''সংবাদপত্র যা ছাপে তার একটা বড় অংশই হলো 'লর্ড জোনস মারা গেছেন' ধরণের তথ্য। অথচ সেটি যাদের জানানো হয় সেই জনগণ খবরই রাখে না যে লর্ড জোনস বেঁচে ছিলেন''
প্রিয় পাঠক, অন্যান্য অনেক দিনের মতোই সকালে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা পড়তে গিয়ে দৈনিক সমকালে চোখ রাখলাম। থমকে দাড়ালো আমার দুটি চোখ। সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের ‘বিনম্র কৃতজ্ঞতায় কিছু কথা ’তে। সমকালের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এই বিশেষ সম্পাদকীয় মন্তব্য কলাম।
আমি ঠিক নিশ্চিত না আমার এই লেখার কারণে সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ উঠবে কী না। যদি উঠেও তাতে অবাক হবো না। দায় এড়ানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেশি দিন বাচা যায় না। আজ তাই অনেক কথা বলার ইচ্ছায় এ লেখার সূত্রপাত। সব লেখাই সমাধানের লক্ষ্যে পয়দা হয় না।
এই লেখাটিও তাই। কিন্তু এই লেখাটি পড়ে আপনাদের সদয় অভিব্যাক্তিই বলে দিবে ঘৃণার মানুষকে ঘৃণা করতে হয়। ভন্ড, নির্লজ্জ, মুখোশপরা প্রগতিশীল ভেকধারীরা যে কাঠ মোল্লার চাইতেও কত ভয়ংকর হতে পারে তা আমার জীবনে বিষ খেয়ে বিষ হজমের মত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেছে।
শুরুতেই বলে রাখি সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের মন্তব্য প্রতিবেদন আমি পারতপক্ষে বাদ দিই না। শব্দের সাথে শব্দের এমন যুগল বন্ধনী দিয়ে বাংলা বাক্য নিয়ে স্বতস্ফুর্ত খেলা করতে পারেন এমন কয়েকজন দক্ষ মানুষের মধ্যে তিনি একজন।
ভাষা তত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সনদ নেয় এই মানুষটির প্রতিটি শব্দ নির্বাচনে তার ভাষার উপর নিপুন দখলদারিত্বকে নির্দেশ দেয়। একধরণের আবীলতায় টেনে নেয় শেষ পর্যন্ত। প্রথম আলোর সম্পাদক যেখানে সহ সম্পাদকের কাধে চড়ে নিজের লেখার কৃতিত্ব জাহির করেন, আমাদের সময়ের নাইমূল ইসলাম খান যেমন হাবিজাবি সাবএডিটরকে দিয়ে লেখা ‘লিখিয়ে’ নেন, সারওয়ার এখানে পেশাগত দিকে সৎ! তাকে ধন্যবাদ।
কিন্তু সমকাল নামক প্রতিষ্ঠানটি যেটা একদল সংবাদকর্মীর ভালোবাসার ভরকেন্দ্র হয়ে টিকে আছে তার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এই গোলাম সারওয়ার। কী রকম জগন্য আচরণ আর পাপাচারে বিদ্ধ এই মানুষটি তা জানা সম্ভব হবে না যদি আপনি একই হাউজে কাজ না করেন।
আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে তিনি সকালের প্রাতকর্ম সম্পাদন ছাড়াই রওয়ানা হন। শেখ হাসিনার ভারত সফর সঙ্গী হতে লালায়িত তিনি নির্লজ্ব আওয়ামী দালালিতে ব্যবহার করেন সমকাল প্রতিষ্ঠানকে। একদল অযোগ্য বাল ছাল আবর্জনাকে অফিসে পুষে চলছেন দিনের পর দিন। এইতো কিছু দিন আগেও উপসম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুকে ওএসডি করে রেখে তাঁর (মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু) কম্পিউটার থেকে সেন্ট্রাল সার্ভার বিছিন্ন করেছিলেন তিনি। এভাবে একটি সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার বুকে ছুরি বসিয়ে একক কর্তৃত্ব নেয়া এই মানুষটি যখন সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জাতিকে নসিহত দেন তখন একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে উগলে আসা বমিকে কণ্ঠরোধ করে ঠেকিয়ে রাখি।
যে মালিক একে আজাদ তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল, সে মালিকের পায়ে পড়ে গাড়ির জন্য লালায়িত এই জীবকে মানুষভাবতেই ঘৃণা হয়। পত্রিকার প্রকাশ লগ্ন থেকে কাজ করে আসা গাইবান্ধা প্রতিনিধি আজ পর্যন্ত বেতন পাওয়াতো দূরের কথা পত্রিকার পরিচয় পত্রই পাননি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের একবছন মাগনা খাটিয়ে দেড় হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে, ‘তোমার মধ্যে আমি সম্ভাবনার আলো দেখছি’। রাজশাহীর ব্যুরো চিফের নিউজ আটকে রেখে চট্টগ্রামের ব্যুরো চিফ নামক এক অশিক্ষিত সাংবাদিকের নিউজ বিশেষ কাভারেজ দেন তিনি। মালিকের স্বার্থ রক্ষায় বন্দর কাস্টমসসে চোরাইমাল ছাড়াতেই মাসের অর্ধেক সময় ব্যস্ত থাকেন এই গোলাম!
আজকের লেখায় এই গোলাম সারওয়ার শুরু করেছেন এই ভাবে, ‘আজ ২০১০ সালের ৩১ মে সমকালের জন্মদিনে সকলের প্রতি সমকাল পরিবারের বিনম্র কৃতজ্ঞতা।
প্রতিটি জন্মদিনই শুভার্থীদের উষ্ণ উপস্থিতিতে সমকাল কার্যালয় মুখরিত থাকে। একবিংশ শতাব্দীর সময়ের দাবির প্রতি বিশ্বস্ত থেকে একটি আধুনিকমনস্ক পারিবারিক পরিপূর্ণ সংবাদপত্র প্রকাশে তারা এ দিন যে সুপরামর্শ দেন, তা শিরোধার্য করে সমকালকে নানা অনুষঙ্গে পাঠকপ্রিয় করতে আমরা সচেষ্ট হই। ’ আধুনিকমনস্কতার দোহাই দিয়ে এই নির্লজ্জ মিথ্যাচার দিয়েই লেখার শুরু্।
এর পরে আসুন পড়ে যাই, ‘সমকাল এই শুষ্কমুখ কোটি মানুষের দুঃখের পাঁচালি প্রতিদিনই লিপিবদ্ধ করছে। যাদের প্রতিটি সকাল ও শয্যাগ্রহণের আগের মুহূর্তটি দীর্ঘশ্বাসে জড়ানো, তাদের মর্মমূলের বেদনার কথাই সমকাল লিখছে।
‘ হায়রে বেকুব বাংগালি শুষ্কমুখ লক্ষ মানুষ কী জানেন, তাদের দুঃখের পাঁচালি যিনি উপজেলা থেকে নিজ খরচে ফ্যাক্স করেছেন তা নিজের গাঁটের পয়সা দিয়েই। সম্পাদক কী একবারও তার লেখায় উল্লেখ করেছেন কতজন উপজেলা প্রতিনিধি বিনা বেতনে খেটে চলছেন এই কারখানায়?
আওয়ামী রাজনীতির দাসত্বগিরি করা এই গোলাম সমানে লিখে গেছেন, ‘ অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে সংবাদপত্র সমাজের যাবতীয় অসঙ্গতি, রাজনীতির নামে অপ্রতিরোধ্য দুরাচার নির্ভয়ে প্রকাশ করবে। আসলে এই ঔচিত্যবোধের কাছেই সংবাদপত্রের দায়বদ্ধতা। ‘ ধান্দাবাজির সাথে প্রতিভা যোগ হলে যা হয় তার প্রতিশব্দ এই মুহুর্তে আমার স্টকে নেই বলে উল্লেখ করতে পারলাম না।
তেল চুবচুবানো, মেকি বুলির ফ্যাঁসফ্যাসে কন্ঠে তিনি আওড়ে চলেন, ‘আমাদের এত যে কষ্ট, এত বেদনাবোধ তার উপশমে স্ব স্ব অবস্থান থেকে আমাদেরও কিছু করণীয় রয়েছে।
এই অবস্থান থেকেই সমকাল দেশের ১৫ কোটি মানুষকে নবজাগৃতির ডাক শোনাতে চায়। তাই জন্মদিনে সমকালের স্লোগান_ 'জেগে ওঠো বাংলাদেশ'। এই স্লোগান আত্মজাগরণের স্লোগান। সমকালের এই আহ্বান সামাজিক অঙ্গীকার প্রতিপালনের অলংঘনীয় দায়বদ্ধতা থেকেই। ‘ এখন কথা হলো হামীম গ্রুপের চট্টগ্রাম বন্দর/কাস্টমস কেন্দ্রিক লেনদেন আর গোলাম সারওয়ারের নিলর্জ আওয়ামী প্রীতির পর এই স্লোগান দেয়া কতটুকু নৈতিক?
হায় রে, সমকালের সম্পাদকীয় নীতি, অবস্থান ও সামগ্রিক পরিকল্পনায় নাকি এবার থেকে 'জেগে ওঠো বাংলাদেশ' ডাক দেয় হবে।
প্রথম আলোর ধান্দাবাজ ডাক দিয়েছে দিন বদলের। এরই নকলামির হাত ধরে বাংলাদেশকে জেগে উঠার আহ্বান জানায় এরা। লজ্জা শরমের বালাই না থাকলে যা হয় আর কী। তবে সত্যি সত্যি বাংলাদেশের সচেতন পাঠকরা জেগে উঠলে এই সব মিডিয়া দস্যু, মিডিয়া পরজীবী, দালাল, সু্বিধাবাজ, চাটুকাররা পালাবার পথ পাবে কী?
ব্যবস্থাপনা সম্পদক পদে যে চরম অযোগ্য লোকটি চেয়ারে বসে চায়ের কাপে চুমুক মারে, সে গোলামের অন্যতম পা চাটা দালাল। মালিকের খাস চামচা এই দালার এক সময় আবার বাম রাজনীতিও নাকি করতো।
হায়রে হায়, বামরা পঁচলে যে পেঁয়াজের চাইতেও বেশি গন্ধ ছড়ায় তা এই খান সাহেবই আমাদের কাছে জলন্ত উদাহারণ। আদর্শের রাজনীতি এখন দরকার বলে কলাম ফেঁদে নিজ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির আকণ্ঠ নিমজ্জিত এই কীটের শাস্তি কী কখনো হবে?
চিফ রিপোর্টার পদের লোকটি একটা বালছাল। এই লোকটা ছাগলও না, গরুও না। এরে কেউ পাত্তা দেয়না বলেই সে সমকালের ছিপ রিপুর্টার! কিন্তু খারাপ হতেও প্রতিভা লাগে। এ ব্যাটার তাও নাই।
সম্পাদকীয় পাতার শীর্ষ পদের কেদারাখানায় যিনি ভোদাই মার্ক চেহারা নিয়ে বসে আছেন তিনি গোলামের অন্যতম স্যাঙ্গাত! এক সময়ের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এই হিন্দুয়ানি গোয়ার গোবিন্দ ‘আসিফ’ ছদ্মনামে কলাম লিখে। ফোন করে আপনাকে জিজ্ঞেস করবে ‘আমার লেখা দেখেছেন তো আজকে?’ আপনি যদি বলেন ‘হ্যাঁ’। তখন লেখার প্রশংসা শুনার আশায় চোখ দেখবেন অক্ষিগোটর হতে বেরিয়ে আসবে। এরা মিলেই অফিস। ধান্দাবাজরা সব একজোট হলে যা হয়।
আর কী!
বাকস্বাধীনতার কথা বলে যারা গলা ফাটায় তারা যখন নিজেদের হাঁড়ির খবর ফাঁস করলে গলা টিপে ধরার জন্য হন্যে হয়ে ওঠে, তখন আমার বাকস্বাধীনতা নাই বা থাকলো। আমার বুকে না হয় একদলা থুথুই জমা হয়ে থাকলো ওদের জন্য। আমি ঘেন্না করি ওইসব নপুংসকদের যারা নিজেরা বাকস্বাধীনতার বড় বড় বুলি আউড়ে অন্যের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে চায়। হায়, গণতন্ত্রের মহাপুরুষের ছদ্মবেশ ধারন করে যারা সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে তাদেরকে মারার জন্য যোগ্য একটি পাটি জুতাও যে আমার নেই। এর আগে জরুরি অবস্থান কোপালনে পড়ে সচলায়তর ব্লগ সাময়িক বন্ধ হলে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কলাম লিখে বাক স্বাধীনতার পক্ষে হৈ চৈ তুলেছিলেন।
কিন্তু সমকাল নিয়ে সামু ব্লগের কয়েকটি পোস্ট নিয়ে তদন্ত কমিটি করে রীতিমতো যুদ্ধকালীন অবস্থা শুরু করেছিলেন তিনি। সামুর ব্লগারদের বালটাও ছিড়তে পারে নাই গোলামের স্যাঙ্গাত এই ব্যবস্থাপনা সম্পাদক।
এরা সকলে গণতন্ত্রের কথা বলে আর নিজেদের বেলায় চর্চা করে স্বৈরতন্ত্র আর ফ্যাসিজমের। মুখে যা বলে (অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস) তারা তা বিশ্বাস করেনা। নিজে লক্ষ লক্ষ টাকা কামিয়ে উপজেলা প্রতিনিধিদের বিনা বেতনে অভু্ক্ত রেখে এরাই রাতের টকশোতে সাংবাদিকতার নৈতিকতা নিয়ে ফাল পাড়ে! ছি ছি! যে পত্রিকাকে ভালো বাসতাম একসময় সে পত্রিকার জন্মদিনে আজ আমার পক্ষ থেকে এই বিশেষ রচনাটি ছাড়া দেয়ার মতো আর কিছুই নাই।
কারণ ভালোবাসার উল্টো পিট মানেই অনিবার্য ঘৃণা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।