর ওয়েবসাইট নিবন্ধন করানোর কথা অস্বীকার করে বলেন, "কামাল শিকদার খুবই প্রচলিত একটি নাম।
এটা যে কেউ হতে পারে। "
কিন্তু ওয়েবসাইট নিবন্ধনের নথিপত্রে দেওয়া ই-মেইল ঠিকানাটি তার- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "জাস্টিস কনসার্ন আমার নাম ব্যবহার করেছে কিনা এটা তাদের জিজ্ঞেস করতে হবে। "
তিনি এই সংগঠনের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেন, "জাস্টিস কনসার্ন সম্পর্কে শুধু এটুকুই জানি যে আমি একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি। "
'জাস্টিস কনসার্ন' এর চেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া (ফুয়াদ)। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তারও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
তিনি লন্ডনের ইস্ট এন্ডে সুপরিচিত 'বাংলাদেশ ফোরাম ইউরোপ' এরও নির্বাহী সমন্বয়কারী। 'ইসলামিক ফোরাম ইউরোপ' এর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এই সংগঠনটির ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। এর ওয়েবসাইটে একটি সেমিনারে অতিথি বক্তা হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছবি রয়েছে।
ইসলামিক ফোরাম ইউরোপের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চৌধুরী মঈনউদ্দীন। ১৫ বছর আগে ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনে প্রচারিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশে ১৯৭১ এর ডিসেম্বরে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে মঈনউদ্দীনের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ইসলামী ছাত্র সংঘের সদস্য ছিলেন। মঈনউদ্দীন অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
'জাস্টিস কনসার্ন' এর চেয়ারপার্সন আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রাথমিকভাবে লর্ড অ্যাভেবারি সম্মত হন যে সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি কমিটি এবং জাস্টিস কনসার্ন যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করবে। "অবশ্য লর্ড অ্যাভেবারি আমাদের বলেছিলেন যে সেমিনারে দুই প্রধান দলের সম্পৃক্ততার জন্য জাস্টিস কনসার্ন এর এতে জড়িত না হওয়াই উচিত। "
সেমিনারের আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর ব্যাপারে লর্ড অ্যাভেবারির বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে ভূঁইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠাইনি।
এমনকি আমি জানি না কারা এই সেমিনারে উপস্থিত থাকছে। "
জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জাস্টিস কনসার্ন বা বাংলাদেশ ফোরাম ইউরোপ এর কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
জাস্টিস কনসার্ন এর ওয়েবসাইট নিবন্ধনকারী কামাল শিকদারকেও চিনেন না দাবি করে ভূঁইয়া বলেন, "আইটি ইস্যুর দায়িত্ব আমার নয়। সেটা অন্য কেউ করেছে। "
কামাল শিকদার অবশ্য ভূঁইয়ার এই দাবি নাকচ করে দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "তারা দুইজনই পরস্পরের পরিচিত।
"
এই সেমিনার আয়োজনে জাস্টিস কনসার্ন এর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে লর্ড অ্যাভেবারির বক্তব্যে অনুতাপের ছাপ পরিলক্ষিত হয়নি।
এ সম্পর্কে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "জামায়াতের সঙ্গে জাস্টিস কনসার্ন এর কথিত সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আমার জানা নেই। এবং আমাকে জানানো হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই কারণেই কিছু সংগঠন এই সেমিনারে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। "
এই সেমিনার আয়োজনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠন জড়িত থাকায় যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনজীবীদের উদ্বেগকে বাংলাদেশ সরকার আমলে নেবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কাজ করছেন এমন নিরপেক্ষ কর্মীদের কোয়ালিশন 'ওয়ার ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম' এর রায়হান রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও আইবিএ'র মতো অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের উত্থাপিত এ সব যুক্তি বাংলাদেশ সরকার নাকচ না করে দিয়ে বিবেচনা করছে।
"
"তবে বাংলাদেশ সরকার বা সেদেশের অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জামায়াত সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সঙ্গে যৌথভাবে সেমিনার আয়োজন সঠিক উপায় নয়", বলেন রশিদ।
লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাই কমিশনার সাইদুর রহমান খানকে এই সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলেও তা গ্রহণ করেন নি। আয়োজকদের জানিয়ছেন, রাষ্ট্রপতির লন্ডন সফরের কারণে তিনি ব্যস্ত আছেন।
ওই সেমিনারে আমন্ত্রিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ক্রিস হল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সেমিনারটি আয়োজনে জাস্টিস কনসার্ন এর সম্পৃক্ততার বিষয়টি তার জানা নেই।
"শুধুমাত্র লর্ড অ্যাভেবারির সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে।
"
ক্রিস হল বলেন, "য্দ্ধুাপরাধের বিচার সম্পর্কে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অবস্থান স্পষ্ট। জাতীয়তা বা অন্য যে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নির্বিশেষে যে কারো বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগ থাকলে, এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া উচিত এবং পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিচার হওয়া উচিত। "
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার গত মার্চের শেষ দিকে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল, তদন্ত সংস্থা এবং আইনজীবী প্যানেল নিয়োগ করেছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।