আসাদ গেটের দু'ফাঁক হয়ে যাওয়া ঠোঁটের কাছে এসে ৭ নম্বর বাসটা চলে যাওয়ার ভান করে জমাট বাধা মানুষগুলোর কয়েকটা নিশ্বাস কেড়ে নিয়ে আবার থেমে দাঁড়ালে মফিজ আড়মোড়া ভেংগে উঠে দাঁড়ায়। এতোক্ষন ফুটপাতের কানায় পাছা পেড়ে ম্যাচের কাঠি চিবাচ্ছিল আর ভাবছিল, হালায় ৭ নাম্বার দেহি চন্দ্রিমার ভাড়াইট্টা ছিলানগুলার লাহান করতাছে! আড়মোড়া ভাংগার ফাকে সে দেখে জমাট বাধা মানুষগুলো ৭ নাম্বারের একমাত্র দরজায় হুড়োহুড়ি করছে। মফিজের তোবড়ানো চোয়াল আর কালো ঠোঁট ঠেলে বাঁকাচোরা হাসির সাথে জমাট বাধা মানুষগুলোর জন্য কিছু করুনা ঝরে পড়ে। হালারা কী এমনি হোগা মারা খায়! ৭ নাম্বার আবার নখরামি করে, এতে জমাট বাধা মানুষগুলোর আরো কিছু নিশ্বাষ ৭ নাম্বারের দখলে যায়। চোখের কার্নিশে হামলে পড়া রোদ অনেক আগেই নির্জিব হয়ে গেছে তারপরও মফিজ চোখ কুঁচকে রাখে, প্রতিবার এমন জান্তব ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে নিজের এবং ঠেলাঠেলি করা মানুষগুলোর বিবষিমার স্রোত উজিয়ে যেতে মফিজের ঘেন্না লাগে।
আজকেও লাগলো। বুড়িয়ে যাওয়া বিলের তলপেটে জমে থাকা থিকথিকে কাদায় প্যাচপেচে শোল মাছের মতো ঠেলাঠেলি রত মানুষগুলোর বগল-মাথা-কনুই-বুক-পাছা ইত্যাদি পিছলে মফিজ ঠিকঠাক বাসে উঠে পড়ে। ৭ নম্বর আবার ছেনালিপনা করে চলে যাওয়ার ভংগি করলে মফিজ দেখে বাসে উঠেতে না পারা লোকগুলো কেমন ভেংগেচুরে ঝরে যাচ্ছে। হাওয়ার পুতেরা ইকটু খাড়াইলেই তো আরেক খান বাস পাইবা, মারা দেওনের এতো শখ ক্যান তুমাগো? মফিজ গিজগিজে মানুষের মাঝে নিজেকে ছেড়ে দেয়। মানুষগুলো মাথার উপরে লোহার রড, রড আঁকড়ে ধরা একে অন্যের হাত, সিটের মাথা, বাসের দেয়াল-ছাদ ইত্যাদি ধরে বা ছুঁয়ে নিজেদের কোন রকমে স্থির রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন চেস্টা চালায়।
প্রধানমন্ত্রির বাসভবনে সামনে হুমড়ি খাওয়া জ্যামে ৭ নম্বর জমে গেলে বাসের মধ্যে অসন্তোস ফিনকি দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে, এর সাথে যোগ হয় চিটচিটে গরম আর খিস্তি। মফিজের নাক আটকে থাকে ঘামে ভেজা কারো পিঠে। তার চেক সার্ট ঠেলে ঘামের সাথে হাড়-মাংশ-রক্তের মিলিত ধাক্কা মফিজের নাক বেয়ে মাথায় পৌঁছে তিরতির করে কাঁপে। মফিজের ডান হাতের তর্জনি আর মধ্যমা লাউডগা সাপের মতো খুব ধিরে নড়ে। খাড়া, অহনই ফাল পারিস না! আজ সারাদিন কমপক্ষে ৩বার এই রুটে ৭ নম্বরের সওয়ারি মফিজ কিন্তু দু'আংগুলের ফাঁদে খুব বেশি কিছু ধরা পড়েনি এখন পর্যন্ত।
এইটাই শেষ ট্রিপ। মফিজ অনেক কসরৎ করে মাথাটা খানিক উঁচু করলে দেখতে পায়, বাসে ছাদে ফুটো দিয়ে নেমে আসছে সন্ধ্যের অজস্র আকাশ। অজস্র আকাশের ছিটেফোটা বাস ভর্তি মানুষগুলোর শরীরে জুৎ করতে না পেরে ফুটোতেই মিলিয়ে যায়। মফিজের তর্জনি ও মধ্যমা তিরতিরে লাউডগা সাপ হয়ে জমাট বাধা ঘর্মাক্ত মানুষগুলোর পকেটে আলতো চরে বেড়ায়। চিমশানো পাছায় পকেটগুলো বন্ধ হয়ে ঝুলে আছে কোন রকমে, মফিজের আংগুলের বাৎসল্যে তারা উদোম হয়ে ভারমুক্ত্ হবে, শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।
চিটচিটে গরমের তেলতেলে জিভ বাস ভর্তি মানুষগুলোকে চেটেচুটে বাস থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেও পারে না, ফলে আবার লকলক করতে করতে ফিরে আসে। মানুষগুলোর অভিশাপে গরম আরো গাঢ় হয়। তারা এবার সরকার ও দেশের উপর উপগত হয়ে ঝাল ঝাড়ে, রাস্তার জ্যাম ও গরমের দায়ভার সরকারের উপর চাপিয়ে কেউ কেউ একটু ঠান্ডা হয় আর মফিজের বিড়ি খাওয়া কালো ঠোঁট আরেকটু বেঁকে যায়। একজনের পাছা আটকে থাকা পকেটে শুঁকে লাউডগা সাপ জানালো ভেতরে তেমন কিছু নেই। চুদির পোলা, মাসের প্রথম সপ্তাতেই পকেট হালকা হইলে বাকি মাস তুই নিজে কি খাবি আর আমারে কি দিবি? মফিজ একজনের বগলের তলা দিয়ে বাইরে তাকালে দেখে বাসের গা ঘেঁসে একটা প্রাইভেট কারের কাঁচে এই গরমেও শীতের পাতলা সর পড়ছে আর ঐ সরের আড়ালে খুব ফর্সা এক মেয়েকে জড়িয়ে আছে এক ছেলে।
আল্লার কী বিচার! গাড়ি ভর্তি লুকজন গরমে কুত্তা বিলায়ের মুতো ঘামতাছে আর ঐ হালায় কারের মইধ্যে ঠান্ডার ভিতরে মাইয়া টিপতাছে! বাসের অনেকই চোখ ভর্তি হিংসা অথবা অন্য কিছু নিয়ে কারটাকে দেখে, তবে তাদের কুঁচকে ওঠা চোখের গন্তব্য কাঁচে জমে ওঠা শীতের সর নাকি তার ওপাশে জড়ানো খুব ফর্সা মতো মেয়েটা তা বোঝা যায় না। লাউডগা সাপের হিসহিসানিতে মফিজ দম বন্ধ করে তৈরী হতে চাইলে বাসটা কেশে ওঠে। খানকির পো ইস্টার্ট দেয়ার সুময় পাইলি না! বাসটা কাঁপতে কাঁপতে গড়িয়ে থেমে যায় তারপর আবার একটু নড়ে ওঠে। বাসভর্তি বিভিন্ন বয়সি মানুষগুলোকে মফিজের একই রকম লাগে। কোঁচকানো কপালের নিচে ক্লিস্ট ঘোলা চোখ, হনু ঠেলে ওঠা তোবড়ানো গাল, গালের ঢালে হেজেমজে যাওয়া খালের মতো অসংখ্য বলিরেখা, বলিরেখা বেয়ে ধাবিত ঘাম; সবকিছুর সমিকরনে মফিজ কাউকেই আলাদা করতে পারে না, এমনকি শালা পকেটেও কতো মিল! বাসে যারা সিট পেয়েছে তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করে গরমের আঁচ কিছুটা কমাতে চাইলে দাঁড়িয়ে ও একে অপরের গায়ে ঠাসাঠাসি করে আটকে থাকা লোকগুলোর চোখ রাংগানিতে তা আরো ঘনিভুত হয়।
মফিজ সামনের জনের বগলের তলা দিয়ে মাথা গলিয়ে দিলে তার সামনের জনের রড ধরে ঝুলে থাকা অবয়বের দোলাচলে একটা হলুদ রংগের শাড়ির ঝলসে ওঠা দেখতে পায়। হলদে শাড়ির ফাঁক দিয়ে ঘামাচি ভর্তি কালচে পেট ও তার উপরে সাদা ব্লাউজ ভর্তি ভেজা স্তনের প্রতিফলনে মফিজ কিছুক্ষন আটকে থাকে। সে আরো দেখে হলুদ শাড়ির পেছনে ঘিয়ে রংয়ের একটা প্যান্ট সেঁটে আছে। ঘিয়ে রংয়ের প্যান্ট, আন্ডারওয়্যার সব কিছু ভেদ করে হলুদ শাড়ি ঢুকে যাচ্ছে দেখে মফিজের ঠোঁট আরো বেঁকে যায়। এর মাঝে কাকতাড়ুয়ার মতো কন্ডাক্টার আংগুলের ফাঁকে বিভিন্ন অংকের নোট পেঁচিয়ে ঘর্মাক্ত মানুষ গলে ঠিকঠাক ভাড়া তুলতে থাকে।
একটাকা/দুটাকা নিয়ে যাত্রিদের সাথে খ্যাঁচাখেঁচি করার ফাঁকে একটা কয়েন টুপ করে পড়ে গেলে কাকতাড়ুয়া নিচু হয়ে সেটা উদ্ধারও করে। বাসটা এর মাঝে ধুঁকতে ধুঁকতে প্রায় সোহরাওয়ার্দির কাছে চলে আসে, তার সমান্তরালে আঁধারও আসে গড়িয়ে গড়িয়ে যদিও চারদিকের আলোতে তা ছায়া ছায়া মনে হয়। হেল্পারের খরখরে গলা ছিঁড়ে সোহরাওয়ার্দি ছিটকে বাসভর্তি মানুষগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে মফিজের লাউডগা সাপ গুটিয়ে যায়। মফিজ ঢোক গেলে। গতো মাসে জুরাইনের সেলিম সোহরাওয়ার্দির কাছে এসে ধরা খায়, ৭ নম্বর বাসে মফিজও ছিল সেদিন ওর সাথে।
সেলিমকে বাস থেকে টেনে হিচড়ে নামানোর সময় মফিজ ওর চোখে শুন্যতা দেখেছিল। ঐ শুন্যতার মাঝে মফিজ নিজেকে ঢুকে যেতে যেতে বিস্ফোরিত ভয়ের দাঁতাল বিস্তার দেখেছিল। বাস থেকে ফুটপাত, ফুটপাত থেকে যাত্রিছাউনির পাশে ফুটন্ত রোদের নিচে নিতে নিতে সেলিম দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল। ল্যাগবেগে হাত-পা, থ্যাঁতলানো মাথা, উপড়ে আসা শুন্য চোখ ইত্যাদি খুব নির্মোহ ভংগিতে মফিজের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লে মফিজ টলতে টলতে কোনরকমে পালিয়ে এসেছিল সেদিন। হেল্পারের খরখরে গলা বেয়ে সোহরাওয়ার্দি ফের বাসে ঢুকে পড়লে মফিজের চারদিক থেকে মানুষগুলো পিছলে, পা মাড়িয়ে, কনুয়ের গুঁতো দিয়ে বেরিয়ে যায়।
মফিজ আবার ঢোক গেলে কিন্ত শুকনো মুখে কোন থুতু উৎপন্ন না হলে ওকে আবারো ঢোক গিলতে হয়। বাসটা সোহরাওয়ার্দির সামনে দাঁড়িয়ে থেকে চলে যাওয়ার অভিনয়ের ফাঁকে আরো কিছু যাত্রি বাগিয়ে নিলে ক্ষেপে ওঠে মফিজ। খানকির পোলারা হারাদিন কি এই খানেই পইড়া থাকবি? মফিজ দেখে দপ করে সব আলো সোহরাওয়ার্দির সামনে নিভে যায়। এমনকি শুওরের পালের মতো ঘোৎ ঘোৎ করা গাড়ি গুলোর হেডলাইটগুলোও গিলে খায় সোহরাওয়ার্দি। মফিজ মাথা উঁচিয়ে বাসের ছাদের ফুটো দিয়ে ঝরে পড়া অজস্র আকাশ দেখতে চাইলে দেখে গাঢ় অন্ধকার ছাদের ফুটো চুইয়ে ছেয়ে ফেলছে বাস।
মফিজের চোখে প্রতিফলিত হওয়ার মতো কোন আলো না থাকলেও সে দেখে হেল্পারের প্ররোচনায় আরো যাত্রি উঠছে বাসে, তাদের মধ্যে হাত-পা ল্যাগব্যাগ করে ঝুলছে, মাথা খুলে পড়তে চাইছে বুকের উপর এমন একজনও আছে। মফিজ অন্ধকারে তার চারপাশে জমে থাকা মানুষগুলোকে খামচে ধরতে চাইলে ওর হাতে সবকিছু বায়বিয় ঠেকে। হালায় এ্যাতো আন্ধার আইলো কই থিকা? মফিজ বাসের দরজার কাছে হেল্পারের গা ঘেঁসে দাড়ানো ল্যাগবেগে হাত-পায়ের লোকটাকে দেখে। ঝুলে পড়া মাথার সাথে খুলে পড়া একটা চোখ দুলছে আর পিটপিট করছে, মফিজ অন্ধকারেও ঠিকঠাক সেই চোখের শুন্যতা দেখতে পায়। হেল্পার বাসের পাঁজরে থাবড়া দিয়ে গাবতলি গাবতলি বলে চেঁচিয়ে উঠলে বাসটা নড়ে ওঠে।
অন্ধকারে খুব মসৃন ভাসতে থাকে বাসটা, মফিজ সব ওজন হারিয়ে হঠাৎ খেই হারিয়ে পাশের জনকে ঝাপটে ধরতে চাইলে ওর হাতে কিছুই ঠেকে না। বাসটা খুব জোরে ছুটে চলে। হুহু বাতাসে বাসভর্তি লোকগুলো ভাসে, মফিজের শীত লাগে হঠাৎ। বাসের ভেতর শীতের বলকে মফিজ ফুটতে থাকে।
"আমি চোখে কিছু দেখিনা ভাই ছাবেরা।
এই সুন্দর দুনিয়াটা আমার কাছে রাইতের আন্ধার। আপনাদের আসা যাওয়ার পথে আমি গান শুনিয়ে থাকি। যদি গান শুনে আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অন্ধ ভাইটাকে কিছু সাহায্য করবেন। " বলে একজন কাঁপা কাঁপা গলায় গান ধরে। কাঁপাকাঁপা, থরথরে গান সার্পিল ধেয়ে আসে মফিজের দিকে, বাসভর্তি ছোঁয়া-যায়-না মানুষগুলোকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে মফিজকে ধাক্কা মারে।
মফিজের কানে জোর করে সেঁধিয়ে ঝনঝনিয়ে আবার বেরিয়ে ছুটে যায় অন্ধ গায়কের কন্ঠে। বাসভর্তি মানুষগুলো অন্ধ গায়কের সাথে কোরাসে গেয়ে উঠলে মফিজ কানে হাত চাপা দিয়ে চিৎকার করে ওঠে। অন্ধ গায়ক ও বাসভর্তি মানুষগুলোর সম্মিলিত কোরাসে মফিজের চিৎকার ছিটকে যায় হেল্পারের পাশ ঘেঁসে দাড়ানো ল্যাগবেগে লোকটার ঝুলে পড়া মাথার সাথে দুলতে থাকা চোখের দিকে। মফিজ খুলে পড়া চোখে শুন্যতার গহ্বরে ঢুকে যেতে যেতে টের পায় সোহরাওয়ার্দি থেকে থ্যাতলানো মাথা নিয়ে সেলিম ৭ নাম্বারে উঠে পড়েছে। হালায় তুই আইছস ক্যালা? থ্যাঁতলানা আংগুল দিয়া পকেট কাটবার পারবি? অন্ধ গায়ক ও বাসভর্তি মানুষের সম্মিলিত গানের চড়াই উৎরাই বেয়ে সেলিমের খুলে পড়া চোখের শুন্যতা মফিজকে গ্রাস করে।
বাসটা ছুটেই চলে, ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো। বাইরের তরল অন্ধকারে মফিজ তার চোখ দুটো ছুঁড়ে ফেললেও ওগুলো ভাসতে ভাসতে আবার মফিজের কাছেই ফিরে আসে, আলোহীন। বাসভর্তি মানুষগুলোর ক্লিশে চেহারা উপচানো বিবশিমা উধাও হয়ে গেছে, সবার চেহারা গলানো মোমের মতো তেলতেলে হয়ে হালকা জ্বলছে। বাসভর্তি গোলানো তরল অন্ধকারের ঢেউ এর ভেতরেও মানুষগুলো নিলাভ নক্ষত্রের মতো ভাসছে। অন্ধগায়ক দিগন্তের কাছে ভেংগে পড়া আঁকাবাঁকা অস্পস্টতার মতো একের পর এক গান গেয়ে যায় আর বাসভর্তি মানুষগুলো সেই গানে তাদের সম্মিলিত কন্ঠ যোগ করে মফিজের কানে আছড়ে পড়তে থাকে।
মফিজ আড় চোখে দেখে হেল্পারের গা ঘেঁসে দাঁড়ানো সেলিমকে দেখে। সেলিম থ্যাঁতলানো মাথা বুকের উপর ঝুলিয়ে দুলছে অল্প অল্প। মফিজ চিৎকার করে ওঠে,
"আবে হালায়, গাবতলি আর কতদুর? এতুক্ষন ধইরা চলতাছে গাবতলি আহে না ক্যান?"
গাবতলি দুরে থাক হেল্পারের খরখরে গলা বেয়ে পংগু, শিশুমেলা বা শ্যামলীও বেরিয়ে পড়তে পারে না। গাবতলি নিয়ে বাসভর্তি মানুষগুলোর কোন মাথা ব্যাথা নেয় বরং তারা অন্ধগায়কের গানের তালে মাথাগুলোকে ব্যাস্ত রাখে। মফিজ দেখে বাসভর্তি অন্ধকারের ভেতর কিছুক্ষন আগের চিমশানো পাছায় লেগে থাকা সাস্থ্যহীন পকেটগুলো ফুলেফেঁপে উঠে পাখা গজিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে।
উড়ন্ত ফুলেফেঁপে থাকা পকেটগুলোর গন্ধ পেয়েও লাউডগা সাপ কুন্ডলি খুলে তৎপর হতে পারে না। মফিজ টের পায় ওর তর্জনি আর মধ্যমা বুড়ো আংগুলের সাথে জটপাকিয়ে জমে আছে, কিছুতেই খোলা যায় না। ৭ নম্বর বাসটা সোহরাওয়ার্দি থেকে থ্যাঁতলানো মাথার সেলিম, থমকে যাওয়া সময় আর বিপুল তরল অন্ধকার বাগিয়ে ছুটছে তো ছুটছেই আর বাসটার সাথে তাল মিলিয়ে অন্ধগায়কের একের পর এক গান আসাদগেট থেকে গাবতলির দুরত্তটুকু অস্পস্ট করতে করতে কোথায় নিয়ে যায় মফিজ টের পায় না। সে শুধু দেখে বাসের ভেতর ভাসমান ফুলেফেঁপে ওঠা পকেটের ডানা ঝাপটানি আর বাসভর্তি মানুষগুলোর সমবেত কোরাসে বাসের ভেতর অন্ধকার আরো জেঁকে বসছে আর জেঁকে বসা অন্ধকারে সেলিমের থ্যাঁতলানো মাথার সাথে ঝুলন্ত চোখ পিটপিট করতে করতে ভেসে আসছে তার দিকে!
"বাস থামা কইলাম খানকির পুতেরা! মসকরা চুদাস আমার লগে, হারা রাইত ধইরা গাড়ি চালায়া গাবতলি পৌঁছবার পারো না? " বলেই নিজেকে জানালায় ছুঁড়ে দেয় মফিজ। জানালা ছিঁড়ে বিপুল অন্ধকারে নিজেকে ছড়িয়ে দিলে মফিজ দেখে সেলিমের থ্যাঁতলানো মাথার সাথে ঝুলন্ত চোখের শুন্যতা পাক খেয়ে উড়ে আসছে তার দিকে।
গল্পটি দৈনিক বাংলাদেশ সময়-এর বৈশাখী সংখ্যায় প্রকাশিত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।