বাংলাদেশের সঙ্গে করা সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনে তৃণমূল কংগ্রেস শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসায় বিক্ষুব্ধ দলটির সাংসদ কবীর সুমন। জীবনমুখী গানের জন্য দুই বাংলায় জনপ্রিয় এই শিল্পী বলেছেন, তাঁর দলের এই অবস্থানের কারণে তিনি ক্ষুব্ধ, ব্যথিত, বিরক্ত ও লজ্জিত। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে করা এই স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের ছিটমহলগুলোতে বসবাস করা বাসিন্দাদের দীর্ঘ দুর্দশার অবসান ঘটবে। তবে এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সে দেশের পার্লামেন্টের চলমান বর্ষা অধিবেশনে এই সংশোধন বিল উত্থাপন নিয়ে রাজনৈতিক অনৈক্য আছে।
এর আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতার কারণে ভারতের সঙ্গে বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি করাও সম্ভব হয়নি।
কিন্তু এবার সীমান্ত চুক্তি নিয়ে তৃণমূলের মনোভাব এবং তার কারণে ছিটমহলবাসীর দুর্দশায় সাংসদ কবীর সুমন এতটাই বিচলিত যে, প্রতিবাদে সাংসদ পদে ইস্তফা দেওয়ার কথাও ভাবছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তাঁর অকপট মন্তব্য, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদৃষ্টি আদৌ যে নেই, তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন রুখে দিয়ে আরও একবার তিনি তার প্রমাণ রাখলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের মতো পরম বন্ধুকে আপন করতে ব্যর্থ হয়ে আমরা সেই দেশের মৌলবাদী শক্তিদের শাখা-প্রশাখা বিস্তারের পথ প্রশস্ত করে তুলছি। ’
তৃণমূল কংগ্রেসের তীব্র আপত্তিতে সীমান্ত বিল রাজ্যসভায় পেশ করা সম্ভব হয়নি।
এ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন সাংসদ মুকুল রায়, ডেরেক ওব্রায়ান ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ডেরেকের কথা হয়। সেই প্রসঙ্গে গতকাল ডেরেক বলেন, ‘খুরশিদের সঙ্গে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে আমরা আলোচনায় বসব। উনি বলেছেন, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য সচিব কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখে এই বিলে রাজ্যের সম্মতির কথা জানিয়েছিলেন। আমরা বলেছি, ওটা ছিল তৎকালীন আমলাদের লেখা চিঠি।
আমরা রাজনৈতিক স্তরে আলোচনা করতে চাই। ’
কবীর সুমন কিন্তু তাঁর দলের এই আচমকা বিরোধিতার কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘এত দিন তো এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য শুনিনি। দলে আলোচনাও হয়নি। হঠাৎ বিল উত্থাপনে বাধা দেওয়া হলো।
ছিটমহলবাসীর প্রতি এই অবিচার, এই অন্যায়ের নজির সারা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। একটা ন্যায্য সমাধানের পথে দেশ এগোচ্ছিল, একটা অমানবিক অধ্যায়ের অবসান ঘটতে চলেছিল, অথচ ক্ষীণদৃষ্টি রাজনীতিকের খেয়ালে তা হতে পারল না। ’ তিনি বলেন, ‘রাগে-দুঃখে আমার সাংসদ পদ ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তখনই ভাবছি, ছেড়ে দিলেই তো আবার অকাল ভোট, অযথা অর্থ অপচয়। ’
মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা দলের নেত্রীর এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মৌলবাদী শক্তিদেরই আরও উৎসাহিত করবে বলে কবীর সুমনের আশঙ্কা।
তিনি বলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ যা, সেই সন্ত্রাসবাদীদের সার্থক মোকাবিলা করে বাংলাদেশের সরকার ভারতকে নিশ্চিত করেছে। এত বড় এক বন্ধুর প্রতি এই আচরণের অর্থ, বাঙালি হয়ে বাঙালির সর্বনাশ করা।
বিস্মিত কণ্ঠে কবীর সুমন বলেন, তিস্তার জল দেব না বলে মমতা গোঁ ধরলেন, সীমান্ত চুক্তিতে বাগড়া দিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকায় না গিয়ে নিজের দেশের নেতাকেই অসম্মান করলেন! অথচ তিনি মা-মাটি-মানুষের কথা বলেন। দু-তিন শ একর জমির জন্য হাজার হাজার মানুষের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করছেন।
ছিটমহলের মায়েদের দুঃখ দূর করতে তিনি বাধা হয়ে দাঁড়ালেন।
ভারতীয় সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের মেয়াদ ৩০ আগস্ট থেকে বাড়িয়ে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করার চেষ্টা চলছে। মেয়াদ বাড়লে সীমান্ত বিল রাজ্যসভায় পেশ হওয়ার সম্ভাবনাও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।