গতকাল পর্যন্ত এ বিশ্বকাপের ৩২ দলের সবার কমপক্ষে এক ম্যাচ হয়ে গেছে। স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ম্যাচও হলো কালই। এবার বাকীদের পালা।
এক ম্যাচ হবার পর দেখা যাচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে গোল হচ্ছে কম। অথচ গোলই ফুটবলের প্রাণভোমরা।
'জাবুলানী' নামের জাম্বুরাটি (আমাদের ফুটবলের পায়েখড়িতো জাম্বুরা দিয়েই) আমার ভালো লাগছে না। যারা লং পাসে খেলেন বা মাঝে মাঝে লং পাস দিতে চান তাদের জন্য জাবুলানী ভালো বল না। শূন্যে এই বলটি বেশি সময় থাকলে ওয়াসীম আকরামের ইন বা আউট সুইঙ্গারের চেয়ে বেশি সুইং করে। টার্নে শেন ওয়ার্ন বা মুরলীর বলের চেয়ে বেশি টার্ন করে। এটা মুরলী বা জাহির খান বা ম্যাশ পেলে খুশী হতেন।
তারপর আসি বিশ্বকাপ জয়ের খায়েশ নিয়ে যারা এসেছেন তাদের কথায়। ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা চূড়ান্ত পর্বে যেদিন ওঠা নিশ্চিত করে সেদিন থেকেই ফেবারিটের উত্তরীয়খানা কাঁধে পেয়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম নয়। সাথে আছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালি ( ৪ বারের চ্যম্পিয়ন-১৯৩৪,১৯৩৮,১৯৮২ ও ২০০৬), ব্রাজিলের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৭ বারের ফাইনালিস্ট জার্মানী ( ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন-১৯৫৪, ১৯৭৪ ও ১৯৯০)। ১৯৬৬ সালের শিরোপজয়ী ইংল্যান্ডও এবার সম্ভাব্য বিজয়ীর দলে আছে।
সবচেয়ে বেশি আলোচিত ফেবারিট তারকায় ঠাসা ইউরো চ্যাম্পিয়ন স্পেন। ১৯৯৮ সালের শিরোপা জয়ী ফ্রান্স আর রোনাল্ডো'র পর্তুগালও কিছু যেন বলতে চায়।
এক ম্যাচ শেষে সবচেয়ে বিপদে আছে সবচেয়ে প্রতিভাধর স্পেন। সু্ইজারল্যান্ডের বরফে কালই পিছলে পড়েছে স্পেন। কোমরে যে চোট লেগেছে সেটা সারাতে পারবে কিনা সময়ই তা বলবে।
পর্তুগাল দ্রগবাদের সাথে পয়েন্ট ভাগ করতে বাধ্য হয়েছে। একই দশা ইতালী, ফ্রান্সের। ইংল্যান্ডের ধাক্কা এসেছে পুরনো 'শত্রু' আমেরিকা থেকে। এটাও ড্র। ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ড প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে যায়।
এর আগের ৩টিতে ওরা যায়নি খেলতে। কারণ এইসব 'ম্লেচ্ছ' 'অস্পৃশ্য' টুর্নামেন্টে খেলতে মন ওঠেনি ইংরেজদের। ১৯৫০ সালে প্রথম ম্যাচ ফুটবল-বিবাগী (বাস্কেটবল, আমেরিকান ফুটবল, রাগবি,টেনিস নিয়ে এখনো ওরা বেশি ব্যস্ত) আমেরিকার সাথে। যে ম্যাচের সম্ভাব্য ফলাফল সবার জানা (!?) ছিলো। ইংল্যান্ড জিতবে বলে সবাই ধরেই নিয়েছিলো।
বাস্তবে ম্যাচের ফল-আমেরিকা-১ ইংল্যান্ড-০। বোঝেন, সেই কবেকার প্রীতি।
আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়ার সাথে মাত্র এক গোলে জিতেছে। মেসি খুব ভালো খেলেছেন। কিন্তু গোল পাননি।
পুরো ম্যাচে ভালো নিয়ন্ত্রন ছিলো তা-ও বলা যায় না।
ব্রাজিল নেমেছিলো রহস্যময় দল উত্তর কোরিয়ার সাথে। এর আগে ৪৪ বছর আগে ওরা আর একবারই বিশ্বকাপ খেলেছিলো। সেবার গিয়েই তখন পর্যন্ত ২ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও ঘোর ফেবারিট ইতালীকে হারিয়ে দিয়েছিলো। প্রথম গিয়েই খেলেছিলো কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত।
সেই দলই এশিয়ার দুর্বল ফুটবল টপকে পরের ৪৪ বছর আর আসেনি বিশ্বকাপে। এবার প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের মারমার কাটকাট দলের সাথে যে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে তা এককথায় অতুলনীয়। ব্রাজিলকে ৫৫ মিনিট গোলহীন থাকতে হয়েছে। গোলখরা কাটাতে ডিফেন্ডার মাইকনকে একটি অবিস্মরণীয় গোল করতে হয়েছে। মূল তারকা কাকাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি মাঠে।
শেষ মুহূর্তে ওরা দারুন এক গোল করে কাঁপিয়ে দিয়েছে ব্রাজিলকে।
অর্থাৎ দুই মহাফেবারিটের সূচনা ভালো হয়েছে সেটা বলা যায় না।
ফেবারিটদের মধ্যে একমাত্র জার্মানীই খেলেছে সবচেয়ে গোছানো আর সুন্দর ফুটবল। জিতেছে সর্বাধিক ৪-০ গোলে।
অন্যদের মধ্যে দুর্বল স্বাগতিক প্রথম ম্যাচে ড্র করে পরের ম্যাচে গোহারা হেরেছে।
ইউরোপ আর লাতিন আমেরিকার পর আফ্রিকাই ফুটবলে ভালো দল উপহার দিয়েছে। মাঝে মাঝে জ্বলে উঠলেও প্রথমবারের মতো আফ্রিকানদের মধ্যে ধারাবাহিক ভালো ফুটবল খেলেছে ১৯৮২ বিশ্বকাপে লাখদার বেলোমি'র আলজেরিয়া। ফেবারিট জার্মানীকে হারায় ওরা। খেলে দ্বিতীয় রাউন্ড পর্যন্ত। এরপর ক্যামেরুন, সেনেগাল, ঘানা ( একবার যুববিশ্বকাপ বিজয়ী), মিসর, আইভরী কোস্ট হয়ে ওঠে আফ্রিকান ফুটবল জাগরনের প্রতীক।
এবারও আফ্রিকা ভালোই খেলছে।
এবারের সত্যিকার চমক এশিয়া। এশিয়া ফুটবলের দুর্বলতম এলাকার অন্তর্গত। ২০০২ বিশ্বকাপে সহআয়োজক দ.কোরিয়া আর জাপান এশিয়ার মধ্যে প্রথমবারের মতো সত্যিকার সাফল্য দেখায়। এর আগে হঠাৎ দু'একবার ভালো খেলেছে কেউ কেউ।
কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে এশিয়ার উত্থান বিস্ময়কর। জাপান আর দ.কোরিয়া প্রথম ম্যাচে জিতেছে। উত্তর কোরিয়াতো ব্রাজিলের ঘাম ছুটিয়েছে। আজ দ.কোরিয়া আর্জেন্টিনাকে চমকে দিলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না। এশিয়াবাসী হিসাবে এটা আমাদের জন্য আনন্দের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।