যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
রবীন্দ্রনাথ তার একটি গল্পে বলেছিলেন,জৈষ্ঠ্যের খররৌদ্র-ই তো জ়ৈষ্ঠ্যের অশ্রুশূন্য রোদন। তার বোধহয় জৈষ্ঠ্যের রাতের কথা তখন মনে হয় নি। নাহলে জৈষ্ঠ্যের ভয়ানক কাল রাতের বর্ননাও এরকম কোন সুন্দর বাক্য দিয়ে দিতেন।
এখন সময় দুইটা ত্রিশ মিনিট। জৈষ্ঠ্যের রাতের ঘন কাল অন্ধকার। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকার শব্দ অনবরত শোনা যাচ্ছে। আকাশের চোখে ঘুম নেই। তার ঘুম আসছে না।
মাঝে মাঝে রাতে সে ভয়ঙ্কর সব দুঃস্বপ্ন দেখে। আজ আবার কেন যেন ঘুম আসছে না। অন্ধকার রাত জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে। আকাশের একটু একটু ভয় করতে লাগল। ভূত প্রেত যদিও সে বিশ্বাস করে না তবুও আজ যেন কেমন মনে হতে লাগল সবকিছু।
আকাশ মোবাইলটা হাতে নিল। মনে মনে ঠিক করল ফেইসবুকে একটু চ্যাট করবে। এই সময় হঠাত কারেন্ট চলে গেল। আকাশের বুক টা ধ্বক করে উঠল। সে চাদরটা মাথা পর্যন্ত এনে ই-বাডি সফটওয়্যারে ঢুকল।
মনে মনে চিন্তা করল চ্যাট চ্যাট করতে করতে ঘুমিয়ে যাবে। তাহলে ভয়টা কেটে যাবে। আকাশ অনলাইন হতেই একটা মেয়ে বলল............হাই।
আকাশের ঘুমের ঘোর কিছুটা ছিল,তারপরও সে প্রায় হকচকিত হয়ে গেল মেয়েটার নাম দেখে। সাজিয়া আফরিন।
আকাশ রিপ্লাই দিবে কি দিবে না এরকম করছে এমন সময় দ্বিতীয় মেসেজ আসল.........আই এম সাজিয়া। হুয়াটস আপ?
আকাশ আরো হতভম্ব হয়ে গেল। এমন ঘটনার জন্য সে প্রস্তুত ছিল না। এমন সময় একটা বুদ্ধি তার মাথায় খেলে গেল। সে তাড়াতাড়ি ই-বাডির সেটিংস এ গিয়ে সাজিয়া আফরিন একাউন্ট টা লগ আউট করল।
এখন যদি অনলাইন দেখা যায় তাহলে চিন্তার কিছু নাই। পাসয়ার্ড কেউ জেনে গেছে ধরা যেতে পারে। কিন্তু লগ আউট করার পর আর অনলাইন দেখা গেল না। আকাশ ব্যাপারটা সত্যি না তার মনের ভুল ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। তাই সে কি মনে করে আবার ওই একাঊন্ট দিয়ে লগ ইন করল।
এখন আবার সাজিয়া আফরিন একাউণ্ট অনলাইন দেখা গেল। আকাশের কপালে মৃদু মৃদু ঘাম। এটা কীভাবে সম্বভ!
আবার ওই একাউন্ট থেকে মেসেজ আসল......হাই,............আই এম সাজিয়া।
আকাশ আরো ঘামতে লাগল।
সাজিয়াঃ কি ব্যাপার আকাশ? ভয় পাইছ?
আকাশ ভয়ে ভয়ে লেখল......আপনি কে?
সাজিয়াঃ আই এম সাজিয়া।
আই ওয়ানা বি ইওর ফ্রেন্ড।
আকাশ কি লেখবে ভেবে পেল না। তার মনে রাত্রির অন্ধকারে কোন অশরীরী আত্তা ওই একাউন্টে ঢুকে গেছে। এই একাউন্ট দিয়ে আকাশ অনেকের সাথে ঠীক এরকম ভাবে চ্যাট করেছে। আর আজ ঠিক একই ভাবে তার ফেইক একাউন্ট তার সাথে চ্যাট করছে।
অবিশ্বাস্য!!
আকাশ কাপাঁ কাপাঁ হাতে লেখল, প্লিজ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।
রিপ্লাই আসল......আই উইল ডিস্টার্ব ইউ। আই উইল ডিস্টার্ব ইউ অলওয়েজ। কাম অন বেইবি। হা হা হা।
আকাশ যেন বাইরে কোথাও হাসির শব্দ শুনতে পেল। পিশাচের মত হাসি। যে হাসির শব্দ আদিগন্ত বিস্তৃ্ত্ব। কোন নৃত্যরত ছিন্নমস্তা তার সমস্ত শক্তি দিয়ে ক্ষীন কিন্তু তীক্ষ্ণ শব্দে যেন হাসছে। সে হাসি কানের মধ্যে প্রবেশ করে বুকের ভিতর থেকে ভয়ার্ত চিতকার হয়ে যেন বেরিয়ে আসতে চায়।
আকাশের শরীর একটু কাপ্তে লাগল। গরমের দিনে চাদর মুড়ি দিয়ে থাকায় তার গলগল করে ঘাম বের হতে লাগল। এরকম পরিস্থিতিতে জানালার কাছে হটাত কিসের শব্দ হল। হয়ত এটা আকাশের কল্পনা। কিন্তু তারপরও তার স্নায়ু এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে ওই শব্দ শুনেই সে বিকট এক চিতকার দিয়ে জ্ঞান হারায়।
পরদিন ডাক্তার বলেছিলেন অতিরিক্ত সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোতে সময় কাটানোর ফলে আকাশ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আকাশের চিকিতসা চলছে। তবে ঐ রাতে সত্যিকারভাবে কি ঘটেছিল তা জানা যাবে না কোনদিন। শেক্সপিয়ার বলেছিলেন,“দেয়ার আর মেনি থিংস ইন হেভেন এন্ড আর্থ। ” সত্যি ই প্রকৃতি কিছু জিনিস রহস্য হিসেবে রাখতেই পছন্দ করে।
এটাও হয়ত প্রকৃতির কোন এক রহস্য। ।
(কাল্পনিক। কারও জীবনের কোন অংশের সাথে মিলে গেলে "কাক উড়িল তাল পড়িল" টাইপ ব্যাপার)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।