আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।
মাগুরছড়া ব্লো-আউট :ক্ষতিপূরণ আদায়ে কী করা যাবে?
ভূমিকা: বাংলাদেশের প্রধান এবং প্রায় একক জ্বালানী উৎস গ্যাস সম্পদ সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীর নগ্ন থাবার কবলে। গ্যাস সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ এক মহা সংকটের সম্মুখীন। উৎপাদন অংশীদারী চুক্তি’র নামে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীগুলো দেশীয় কমিশনভোগীদের সাহায্যে তেল-গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের নামে অধিক মুনাফা লুন্ঠনের উন্ম্ত্ততা চলছে। রপ্তানী আপাতত স্থগিত হলেও প্রতিটি কূপ থেকে তাদের ভাগের ৭৯ ভাগ গ্যাসক্রয় বাবদ শত শত কোটি টাকা ভর্তুকী দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের জনগণ, দেশপ্রেমিক বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক শক্তি এইসব হাস্যকর পদক্ষেপ ও প্রতারণামূলক যুক্তির আসল চেহারা উন্মোচন করে দিলেও বিগত সরকারসমূহ বেপরোয়াভাবে সাম্রাজ্যবাদী লুন্ঠনের খেদমতে নিযুক্ত ছিলেন। জনগণ এক্ষেত্রে অবশ্য বর্তমান সরকারকেও ব্যতিক্রম হিসেবে দেখতে পাচ্ছে না।
অক্সিডেন্টাল, ইউনোকল, নাইকো, শেভরণ, কেয়ার্ন, টাল্লো ইত্যাদি বহুজাতিক কোম্পানী সারা দুনিয়ার তেল-গ্যাস সম্পদ লুন্ঠনের এক উন্মত্ত খেলায় নিযুক্ত। পৃথিবীর অন্যতম তেল সমৃদ্ধ দেশ নাইজেরিয়াকে ডলার ও সমৃদ্ধির লোভ দেখিয়ে ভিখিরি বানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়াকে সর্বশান্ত করেছে।
দেশ সর্বশান্ত হলেও লুটের ভাগ পেয়ে স্থানীয় শাসকরা ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা দেশে দেশে এই লুটপাট নিশ্চিত করার জন্য সামরিক শাসন অথবা বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। নির্যাতনমূলক আইন করে, সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে লুটের বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিরোধকে দমন করেছে। বাংলাদেশ এই লুন্ঠন প্রক্রিয়ারই শিকার। গ্যাসের মজুদ যা দেশের জন্যই অতি সামান্য, সেটাও এরা লুটে নিতে চায়।
বাংলাদেশের বিগত শাসকরা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্য এই লুন্ঠনের প্রত্যক্ষ সহযোগী।
মাগুরছড়া ব্লো-আউটের তের বছর, জনমনে হাজারো প্রশ্ন :
১৪ই জুন মাগুরছড়া দিবস। ১৯৯৭ সালের এইদিনে মাগুরছড়ায় দায়িত্বহীনতার কারণে যে ব্লো-আউট ঘটেছে এবং গ্যাস সম্পদ, পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এবার মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ১৩ বছর পূর্ণ হয়েছে। এতদিন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে আদায় করা যায় নি।
বিগত সরকারসমূহও এর দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে আদায়ে বর্তমান সরকার বিশেষভাবে তৎপর হতে পারেন বলে আমরা মনে করি।
বিদেশী একটি কোম্পানী আমাদের দেশের গ্যাস সম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করলো, তাও তাদের অবহেলা-ত্রুটির কারণে, তাতে আমাদের সরকার ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে না। সম্পদ ধ্বংসের জবাবদিহিতা চাওয়া যাবে না- পাওয়া যাবে না। তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ নিয়ে চিনিমিনি খেলা মেনে নেওয়া যায় কী? ক্ষতিপূরণ আদায়ে বর্তমান সরকারকে সফল হতেই হবে।
আমাদের একটাই কথা তা হলো, আমাদের দেশের তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদের এভাবে ধ্বংসযজ্ঞ ও লুণ্ঠন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
মাগুরছড়া ব্লো-আউট, গ্যাস সম্পদ, তদন্ত রিপোর্ট ও আমাদের পরিবেশ :
মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়া ১৪ নং গ্যাস ব্লকের অন্তর্গত একটি সমৃদ্ধ গ্যাসক্ষেত্র, এদেশের খনিজ সম্পদের মানচিত্রে পূর্ণিমার চাঁদের মতো রৌশন ছড়িয়ে জনগণের স্বার্থে স্বাবলম্বী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটাতে পারতো। বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর বিনিয়োগের জন্য আগত বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীদারেরা ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন দিবাগত রাতে মাগুরছড়া ১নং অনুসন্ধান কূপে খনন চলাকালে বিস্ফোরণ ঘটায়। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পরপরই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এক মাসের মধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ১৯৯৭ সালের ৩০শে জুলাই মন্ত্রণালয়ের সে সময়ের সচিব ড.তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরীর কাছে দু’টি ভলিউমে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্টটি জমা দেয়।
পরবর্তীতে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, ক্ষতিপূরণ পাওয়া ও বিতরণের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য দু’জন সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি ইমরান আহমেদ ও জাতীয় পার্টির এমপি মুকিত খান। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য সাব-কমিটিকে জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অক্সিডেন্টালের ব্যর্থতার জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কমিটির তদন্তে অক্সিডেন্টালের কাজে ১৫/১৬টি ত্রুটি ধরা পড়ে। অক্সিডেন্টালের কর্মকর্তা ২/৩টি ত্রুটির ব্যাপারে আপত্তি জানালেও বাকিগুলো স্বীকার করে নিয়ে তদন্ত রিপোর্টে স্বাক্ষর করে।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণেই ঘটে যাওয়া এ বিস্ফোরণে চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, গ্যাসপাইপলাইন, গ্যাসকূপ, মৌলভীবাজারস্ট্রাক্চার, গ্যাস রিজার্ভ, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভূমিস্থ পানি সম্পদ, রাস্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ছোট বড় ৩৯টি চা বাগানের ক্ষতির পরিমাণ ৪৬ কোটি ৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৩০ টাকা। বনাঞ্চলের ৬৯.৫ হেক্টর এলাকার ২৫ হাজার ৬৫০টি পূর্ণ বয়স্ক গাছ আগুনে পুড়ে গেছে বলে হিসাব করা হয়, যার ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয় প্রায় ৩৩.৬১ কোটি টাকা। একটি বনের স্বাভাবিক উচ্চতার গাছ বাড়তে প্রয়োজন হয় ৫০ থেকে ৬০ বছর। এ বনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে কমপক্ষে ১১০ বছর সময় লাগবে।
প্রতি বছর ৮০.৩০ কোটি টাকা হিসাবে ১১০ বছরে বনাঞ্চলের পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয় ৮,৮৩৯ কোটি টাকা। বনাঞ্চলের আংশিক ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ৮,১০০ গাছ এবং ২২.৫০ হেক্টর ভূমি; উক্ত ক্ষতি থেকে উদ্ধার পেতে সময় লাগবে ২০ বছর; উক্ত ক্ষতি বাবদ ধরা হয়েছে ৫০৭.১২ কোটি টাকা। এছাড়া বনাঞ্চলের সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ধরা হয়েছে ৪০ হেক্টর ভূমি এবং ১৫,৪৫০ গাছ; উক্ত ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার পেতে সময় লাগবে ১০ বছর এবং ক্ষতি বাবদ ধরা হয়েছে ৪৮৪.৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ বনাঞ্চলের মোট ক্ষতি ধরা হয়েছে ৯,৮৫৮ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। বিস্ফোরণের ফলে ২ হাজার ফিট রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস হয়েছে, এতে ক্ষতি দেখানো হয়েছে ৮১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা (রাজস্ব ব্যতীত)।
সড়ক পথ (রাজস্ব ব্যতীত) বাবদ ক্ষতি ২১ কোটি টাকা। গ্যাস পাইপ লাইন (রাজস্ব) বাবদ ক্ষতি ১৩ লক্ষ টাকা। বিদ্যুৎ লাইন (রাজস্ব ব্যতীত) বাবদ ক্ষতি ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯১৮৬ টাকা। খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পানের বরজ সমূহ (রাজস্ব ব্যতীত) বাবদ ক্ষতি ধরা হয়েছে ১৮ লক্ষ টাকা। বাস মালিকদের রাজস্ব ক্ষতি ধরা হয়েছে প্রতিদিন ৪৭,৭৫০ টাকা হারে মোট ১২ লক্ষ টাকা।
(তথ্যসূত্র: তদন্ত রিপোর্ট, ৩০শে জুলাই, ১৯৯৭ইং) তদন্ত রিপোর্টে মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ-গর্ভস্থ গ্যাসের পরিমাণ ৪৮৫.৮৬ বিসিএফ এবং এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ২৪৫.৮৬ বিসিএফ উল্লেখ করা হলেও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে প্রতি ১০০০ সিএফ গ্যাস ২.৬ মার্কিন ডলার হিসাবে বাংলাদেশী টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ-গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাসের দাম বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩৮৩৪.৪৮ কোটি টাকা। তদন্ত রিপোর্টের ৮.৪.৬ ও ৮.৬ অনুচ্ছেদে যথাক্রমে ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ দে’য়া হয়েছে, কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নিরূপণের সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মাগুরছড়ার মোট ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ১৩ হাজার কোটি টাকার উপরে।
মাগুরছড়া গ্যাসকূপ এলাকায় দুর্ঘটনার সময় ৬ জন শ্রমিক, ৫ জন সিকিউরিটি ও ১ জন রিগম্যান কর্মরত ছিলেন। রাত প্রায় একটার দিকে গ্যাসকূপে প্রথম মৃদু ভূকম্পন, তারপর বিদঘুটে আওয়াজ শুরু হলে রিগম্যান দ্রুত রিগ থেকে নেমে পড়েন। কূপ খননের জন্যে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী অক্সিডেন্টাল যে উপ-ঠিকাদার নিয়োগ করে গ্যাসকূপ খননে তাদের অভিজ্ঞতা ছিল আনকোরা। খননকাজে জার্মান ডয়টেগ-এর অভিজ্ঞ লোকবলের যেমন অভাব ছিল তেমনি পূর্ব কোন সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা ছিলো না।
ছিলনা কার্যোপযোগী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কূপ খনন কাজে ডয়টেগের যন্ত্রপাতি ছিল পুরানো ও ত্রুটিযুক্ত। এর মান চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ছিল না। দায়িত্বরত রিগম্যানও ছিল সহকারী পর্যায়ের। উৎপাদন বণ্টন চুক্তির শর্তানুসারে কূপ খননের প্রকল্প এলাকায় অক্সিডেন্টাল থেকে একজন, পেট্রোবাংলা থেকে একজন খননবিদ সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থাকার কথা।
অক্সিডেন্টাল চুক্তির এ শর্তকে তেমন কোনো গুরুত্ব প্রদান করেনি। বিস্ফোরণকালে কূপ এলাকায় কোনো খননবিদ উপস্থিত ছিল না।
দুর্ঘটনা এড়ানো ও খনন কাজ সহজ করার উদ্দেশ্যে কূপ খননের সময় যে কেসিং প্রতিরক্ষা বহিরাবরণ তৈরি করা হয় তার নকশায় ছিল মারাত্মক ধরনের ত্রুটি। অক্সিডেন্টাল ও ডয়টেগের আনাড়ি প্রযুক্তিবিদরা এ নকশা তৈরি করে। অক্সিডেন্টালের খনন কাজে আনাড়িপনা, অনভিজ্ঞতা, দায়িত্বে অবহেলা, উদাসিনতা, ত্রুটি, অযোগ্যতা দুর্ঘটনাকে অনিবার্য করে তোলে।
দায়িত্ব পালনে অক্সিডেন্টালের অযোগ্যতা ও খনন কাজের নিম্নমান হওয়ার প্রধান কারণ হলো টাকা বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সস্তায় লোকবল নিয়োগ করা। উন্নয়ন অংশীদার আমেরিকার কোম্পানি অক্সিডেন্টাল এদেশের গ্যাসক্ষেত্র লুণ্ঠনে অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সাথে বিনিয়োগ তত্ত্ব প্রয়োগ করেছে বৈকি। এ তত্ত্বকে কার্যকর করার জন্যে অক্সিডেন্টাল কোম্পানী সব সময় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে পেট্রোবাংলার কাছে তথ্য গোপন করে যায়। চুক্তির শর্তানুসারে গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে তাদের গৃহীত যাবতীয় কর্মসূচি, পদক্ষেপ ও অত্যাবশ্যকীয় টেকনিক্যাল বিষয়ে জানাতে হলে অক্সিডেন্টাল তা পেট্রোবাংলাকে জানায় একেবারে শেষ মুহূর্তে অথবা কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর।
নির্দিষ্ট তথ্যটি অবগত হওয়া ছাড়া পেট্রোবাংলার তখন আর কিছুই করার থাকে না।
গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে অক্সিডেন্টালের তথ্য গোপন করার অভিযোগে অক্সিডেন্টালকে ইতিপূর্বে নাইজেরিয়া থেকে পাততাড়ি গুটাতে হয়েছে। লিবিয়া থেকেও তাড়া খেয়ে ফিরে যায়। তাদের অপকর্মে নাইজেরিয়ার গ্যাস-তেল সম্পদ নিঃশেষীকরণ, পরিবেশ ও উর্বর বন ভূমি ধ্বংস হয়েছে। মানুষ রোগে ভূগছে। পরিবেশ বিষাক্ত আকার ধারণ করেছে।
অনুসন্ধান কূপ খনন করার সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে হয়। এ কাজে সাধারণত ডিনামাইট জাতীয় বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অক্সিডেন্টাল চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে মাগুরছড়ার গ্যাস কূপ খনন কাজে বিস্ফোরক হিসেবে প্রাণঘাতী ও পরিবেশ বিনাশী তেজস্ক্রিয়যুক্ত ‘রেডিও একটিভ সোর্স’ ব্যবহার করে। পেট্রোবাংলা এ সংবাদ জানতে পারে গ্যাস কূপ বিস্ফোরণের কয়েক মাস পর। পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য খনন কাজ স্বল্পতম সময়ে সম্পন্নকরণ।
যত কম সময়ে কাজ সম্পন্ন করা যায় তত বেশী মুনাফা লাভ করা যায়। জনগণের স্বাস্থ্য, জীবন ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে আমেরিকার কোম্পানী অক্সিডেন্টালের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসেনি। বহুজাতিক পুঁজির আগমন ঘটেছে বহুজাতিক তান্ডব ও লুণ্ঠনের আদর্শ নিয়ে আমাদের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে নয়।
মাগুরছড়া ব্লো-আউট, বিশেষজ্ঞদের প্রথম দিকের প্রাথমিক ধারণা :
মূল গ্যাস জোনের আয়তন ছিল দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার এলাকা। এ কূপে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটেরও অধিক গ্যাস মজুদ ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মূল্য ছিল ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৮ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। টাকার বারবার অবমূল্যায়নের কারণে এ মূল্য বর্তমানে আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জীব বৈচিত্রে সমৃদ্ধ এ সংরক্ষিত প্রাচীন অরণ্য ভূমির পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার অর্থনৈতিক মূল্যও হবে সমপরিমাণ। যদি প্রয়োজনীয় অর্থ বিনিয়োগ করা হয় তা হলেও ১৯৯৭ সালের ১৪ জুনের পূর্বেকার পরিবেশগত অবস্থা ফিরিয়ে আনতে লাগবে একশত বছরের অধিক কাল। গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ও বন সম্পদের যৌথ ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৮শ’ কোটির টাকারও বেশি।
বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জাপানের ঋণ এবং এক দশকেরও অধিককাল ধরে জনগণের পকেট থেকে সংগৃহীত যমুনা সারচার্জের টাকায় নির্মিত যমুনা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা। ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা দিয়ে একচেটিয়া ঋণমুক্ত স্বাধীন অর্থনীতির নীতিমালায় ৩২টি যমুনা সেতুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেত। মাগুরছড়ার ভূমিতে ও আকাশে বিলীন হয়ে যাওয়া সম্পদের বিনিময়ে ৪টি স্বাধীন জাতীয় বাজেট দেয়া যেত। এরফলে আমরা হয়তো চিরদিনের জন্যে অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ স্বাধীন-স্বয়ম্ভর হতে পারতাম। গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের কারণে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিপরীতে ব্যয় দেখিয়ে অক্সিডেন্টাল ৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের একটি হিসেব পেট্রোবাংলায় দাখিল করে।
যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২৬২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দাঁড়ায়। গ্যাসকূপ খনন কাজে নিয়োজিত রয়েছে পেট্রোবাংলার অঙ্গ সংস্থা বাপেক্স। এ সংস্থার কর্মকর্তাদের ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি যুক্ত পেট মোটা করে হজম সম্পন্ন করার পরও সার্থকভাবে একটি কূপ খননে সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ৪০ কোটি টাকা। ১২ বছর পূর্ণ হলেও অক্সিডেন্টাল বা অক্সির উত্তরসুরী ইউনোকল পরবর্তীতে শেভরনের কাছ থেকে মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়নি। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ এলাকা পরিত্যাগকালে অক্সিডেন্টাল প্রচারণার সর্বোচ্চ মারণাস্ত্র প্রয়োগ করে।
আড়াইশত বছরেরও অধিককাল ধরে ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণ ও বহুজাতিক একচেটিয়া পুঁজির অধীনে শেকল টানা এ বিধ্বস্ত জনগোষ্ঠীর মুখে লেপন করে দেয়া হয় লুটেরা ও সন্ত্রাসীর কালিমা। অক্সিডেন্টালের প্রচারণা বাস্তবতার সাথে যে সংগতিপূর্ণ নয় এ সত্যটি জনগণের কাছে অনেক আগেই পরিস্কার হয়ে যায়। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ লক্ষণ দেখে বাস্তবতা উপলব্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কোন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বা বিচারকের রায়ের ওপর নির্ভর না করেই ঘটনা জাত সম্পর্ক, পরিবেশ ও লক্ষণসমূহ বিশ্লেষণ করে সঠিক অনুমানে পৌঁছে যেতে পারে মানুষ। অক্সিডেন্টালের প্রচারণা সত্ত্বেও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ এলাকার জনগণসহ বৃহত্তর সিলেটবাসী অক্সিডেন্টালের বিরুদ্ধে আক্রোশে-আন্দোলনে মাগুরছড়া গ্যাস কূপের আগুনের মত জ্বলে উঠতে থাকে।
ছয় মাসেরও অধিককাল ধরে আগুনের গ্যাস উদগীরনকারী গ্যাস কূপের উৎস মুখ সিল করার কাজ সম্পন্ন হয় ৯ জানুয়ারি ১৯৯৮। তারও আগে ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৭ থেকে অক্সিডেন্টাল মাগুরছড়া থেকে রাতের আঁধারে প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র আস্তে আস্তে সরাতে আরম্ভ করে। চোরের মতো অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখে জনগণের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে কমলগঞ্জের রাস্তায় বড় বড় গাছ ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বামগণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ন্যাপ, জাসদ, বাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সিপিবি-এর উদ্যোগে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সমগ্র সিলেট বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা আন্দোলন হয়েছে।
কিন্তু জনগণের আন্দোলনেও জনগণের সম্পদ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব হয়নি।
পিএসসি চুক্তি: সরকারের সঙ্গে ১৯৯৫ সনের ১১ জানুয়ারী সম্পাদিত উৎপাদন অংশীদারী চুক্তি ১৯৯৪ (চৎড়ফঁপঃরড়হ ঝযধৎরহম ঈড়হঃৎধপঃ) - এর আওতায় অক্সিডেন্টাল কোম্পানী বাংলাদেশের তেল, গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য মৌলভীবাজার এলাকার ১৪ ও ১৩ নং ব্লক দু’টি ইজারা নেয়।
সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী অক্সিডেন্টাল মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রে সাত বৎসর পর্যন্ত অনুসন্ধান কাজ চালাতে পারতো। অবশ্য এই সাত বৎসর সময় ৩+২+২ এই তিনভাগে বিভক্ত। তিন বছর অনুসন্ধান কার্যক্রম সফল হলে চুক্তি মেয়াদ প্রথমবারের মতো দু’বছর বৃদ্ধি, পরবর্তীতে পুনঃ দু’বছর বৃদ্ধির সুযোগ থাকে।
অবশ্যই গ্যাস উত্তোলন/আবিষ্কারে ব্যর্থ হলে সমস্ত এলাকা ছেড়ে দিতে হয়। তবে অনুসন্ধান কাজে যেকোন দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির দায়দায়িত্ব অক্সিডেন্টাল বহন করতে হবে।
অক্সিডেন্টালের উপর বাধ্যতামূলক করণীয় :
মূলচুক্তি’ ৯৪-এর আর্টিক্যাল ১০-এর গুরুত্বপূর্ণ উপাংশে অক্সিডেন্টালের উপর আরোপিত বাধ্যতামূলক করণীয় নিম্নরূপ। খনিজের সম্পদ দক্ষ ও নিরাপদে উত্তোলন ও আহরণে খনি খনন পরিচালিত হতে হবে প্রযোজ্য আইন, সম্পাদিত চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক মানের পরিকল্পনা, বিবেক-বুদ্ধি প্রসূত এবং সুদক্ষ কারিগরী কায়দায়। সেক্ষেত্রে-যেকোন খনিজের সম্পদ, জলাদার এবং আর সব প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি প্রতিরোধে সকলপ্রকার যুক্তিযুক্ত সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়।
পিএসসি আর্টিক্যাল-২৮: এ চুক্তির বৈধ্যতা, ব্যাখ্যা ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত হতে হবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী।
সম্পুরক চুক্তি ’৯৮: ১৯৯৮ সালের ১০ জানুয়ারী অক্সিডেন্টালের সাথে চুক্তির মেয়াদ সাফল্যের সাথে শেষ না হলেও কুপ খনন চলাকালে মাগুরছড়া গ্যাস ফিল্ডের ব্লো-আউট হওয়া সত্ত্বেও ১৯৯৮ সালের ২৫ নভেম্বর ঝঁঢ়ঢ়ষবসবহঃধষ অমৎববসবহঃ (ইষড়পশ-১৩ ্ ১৪) সম্পাদিত ও স্বাক্ষরিত হয় এবং চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি পায়।
সম্পুরক চুক্তির উদ্দেশ্য: নির্ধারিত প্রাথমিক সময়সীমার মধ্যে পিএসসি-৯৪ অনুযায়ী অক্সিডেন্টাল তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়নি বিধায় মূল চুক্তির (পিএসসি ’৯৪) সুনির্দিষ্ট কিছু বিধানে পরিবর্তন এনে অর্পিত দায়িত্ব সম্পন্ন করার সুযোগ দেয়ার জন্য আইনগত দিক দিয়ে অক্সিডেন্টালকে উক্ত কাজের যোগ্য ও উপযুক্ত করার অভিপ্রায়ে এ সম্পুরক চুক্তি।
সাপ্লিমেন্টাল এগ্রিমেন্টের ৩.৩ অনুচ্ছেদ: বিরূপ প্রচার হতে পারে বিধায় অক্সিডেন্টাল ব্যতীত এ চুক্তির কোন কিছু কেউই কোনক্রমেই জনসমক্ষে প্রকাশ করতে পারবে না। যদি প্রকাশ পায়, তাহলে বিরূপ প্রচার মোকাবেলার জন্য সরকার অক্সিডেন্টালকে সমর্থন ও সহযোগিতা দেবে।
ভূপাল দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ আদায়ের দৃষ্টান্ত: ১৯৮৪ সালের ৩ ডিসেম্বর ভারতের ভূপালে ইউনিয়ন কার্বাইড লিমিটেড কর্তৃক পরিচালিত কীটনাশক কারখানায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। ১৯৮৫ সালে ভারত সরকার ইউনিয়ন কার্বাইডের বিরুদ্ধে ভূপাল দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে নিউইয়র্কে দেওয়ানী মামলা দায়ের করে। আমেরিকার বিজ্ঞ আদালত প্রমাণ করেন যে, ভূপাল দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ মামলার আইনী নিষ্পত্তি ভারতীয় আদালতেই হওয়া আইনগত দিক দিয়ে যুক্তিযুক্ত। তারপর ভারত সরকার ইউনিয়ন কার্বাইডের বিরুদ্ধে তিন ভিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা ভারতে দায়ের করে। ১৯৮৯ সালে ৪ মে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ভারতীয় আইনে এ ক্ষতিপূরণের মামলাটি নিষ্পত্তি করেন।
ভূপাল দুর্ঘটনার কারণে ইউনিয়ন কার্বাইডের নির্বাহীদের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কর্তৃক আনীত ফৌজদারী অভিযোগও ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট নিষ্পত্তি করেন। তারপরও ইউনিয়ন কার্বাইড লিমিটেড ক্ষতিপূরণ প্রদানে এগিয়ে আসেনি। ২০০১ সালে ডো ক্যামিকেল নামের অপর এক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন কার্বাইডের সাথে একীভূত হলে নতুন প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিপূরণ প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে রশিদা বী এবং চম্পা দেবী শুক্লা’র নেতৃত্বে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। তারা এ দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের দাবীতে আন্তর্জাতিক প্রচারনা চাঙ্গা করে গড়ে তুলেন।
তারা তাদের মতো নিম্ন আয়ের এবং অশিক্ষিত মহিলাদের এ আন্দোলনে যুক্ত করেন। ২০০২ সালে দিল্লিতে ১৯ দিনের অনশন ধর্মঘট করে তারা তাদের এ দাবী আদায়ে সোচ্চার হন। বিশ্বের ১০টি দেশ থেকে প্রায় দেড় হাজার মানুষ মাসব্যাপী এই র্যালী ও অনশন ধর্মঘটে এসে যোগ দেয়। ভূপালের ক্ষতিগ্রস্থদের সমর্থনে এটাই ছিল সর্বপ্রথম বিশ্ব অনশন ধর্মঘট। ২০০৩ সালে তারা ডো ক্যামিকেলের বোম্বাই ও হল্যান্ড অফিসে হাজির হয়ে দুর্ঘটনার বিষাক্ত বর্জ্য সরবরাহ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি শহরে তাদের সমর্থনে আন্দোলনের কর্মসূচী পালন করেন। নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ষ্ট্রিটের সামনে ১২ দিনের অনশন পালন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শহরের হাজার হাজার মানুষ আন্দোলনে শরীক হন। তারা যুক্তরাজ্য, চীন, স্পেন, থাইল্যান্ড ও কানাডায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। যুক্তরাষ্ট্রের সেকেন্ড আপীল কোর্ট রশিদা বী এবং চম্পা দেবী শুক্লা’র পক্ষে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন এবং ডো ক্যামিকেলকে ক্ষতিপূরণের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করার নির্দেশ দেন।
আন্দোলনে নেমে দাবী আদায়ের যে দৃষ্টান্ত রশিদা বী এবং চম্পা দেবী শুক্লা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা অনেক দিক দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৪ সালে রশিদা বী এবং চম্পা দেবী শুক্লাকে ‘গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল’ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
বিশ্লেষণ : ১. সম্পুরক চুক্তি’ ৯৮ অনুযায়ী অক্সিডেন্টাল বীমা কোম্পানীর নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ একশত মিলিয়ন ডলার পায়। গ্যাসকুপ বিস্ফোরণের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিপরীতে ব্যয় দেখিয়ে অক্সিডেন্টাল ১টি হিসাব পেট্রোবাংলায় দাখিল করে এবং সে হিসাব অনুমোদিত হয়। ২. কিন্তু সম্পুরক চুক্তির উদ্দেশ্য সফল করতে মৌলভীবাজার গ্যাস ফিল্ডের ১৩ ও ১৪নং ব্লকের গ্যাস উত্তোলনে পুনঃ নিয়োজিত না হয়ে ১৯৯৯ সালের কোন এক সময় বাংলাদেশে তার সমস্ত সম্পদ ও কার্যক্রম ইউনোকলের নিকট বিক্রয় বা বিনিময়ের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে সবার অগোচরে চলে যায়।
সে সূত্রে ইউনোকল অক্সিডেন্টালের স্থলাভিষিক্ত হয় এবং পিএসসি চুক্তি ’৯৪ ও সম্পুরক চুক্তি ’৯৮-এ অক্সিডেন্টাল ইউনোকলের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। অক্সিডেন্টালের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব ইউনোকলের উপরে অর্পিত হয়। পরবর্তীতে শেভরনের উপর এই দায়িত্ব অর্পিত হয়। ৩. অতঃপর ২০০২ সালের ২ জুলাই পেট্রোবাংলা আনুষ্ঠানিকভাবে পুরে যাওয়া গ্যাসের ক্ষতিপূরণ দাবী করে। সম্পুরক চুক্তি ’৯৮-এর আওতায় ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে এবং ঐ সম্পুরক চুক্তিতে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৫% অতিরিক্ত গ্যাস দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ইউনোকল ক্ষতিপূরণের দাবী নাকচ করে দেয়।
আমাদের করণীয় :
ক) অক্সিডেন্টাল পিএসসি ’৯৪ আর্টিকেল-১০ লঙ্ঘন করেছে। গ্যাস উত্তোলন পরিকল্পনায় ত্র“টি ছিল। কুপ খননে নিষ্ঠা, বুদ্ধি বিবেচনা ও কারিগরী দক্ষতার পরিচয় অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় নি। যেসব ত্র“টি-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে তা অবহেলা ও দক্ষতার প্রমাণ হিসাবে বিবেচ্য। অক্সিডেন্টালের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে, কারিগরী ও আইনগত দিক দিয়ে অক্সিডেন্টালকে অভিযুক্ত করা যায়।
খ) সম্পাদিত চুক্তি ’৯৪-এর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করে অক্সিডেন্টাল সম্পূরক চুক্তি ’৯৮-এর আওতায় সম্পাদিত চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। পিএসসি ’৯৪ এর আর্টিকেল-১০ লঙ্ঘন করে অক্সিডেন্টাল তেল গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধান কাজের অযোগ্য ও অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত অভিযোগ এবং বেলা কর্তৃক হাইকোর্টের দায়েরকৃত ৬১০৫/১৯৯৭ নং রীট আবেদনে আনীত অভিযোগ সমূহ নিষ্পত্তি ব্যতীত সম্পূরক চুক্তি ’৯৮ সম্পাদিত হওয়ায় আইনী বৈধতার প্রশ্নে এক চুক্তি এখন বিতর্কিত।
গ) ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন ব্লো-আউটের পর থেকেই মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টা ছিল। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি।
সরকারের যেসব নির্বাহী কর্মকর্তারা যেসব অর্থ ও স্বার্থে অক্সিডেন্টালের সাথে সম্পূরক চুক্তি ’৯৮ সম্পাদন করেছেন এবং পরবর্তীতে চুক্তি অনুযায়ী কোন কাজ না করে নির্বিবাদে অক্সিডেন্টালকে এ দেশ ত্যাগ করার সুযোগ দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক্ষেত্রে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে প্রতিয়মান। নিজেরা লাভবান হয়েছেন ও অক্সিডেন্টালকে লাভবান করেছেন। দেশের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি করেছে। এ সত্য এখন সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত।
ঘ) সম্পূরক চুক্তি ’৯৮ ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষেত্রে একমাত্র আইনগত বাঁধা।
সেক্ষেত্রে চুক্তি বাতিল হওয়া জরুরী।
ঙ) ভূপাল দূর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ আদায়ে ভারতের অভিজ্ঞতা মাগুরছড়া ব্লো-আউটে গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায়ে মাইল ফলক হিসেবে গণ্য হবে।
চ) মাগুরছড়া ব্লো-আউট সম্পূরক চুক্তি ’৯৮ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ’৯৫ লঙ্ঘনে জড়িত অক্সিডেন্টাল ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানী ও ফৌজদারী অভিযোগ আনা যাবে।
ব্লো-আউটের কারণ :
মাগুরছড়া গ্যাস ফিল্ড ব্লো-আউট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের সম্ভাব্য চিহ্নিত কারণসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-
১. ৫২৭ - ৭৯৫ মিটার গভীরতা পর্যন্ত খননকৃত কুপের অভ্যান্তরীন গাত্রে কোন পধংরহম-এর পরিকল্পনা ছিলনা। সুতরাং কুপের এ অংশে কোন পধংরহম ছিলনা এবং কুপের অভ্যান্তরীন গাত্রের ঐ অংশটি অনাবৃত ছিল।
যদি তা থাকত তাহলে বিস্ফোরণ প্রশমিত হতে পারত।
২. গ্যাসন্তরের অস্তিত্ব জানা থাকা সত্বেও কুপের ফবারধঃরড়হ ঢ়ড়রহঃ গ্যাসস্তরের অভ্যন্তরে নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি গ্যাসস্তরের উপরে কিংবা নীচে এ ফবারধঃরড়হ ঢ়রহঃ নির্ধারণ করা হ’ত, তাহলে এ বিস্ফোরণ এড়ানো সম্ভব হতে পারত। তাছাড়াও পধংরহম এবং পাইপ-এ পবসবহঃধঃরড়হ সন্তোষজনক ছিলনা এবং তা ছিল নিম্নমানের।
৩. খননকালে কুপের অভ্যন্তরে সঁফ পরৎপঁষধঃরড়হ এর সাহায্যে উর্দ্ধমুখী গ্যাসের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়।
এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। সঁফ ইঞ্জিনিয়ার কুপের সঁফ ঢ়ধৎধসবঃবৎং-এর অবস্থা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না এবং তা সড়হরঃড়ৎরহমও করেন নি। বরং তিনি সংকটকালীন সময়ে সঁফ ঢ়ধৎধসবঃবৎং সড়হরঃড়ৎরহম এবং কূপ খননে জড়িতদের সংগে যোগাযোগ রক্ষা না করে গবেষণাগারে প্রায় দু’ঘন্টাকাল অতিবাহিত করেন। যদি যথাসময়ে সঁফ পরৎপঁষধঃরড়হ-এর মাধ্যমে সঁফ ঢ়ধৎধসবঃবৎং নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত, তাহলে গ্যাস প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ হ’ত এবং বিস্ফোরণ এড়ানো হয়ত সম্ভব হ’ত।
৪. কূপের সংকটাপন্ন অবস্থা অনুধাবন করা সত্ত্বেও কূপ খনন থামানো হয় নি।
৫. ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন রাতে ড্রিলিং সুপারভাইজার, মাড ইঞ্জিনিয়ার, মাড লগার, ড্রিলিং কারিগর- এদের মধ্যে তত্ত্বাবধান, সমন্বয় ও যোগাযোগের অপ্রতুলতা কূপের সংকটকালীন অবস্থায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
৬. খনন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ অক্সিডেন্টালের অনুমোদিত কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাপ্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন নি।
৭. গ্রহণযোগ্য মানের কোন অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না। তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা মান সম্মত ছিল না।
৮. মাগুরছড়ায় কুপ খননের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক এমনকি সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোন মান/নীতি অনুসরণ করা হয়নি।
৯. অতঃপর খননকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা ও সম্মিলিত ত্র“টি-বিচ্যুতিই বিস্ফোরণকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলে।
ব্লো-আউটের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ: ১৯৯৭ সালের ৩০শে জুলাই প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। ভূগর্ভস্থ সম্পদ যথা- গ্যাস ও পানি সম্পদ এবং পরিবেশ সহ ভূ-উপরিস্থ সম্পদ বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তদন্তকালীন বিভিন্ন সংস্থা/কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ক্ষতি বা ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্পদের বিবরণ পাওয়া যায়। ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ ও পরিমাণ নিম্নরূপ:
নং ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ (কোটি টাকা)
১. অক্সিডেন্টালের ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ ১৭৬.৮২
২. চা বাগান সমূহ (৩৯টি) ৪৬.০৭
৩. সিলেট বিভাগ বন বিভাগ কর্তৃক্ষ নির্ধারিত ক্ষয়-ক্ষতি:
ক. গাছ-পালা
খ. বিভিন্নভাবে পরিবেশ আক্রান্ত হওয়ায় ক্ষতি:
গ. পরিবেশের আংশিক ক্ষতি
ঘ. পরিবেশের সম্ভাব্য ক্ষতি
৩৩.৬১
৮৮৩৯.০০
৫০৭.১২
৪৮৪.৫৮
৪. গ্যাস পাইপ লাইন (রাজস্ব) ০.১৩
৫. বৈদ্যুতিক লাইন (রাজস্ব ব্যতীত) ১.৩৫
৬. রেলপথ (রাজস্ব ব্যতীত) ০.৮১
৭. সড়ক পথ (রাজস্ব ব্যতীত) ২১.০০
৮. বাস মালিক (রাজস্ব) ০.১২
৯. পানের বরজ সমূহ (রাজস্ব ব্যতীত) ০.১৮
১০. ভূ-গর্ভস্থ গ্যাস ২৪৫.৮ বিসিএফ ৩৮৩৪.৪৮*
১১. ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পদ ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করা হয়নি
১২. স্থানীয় অধিবাসী ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করা হয়নি
ক্রমিক নং ২ থেকে ১১ পর্যন্ত মোট ১৩৭৬৮.৪৫
তদন্ত রির্পোটে ব্লো-আউটে পুড়ে যাওয়া গ্যাসের পরিমাণ উল্লেখ করা হলেও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করা হয়নি।
এক্ষেত্রে প্রতি ১০০০ ঘনফুট গ্যাস ২.৬ মার্কিন ডলার হিসাবে বাংলাদেশী টাকায় (১ ডলার = ৬০ টাকা) ৩৮৩৪.৪৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অক্সিডেন্টালের সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এ হিসাবে ধরা হয়নি। তদন্ত রির্পোটের ৮.৪.৬ ও ৮.৬ অনুচ্ছেদে যথাক্রমে ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেয়া হয়েছে। আর্থিক পরিমাণ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নিরূপনের সুপারিশ করা হয়েছে। রির্পোটে স্থানীয় অধিবাসীদের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য স্পষ্ট নয়।
তবে ইঊখঅ’র তদন্ত রির্পোটে দেখা যায় ৪০টি খাসিয়া পরিবার গৃহহীন হয়। তাদের ঘরবাড়ীসহ উপার্জনের একমাত্র পথ পানের বরজও ধ্বংস হয়।
শেভরনের জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহ প্রসঙ্গে: মাগুরছড়া মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের একটি জায়গার নাম। ১৯৯৭ সালের জুন মাসে স্থানটি রাতারাতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়। এখনো প্রতি বছর ‘মাগুরছড়া দিবস’- ছাড়াও মাঝে মাঝে সংবাদ শিরোনামে মাগুরছড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে জনগণের সামনে আবির্ভূত হয়।
বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর সাথে হিসেব-নিকেশ শেষে পিএসসি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পাচ্ছে তেল-গ্যাস সম্পদের ২১ ভাগ, আর বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানী লুটে নিয়ে যাবে গ্যাস-তেল সম্পদের ৭৯ ভাগ। আর বাপেক্স উত্তোলন করলে পুরোটার মালিক হতো দেশ। বিদেশী কোম্পানী গ্যাস অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে তারা আবার বড় বড় বিপর্যয় ঘটাতে পারে, যা ইতিমধ্যেই মাগুরছড়া ও টেংরাটিলা (ছাতক) গ্যাসকূপ সমূহের দুর্ঘটনায় প্রমাণিত। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, বিদেশী কোম্পানীর কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ডলারে। সরকার ভর্তুকী দিয়ে কেনার ফলে শত শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে এবং এরই বিষময় ফল হচ্ছে জনগণকে বেশী দামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে।
বর্তমানে আমাদের দেশের মাটির তলার সেই গ্যাস শেভরন কোম্পানীর কাছ থেকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ৩ ডলার দরে কিনতে হচ্ছে। এতে দেশ অচিরেই বিরাট বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে বিশ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।