আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোটগল্পঃ রন্টির মুঠোয় কুট্টুসের জ্বলজ্বলে চোখ



এ্যাই কুট্টুস, এদিকে আয় পাজি! ঐটা তোর ছায়ারে পাগল, ছায়ার পেছনে কেউ দৌড়ায়? কুট্টুস তোর ল্যাজে নতুন রিং হয়েছে একটা...এক দুই তিন, তিনটা রিং!দুপুর গড়াগড়ি করে ঢিমেতালে, ঘড়ির কাঁটাটা আলসে ভিষন এই মার্চের গোড়ায়। কুট্টুস নিজের ছায়ার সাথে ডুয়েল লড়ে। কুট্টুসের ল্যাজে নতুন রিং হয়েছে। কালচে ধুসর। কুট্টুস কী বড়ো হয়ে যাচ্ছে? রন্টি পায়ের বুড়ো আংগুলের ডগায় ভর করে জানালার ওপারে ঝুলতে চাওয়া পড়ন্ত আকাশ দেখে।

জানালার অনেক নিচে ওর ড্রইং খাতায় আকানো খুদে গাড়ি গুলো ছুটোছুটি করছে। তাই দেখে ও হাসে। হাসলে টোল খাওয়া গালে জানালার কাঁচ টপকে আসা টুকরো রোদ টুপ করে ঢুকে যায়। এ্যায় কুট্টুস, উপর থেকে গাড়িগুলা কী পিচ্চি দেখায় জানিস? আমার খেলনার মতো। ঐ যে ঐটার মতো।

গতো জন্মদিনে পাওয়া লাল গাড়িটা টি টেবিলের নিচে জিরিয়ে নিচ্ছে। রন্টির চোখ লাল গাড়ির চাকা থেকে দেয়ালে ঝোলানো একতারায় ছুটোছুটি করে ফের কু্টটুসের উপর পড়ে। কুট্টুস তার ল্যাজ ধরতে চরকির মতো ঘোরে। রন্টি হাসে। ওর গালের টোল থেকে রোদটা খসে পড়ে এবার।

রন্টি কুট্টুসকে কোল নিয়ে ওর কান মলে দেয় আর হাটে। জানিস, এইবার আমরা ফ্যান্টাসি কিংডমে গেছিলাম? তোকে নিতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিল কিন্ত মা বকতো খুব। কী যে মজা! না গেলে বুঝবি না । ডাইনিং টেবিলে রন্টির আধখাওয়া রুটিতে একটা মাছি। এইযে চকলেটের প্যাকেট টা দেখছিস, খুব মজা।

কাল আব্বু এনেছিল। রন্টি চেয়ারের সাথে কথা বলে। দুটো ফুলের টবের ঝগড়া-ঝাটি মিটিয়ে দেয়। বুড়ো রবিন্দ্রনাথের দাড়ি বেয়ে নেমে আসা কবিতা শোনে। কুট্টুসকে দুহাতে উচু করে ধরে ওর চোখে নিজেকে খুঁটিয়ে দেখে।

তোর গোঁফ গুলো কী সুন্দররে কুট্টুস!! ইস আমার গোঁফ যে কবে তোর মতো হবে! ট্যাপের মুখ চুইয়ে আধ মিনিটের হিসেব ধরে একেকটা ফোঁটা ঝরে পড়ে। রন্টি কান পেতে শোনে। তোর খালি টিভি দেখার লোভ কুট্টুস! এ্যাতো টিভি দেখলে চোখ নস্ট হবে না? বেড়ালের চশমা কোন ডাক্তার দেবে শুনি? রন্টি এবার দেয়ালের সাথে কথা বলে। ভেন্টিলেটারের বুড়ো টিকটিকির কুশল জানতে চায়। ফ্রিজটাকে খুব দুঃখি মনে হলে ডালাটা খুলে মিস্টির বাটি থেকে একটা মিস্টি তুলে নেয়।

ফ্রিজটা খুশি হলে মিস্টিটা কুট্টুসকে সাঁধে। এরপর ঘুরে ফিরে বা-মার বেডরুমের বন্ধ দরজার কাছে দাঁড়ায়। এই নিয়ে অনেক বার। ধ্যাত্তেরি! দুপুরটা ফুরাতেই চায় না। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে যেতে চাইলে দরজাটা অল্প একটু খুলে ক্যাঁউচ শব্দে রন্টিকে চমকে দেবে।

রন্টি দেখবে অল্প খোলা দরজা গলে মা'র হাসি অনেক দুর থেকে ভেসে আসা ট্রেনের কু-ঝিক-ঝিক হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাড়িতে। হাসির সাথে সাথে খুব চেনা মিস্টি গন্ধটা খানিক ফিকে হয়ে আসবে। দরজাটা আরেকটু খুললেই মা, তার সাথে শফিক আংকেল। মা'র চোখ দুটো তখন কী জ্বলজ্বলে আর শফিক আংকেলটা কেমন বোকার মতো হাসবে! শশ!! কুট্টুস! খচর মচর করিস না এখন। ম্যাও একদম বন্ধ।

মা শুনলে বকবে খুব। বেড রুমের দরজা খুলে জ্বলজ্বলে চোখে মা আর বোকা বোকা হাসি নিয়ে শফিক আংকেল বের হলে ফ্ল্যাটটা কেমন গুম ধরে যায়। আধা মিনিটের হিসাবে ট্যাপটা পানি ফেলবে না এক ফোঁটাও। রবিন্দ্রনাথের কবিতারা সাদা দাড়ির বনে মুখ লুকিয়ে বেরুবে না আর। আর ফুলের টব দুটো বোবা হয়ে রন্টির দিকে তাকাবে শুধু।

রন্টি দেখবে অনেক উঁচুতে ওদের ফ্ল্যাটে মার্চের দুপুর ঘোলা হতে হতে ঢেকে ফেলছে বসার ঘরের সোফা, টেবিলের নিচে লাল গাড়ি ওর আঁকার খাতা। শুধু কুট্টুস মস্ত হাই তুলে রন্টির পেটে মাথা ঘষে ঘুম পাড়াতে বলবে। রন্টি ওর চোখে ঘুম ঘন হতে দেখতে দেখতে ঘোলা দুপুরের পেটে ঢুকে যাবে। কুট্টুস আমি ঘুমাচ্ছি কিন্ত। ঘুমের ভেতরও তোর বজ্জাতি থেমে নেই! আমার নাকটা কী চকলেট? চাটছিস কেন হাঁদা? মা কী বেরিয়েছে? শফিক আংকেল কী হাসছে বোকার মতো? রন্টি কুট্টুসকে বগলদাবা করে হাকফিনের সাথে মিসিসিপিতে ভেলায় ভাসছে, আর জিম বলছে; "মাস্টার রন্টি, শক্ত করে ধরুন! আরো বড়ো ঢেউ আসছে!" খানিক বাদে হাতকাটা রবিনের সাথে ছুটছে দিকবিদিক! খোড়া জলদস্যুর সাথে রত্নদ্বীপে নেমেছে কী নামেনি অমনি কুট্টুসটা ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে দিল।

না কী হয়েছে? তার নাকে নুডুলসের গন্ধ ঢুকে বিরক্ত করছে খুব, ওতে নাকি ডিমের ঘ্রানও আছে! তুই খা না ব্যাটা, আমাকে টানছিস ক্যান? নুডুলস দেখলে বমি পায় আমার! রন্টি ওঠো। মা ডাকে। মন খারাপের কুন্ডলি ওকে চেপে ধরে রাখে বিছানায়। মা'র চোখ নিস্প্রভ দেখে রন্টি। দুপুরের জ্বলজ্বলে আভাটা কখন লোপাট হয়ে গেছে।

ফ্রেশ হয়ে নুডুলস খেয়ে পড়তে বসো। আর বেড়াল নিয়ে এতো মাখামাখি কেন তোমার? বলিনি যে বেড়ালে অনেক অসুখ?রন্টি দেখে কুট্টুস এর চোখ ছলছলে হয়ে উঠছে। আরে বোকা ভয় পাসনে। মা এমন বলবেই। আমি আছি না? রন্টি ব্রাশ মুখে আয়নায় তাকালে দেখতে পায় এক অস্পস্ট বুড়ো।

ওর দিকে চেয়ে হাসছে। ফোকলা মুখে ফ্যানা। আরো দেখে বুড়োর চারপাশে গুমোট দুপুরের হাতে মার খেয়ে ম্রিয়মান দেয়াল, দেয়ালে টিকটিকি, রবিন্দ্রনাথের দাড়ি বেয়ে নামতে চাওয়া কবিতারা, ঝগড়ারত ফুলের টব; সবাই খুব ব্যাথাতুর। হিহি, কুট্টুস দেখবি আয়, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে দেখ! তোমার মিস বললো পড়াশোনায় একদম মন নেই তোমার। আর রেজাল্টের এ কি অবস্থা রন্টি?রন্টি ব্রাশ দিয়ে দাঁতে সুড়সুড়ি দেয়।

আয়নার ওপাশে বুড়োটা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। ডোরবেলটা দু'বার টুংটাং বেজে উঠলে রন্টি বোঝে বাবা আসছে। আয়নায় মা' নিস্প্রভ মুখটা অস্পস্ট হতে দেখে রন্টি। আয়নার ওপাশের বুড়ো ফেনা মুখে বলে, এইবার শুরু হলো! বাবা রন্টির মাথায় হাত দেয় একবার। হাতটা কেমন ঠান্ডা।

হেই কুট্টুস, কানে তুলো দিয়ে রেডি হ এ'বার। আয়নার ওপাশে ঝাপসা বুড়ো কুলকুচি করে, শব্দ করে পানি ফেলে বেসিনে। এতো শব্দ করে পানি ফেল কেন? বাপের সব বদগুন গুলো শিখছ না? আর শিখবে না কেন? কুট্টুস কান নেড়ে রন্টির পিছু নেয়, কুট্টুসের পিছু নেয় বাবা-মা'র চিৎকারের ঢেউ। রন্টি বসার ঘরের সোফায় কিছু চিৎকার বসিয়ে রেখে জানালার কাছে দাঁড়ায়। জানালার ওপাশে অনেক নিচে লাফিয়ে পড়তে চাওয়া আকাশের কাছে মায়ের প্রায় বুঁজে আসা গলা বেয়ে পাক খেয়ে ওঠা ফোঁপড়ানি জমা রেখে কুট্টুসের কান চুলকে দেয় রন্টি।

বিচ! শফিকের সাথে চিৎ হওয়ার সময় মনে থাকে না তোমার? আমাকে ভদ্রতা শেখাও? রন্টি রবীন্দ্রনাথের সামনে দাঁড়ায়। সাদা দাড়ির বন আরো ঘনিভুত হতে দেখে। ধুর! আমাদের ছোট নদী তোমার দাড়ি বেয়ে নামছে না আজ। কুট্টুসের চোখে অনিশ্চয়তা জমে। শোন কুট্টুস, ভয় পাসনে।

আরে বোকা এ আর নতুন কী? খানিক বাদে দেখবি ঠিক হয়ে গেছে। আয় ছবি আঁকি। রন্টি একটা সার্ট ছেঁড়ার শব্দ আঁকে, একটা চড় আছড়ে পড়ার পর শুন্যতা আঁকে। জ্বলজ্বলে চোখ আর বোকা হাসি আঁকে। কী সুন্দর নারে কুট্টুস? কুট্টুস মেঝেতে নাক গুঁজে কী যেন শোঁকে।

রন্টি আবার জানালার কাছে আসে। অন্ধকার জানালা গলে রন্টির চোখে ঢুকতে যেয়ে থমকে যায়। দু-চারটা তারার ছিটেফোটা জানালার কাঁচে গোত্তা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে। রন্টি বিলি দ্যা কিডের সাথে বুনো পশ্চিমের সিমান্ত শহরে রেড ইন্ডিয়ানদের সাথে লড়ছে। হেই কুট্টুস, সামলে! তোর ল্যাজের কাছে একটা তীর পড়লো।

বাবা-মার গালাগাল আর চিৎকারের মধ্যে বিলি দ্যা কিড সমানে গুলি করছে। খানিক বাদে রন্টি বন্দুক হাতে সুন্দর বনে ঢুকে পড়ে আর কুট্টুসটা গায়ে গতরে বড়ো হয়ে দিব্যি চামড়ায় কটা ডোরাকাটা বাগিয়ে হালুম-হুলুম করছে। কুৎসিত কিন্ত খুব চেনা জানা শব্দেরা ফিকে হয়ে আসে, বাবা-মা দুজনেই ঝাপসা হয়ে যায়। রন্টির চোখে বুনো পশ্চিমের ধুলো আর সুন্দরবনের সবুজ কুট্টুসের আলতো নাকের মতো ছেয়ে যায়। এ্যাই কুট্টুস, তুই কইরে? এই নে তোর হাফচকলেট।

স্কুল থেকে ফিরে রন্টি কুট্টুসকে খোঁজে। কুট্টুস লাপাত্তা। মা ফোনে কথা বলছে, এই শুওরের বাচ্চার সাথে আর এক দিনও না। জাহান্নামে যাক সবকিছু। তুমি আসছো কিনা বলো... এ্যাই কুট্টুস ভয় পাস না বোকা।

এরকম তো প্রতিদিনই হয়। কোথাই তুই? আরেকটু দেরি করলে চকলেট খেয়ে ফেলব কিন্ত। রন্টি ঘরের আনাচে-কানাচে, খাটের নিচে, আলমিরার পেছনে, শোকেসের উপরে কুট্টুসের তিন রিংওয়ালা লেজের ডগা খোঁজে। জানোয়ারের বাচ্চা আমার গায়ে হাত তোলে! তুমি কী আসবে নাকি আমি.....রিডিং টেবিলের উপর নন্টে ফন্টে নেচে কুদে রন্টিকে ডাকে। না রন্টি কু্টুস ছাড়া যাবে না! বাচ্চার দোহায় দিয়ে অনেক পার পেয়েছে বেজন্মাটা, আর না! রন্টি দরজা খুলে বাইরে যায়।

কুট্টুসতো দরজা খুলে বাইরে যেতে পারে না। পাশের ফ্ল্যাটের বুয়াকে সুধায় রন্টি। বুয়া ঠোঁট উল্টায়। বিলায়ের খবর নিয়া বইসা রইছি আমি! তার পাশের ফ্ল্যাটের মাথায় ঝুঁটি বাঁধা পিচ্চিটা মাথা দুলিয়ে বলে কালো একটা বেড়ালের সাথে সে কুট্টুসকে দেখেছে। নাহ, কুট্টুসটা তো রন্টি ছাড়া কাউকেই চেনে না।

পিচ্চিটা কাকে দেখতে কাকে দেখেছে। আর রং ছাড়া সব বেড়ালতো একই রকম দেখতে। ধুর! রন্টি ঘরে ফেরে। কুট্টুস ছাড়া। এই জানোয়ারের বাচ্চা জানোয়ার, কোথাই গেছিলি? বাপের মতো হইছিস না? দিন দুনিয়ার খবর নাই বিড়ালের পিছে ঘুরিস সারাদিন!! রন্টি মাকে দেখে না।

মার মুখ ছিড়ে ছিটকে আসা কুট্টুসের লাফিয়ে পড়া দেখে। কুট্টসের ছায়াবাজি দেখে আর লাপাত্তা কুট্টুসের তুলতুলে নাক, লম্বা গোঁফ, ডেরাকাটা লেজের যোগফলে ওর ভেতর কিছু একটা গুমরে ওঠে। রন্টি সিন্দবাদের সাথে সমুদ্দুরে ভাসতে ভাসতে কুট্টুসকে খোঁজে। একেকটা ঢেউয়ের ওপারে প্রত্যাশা আর আশংকার মিশেলে রন্টির ছোট্ট বুকটা বুড়ো হতে থাকে। অনেক বড়ো একটা ঢেউ খেলনা বানিয়ে কুট্টুস ছুটছে, মাও ছুটছে আরেকটা ঢেউয়ের পিছে, তার পিছে বাবা তারও পেছনে শফিক আংকেল।

কখনো মার চাইতে বাবা এগিয়ে যাচ্ছে, চড় দিয়ে ফেলে দিচ্ছে মাকে, মা চিৎকার করে ঝাঁপয়ে পড়ছে বাবার ঢেউয়ের উপর আর শফিক আংকেল বোকা বোকা হাসি নিয়ে বাবা-মার' পেছেন পেছনে আসছে। শুধু রন্টিরই কোন ঢেউ ছোঁয়ার তাড়া নেই। অনেক অনেক ঢেউ এর নিচে তলিয়ে যেতে যেতে রন্টি তার গালে নরম আর ভেজা নাকের পতন টের পায়। এ্যাই পাজি কুট্টুস, কোথাই ছিলি তুই? কতো খুজলাম তোকে!! রন্টি ঘুম ঘুম চোখে দেয়ালে ঝুলন্ত রবীন্দ্রনাথের দিকে তাকায়। রবীন্দ্রনাথের দাড়ি বেয়ে কোন কবিতা নামতে না চাইলে ঝগড়াটে ফুলদানি দুটোকে দেখে।

ওরা বড্ড চুপচাপ। সিগারেটের গন্ধ শফিক আংকেলের বোকা বোকা হাসি হয়ে সারা বাসায় উড়ছে। এতো চুপচাপ। শব্দেরা লুকালো কোথায়? কুট্টুস বুঝলি মা শফিক আংকেলের সাথে বাইরে গেছে। নারে পাগল একবারে যাবে কেন? এ্যাই তুই কোথাই গেছিলি তখন? কতো খুজলাম তোকে....কী ভয় করছিল আমার! রন্টির কোলে চোখ মুদে আদরে ডুবে থাকে কুট্টুস।

এ্যাতো চুপচাপ! রন্টির ভাল্লাগে না। সে চিৎকার করে কুট্টুসকে ডাকে, নিজেকে ডাকে। হিহি নিজেকে ডাকা কী মজার! রন্টির চিৎকারগুলো খুব সহজেই ফাঁকা বাসাটা গিলে নেই। কুট্টুস সোনা, ভয় নেই। মা একেবারে চলে যায়নি।

দেখিস একটু পরেই আমাদের নুডুলস বানিয়ে দেবে। কুট্টুস নুডুলসের কথায় কান দেয় না। রন্টির কোল থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ে। দরজার কাছে যেয়ে অস্থির হয়ে পড়ে কুট্টুস। এ্যাই কুট্টুস কী হলো তোর? কুট্টুস দরজা আঁচড়ায়।

রন্টি দরজার ওপারেও আঁচড়ের শব্দ শোনে। হঠাৎ করে পুরো বাড়ি আঁচড়ানোর শব্দে ফেটে পড়তে চায়। এতক্ষনের গিলে খাওয়া শুন্যতাও বশে আনতে পারে না আঁচড়ানোর শব্দ। রন্টি কীহোল দিয়ে দরজার ওপাশটায় দেখে। কিচ্ছু নেই।

কুট্টুস আঁচড়ায়, ওপাশ থেকে আঁচড় দরজা চিরে রন্টিকে ফালাফালা করে। রন্টি দেখে একটা কালো বেড়াল কীহোলের ছোট্ট বৃত্তে বোকা বোকা হাসি নিয়ে দেখছে ওকে! এ্যাই শয়তানের বাচ্চা! ঐ কালো বেড়ালের সাথে গেছিলি তুই? আমি তোকে পাগলের মতো খুঁজলাম, কতো কাঁদলাম আর তুই ঐ কালোটার সাথে গেছিলি? কোথাই গেছিলি তুই? কুট্টুস ভয় পায়। তুলতুলে কানদুটো সিঁটিয়ে কুঁকড়ে যায়। কুট্টুস পালায়! পালায়! তুই আমাকে ছেড়ে কেনে গেছিলি? কুট্টুস ধরা পড়ে যায়। কুট্টুসের চোখে কতো কাতর পানি জমে, টলটল করে।

রন্টি কুট্টুসের চোখে শুধু জ্বলজ্বলে দেখে। তুই কেন ছেড়ে গেছিলি আমাকে? রন্টি কুট্টুসকে বাথরুমে নিয়ে আসে। তুই কেন ছেড়ে গেছিলি আমাকে? পানি ভর্তি বালতিতে ঠেসে ধরে। আর যাবি বল? কুট্টুস রন্টির হাত কামড়ে পানিতে মোচড় খায়। লাল রক্তে কুট্টুসের চোখ আরো জ্বলে ওঠে।

আর যাবি বল আমাকে ছেড়ে? কুট্টুসের জ্বলজ্বলে চোখ দুটো ছিটকে বেরিয়ে আসে। কুট্টুস রন্টির হাত কামড়েই থাকে। কামড়েই থাকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।